
বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেছেন, দলের চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া কারও সাহায্য ছাড়া বিছানা থেকে উঠতে পারেন না। খালেদা জিয়ার স্বাস্থ্যের অবনতি হচ্ছে জানিয়ে তাঁর মুক্তি ও সুচিকিৎসা দাবি করেন তিনি।
আজ শুক্রবার বেলা সাড়ে ১১টায় গুলশানে বিএনপির চেয়ারপারসনের রাজনৈতিক কার্যালয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে মির্জা ফখরুল এসব কথা বলেন।
মির্জা ফখরুল বলেন, ‘খালেদা জিয়ার শরীর-স্বাস্থ্য এত খারাপ হয়ে গেছে যে এখন তিনি বিছানা থেকেই উঠতে পারেন না। তিনি অনিয়ন্ত্রিত ডায়াবেটিসে ভুগছেন এবং আমার কাছে তথ্য আছে, ইনসুলিন নিচ্ছেন উনি। ইনসুলিন নেওয়ার পরেও তাঁর ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে আসছে না। সুগার লেভেল ১০ থেকে ১৬–তে ওঠা-নামা করে। তাঁর এই অনিয়ন্ত্রিত ডায়াবেটিসে পরিণতি কী হতে পারে, তা আমরা সবাই জানি। চিকিৎসা না হলে পরিণতি কী হতে পারে, সেদিকেই তিনি এগিয়ে যাচ্ছেন। আগে তাঁর বাঁ কাঁধ ফ্রোজেন ছিল, এখন ডান কাঁধ ফ্রোজেন হয়ে যাচ্ছে। হাত–পা নাড়াতে পারছেন না। কোনো সাহায্য ছাড়া বিছানা থেকে উঠতে পারছেন না।’
সরকারের কাছে বারবার বলেও কোনো প্রতিক্রিয়া পাননি বলে জানান মির্জা ফখরুল ইসলাম। তিনি বলেন, খালেদা জিয়ার স্বাস্থ্যের বিষয়টি যেভাবে জাতির সামনে আসা দরকার, সেভাবে আসছে না।
খালেদা জিয়ার উন্নত চিকিৎসা হচ্ছে না জানিয়ে বিএনপির মহাসচিব বলেন, খালেদা জিয়ার আইনগত যে প্রাপ্যতা, তা সরকার উদ্দেশ্যপ্রণোদিতভাবে বিলম্বিত করছে। আদালতের ওপর হস্তক্ষেপ করার চেষ্টা করা হচ্ছে, যা আইনের শাসনের বিরোধী। এটা অমানবিক ও মানবাধিকারের লঙ্ঘন। খালেদা জিয়ার স্বাস্থ্যের বিষয়ে নিয়মিত জানানো হচ্ছে না এবং স্বজনদের সঙ্গে ২০-২৫ দিনেও দেখা করতে দেওয়া হয় না। দলীয় নেতাদের সঙ্গেও দেখা করতে দেওয়া হয় না বলে জানান মির্জা ফখরুল।
মির্জা ফখরুল বলেন, ‘খালেদা জিয়ার জামিন প্রাপ্য। আজকে নাজমুল হুদা, আওয়ামী লীগের অনেক মন্ত্রী আছেন, যাঁরা সাজাপ্রাপ্ত হয়ে ঘুরে বেড়াচ্ছেন। কিন্তু খালেদা জিয়ার বেলায় কেন? রাজনৈতিক প্রতিহিংসা চরিতার্থ করার জন্য। তাঁর মুক্তি দিতে হবে। মুক্তি পেলে তাঁর সুচিকিৎসা করা সম্ভব।’
খালেদার স্বাস্থ্যের অবনতি হলে সরকার দায়ী থাকবে উল্লেখ করে মির্জা ফখরুল বলেন, ‘তারা কি কারাগারে বিনা চিকিৎসায় মেরে ফেলতে চায়? হত্যা করতে চায়? এত দুর্বলতা কেন? নিজেদের প্রতি আস্থা নেই কেন? কারণ তারা জানে, জনগণের কোনো সমর্থন তাদের নেই।’
বিএনপির সদস্যদের সংসদে যাওয়ার সঙ্গে খালেদা জিয়ার মুক্তি বিষয়ে সাংবাদিকেরা জানতে চাইলে মির্জা ফখরুল বলেন, রাজনৈতিক পরিস্থিতে, গণতন্ত্রের স্বার্থে তাঁরা সংসদে গিয়েছেন। এর সঙ্গে খালেদার চিকিৎসা ও মুক্তির বিষয়টি কখনো জড়ায়নি। খালেদা জিয়ার মুক্তি আইনগতভাবে হবে, কোনা শর্ত দিয়ে নয়।
খালেদা জিয়া জেলে যাওয়ার পর থেকে বিএনপি বলে আসছে, সরকার উদ্দেশ্যপ্রণোদিতভাবে তাঁকে আটকে রেখেছে এবং এই বক্তব্য ১৫ মাস ধরে তারা দিয়ে আসছে। এর বাইরে বিকল্প কোনো ভাবনা বিএনপির আছে কি না প্রশ্নে মির্জা ফখরুল বলেন, প্রতিদিন আইনের মাধ্যমে কাজ করা হচ্ছে।
এক প্রশ্নের জবাবে মির্জা ফখরুল বলেন, ‘খালেদা জিয়া মুক্তিযোদ্ধা তো বটেই। তাঁর স্বামী (জিয়াউর রহমান) মুক্তিযুদ্ধের ঘোষণা দেওয়ার কারণে তাঁকে যদি জেলে থাকতে হয়, তাহলে তো তিনি মুক্তিযোদ্ধাই হন।’
সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী, জমির উদ্দিন সরকার, বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান এ জেড এম জাহিদ হোসেন, চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা মনিরুল হক ও আবদুল কাইয়ুম।