Thank you for trying Sticky AMP!!

‘উন্নয়ন–বিস্ময়’ কি ‘উন্নয়ন–বিপর্যয়ের’ দিকে যাচ্ছে

রাশেদ আল মাহমুদ তিতুমীর। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উন্নয়ন অধ্যয়ন বিভাগের অধ্যাপক ও চেয়ারম্যান। গবেষণা প্রতিষ্ঠান ‘উন্নয়ন অন্বেষণ’-এর প্রতিষ্ঠাতা চেয়ারপারসন। বাংলাদেশের ঋণমান কমে যাওয়া, অনিয়ন্ত্রিত দ্রব্যমূল্য এবং সামগ্রিকভাবে দেশের অর্থনীতি ও এর সঙ্গে যুক্ত রাজনীতি নিয়ে কথা বলেছেন প্রথম আলোর সঙ্গে। 

সাক্ষাৎকার নিয়েছেন এ কে এম জাকারিয়া

রাশেদ আল মাহমুদ তিতুমীর
প্রশ্ন

প্রথম আলো: বাংলাদেশের ঋণমান নিয়ে বৈশ্বিক সংস্থাগুলো থেকে নেতিবাচক পূর্বাভাস পাওয়া যাচ্ছে। বাস্তবতা কি তাই? 

রাশেদ আল মাহমুদ তিতুমীর: আমরা দেখছি, গত ছয় মাসে বিশ্বের বিভিন্ন ঋণমান পূর্বাভাসকারী প্রতিষ্ঠানগুলোর বিবেচনায় বাংলাদেশের মান নিচে নেমেছে। এমন এক পরিস্থিতিতে বিষয়গুলো সামনে আসছে, যখন বাংলাদেশের অর্থনীতি আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিল বা আইএমএফের বেলআউট প্যাকেজের আওতায় আছে। একসময় আন্তর্জাতিক প্রতিষ্ঠানগুলোর মধ্যে বাংলাদেশের ‘উন্নয়ন–বিস্ময়’ আলোচনার বিষয়ে পরিণত হয়েছিল। এখন প্রশ্ন হচ্ছে, আন্তর্জাতিক প্রতিষ্ঠানগুলোর এই ‘উন্নয়ন–বিস্ময়’ কি শেষ পর্যন্ত ‘উন্নয়ন–বিপর্যয়’–এর দিকে যাচ্ছে? আমাদের বুঝতে হবে কেন এই পরিস্থিতির তৈরি হলো। 

প্রথমত, রাষ্ট্রের একচেটিয়া শক্তি প্রয়োগের যে ক্ষমতা, তার ওপর ভর করে দেশে গোষ্ঠীতন্ত্রের শাসন কায়েম হয়েছে। গোষ্ঠীতন্ত্রের স্বার্থ রক্ষার লক্ষ্য নিয়েই বাংলাদেশের বর্তমান অর্থনৈতিক কাঠামো কার্যকর ও পরিচালিত হচ্ছে। গোষ্ঠীতান্ত্রিক শাসনের ফলাফল কী হতে পারে, তা আমরা ব্যাংকব্যবস্থায় বিপর্যয়, ডলার–সংকট বা নিয়ন্ত্রণহীন মূল্যস্ফীতিতে লক্ষ করছি। অর্থাৎ রাষ্ট্রে এমন এক ধরনের স্বজনতোষী অর্থনৈতিক ব্যবস্থা কায়েম হয়েছে, যার মাধ্যমে অবৈধ সম্পদ আহরণ নিশ্চিত করা যায়। এই অর্থনৈতিক ব্যবস্থা বজায় রাখতে অর্থনৈতিক প্রতিষ্ঠানগুলোর ওপরও একচেটিয়া নিয়ন্ত্রণ বজায় রাখার কাজটিও রাষ্ট্রীয়ভাবে নিশ্চিত করা হয়েছে। 

