Thank you for trying Sticky AMP!!

এখন কর্মসূচি নিয়ে মাঠে নামার অপেক্ষায়

গত শনিবার বিকল্পধারাকে বাইরে রেখে বিএনপি, যুক্তফ্রন্ট ও ঐক্য প্রক্রিয়া মিলে বৃহত্তর রাজনৈতিক জোট ‘জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট’ গঠিত হয়। ছবি: প্রথম আলো
  • দু-এক দিনের মধ্যে কর্মসূচি ঠিক করবে জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট
  • প্রথমে গুরুত্বপূর্ণ বিভাগ ও জেলা শহরে জনসভা
  • পরে ধাপে ধাপে বিভিন্ন জনসম্পৃক্ত কর্মসূচি
  • কর্মসূচিতে ২০-দলীয় জোটের শরিকদের সমর্থন থাকবে
  • জামায়াতে ইসলামীকে কর্মসূচিতে সম্পৃক্ত করা হবে না

শেষ পর্যন্ত সরকারবিরোধী একটি বড় ঐক্য গড়তে পারায় আপাতত নির্ভার জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের নেতারা। এখন অপেক্ষা ৭ দফা দাবি ও ১১ লক্ষ্য নিয়ে মাঠের কর্মসূচিতে যাওয়া। ঐক্যফ্রন্টের দায়িত্বশীল সূত্রগুলো জানায়, শিগগির তারা গুরুত্বপূর্ণ বিভাগীয় ও জেলা শহরে জনসভার আয়োজনসহ জনসম্পৃক্ত কর্মসূচি দেবে। দু-এক দিনের মধ্যে কর্মসূচি ঠিক করা হবে।

জানা গেছে, জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের কর্মসূচিতে বিএনপির নেতৃত্বাধীন ২০-দলীয় জোটের শরিক দলগুলোর প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষ সমর্থন থাকবে। তবে জামায়াতে ইসলামীকে এসব কর্মসূচিতে সম্পৃক্ত করা হবে না। জামায়াতও বিষয়টি মেনে নিয়েছে বলে জানা গেছে।

গত শনিবার দিনভর নানা নাটকীয়তার পর বিকল্পধারাকে বাইরে রেখে বিএনপি, যুক্তফ্রন্ট ও ঐক্য প্রক্রিয়া মিলে বৃহত্তর রাজনৈতিক জোট ‘জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট’ গঠিত হয়। গত দুই দিনে এটি ছিল সারা দেশে অন্যতম আলোচনার বিষয়। কেন বিকল্পধারাকে বাদ দেওয়া হলো বা বিকল্পধারা কেন পিছু হটল, তা নিয়ে নানা গুঞ্জন চলছে। এরই মধ্যে জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট গঠনের পর সামাজিক যোগাযোগের মাধ্যম ইউটিউবে ছড়ানো নাগরিক ঐক্যের আহ্বায়ক মাহমুদুর রহমান মান্না ও বিকল্পধারার যুগ্ম মহাসচিব মাহী বি চৌধুরীর মধ্যকার একটি কথোপকথন আলোচনায় নতুন মাত্রা যোগ করেছে। কথোপকথনে মাহী ড. কামাল হোসেনের নেতৃত্বে জাতীয় ঐক্যের নামে ‘রাষ্ট্রবিরোধী ষড়যন্ত্র’ হচ্ছে বলে দাবি করেন।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে মাহমুদুর রহমান মান্না কথোপকথন ফাঁস হওয়ার কথা শুনেছেন বলে জানান। ঐক্যের নামে রাষ্ট্রবিরোধী ষড়যন্ত্র করার অভিযোগের বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি প্রথম আলোকে বলেন, ‘এটা খুব গুরুত্ব দেওয়ার বিষয়? আমি এসব কথাকে গুরুত্ব দিতে চাচ্ছি না।’

বিএনপি, যুক্তফ্রন্ট ও ঐক্য প্রক্রিয়ার একাধিক দায়িত্বশীল নেতার সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, বৃহত্তর জোট গঠনে বিকল্পধারার অংশগ্রহণ নিয়ে আগে থেকেই সংশয় ছিল। কয়েক দফা বৈঠকের পর তা ​উদ্যোক্তাদের মধ্যে অস্বস্তির সৃষ্টি করে। এ ক্ষেত্রে মুক্তিযুদ্ধের বিরোধিতাকারী দল জামায়াতকে সামনে আনা হলেও নেপথ্যের কারণ ভিন্ন বলে জানা গেছে।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক যুক্তফ্রন্টের একজন জ্যেষ্ঠ নেতা বলেন, বিএনপির শীর্ষ নেতৃত্বের সঙ্গে বিকল্পধারার সভাপতি বদরুদ্দোজা চৌধুরী ও তাঁর ছেলে মাহী বি চৌধুরীর বড় রকমের দূরত্ব বিদ্যমান। বিএনপির তরফে অনেক চেষ্টা করেও তা দূর করা যায়নি। এ ছাড়া জাতীয় ঐক্যের নেতৃত্ব নিয়েও বি চৌধুরী ও কামাল হোসেনের মধ্যে একধরনের টানাপোড়েন চলে আসছিল।

এর বাইরে নানা শর্ত জুড়ে দিয়ে জাতীয় ঐক্য গঠনে বিলম্ব ঘটাতে বিকল্পধারার গড়িমসির জন্য যে কারণটিকে সন্দেহ করা হচ্ছে, তা হলো সরকারি প্রতিষ্ঠান বা সরকারি মহলের সঙ্গে বিকল্পধারার গুরুত্বপূর্ণ দুজন নেতার এমন ব্যবসায়িক স্বার্থ-সংশ্লিষ্টতা রয়েছে, যেখান থেকে ভিন্ন অবস্থান নেওয়াটা কঠিন। এসব কারণে দীর্ঘদিন ধরে ঐক্য হয়েও হচ্ছিল না।

