Thank you for trying Sticky AMP!!

বাংলাদেশের শিক্ষকদের কেন এ দশা?

ইউনেসকোর ভাষ্যমতে, যে দেশে শিক্ষকের মান যত ভালো, সে দেশের শিক্ষা ব্যবস্থাপনা তত উন্নত। আমেরিকায় এক গবেষণায় দেখা গেছে, মানসম্মত শিক্ষার ২০ শতাংশ নির্ভর করে শিক্ষার অনুকূল পরিবেশ এবং অবকাঠামোগত সুযোগ-সুবিধার ওপর। কিন্তু ৮০ শতাংশ নির্ভর করে যোগ্য শিক্ষকের ওপর।

একজন যোগ্য শিক্ষক গাছতলায় বসেও মানসম্মত শিক্ষা নিশ্চিত করতে পারেন। প্রশিক্ষণের প্রয়োজনীয়তা অনস্বীকার্য, তবে মেধার আবেদন শিরোধার্য। কিন্তু দুর্ভাগ্যজনক হলেও সত্য, মেধাবী মানুষকে শিক্ষকতা পেশায় সম্পৃক্ত করার জন্য আকর্ষণীয় সুযোগ–সুবিধা ও প্রণোদনা আমাদের দেশে নেই। আমাদের দেশের শিক্ষার মান ও শিক্ষা বাজেট দক্ষিণ এশিয়ার সব দেশের মধ্যে সর্বনিম্ন।

আন্তর্জাতিক স্কেলের মানদণ্ডে বাংলাদেশের শিক্ষার মান ২ দশমিক ৮, ভারত ও শ্রীলঙ্কার শিক্ষার মান ২০ দশমিক ৮ এবং পাকিস্তানের শিক্ষার মান ১১ দশমিক ৩ শতাংশ। এভাবে চলতে থাকলে আন্তর্জাতিক পর্যায়ে সব প্রতিযোগিতা থেকে আমরা ছিটকে পড়ব এবং জাতি হিসেবে আমরা পিছিয়ে পড়ব। যোগ্য শিক্ষক ও দক্ষ ব্যবস্থাপক তৈরি করতে প্রশিক্ষণের ভূমিকা কতটুকু? নিঃসন্দেহে প্রশিক্ষণের ভূমিকা অপরিসীম।

তবে এ কথাও সত্য, রবীন্দ্রনাথকে প্রশিক্ষণ দিয়ে আইনস্টাইন বানানো যেত না। প্রজ্বলিত সূর্যটাকে আলো ছড়াতে কোনো প্রশিক্ষণ দিতে হয়নি। কিং কোবরা জন্মগতভাবেই ভয়ংকর বিষধর। পক্ষান্তরে ঢোঁড়া সাপ পেকে লাল হয়ে গেলেও বিষধর হয় না। একই ফুল থেকে মৌমাছি মধু সংগ্রহ করে কিন্তু বোলতা সংগ্রহ করে বিষ। ফুটো কলসিতে সকাল থেকে পানি ঢাললেও সে কলস কখনোই পূর্ণ হয় না।

সুতরাং, মেধা আগে, প্রশিক্ষণ পরে। নীতিহীন, আদর্শহীন, অকর্মণ্য, অপদার্থ মানুষটিকে হাজারো প্রশিক্ষণ দিলেও ভালো শিক্ষক বানানো যায় না, দক্ষ প্রশাসক হতে পারে না। তাই তো বলা হয়, ভালো শিক্ষক জন্মায়, তৈরি করা যায় না।

পক্ষান্তরে এ কথাও সত্য, মেঘাচ্ছন্ন আকাশে প্রজ্বলিত সূর্যটাও আলো ছড়াতে পারে না, কাচের পাত্রে কোনো গোলাপের বীজ অঙ্কুরিত হয় না। গোলাপ ফোটানোর জন্য প্রয়োজন প্রথমে গোলাপের বীজ, তারপর মাটি, পানি, আলো ও বাতাস। পরিচর্যাকে যদি প্রশিক্ষণ বলি, তবে বীজ হিসেবে প্রশিক্ষণের আগে যোগ্য ও মেধাবী মানুষটিকে শিক্ষক হিসেবে নিয়োগ দিতে হবে।

মো. ওমর ফারুক
অধ্যক্ষ
এম এস জোহা কলেজ, আলমডাঙ্গা, চুয়াডাঙ্গা।