
দক্ষিণ এশিয়ার ছয় অর্থনীতিবিদ—অমর্ত্য সেন, মনমোহন সিং, রেহমান সোবহান, মাহবুব উল হক, লাল জয়াবর্ধনে, জগদীশ ভগবতী—কেমব্রিজ বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়াশোনা করে উন্নয়নশীল বিশ্বের উন্নয়নতত্ত্বে বিশেষ প্রভাব বিস্তার করেছেন। এ বিষয়ে অ্যাপোসলস অব ডেভেলপমেন্ট শীর্ষক বই লিখেছেন যুক্তরাষ্ট্রের ইয়েল বিশ্ববিদ্যালয়ের আন্তর্জাতিক ইতিহাসের অধ্যাপক ডেভিড সি এঙ্গারম্যান। প্রথম আলোর পক্ষ থেকে তাঁর সাক্ষাৎকার নিয়েছেন বিশেষ প্রতিনিধি ফখরুল ইসলাম ও জ্যেষ্ঠ সহসম্পাদক প্রতীক বর্ধন।
আপনি তো ইতিহাসের মানুষ। দক্ষিণ এশিয়ার ছয় অর্থনীতিবিদকে কেন্দ্র করে কেন এ বই লিখলেন।
ডেভিড সি এঙ্গারম্যান: আমি একটি গল্প বলার চেষ্টা করছিলাম। এর মধ্যে ছিল কয়েকজন অর্থনীতিবিদের কাজের অনুসন্ধান। তাতে সমস্যা হচ্ছিল। প্রায়ই শুনতে হয়েছে, হয়তো সৌজন্য করেই কেউ কেউ প্রশ্ন করেছেন, ‘কেন এই ছয়জন?’ জবাবটা আমি স্পষ্টভাবে দিতে পারতাম না। তারপর ইয়েল বিশ্ববিদ্যালয়ের সহকর্মীদের সঙ্গে আলোচনা করে বুঝলাম, ১৯৫০-এর দশকের দক্ষিণ এশীয় অর্থনীতিবিদদের ক্ষেত্রে কেমব্রিজ বিশ্ববিদ্যালয়ের ভূমিকা কতটা গুরুত্বপূর্ণ ছিল। একটু গভীরে গিয়ে দেখি, দক্ষিণ এশীয় ছয়জন অর্থনীতিবিদ প্রায় একই সময়ে কেমব্রিজে পড়েছেন। ১৯৫৪-৫৫ সালের মধ্যে ভর্তি হয়ে ১৯৫৭ সালের মধ্যে সবাই স্নাতক সম্পন্ন করেন। তাঁরা ছিলেন বিশেষ প্রজন্মের মানুষ, ঔপনিবেশিক শাসনের অধীন জন্ম। প্রত্যেকে পরবর্তীকালে অসাধারণ ক্যারিয়ার গড়েছেন—মাহবুব উল হক ও লাল জয়াবর্ধনে সরকারি প্রশাসনে, অমর্ত্য সেন ও জগদীশ ভগবতী একাডেমিক জগতে এবং মনমোহন সিং ও রেহমান সোবহান উভয় ক্ষেত্রেই সমান দক্ষতা দেখিয়েছেন। উদাহরণ হিসেবে বলি, রেহমান সোবহান ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষকতা করেছেন। পরে যুক্ত হয়েছেন বাংলাদেশের স্বায়ত্তশাসন ও স্বাধীনতা আন্দোলনে। বাংলাদেশের প্রথম পরিকল্পনা কমিশনের সদস্য হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন তিনি। এই ছয়জন শুধু সাফল্যের প্রতীকই ছিলেন না, তাঁদের চিন্তা, দৃষ্টিভঙ্গি, জীবনপথ—সবকিছুই ছিল বৈচিত্র্যপূর্ণ। তাঁরা দেখিয়েছেন, অর্থনীতিবিদ হওয়ার অর্থ কত রকম হতে পারে।
বইটির নাম অ্যাপোসলস অব ডেভেলপমেন্ট কেন?
