
নৌপরিবহনমন্ত্রী ও শ্রমিক-কর্মচারী-পেশাজীবী-মুক্তিযোদ্ধা সমন্বয় পরিষদের আহ্বায়ক শাজাহান খান বলেছেন, ‘সবার ভয়ে খালেদা জিয়া পালিয়ে বাড়ি চলে গেছেন। আজ তিনি গাড়ি নিয়ে বের হলেন। নিজের দেওয়া অবরোধ নিজেই ভাঙলেন। তবে বাংলাদেশে খালেদা জিয়া আর কিছু করার সুযোগ আর পাবেন না।’
আজ রোববার বিএনপির চেয়ারপারসন খালেদা জিয়াকে গ্রেপ্তারের দাবিতে রাজধানীতে শ্রমিক-কর্মচারী-পেশাজীবী-মুক্তিযোদ্ধা সমন্বয় পরিষদ আয়োজিত গণপদযাত্রা শুরুর আগে মন্ত্রী এ কথা বলেন।
‘খালেদা জিয়ার নির্দেশে ২০-দলীয় জোটের অবরোধ-হরতালের নামে যানবাহনে অগ্নিসংযোগ, জ্বালাও-পোড়াও এবং পেট্রলবোমায় মানুষ হত্যার’ প্রতিবাদে এই গণপদযাত্রা অনুষ্ঠিত হয়। গণপদযাত্রা শুরুর আগে বেলা তিনটায় মানিক মিয়া অ্যাভিনিউতে সমাবেশ শুরু হয়। সমাবেশ শেষে বিকেল চারটা ৪০ মিনিটের দিকে গণপদযাত্রা শুরু হয়। পদযাত্রায় বিপুলসংখ্যক লোক অংশ নেন। মিছিলের একপর্যায়ে মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রী আ ক ম মোজাম্মেল হকও পদযাত্রায় অংশ নেন। পদযাত্রা সোহরাওয়ার্দী উদ্যানের শিখা চিরন্তনে গিয়ে শেষ হয়। সেখানে সন্ধ্যা ছয়টার দিকে শাজাহান খান উপস্থিত সবাইকে শপথবাক্য পাঠ করান।
মানিক মিয়া অ্যাভিনিউর রাজধানী উচ্চবিদ্যালয় স্কুলের সামনে খোলা ট্রাকে বক্তব্য শুরুর কিছুক্ষণ পর থেকেই অ্যাভিনিউর দুপাশের যানবাহন চলাচল বন্ধ হয়ে যায়। এ অবস্থা চলে প্রায় বিকেল পাঁচটা পর্যন্ত। গণপদযাত্রা শুরু হলে ফার্মগেটের এক পাশের রাস্তা বন্ধ হয়ে যায়। মিছিল যতক্ষণ না কারওয়ান বাজার পর্যন্ত আসে ততক্ষণ বিভিন্ন পদচারী-সেতুর সামনে পুলিশ দাঁড়িয়ে প্রবেশমুখ বন্ধ করে দেয়। এতে করে পথচারীরা ক্ষোভ প্রকাশ করে।
বিকেলে বিভিন্ন অফিস ছুটির পর অফিস থেকে বের হয়েই অনেকে হতবাক হয়ে যান। কেননা, ব্যস্ত সড়কের চেহারাটাই পাল্টে গেছে। ব্যান্ড পার্টির বাজনা, বাঁশির শব্দ, বড় বড় লাল পতাকা, মিছিলে অংশগ্রহণকারীদের বাইরেও ট্রাক, ভ্যান, মোটরবাইকে করে যাওয়া মানুষের উপস্থিতি ছাড়া এ সময় আর কিছু চোখে পড়েনি। ফার্মগেটের সামনে ফুটপাত দিয়ে চলাচলকারীদেরও অনুষ্ঠান আয়োজনকারীদের পক্ষ থেকে কয়েকজন মিছিলের সঙ্গে হাঁটতে বাধ্য করেন।
