চিঠিপত্র

সরদারি প্রথা ও সামাজিক আধিপত্য

বাংলাদেশের গ্রামীণ সমাজে ‘সরদারি প্রথা’ একপ্রকার প্রাচীন শাসনব্যবস্থা হিসেবে আজও বিদ্যমান। এককালে এটি শাসকশ্রেণির হাতিয়ার ছিল, কিন্তু সময়ের ব্যবধানে এটি গ্রাম্য রাজনীতির অবিচ্ছেদ্য উপাদানে পরিণত হয়েছে। বর্তমানে সরদারি প্রথা ক্ষমতার একধরনের বিকল্প কেন্দ্র হিসেবে কাজ করে, যা প্রশাসনিক কাঠামোর বাইরে থেকেও সমাজে গভীর প্রভাব বিস্তার করে চলেছে।

সরদারি প্রথার সূচনা ঘটে ব্রিটিশ শাসনামলে। গ্রামীণ প্রশাসনিক কাঠামো পরিচালনার সুবিধার্থে ইংরেজ শাসকেরা স্থানীয় কিছু ব্যক্তিকে ‘সরদার’ হিসেবে নিয়োগ দেন। রাজস্ব আদায়, সামাজিক শৃঙ্খলা রক্ষা ও বিচারকার্য পরিচালনার মতো গুরুদায়িত্ব অর্পিত হয় তাঁদের ওপর। পাকিস্তানি আমলেও এই প্রথা অব্যাহত থাকে এবং স্বাধীনতা-পরবর্তী বাংলাদেশে তা একপ্রকার সামাজিক ও রাজনৈতিক রূপে রূপান্তরিত হয়।

আজকের প্রেক্ষাপটে সরদাররা আর সরকারি দায়িত্বপ্রাপ্ত কেউ নন—তবু তাঁদের সামাজিক আধিপত্য অটুট। অনেক ক্ষেত্রেই তাঁরা গ্রামীণ জনগণের যাবতীয় সিদ্ধান্তের নিয়ন্ত্রক। জমি-বাড়ির বিরোধ, পারিবারিক দ্বন্দ্ব কিংবা রাজনৈতিক বিরোধ—সবকিছুতেই তাঁদের হস্তক্ষেপ দেখা যায়। ফলে সাধারণ মানুষ অনেক সময় নিজেদের ন্যায্য অধিকার থেকে বঞ্চিত হন।

তবে আশার কথা, গ্রামীণ সমাজে শিক্ষার প্রসার ও সচেতনতা বৃদ্ধির ফলে সরদারি প্রথার প্রভাব ক্রমেই কমতে শুরু করেছে। এ ক্ষেত্রে কিছু কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণ করা অত্যন্ত জরুরি। সর্বাগ্রে গ্রামের মানুষের মধ্যে শিক্ষার আলো ছড়িয়ে দিতে হবে—কারণ, শিক্ষিত মানুষই নিজেদের অধিকার সম্পর্কে সচেতন হতে পারে এবং অন্যায়ের বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়াতে সক্ষম হয়। দ্বিতীয়ত, স্থানীয় প্রশাসনকে আরও কার্যকর, স্বচ্ছ ও জবাবদিহিমূলক করে গড়ে তুলতে হবে। তৃতীয়ত, গ্রামে সচেতনতামূলক কার্যক্রম চালাতে হবে, যাতে মানুষ আইনি অধিকার ও সঠিক প্রতিকার পাওয়ার পথ সম্পর্কে জানে।

মো. আবু হানিফ বিন সাঈদ

শিক্ষার্থী, জনাব আলী সরকারি কলেজ, বানিয়াচং, হবিগঞ্জ