এঙ্গারম্যান: নামটি বলতে পারেন কেমব্রিজের এক অভ্যন্তরীণ রসিকতা থেকে পাওয়া। ১৮২০-এর দশকে সেখানে কনভারসেশন সোসাইটি নামে ক্লাব ছিল। এর সদস্য ছিলেন ১২ জন। ওই সোসাইটির ডাকনাম হয়ে যায় দ্য অ্যাপোসলস (যিশুখ্রিষ্টের ১২ জন শিষ্যের দল অ্যাপোসলস হিসেবে পরিচিত ছিল)। আমার আলোচ্য ছয়জনের মধ্যে কেবল অমর্ত্য সেন ও লাল জয়াবর্ধনে সেই ক্লাবের সদস্য ছিলেন। আমি অ্যাপোসলস শব্দটি রূপক অর্থেও ব্যবহার করেছি। এই অর্থনীতিবিদেরা উন্নয়ন মতবাদ প্রবর্তন ও প্রচার করেছেন—সেই অর্থে।
কেমব্রিজে কাটানো সময়টা তাঁদের অর্থনৈতিক চিন্তা ও নীতি গঠনে কতটা প্রভাব ফেলেছিল?
এঙ্গারম্যান: প্রভাব বিস্তারে কেমব্রিজ গুরুত্বপূর্ণ ছিল, কিন্তু একমাত্র প্রভাব বিস্তারকারী নয়। অমর্ত্য সেন নিজেই বলেছিলেন, প্রেসিডেন্সি কলেজের পর কেমব্রিজে আসা ছিল কিছুটা হতাশাজনক। কারণ, তখনকার কেমব্রিজ অর্থনীতি গণিতভিত্তিক পদ্ধতি এড়িয়ে চলত। কিন্তু অর্থনীতি তখন ক্রমেই গণিতভিত্তিক হয়ে পড়ছিল। এটা নিয়ে একটা মজার গল্প আছে। প্রথম দিনই অমর্ত্য সেন ও মাহবুব উল হক বিতর্কে জড়িয়ে পড়েছিলেন। বিতর্কের বিষয়বস্তু হলো কেন নিওক্ল্যাসিক্যাল ইকোনমিকস বা নব্য ধ্রুপদি অর্থনীতি পড়তে হবে। হক হেসে বলেছিলেন, ‘টুথপেস্টের দাম হিসাব করায় কার কী যায় আসে?’ কিন্তু শেষে সিদ্ধান্তে পৌঁছান, এ তত্ত্বগুলো জানা দরকার, তবে তার খপ্পরে পড়া যাবে না। ছয়জনের বেশির ভাগেরই আগে থেকে শক্ত ভিত্তি ছিল। তাঁদের মধ্যে পাঁচজন দক্ষিণ এশিয়ার বিশ্ববিদ্যালয়ে অর্থনীতি পড়েই এসেছিলেন। কেমব্রিজে তাঁরা পরিচিতি ও কাঠামো পান। কিন্তু চিন্তায় তাঁরা স্বাধীন ছিলেন আগে থেকেই।
কেমব্রিজ কি তাঁদের মধ্যে কোনো যৌথ দৃষ্টিভঙ্গি তৈরি করেছিল, যে কারণে তাঁরা অভিন্ন ঔপনিবেশিক অভিজ্ঞতা ছাপিয়ে উঠতে পেরেছিলেন?
এঙ্গারম্যান: তেমনটা নয়। তাঁরা মূলত ভিন্ন পথে চলেছিলেন। ভারত গ্রহণ করেছিল আমদানি প্রতিস্থাপন শিল্পায়নের কৌশল। শ্রীলঙ্কা ঝুঁকেছিল রপ্তানিমুখী অর্থনীতিতে। পাকিস্তানও আংশিকভাবে রপ্তানিনির্ভর নীতি গ্রহণ করেছিল। কেউ দারিদ্র্য বিমোচনকে অগ্রাধিকার দিয়েছিলেন, কেউ আবার বাণিজ্যকে উন্নয়নের চালিকা শক্তি ভেবেছিলেন, অর্থাৎ তাঁরা সমরূপ দল ছিলেন না; বরং মতের ভিন্নতার ভেতরেই তাঁদের অবিরাম সংলাপ চলেছে।
আপনি যুক্তি দিয়েছেন, ‘উন্নয়ন’ ধারণাটি উন্নয়নশীল বিশ্ব থেকেই শুরু হয়েছিল। এই অর্থনীতিবিদেরা কীভাবে সে ধারণা এগিয়ে নিলেন?