দ্বিতীয়ত, উন্নয়নের যে বয়ানটি তৈরি হয়েছে, তা নিজেই নিজের জায়গায় বন্দী হয়ে পড়েছে। ভোক্তাপর্যায়ে দেখা যাচ্ছে যে দেশে রাস্তাঘাট রাস্তাঘাট হচ্ছে, অন্যদিকে যানজট বাড়ছে। বাংলাদেশে অবকাঠামো তৈরির খরচ সবচেয়ে বেশি। একদিকে বিদ্যুতের উৎপাদন সক্ষমতা বাড়ছে, কিন্তু দাম বাড়ছে, লোডশেডিংও হচ্ছে, ক্যাপাসিটি ট্যাক্সের খরচ বাড়ছে। সবচেয়ে বেশি খরচ হচ্ছে যে ঢাকা শহরে সেখানে দারিদ্র্য বাড়ছে। বৈষম্য থামানো যাচ্ছে না। বিভিন্ন অর্থনৈতিক নির্দেশকে অনেক কিছুই বাড়িয়ে দেখানো হয়েছে, যার সঙ্গে বাস্তবতার মিল নেই। দেখা যাচ্ছে জিডিপির অনুপাতে কর কম। বিভিন্ন ক্ষেত্রে যে সূচকগুলো নেমে যাচ্ছে, তা দৃশ্যমান হচ্ছে। কর্মহীন প্রবৃদ্ধি থেকে বের হওয়ার পথ খুঁজে পাওয়া যাচ্ছে না। এসব পরিস্থিতিই বাংলাদেশের নেতিবাচক ঋণমানের জন্য দায়ী। 

প্রশ্ন

প্রথম আলো: বাংলাদেশের ঋণমান নিয়ে আন্তর্জাতিক সংস্থাগুলোর যে মূল্যায়ন, সরকার সেটি গ্রহণ করে কি? 

রাশেদ আল মাহমুদ তিতুমীর: ঋণমানের ব্যাপারে সন্দেহ বা বাড়তি কথা বলার কোনো সুযোগ নেই। বাংলাদেশ ব্যাংক নিজেই এই সংস্থাগুলোর গ্রাহক এবং তাদের কাছ থেকে তথ্য নিয়ে থাকে। এই ঋণমানকে রাজনৈতিক বা ভূরাজনৈতিক কোনো বিবেচনাতেই দেখার সুযোগ নেই। 

প্রশ্ন

প্রথম আলো: এ ক্ষেত্রে আমাদের দেশের আর্থিক ব্যবস্থাপনার সঙ্গে জড়িত প্রতিষ্ঠানগুলোর দায় কতটা? 

রাশেদ আল মাহমুদ তিতুমীর: বাস্তবতা হচ্ছে আর্থিক ব্যবস্থাপনার সঙ্গে জড়িত প্রতিষ্ঠানগুলো স্বাধীনভাবে তাদের দায়িত্ব পালন করতে পারছে না। দেশে গোষ্ঠীতন্ত্রের যে শাসন কায়েম হয়েছে, তাদের সব ধরনের সুযোগ-সুবিধা নিশ্চিত করার জন্যই প্রতিষ্ঠানগুলো কাজ করে যাচ্ছে। আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলোর ফরেনসিক অডিট হলে বোঝা যাবে সেখানে কত ধরনের ও কোন মাত্রায় অনিয়ম হয়েছে। ব্যাংকগুলোর ব্যবস্থাপনা কর্তৃপক্ষ নিয়মনীতি মেনে কাজ করতে পারছে না। তারা কার্যত ব্যাংক পরিচালকদের কাছে জিম্মি। ঋণ দেওয়ার বিষয়টি তাদের ইচ্ছা-অনিচ্ছার ওপর নির্ভরশীল। এসব কারণে খেলাপি ঋণ বেড়েই চলেছে। আমরা দেখছি, সুবিধামতো খেলাপি ঋণের সংজ্ঞা বদল করা হচ্ছে। দুঃখজনকভাবে সুদের হার কমা বা বাড়ার সঙ্গে বিনিয়োগের কোনো সম্পর্ক খুঁজে পাওয়া যাচ্ছে না। 

প্রশ্ন

প্রথম আলো: প্রতিষ্ঠানগুলো কি সঠিকভাবে কাজ করছে না? নাকি করতে পারছে না, অথবা নিজেদের সক্ষমতা হারিয়েছে? 

রাশেদ আল মাহমুদ তিতুমীর: কাজ করতে দেওয়া না হলে কোনো প্রতিষ্ঠানের সক্ষমতা ও অক্ষমতা বোঝার সুযোগ নেই। ঋণ দেওয়ার ক্ষেত্রে ব্যাংকের ব্যবস্থাপকদের ঝুঁকি পর্যালোচনাকে কি আদৌ বিবেচনায় নেওয়া হয়? আগেই বলেছি, সব ঠিক করেন পরিচালকেরা। ব্যাংকের ব্যবস্থাপকদের যদি সেই ক্ষমতা প্রয়োগ করতে দেওয়া হতো, তা হলো নিশ্চয়ই কাজ হতো। গোষ্ঠী শাসনের প্রভাবে ব্যাংকগুলোকে যেভাবে কাজ করতে হচ্ছে, তাতে ব্যবস্থাপকদের ভূমিকাকে গৌণ করে ফেলা হচ্ছে। ভালো ও দক্ষ ব্যবস্থাপকদের নিরুৎসাহিত করার সব ধরনের উদ্যোগ কার্যকর রয়েছে। ভবিষ্যতে দক্ষ ব্যাংক ব্যবস্থাপক তৈরি হওয়া কঠিন হয়ে পড়বে। 

