অস্তিত্বসংকটে টাঙ্গুয়ার হাওর

দেশের দ্বিতীয় রামসার সাইট, সম্পদ আর সৌন্দর্যে ভরপুর টাঙ্গুয়ার হাওরের চিত্র আজ করুণ। স্বচ্ছ পানি আর নিচের শেওলা দিয়ে মাছ ছুটে চলা, একদিকে পাহাড় আর করচগাছের সমারোহ। এসব মিলেই সুনামগঞ্জের টাঙ্গুয়ার হাওর। সুন্দরবনের পর জীববৈচিত্র্যসমৃদ্ধ জলাভূমি হিসেবে ঘোষিত টাঙ্গুয়ার হাওর রামসার ঘোষণার পরও সুরক্ষিত ব্যবস্থাপনার অভাবে আজ অভিভাবকহীন। সবাই মিলে ‘যেমন খুশি তেমন ধ্বংস’ করছে। মাছ, গাছ, পাখিসহ জীববৈচিত্র্যের আধার, বিশেষ করে মিঠাপানির মাছের জন্য বিখ্যাত এই হাওরে অবাধ আহরণের কারণে মাছ কমছে। হাওর ভরাট, বন ও আবাসস্থল ধ্বংস, মানুষের উৎপাত ও শিকারের ফলে কমছে পাখির সংখ্যা। যে অভয়ারণ্যে ট্রলারচালিত নৌকা ঢোকাই নিষেধ, সেখানে অবাধে চলছে শতাধিক বোটহাউস। পর্যটকদের অবাধ বিচরণও হাওরের পরিবেশের ওপর নেতিবাচক প্রভাব ফেলছে।

সবুজ করচগাছ আর স্বচ্ছ পানির সঙ্গে বেমানান এই হাউসবোটগুলোই চষে বেড়ায় গোটা হাওর। গত কয়েক বছরে হাউসবোট এত বেড়ে গেছে যে তাতে হুমকির মুখে পড়েছে টাঙ্গুয়ার হাওরের জীববৈচিত্র্য
ছবি: খলিল রহমান
চায়না দুয়ারি জাল জীববৈচিত্র্যের জন্য ক্ষতিকর। অনুমোদন নেই এই জালের। কারেন্ট জালের চেয়েও ভয়ংকর এই জাল। যেহেতু কারেন্ট জাল নিষিদ্ধ, তাই কৌশলে এই জাল ব্যবহার করা হচ্ছে হাওরে
কারেন্ট জাল নিষিদ্ধ হলেও এই জাল ব্যবহার হচ্ছে অবাধে। এই জাল জীববৈচিত্র্যের বারোটা বাজাচ্ছে
মাছ ধরার জন্য ইঞ্জিনচালিত নৌকার ব্যবহার হাওরে নিষিদ্ধ হলেও অনেকেই সেই নিষেধাজ্ঞা মানছেন না। প্রশাসনেরও তদারকি সেভাবে নেই
আগে ঝুড়িভর্তি মাছ মিলত। আমিনা বেগম সেই মাছ একা বেছে কূল পেতেন না। সাহায্য করতেন অন্য স্বজনেরাও। এখন সেই যুগ আর সেই। পাতের মাছটুকুও জালে পড়ছে না আমিনাদের
উড়ে যাচ্ছে বিরল পরিযায়ী পাখি গোলাপি-পা রাজহাঁস। বছরে একসঙ্গে ১৩টি গোলাপি-পা রাজহাঁস দেখা গিয়েছিল সুনামগঞ্জের টাঙ্গুয়ার হাওরে
লালমাথা মরচে ভুতিহাঁস। আগে অনেক দেখা গেলেও এই সংখ্যা ক্রমেই কমতে শুরু করেছে
পাখি কমে যাওয়ার কারণে হতাশা প্রকাশ করেছেন পাখিপ্রেমীরা। অবাধে পর্যটন আর পরিকল্পনা ছাড়া দেশি হাঁস হাওরে প্রবেশের কারণে এমন হচ্ছে বলে মনে করেন তাঁরা
দেশি হাঁস এসে অবাধে হাওরে ঢুকে মাছ, জলজ প্রাণীসহ নানা উদ্ভিদের ক্ষতি করছে। এতে হাওরের বাস্তুসংস্থানের ক্ষতি হচ্ছে
বড় কয়লাবোঝাই ট্রলার নেওয়া হচ্ছে হাওরে প্রবেশের মুখে। এতে পাখির আনাগোনা কমে যাচ্ছে
হাউসবোট রেখে দেওয়া হয়েছে হাওরের একটি নির্জন জায়গায়। থেমে থেমে উচ্চ স্বরে গান বাজানো আর পর্যটকদের চিৎকারে ক্ষতি হচ্ছে স্থানীয়দের আর বর্জ্যে ক্ষতি হচ্ছে মাছসহ জীববৈচিত্র্যের
স্কুলে যাওয়ার আগ্রহ থাকলেও সংসারের চাপে হাওরের শিশুরা পড়াশোনা করতে পারছে না ঠিকমতো। বাড়িতে কাজের সহায়তার পাশাপাশি মেয়েশিশুরা এখন গরু–ছগল চরাতেও সাহায্য করে যাচ্ছে।