এঙ্গারম্যান: ১৯৭০-এর দশক ছিল অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ সময়। তখন বৈশ্বিক অর্থনৈতিক কাঠামোকে গণতান্ত্রিক করার সংগ্রাম চলছিল। এই ছয়জনই কোনো না কোনোভাবে এতে যুক্ত ছিলেন। জয়াবর্ধনে ও মনমোহন সিং ছিলেন আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিলের (আইএমএফ) কমিটিতে। মাহবুব উল হক কাজ করেছেন বিশ্বব্যাংকে। অমর্ত্য সেন ও জগদীশ ভগবতী একাডেমিক পর্যায়ে তাত্ত্বিক অবদান রেখেছেন। তাঁরা প্রত্যেকেই অধিকতর ন্যায্য বৈশ্বিক অর্থনীতির কল্পনা করেছিলেন। সেই সময়ে সদ্য স্বাধীন বাংলাদেশ ছিল আন্তর্জাতিক উন্নয়নচর্চার একপ্রকার পরীক্ষাগার। বাংলাদেশ তখন ধ্বংসস্তূপের ওপর দাঁড়িয়ে এবং সহায়তার ওপর নির্ভরশীল। কিন্তু একই সঙ্গে বাংলাদেশ ছিল অর্থনৈতিক ন্যায়বিচারে নতুন ধারণার পরীক্ষাক্ষেত্র।
বাংলাদেশের শুরুটা ছিল নিঃসন্দেহে কঠিন। আজ পর্যন্ত এর উন্নয়নের পথচলা আপনি কীভাবে দেখেন?
এঙ্গারম্যান: আমি দুটি বড় চালিকা শক্তির কথা বলব। প্রথমত, তৈরি পোশাকশিল্পের উত্থান। এটি ছিল একই সঙ্গে নীতিগত সাফল্য ও বাজারব্যবস্থার সঙ্গে খাপ খাওয়ানোর উদাহরণ। দ্বিতীয়ত, বিপুল প্রবাসী আয়—বছরে প্রায় ৩০ বিলিয়ন ডলার। এই দুই উপাদান বাংলাদেশের অর্থনীতিকে বিশ্ববাজারের সঙ্গে একীভূত করেছে। বৈশ্বিক পরিবেশ গুরুত্বপূর্ণ ছিল, কিন্তু বাংলাদেশ দক্ষতার সঙ্গে অনেক প্রতিকূলতা মোকাবিলা করেছে।
অমর্ত্য সেনের ‘ক্যাপাবিলিটি অ্যাপ্রোচ’ ও মনমোহন সিংয়ের ‘উদারীকরণ’—এই দুই বিপরীত দর্শন একই উন্নয়ন লক্ষ্যের সঙ্গে কীভাবে সামঞ্জস্যপূর্ণ? এতে কোনো সংঘাত ছিল না?
এঙ্গারম্যান: অবশ্যই টানাপোড়েন ছিল। মনমোহন সিং সরকারি সীমাবদ্ধতার মধ্যেই কাজ করতেন। কিন্তু তাঁর লক্ষ্য ছিল বাণিজ্যনির্ভর প্রবৃদ্ধি ও দারিদ্র্য হ্রাস। অমর্ত্য সেনকে অনেকে তাঁর বিপরীতে ভাবেন। কিন্তু তিনিও উদারীকরণের বিরোধী ছিলেন না। তাঁর শর্ত ছিল, স্বাস্থ্য, শিক্ষা ও কল্যাণ ইত্যাদিতে রাষ্ট্র যেন তার মূল দায়িত্বে থাকে। তাঁদের পদ্ধতি আলাদা হলেও লক্ষ্য ছিল একই। আর সেটা হচ্ছে অর্থনৈতিক স্বাধীনতা ও মানবকল্যাণের মধ্যে যোগসূত্র স্থাপন।
ছয়জনের মধ্যে ‘মানব উন্নয়ন’ ও ‘অন্তর্ভুক্তিমূলক উন্নয়ন’ ধারণায় কার কী অবদান?