এ বিষয়ে বিএনপির স্থায়ী কমিটির জ্যেষ্ঠ সদস্য মওদুদ আহমদ প্রথম আলোকে বলেন, ‘ওনাদের জাতীয় ঐক্যে আনতে আমরা অনেক চেষ্টা করেছি। এখনো আশা ছাড়িনি।’ ঐক্য না হওয়ায় বিএনপিকে দোষারোপ করার বিষয়ে তিনি বলেন, কারও ওপর দোষ চাপিয়ে তো লাভ নেই। ওনারাই (বিকল্পধারা) তো নিজেদের প্রকাশ করে দিয়েছেন, এত আসন দিতে হবে, যেগুলো রাজনৈতিক বাস্তবভিত্তিক নয়।

শুরু থেকেই বিএনপির সঙ্গে ঐক্য করতে মুক্তিযুদ্ধের বিরোধিতাকারী দল জামায়াতকে ছেড়ে দেওয়া এবং রাষ্ট্র পরিচালনায় ক্ষমতার ভারসাম্য আনার দাবি করে আসছিল বিকল্পধারা। দুই পক্ষের কথা চালাচালির ভেতরেই বি চৌধুরীর ছেলে ও বিকল্পধারার যুগ্ম মহাসচিব মাহী বি চৌধুরী গণমাধ্যমে সাক্ষাৎকার দিয়ে ঐক্যের জন্য বিএনপির কাছে ১৫০ আসন দাবি করেন, যা যুক্তফ্রন্ট ও ঐক্য প্রক্রিয়ার নেতাদের অস্বস্তিতে ফেলে।

এ বিষয়ে জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের নেতা ও গণফোরামের নির্বাহী সভাপতি সুব্রত চৌধুরী প্রথম আলোকে বলেন, ‘ওনাদের দেড় শ আসন দিতে হবে। রাষ্ট্রপতি, প্রধানমন্ত্রী কে হবেন, তা এখনই বলতে হবে। এই করতে হবে, সেই করতে হবে, জামায়াত ছাড়তে হবে—এসব শুনতে শুনতে আমরা বিরক্ত।’

অতীতে জামায়াতের  সঙ্গে একত্রে আন্দোলন, নির্বাচন ও সরকার গঠনের প্রসঙ্গ তুলে সুব্রত চৌধুরী বলেন, ‘থুতু ওপরে মারলে গায়ে পড়ে। ওনাদের অতীত কী ছিল?’

অবশ্য মাহী বি চৌধুরী প্রথম আলোকে বলেন, ‘আমি যে আসনে (মুন্সীগঞ্জ-১) নির্বাচন  করে এমপি হয়েছি, সেখানে জামায়াতে ইসলামীর কমিটি আছে বলে জানি না। তাদের ​পয়েন্ট ওয়ান পার্সেন্ট ভোটও নেই। আর বি চৌধুরী রাষ্ট্রপতি হয়েছেন সংসদ সদস্যদের ভোটে। তখন জামায়াতের ভোটের প্রয়োজন হয়নি।’

জানা গেছে, ৫ দফা দাবি ও ৯ দফা লক্ষ্য আদায়ে গণফোরাম, জেএসডি ও নাগরিক ঐক্যের কয়েক নেতা মিলে যুক্তফ্রন্ট ও জাতীয় ঐক্য প্রক্রিয়ার জন্য যৌথ ঘোষণাপত্র তৈরি করেছিলেন। তাতে দাবি আদায়ে ‘মুক্তিসংগ্রামের চেতনায় বিশ্বাসী রাজনৈতিক দল, সমাজশক্তি ও নাগরিক সমাজসহ জনগণকে সুসংগঠিত করার’ কথা বলা ছিল। যা পরে বি চৌধুরী ‘প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষভাবে স্বাধীনতাবিরোধী’ কথাগুলো প্রতিস্থাপন করেন।

বিএনপির নেতারা বলছেন, এসব ইঙ্গিত করে বিকল্পধারার নেতারা শুরু থেকেই প্রস্তুতি নিয়ে রেখেছিলেন, জাতীয় ঐক্য যেন না হয়।

যুক্তফ্রন্ট, ঐক্য প্রক্রিয়া ও বিএনপির নেতারা মনে করেন, বর্তমান সরকারের শাসনে গুম, খুন, নির্যাতন, নিপীড়নে মানুষ অতিষ্ঠ হয়ে উঠেছে। সারা দেশে হাজার হাজার ‘গায়েবি’ মামলা দিয়ে বিরোধীদলীয় লাখ লাখ নেতা-কর্মীকে হয়রানি করা হচ্ছে। ভোটের অধিকার কেড়ে নেওয়া হয়েছে। মানুষ এ অবস্থার পরিবর্তন চায়। এই সময়ে জামায়াত ঐক্যের জন্য প্রাসঙ্গিক বিষয় নয়।

অবশ্য বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য গয়েশ্বর চন্দ্র রায় বিষয়টিকে অন্যভাবে দেখেন। তিনি প্রথম আলোকে বলেন, একাত্তরে মুক্তিযুদ্ধ হয়েছিল মূলত গণতন্ত্র ও স্বাধিকারের জন্য। সত্তরের নির্বাচনের ফল যদি পাকিস্তান মেনে নিত, তাহলে আজকের ইতিহাস হয়তো ভিন্ন হতো। এখন দেশের মানুষের দাবি, গণতন্ত্র ও ভোটের অধিকার পুনরুদ্ধার করা। আজকে কেউ যদি এর বিরুদ্ধে অবস্থান নেয়, আমরা তো তাদের স্বাধীনতাবিরোধী বলব।’