প্রশ্ন

প্রথম আলো: বৈশ্বিক সংস্থাগুলোর এই নেতিবাচক পূর্বাভাসগুলো আমাদের অর্থনীতির জন্য কী বার্তা দিচ্ছে? এর সম্ভাব্য কী প্রভাব সামনে পড়তে পারে? বিশেষ করে আমদানি-রপ্তানি বাণিজ্য? 

রাশেদ আল মাহমুদ তিতুমীর: বাংলাদেশের অর্থনীতি ব্যক্তি খাত নির্ভরশীল। আন্তর্জাতিক প্রতিষ্ঠানগুলোর ঋণমানের পূর্বাভাস আমদানি-রপ্তানি বাণিজ্যের ওপর নিশ্চিতভাবেই প্রভাব ফেলবে। তবে সবচেয়ে বেশি প্রভাব পড়বে সরাসরি বৈদেশিক বিনিয়োগের (এফডিআই) ওপর। এফডিআই এমনিতেই অনেক কমেছে। গত এক দশকে মোট দেশজ উৎপাদনে ব্যক্তি খাতের অংশগ্রহণ স্থবির ছিল, সম্প্রতি আরও কমে গেছে। এখন যখন দেশি-বিদেশি বিনিয়োগ দরকার, তখন ঋণমানের নেতিবাচক অবস্থান অনেকটা মড়ার উপর খাঁড়ার ঘায়ের মতো। আমাদের আরও মনে রাখা দরকার, এখন পর্যন্ত আমাদের যে প্রবৃদ্ধি, তা ভোক্তাভিত্তিক। টেকসই প্রবৃদ্ধির দিকে যেতে হলে দরকার বিনিয়োগনির্ভর প্রবৃদ্ধি। এটা করা গেলেই কর্মস্থান বাড়ানো ও দারিদ্র্য দূর করার গতি বাড়তে পারে। 

প্রশ্ন

প্রথম আলো: আমাদের বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ ধারাবাহিকভাবে কমছে। ডলার–সংকট আমাদের অর্থনীতিতে সামনে কতটা ও কী ধরনের নেতিবাচক প্রভাব ফেলতে পারে? 

রাশেদ আল মাহমুদ তিতুমীর: আমরা দেখছি যে বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ ধারাবাহিকভাবেই কমছে। এটা বাড়ানোর কোনো উদ্যোগই নেওয়া হয়নি। পরিসংখ্যান বিবেচনায় নিলে দেখা যায় যে ২০২১-২২ সালে আমদানি খাতের মাধ্যমে বিপুল পুঁজি পাচারের ঘটনা ঘটেছে। অন্যদিকে ২০২২-২৩ সালে ৯ থেকে ১২ বিলিয়ন ডলার রপ্তানি আয় দেশে ফেরেনি। শিপমেন্ট ভ্যালু অনুযায়ী সে সময়ে রপ্তানি হয়েছিল ৫৫ দশমিক ৬ বিলিয়ন ডলার। কিন্তু ২০২৩ সালের জুন পর্যন্ত ফেরত এসেছে ৪৩ বিলিয়ন ডলার। মানে রপ্তানি আয়ের ২০ থেকে ২২ শতাংশের কোনো খবর নেই। দেখা যাচ্ছে রপ্তানি ও আমদানি দুই খাতের মধ্যমেই দেশের টাকা পাচার হয়েছে।

 তা ছাড়া বৈদেশিক ঋণ নেওয়ার হার গত ১৪ বছরে বেড়েছে ৩২২ শতাংশ। ২০০৯ সালে যেখানে ঋণের পরিমাণ ছিল ২৩ দশমিক ৫ বিলিয়ন ডলার, সেখানে ২০২৩ সালে তা দাঁড়িয়েছে ৯৯ বিলিয়ন ডলারে। একদিকে আমদানি ও রপ্তানি খাতের মাধ্যমে টাকা পাচার হয়েছে, অন্যদিকে ঋণ নেওয়ার মাত্রা বেড়েছে। টাকার অবমূল্যায়ন হওয়ায় পরিস্থিতি আরও শোচনীয় হয়েছে। ঋণ পরিশোধে বাড়তি টাকা লাগছে। সবকিছু মিলিয়ে ডলার–সংকট কোনোভাবেই সামাল দেওয়া যাচ্ছে না। এই পরিস্থিতিতে আইএমএফের শর্ত পূরণ করা সম্ভব হবে বলে মনে হয় না। 

প্রশ্ন

প্রথম আলো: এই পরিস্থিতি সামাল দেওয়ার পথ তা হলে কী? 