এঙ্গারম্যান: মাহবুব উল হক ছিলেন এ ধারণার কেন্দ্রে। তিনিই মানব উন্নয়ন সূচক উদ্ভাবন করেন। অমর্ত্য সেনও এর সঙ্গে গভীরভাবে যুক্ত ছিলেন। আর রেহমান সোবহান ‘অন্তর্ভুক্তিমূলক উন্নয়ন’ নিয়ে অনেক লেখালেখি করেছেন। অন্যদিকে মনমোহন সিং ছিলেন নীতিনির্ধারক পর্যায়ে। জগদীশ ভগবতী ও অমর্ত্য সেন ছিলেন তাত্ত্বিক চিন্তার রূপকার।
আপনি বলেছেন, রাজনীতি অনেক সময় তত্ত্বকে প্রভাবিত করেছে। উদাহরণ দিতে পারেন?
এঙ্গারম্যান: হ্যাঁ। মাহবুব উল হকের মানসিক পরিবর্তন এর উৎকৃষ্ট উদাহরণ। ১৯৬০-এর দশকের শেষ দিকে পাকিস্তান পরিকল্পনা কমিশনে কাজ করার অভিজ্ঞতার ভিত্তিতে তিনি বুঝতে পেরেছিলেন, পাকিস্তানের নীতি পশ্চিম পাকিস্তানকে বেশি সুবিধা দিচ্ছে। রাজনৈতিক বাস্তবতা ও নৈতিক বিবেচনা—এ দুই কারণে তাঁর এ মানসিক পরিবর্তন বলে আমি ধারণা করি। যদিও আমি নিশ্চিত নই।
এত কিছু দেখার পর আপনি কি মনে করেন, উন্নয়নের একক পথ আছে?
এঙ্গারম্যান: না। উন্নয়ন অর্থনীতি বহুবার ‘ফ্যাশন’-এর শিকার হয়েছে। একসময় মূলধন, তারপর উদ্যোক্তা, এখন লিঙ্গসমতা। সবই গুরুত্বপূর্ণ, কিন্তু ভিন্ন ভিন্ন মাত্রায়। কোনো সর্বজনীন সূত্র নেই। আমি বরং বাস্তববাদী। যখন যেটা প্রয়োজন, তখন সেটা কাজে লাগাতে হবে।
এ বই লেখার ক্ষেত্রে আপনার গবেষণা কতটা বিস্তৃত ছিল?
এঙ্গারম্যান: আমি ৯-১০টি দেশের আর্কাইভ ঘেঁটেছি এবং প্রায় ১০০ জনের সাক্ষাৎকার নিয়েছি। কাজ শুরু করার সময় ছয়জনের মধ্যে চারজন তখনো জীবিত ছিলেন। সবার সঙ্গেই দীর্ঘ সময় কথা বলেছি।
আজকের সংকট—জলবায়ু পরিবর্তন, বৈষম্য, প্রযুক্তিগত অস্থিরতা—এসবের পরিপ্রেক্ষিতে ছয় অর্থনীতিবিদদের কাছ থেকে আমরা কী শিখতে পারি?
এঙ্গারম্যান: দুটি জিনিস। প্রথমত, বিপ্লব নয়, ক্রমবর্ধমান পরিবর্তন অনুসরণ করা। আগে বাস্তব সমস্যা সমাধান করতে হবে, পরে মতাদর্শিক সমস্যা। দ্বিতীয়ত, ‘মতবাদ’ নয়; বরং দরকার কাজের ফলাফল। যে ফলাফল নির্দিষ্ট সমাজে কার্যকর, সেটাই মুখ্য।
বাংলাদেশের প্রথম পরিকল্পনা কমিশনের সদস্য ও পরবর্তীকালে নীতিনির্ধারণের সমালোচক হিসেবে রেহমান সোবহানের অবদানকে আপনি কীভাবে মূল্যায়ন করবেন? বিশেষ করে জাতীয়করণ প্রসঙ্গে।
এঙ্গারম্যান: ১৯৭১ সালে স্বাধীনতা লাভের পর জাতীয়করণ কেবল মতাদর্শগত সিদ্ধান্ত ছিল না। এটি ছিল বাস্তবতারও প্রতিফলন। বাংলাদেশ তখন দুটি ঔপনিবেশিক শাসনের ক্ষত বহন করছিল। দেশ ছিল যুদ্ধবিধ্বস্ত। অধিকাংশ শিল্পকারখানার মালিক ছিলেন পশ্চিম পাকিস্তানিরা। সেই মালিকেরা তখন অনুপস্থিত। তাই জাতীয়করণ ছিল একই সঙ্গে বাস্তব ও দেশপ্রেমের কাজ। রেহমান সোবহান এতে মতাদর্শগতভাবে বিশ্বাসী ছিলেন। একই সঙ্গে এটি কাঠামোগত বৈষম্য মেটানোর তাত্ক্ষণিক উপায়ও ছিল।
আজ অনেকেই বলেন, বাংলাদেশের প্রবৃদ্ধি একধরনের ‘প্যারাডক্স বা আপাতস্ববিরোধী উন্নয়ন’। আপনি কি একমত?
