চিঠিপত্র

পদে পদে ঘুষ দিতে হচ্ছে নিবন্ধন পরীক্ষায় সুপারিশপ্রাপ্ত শিক্ষকদের

আমি বেসরকারি শিক্ষক নিবন্ধন ও প্রত্যয়ন কর্তৃপক্ষ (এনটিআরসিএ) কর্তৃক তৃতীয় গণবিজ্ঞপ্তিতে সুপারিশপ্রাপ্ত নিয়োগপ্রত্যাশী শিক্ষক। কিন্তু নিয়োগের জন্য পদে পদে ঘুষ দিতে হচ্ছে আমাদের।

প্রতিষ্ঠানপ্রধান, ম্যানেজিং কমিটি, উপজেলা, জেলা ও আঞ্চলিক শিক্ষা অফিসের কর্মকর্তারা এমপিও ফাইল নানাভাবে আটকিয়ে রাখছেন। ঘুষ না দিলে সেই ফাইল ছাড়ছেন না। যেভাবে টাকা আদায় করছেন, তাতে মনে হচ্ছে, টাকা না দিলে তাঁদের হক আপনি মেরে দিচ্ছেন।

নিয়োগ ও যোগদানে হয়রানির শেষ নেই। এমপিও আবেদনে প্রতিষ্ঠানের প্রয়োজনীয় কাগজপত্র দিতে টাকা আদায়ের ফাঁদ তৈরি করা হয়েছে নানাভাবে। প্রতিষ্ঠানের উন্নয়নের নামে টাকা আদায়সহ অনেক ঝামেলা পোহাতে হচ্ছে নিয়োগপ্রত্যাশীদের। তারপর উপজেলা শিক্ষা অফিসে ফাইল আটকিয়ে বা রিজেক্টেডের ভয় দেখিয়ে টাকা আদায় করা হচ্ছে, একই ধরনের পরিস্থিতির শিকার হতে হচ্ছে জেলা ও আঞ্চলিক অফিসেও। এই অসহনীয় উপায় থেকে মুক্তির উপায় কী?

যে শিক্ষকেরা দেশ গড়ার কারিগর হিসেবে নীতিনৈতিকতাকে সম্বল করে ছা-পোষা বেতনে শিক্ষকতাকে মহান পেশা হিসেবে বেছে নিয়েছেন, তাঁদের এভাবে ঘুষখোর ও দুর্নীতিবাজদের কবলে পড়তে হবে, খুবই হতাশাজনক। তাহলে সেই শিক্ষক কীভাবে একজন আদর্শ শিক্ষক হিসেবে দেশ গড়তে অবদান রাখবেন। বর্তমানে পরিস্থিতি এমন পর্যায়ে পৌঁছেছে যে মনে হবে আপনি ওই ঘুষখোরদের কাছে করুণা ভিক্ষা চাচ্ছেন। অনেকের মনমানসিকতা একেবারে দুমড়েমুচড়ে যাচ্ছে। মনে হচ্ছে, এ পেশায় এসে পাপ করেছি।

এই দেশে জন্ম নেওয়াই কি তাহলে আমাদের আজন্ম পাপ? এই দুর্নীতিবাজদের কাছে অসহায়ের মতো বারবার পরাজিত হওয়ার জন্যই কি ৩০ লাখ লোক শহীদ হয়ে এ দেশের স্বাধীনতা এনেছিল? এসব বিষয় নিয়ে যার সঙ্গেই কথা বলি, সে-ই বলেন, ঝামেলা না করে কিছু দিয়ে দেন।

তাহলে কি আমরা সত্যিই এসব হায়েনার কাছে হেরে যাব? সত্যের কাছে কি তাহলে মিথ্যা মাথা উঁচু করে দাঁড়াবে? এর কি কোনো প্রতিকার নেই? আমরা সবাই কি এসব দুর্নীতিবাজের বিরুদ্ধে আওয়াজ তুলতে পারি না? নাকি যুগ যুগ ধরে আমরা তাদের সমীহ করে, নিজেরাও নিজেদেরকে কলঙ্কিত করে, মিথ্যার মহাসাগরে ডুব দিয়ে তাদের দলকে ভারী করব?

রাহাত মিয়া
একজন ভুক্তভোগী