রাশেদ আল মাহমুদ তিতুমীর: আসলে দেশে যে গোষ্ঠীতান্ত্রিক অর্থনৈতিক ব্যবস্থা কার্যকর হয়েছে, সেই ব্যবস্থার পরিবর্তন না হলে এই পরিস্থিতি কাটবে না। আমি সংস্কার বলতে বুঝি গোষ্ঠীতান্ত্রিক অর্থনৈতিক ও শাসনব্যবস্থার অবসান। কারণ, সমস্যাটা কাঠামোগত। ভ্যাট সংস্কার, সুদের ৯-৬ হার—এসব সংস্কার কোনো কাজে দেবে না। 

প্রশ্ন

প্রথম আলো: বৈশ্বিক পরিস্থিতি বিবেচনায় নিলে বাংলাদেশের বর্তমান মূল্যস্ফীতিকে কোনোভাবেই যৌক্তিক বলা যাচ্ছে না। এটা কোনোভাবেই নিয়ন্ত্রণ করা যাচ্ছে না। এই পরিস্থিতি কেন? এর ব্যাখ্যা কী? 

রাশেদ আল মাহমুদ তিতুমীর: একটা কথা আমরা শুনে আসছি যে সব দেশে জিনিসপত্রের দাম কমছে কিন্তু বাংলাদেশে কমছে না। আসলে কেন দাম বাড়ছে, সেই বিষয়টি বিবেচনায় নিয়ে তা দূর করার উদ্যোগ না নিলে মূল্যস্ফীতির সংকট থেকে বের হওয়ার সুযোগ নেই। দেশে দ্রব্যমূল্যের স্থিতিশীলতা বজায় রাখার মূল দায়িত্ব বাংলাদেশ ব্যাংকের। কিন্তু আমরা দেখছি বাংলাদেশ ব্যাংক টাকা ছাপিয়ে সরকারকে রেকর্ড পরিমাণ ঋণ দিয়ে যাচ্ছে। অভ্যন্তরীণভাবে যে রাজস্ব আদায় হওয়ার কথা, তা সরকার করতে পারছে না। যা আদায় হচ্ছে, তা দিয়ে সরকারের চলছে না। গোষ্ঠী শাসন বজায় রাখতে সরকারের আরও অর্থের প্রয়োজন। কারণ, গোষ্ঠীতন্ত্রের সহযোগীদের উন্নয়নের নামে, ক্যাপাসিটি ট্যাক্সের নামে টাকার জোগান দিয়ে যেতে হচ্ছে। ব্যাংকব্যবস্থা থেকে আর টাকা নেওয়া সম্ভব না হওয়ায় বাংলাদেশ ব্যাংক টাকা ছাপিয়ে সরকারকে দিচ্ছে। টাকা ছাপানো হলে মূল্যস্ফীতি কমবে কীভাবে! আর টাকার অবমূল্যায়নের কারণেও জিনিসপত্রের দাম বেড়ে যাচ্ছে। 

এর বাইরে অন্য কারণটি হচ্ছে, সরকারের দাম বেঁধে দেওয়া। আমাদের দেশে এক দশক ধরে খাদ্য মূল্যস্ফীতি সবচেয়ে বেশি। দাম বেঁধে দেওয়ায় দেখা যাচ্ছে আন্তর্জাতিক বাজারে দাম কমলেও দেশের বাজারে কমছে না। বলা যায় সরকার বাজারকে বাজারের মতো চলতে দিচ্ছে না। 

প্রশ্ন

প্রথম আলো: দেশের এমন একটি পরিস্থিতিতে যেখানে দক্ষ অর্থনৈতিক ব্যবস্থাপনা প্রয়োজন, সেখানে আমরা দেখছি বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর একটি বৈশ্বিক র‍্যাঙ্কিংয়ে ‘ডি’ গ্রেড পেয়েছেন। এই সক্ষমতা নিয়ে কি আদৌ পরিস্থিতি সামাল দেওয়া সম্ভব? 