এঙ্গারম্যান: প্রায় সব দেশই এ বৈপরীত্যের মধ্য দিয়ে যায়। অর্থনৈতিক রূপান্তরপ্রক্রিয়া নিজেই অস্থিতিশীল। বাংলাদেশে ঘন ঘন নীতি পরিবর্তন এবং যারা নির্বাচনে জেতে, তারাই সবকিছু নিয়ে যায়। এই যে বাস্তবতা, সে কারণে রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা ব্যাহত হয়। এখানে যখন যে ক্ষমতায় আসে, তখন তারা আগের সরকারের প্রায় সবকিছু বদলে দেয়। যুক্তরাষ্ট্রে ২০২৫ সালের আগপর্যন্ত এমনটা ছিল না। ১৯৯১ সালে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের আমলে রেহমান সোবহান যে সংস্কারের প্রস্তাবগুচ্ছ প্রণয়ন করেছিলেন, তা দূরদৃষ্টিসম্পন্ন ছিল। কিন্তু রাজনৈতিক ব্যবস্থা সংস্কারের জন্য প্রস্তুত ছিল না। তাঁর সেই সংস্কার প্রস্তাব এখনো আমার সযত্নে রাখা আছে।
সামনে তাহলে পথ কী?
এঙ্গারম্যান: নির্দিষ্ট পরামর্শ দিতে আমার দ্বিধা আছে। যদিও রেহমান সোবহানের আশাবাদ আমার ভালো লাগে। তিনি শুধু আশা নিয়ে বসে থাকেন না, তা নিয়ে কাজও করেন। হয়তো রাজনৈতিক বিভাজনের ভেতরেই অভিন্ন পরিসর খুঁজে বের করে বাংলাদেশকে এগিয়ে যেতে হবে। কিন্তু বাংলাদেশের ৫৪ বছরের ইতিহাসে তেমনটা ঘটেনি। বিষয়টা সহজ নয়।
সবশেষে বাংলাদেশের অর্থনীতির ভবিষ্যৎ আপনি কীভাবে দেখেন?
এঙ্গারম্যান: আগামী এক বছর রাজনৈতিকভাবে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। বিজয়ীরা সব নিয়ে যাবে—বাংলাদেশ যদি এই রাজনীতি থেকে সরে স্থিতিশীলতার পথে হাঁটতে পারে, তাহলে বাংলাদেশের সম্ভাবনা উজ্জ্বল। মানুষের মধ্যে একধরনের অধৈর্য আছে। তারা এখন বাস্তব পরিবর্তন চায়, শুধু কথার কথা নয়।
আজকের দক্ষিণ এশিয়ায় কোন দেশ তুলনামূলকভাবে সমতাভিত্তিক উন্নয়নে এগিয়ে?
এঙ্গারম্যান: শ্রীলঙ্কা দীর্ঘদিন ধরেই মানব উন্নয়ন সূচকে এগিয়ে। যদিও আয় সীমিত ছিল। ভারতের আকার এত বড় যে তুলনা করা কঠিন। পাকিস্তান সংগ্রাম করছে, সফল হয়েছে বলা যায় না। বাংলাদেশ দারিদ্র্য কমাতে দারুণ সফল, কিন্তু সমতা এখনো অধরা।
সাক্ষাৎকার দেওয়ার জন্য আপনাকে ধন্যবাদ।
এঙ্গারম্যান: আপনাদেরও ধন্যবাদ।