ঘণ্টা খানেকের বেশি সময় জ্যামে আটকে পড়া যাত্রীদের বসে বসে এ দৃশ্য দেখা ছাড়া আর কিছু করার ছিল না। ফার্মগেট পার হওয়ার পর কারওয়ান বাজারের কাছাকাছি একজন চালককে কতক্ষণ ধরে বসে আছেন জানতে চাইলে খানিকটা হেসে বলেন, ‘আপা আর বইলেন না। এক ঘণ্টা পার হইছে। আর কতক্ষণ লাগব কে জানে।’
কিছু উৎসাহী পথচারী নিজেদের মুঠোফোনে গণপদযাত্রার ছবি তুলছিলেন। তবে বিকেল পাঁচটার দিকে ঝোড়ো বাতাস বইতে শুরু করলে গণপদযাত্রায় অংশগ্রহণকারীদের মধ্যে কিছুটা হুড়োহুড়ি লাগে। অনেকে কাঁটাতারের বেড়া টপকে মিছিল থেকে কেটে পড়েন। একই ভাবে অনেকে বিভিন্ন গলিতে ঢুকে পড়েন। অন্যদিকে পদযাত্রা শুরুর পর থেকেই রাস্তা থেকে দলে দলে লোক সটকে পড়তে থাকেন।
পদযাত্রা শুরুর আগে সমাবেশে তথ্যমন্ত্রী হাসানুল হক ইনু বলেন, ‘জঙ্গিবাদ নেত্রী আমাদের মেরে ফেলার চক্রান্ত করেছিলেন। এখনো আমরা বিপদমুক্ত নই। মনে রাখতে হবে, পেট্রলবোমা, আগুনে পুড়িয়ে খালেদা জিয়া পরিকল্পিত হত্যাকাণ্ড চালিয়েছেন। তাই তাঁকে কাঠগড়ায় দাঁড়াতে হবে। সবাই আওয়াজ তুলুন, সন্ত্রাসীদের বিচার চাই, সাজা চাই।’
সাংসদ শিরীন আখতার খালেদা জিয়ার ‘রহম’ হয়েছে বলে উল্লেখ করেন। তবে বাংলার মানুষ তাঁকে ক্ষমা করবে না। তাঁর বিচার হবেই হবে। অপরাধের সাজা খাটতে হবে।
সমাবেশে অন্যদের মধ্যে সাংসদ এনামুর রহমান, মুক্তিযোদ্ধা সংসদের চেয়ারম্যান হেলাল মোর্শেদ খান (বীর প্রতীক) প্রমুখ বক্তব্য দেন। খোলা ট্রাকে যখন নেতারা বক্তব্য দিচ্ছিলেন তখন ট্রাকের নিচে এবং সামনে উপস্থিত তরুণ প্রতিনিধিরা একটু পর পর স্লোগান দিচ্ছিলেন। আর ট্রাকের ওপর থেকে নৌপরিবহনমন্ত্রী ঠোঁটে আঙুল চেপে বারবার চুপ থাকতে বলছিলেন। কিন্তু কে শুনে কার কথা।
সমাবেশ শুরু হওয়ার আগেই ব্যান্ডের বাজনার তালে তালে এক নারী নাচ শুরু করেন। এতে উপস্থিত সবাই ব্যাপক মজা পান। সমাবেশ এবং গণপদযাত্রায় শিশুদের উপস্থিতিও ছিল চোখে পড়ার মতো। সমাবেশ শেষে খাবারের প্যাকেট বিতরণ, পানির বোতল বিতরণের সময়ও শুরু হয় হুড়োহুড়ি।
কবি নজরুল সরকারি কলেজের প্রথম বর্ষের শিক্ষার্থী মো. কাউসার জানাল, তার কলেজের প্রায় ৩০০ শিক্ষার্থী এ সমাবেশে এসেছে। সমাবেশে আসার জন্য কেউ টাকা-পয়সা দিয়েছে কি না, জানতে চাইলে একই কলেজের দ্বিতীয় বর্ষের শিক্ষার্থী সৈয়দ আশিকুর রহমান বলে, ‘টাকা-পয়সার জন্য এইখানে কেউ আসে না। আসে ভালোবাসার টানে। নিজেরাই পাঁচটা বাসভাড়া করে এসেছি।’