রাশেদ আল মাহমুদ তিতুমীর: বাংলাদেশের অর্থনৈতিক দুর্দশার জন্য দায়ী কারা, কে কোন ধরনের অনিয়ম করেছে, তা বাংলাদেশ ব্যাংকের অজানা নয়। এসবের প্রতিকার কী হতে পারে, সে ব্যাপারেও তাদের ধারণা রয়েছে। তারা চাইলে অনেক কিছু করতে পারে, কারণ তাদের স্বায়ত্তশাসন রয়েছে। কিন্তু বাংলাদেশ ব্যাংক তাদের এই স্বায়ত্তশাসনকে ব্যবহার করছে না। তারাও যেন গোষ্ঠিস্বার্থের অংশ হয়ে পড়েছে। আগেই বলেছি, বাংলাদেশ ব্যাংকের অন্যতম কাজ দ্রব্যমূল্য যৌক্তিক পর্যায়ে রাখা। জনগণের সঙ্গে এর মধ্য দিয়েই তারা সরাসরি সম্পৃক্ত। কিন্তু জনগণের সঙ্গে এই আস্থার সম্পর্কটি তারা স্থাপন করতে পারেনি। ব্যক্তি গভর্নরের ‘ডি’ গ্রেড পাওয়ার চেয়েও গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হচ্ছে বাংলাদেশ ব্যাংক তার স্বায়ত্তশাসনকে কাজে লাগাতে পারেনি এবং পারছে না। বরং অবস্থাদৃষ্টে এটা মনে করার যথেষ্ট কারণ রয়েছে যে বাংলাদেশ ব্যাংক বরং ঋণখেলাপি ও লুটপাটের সঙ্গে জড়িতদের স্বার্থ রক্ষার কাজেই ব্যস্ত রয়েছে। 

প্রশ্ন

প্রথম আলো: দেশের সামগ্রিক অর্থনৈতিক পরিস্থিতি ও এর ভবিষ্যৎ নিয়ে আপনার মন্তব্য কী? 

রাশেদ আল মাহমুদ তিতুমীর: আইনি কাঠামোর আওতায় দেশে এমন একটি অর্থনৈতিক ব্যবস্থা কার্যকর রয়েছে, যার মূল লক্ষ্য হচ্ছে নিজেদের গোষ্ঠীকে সহায়তা করা। নানা কৌশলে তাদের অর্থনৈতিক সুবিধা ভোগের সুযোগ দিয়ে যাওয়া। এবং এই কাজ করতে গিয়ে তারা জনগণের উন্নয়ন–আকাঙ্ক্ষাকে কাজে লাগাচ্ছে। এই পরিস্থিতি দেশের রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা ও অর্থনৈতিক সার্বভৌমত্বের জন্য বড় হুমকি হয়ে দাঁড়িয়েছে। রাজনীতি ও অর্থনৈতিক বাস্তবতাকে এখানে আলাদা করে দেখার সুযোগ নেই। এই পরিস্থিতি জনমনে গভীর দুশ্চিন্তা ও অনিশ্চয়তার পরিস্থিতি তৈরি করেছে। 

প্রশ্ন

প্রথম আলো: আপনি বর্তমান যে গোষ্ঠীতান্ত্রিক অর্থনৈতিক ব্যবস্থার কথা বললেন, তা থেকে মুক্তির পথ কী? 

রাশেদ আল মাহমুদ তিতুমীর: আসলে এ ধরনের একচেটিয়া ব্যবস্থা যাঁরা কায়েম করেন, তাঁরা সব সময়ই মনে করেন যে তাঁরাই টিকে থাকবেন। কিন্তু অভিজ্ঞতা বিবেচনায় নিয়ে বলতে পারি, রাষ্ট্রীয় আনুকূল্যে বা অবৈধভাবে সুযোগ-সুবিধা নিয়ে যঁারা বিভিন্ন সময় সম্পদ গড়ে তুলেছেন, তাঁরা শেষ পর্যন্ত ব্যবসায়ী বা সম্পদশালী হিসেবে নিজেদের অবস্থান ধরে রাখতে পারেননি। কারণ তাঁরা তাঁদের প্রতিষ্ঠান বা কর্মী—কারও প্রতিই দায়বদ্ধ থাকেন না। এই কারণে তাঁরা সামনে এগোতে পারেন না। এমন দৃষ্টান্ত আমাদের দেশে অনেক রয়েছে। আর একচেটিয়া অর্থনৈতিক ব্যবস্থা প্রসঙ্গে বলা যায়, এ ধরনের ব্যবস্থা একসময় ভেতর থেকেই ভেঙে পড়ে। ইতিহাস তাই বলে। 

প্রশ্ন

প্রথম আলো: আপনাকে ধন্যবাদ। 

রাশেদ আল মাহমুদ তিতুমীর: আপনাকেও ধন্যবাদ।