Thank you for trying Sticky AMP!!

বিএনপির দুর্গে মহাজোট সক্রিয়

ঢাকার কোনো আসনে টানা একক কর্তৃত্ব ছিল না কোনো দলের। প্রতি নির্বাচনে পালাবদল হলেও এখানে চারবার সাংসদ হন খোকা।


আওয়ামী লীগের জন্ম হয়েছে পুরান ঢাকায়। সত্তরের নির্বাচনে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান এখান থেকে জয়ী হয়েছেন। কিন্তু মুসলিম লীগের ঘাঁটি হিসেবে পরিচিত এই এলাকা কালক্রমে বিএনপির ঘাঁটিতে পরিণত হয়। ১৯৯১ থেকে ২০০১ পর্যন্ত টানা চারবার সাংসদ হন বিএনপির সাদেক হোসেন খোকা। এরপর ২০০৮ সালে আসনটিতে প্রথম হানা দেয় আওয়ামী লীগ। এখন খোকার অনুপস্থিতিতে আসনটির দখল ধরে রাখতে তৎপর মহাজোট। 

জানা গেছে, চিকিৎসার জন্য কয়েক বছর ধরে যুক্তরাষ্ট্রে অবস্থান করছেন সাদেক হোসেন খোকা। আগামী নির্বাচনে তাঁর ছেলে প্রকৌশলী ইসরাক হোসেন এখানে নির্বাচন করতে পারেন। জোটবদ্ধ নির্বাচন হলে মহাজোটের প্রার্থী হতে পারেন বর্তমান সাংসদ জাতীয় পার্টির কাজী ফিরোজ রশীদ। আওয়ামী লীগ থেকে মনোনয়ন আলোচনায় আছেন আবু আহমেদ মন্নাফী ও সাইদুর রহমান প্যাটেল।
জয়ের জন্য পর্যাপ্ত ভোট না থাকায় ঢাকার কোনো আসনে একটানা একক কর্তৃত্ব ছিল না কোনো দলের। প্রতি নির্বাচনে পালাবদল হয়েছে। সেদিক থেকে আলাদা ঢাকা-৬। টানা চারবার এখানে সাংসদ হয়েছেন বিএনপির খোকা। ১৯৯১ ও ২০০১ সরকারের মন্ত্রী ছিলেন। অবিভক্ত ঢাকার মেয়র হয়েছেন ২০০২ সালে। এমনকি ২০০৮-এর নির্বাচনে বিএনপির ভরাডুবির সময়েও ঢাকায় সবচেয়ে বেশি প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেছেন খোকা। তাঁর অনুপস্থিতিতে বিএনপি এখন দ্বিধাবিভক্ত। আইনি জটিলতা থাকায় তাঁর নির্বাচন করার সম্ভাবনা তেমন দেখছেন না নেতা-কর্মীরা। তাঁর দেশে ফেরার আশাও করছেন না তাঁরা। বরং খোকার ছেলে ইসরাক হোসেনকে নিয়ে নির্বাচনের স্বপ্ন দেখছে স্থানীয় বিএনপি। ইসরাক নিজেও বর্তমানে বাবার সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্রে আছেন।
সাদেক হোসেন খোকা যুক্তরাষ্ট্র থেকে ফোনে প্রথম আলোকে বলেন, ‘রাজনৈতিক পরিস্থিতি বুঝে দল নির্বাচনে যাওয়ার ব্যাপারে সিদ্ধান্ত নেবে। এরপর দলের মনোনয়ন ও আমার শারীরিক অবস্থার ওপর নির্বাচনে অংশ নেওয়ার বিষয়টি নির্ভর করে।’ তাঁর ছেলের প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ‘আমি নির্বাচন করতে না পারলে দল যদি আমার ছেলেকে মনোনয়ন দেয়, তাহলে সে নির্বাচন করবে।’
খোকা পরিবারের বাইরে ঢাকা মহানগর দক্ষিণের সাধারণ সম্পাদক কাজী আবুল বাশার মনোনয়ন চাইবেন বলে জানা গেছে। এ ছাড়া মনোনয়ন দৌড়ে আছেন ৪০ নম্বর ওয়ার্ড কাউন্সিলর মকবুল ইসলাম খান টিপু। বাশার ও টিপু দুজনেই বর্তমানে কারাগারে থাকায় কথা বলা সম্ভব হয়নি।
এদিকে বর্তমান সাংসদ জাতীয় পার্টির প্রেসিডিয়াম সদস্য কাজী ফিরোজ রশীদ আগামী নির্বাচনের প্রস্তুতি নিতে শুরু করেছেন। ২০১৪-এর নির্বাচনে তিনি মহাজোটের প্রার্থী হিসেবে বিজয়ী হন। জোটবদ্ধ নির্বাচন হলে মহাজোট থেকে এবারও তাঁর প্রার্থী হওয়ার সম্ভাবনা বেশি। যদিও আওয়ামী লীগ থেকে প্রার্থী দেওয়ার জন্য দলের কেন্দ্রীয় পর্যায়ে দাবি জানিয়েছেন স্থানীয় নেতা-কর্মীরা। তাঁদের দাবি, বঙ্গবন্ধু ও শেখ হাসিনা এখানে নির্বাচন করেছেন, তাই এ আসনে নৌকা প্রতীকের কাউকে মনোনয়ন দেওয়া হোক। দল থেকে মনোনয়ন পেতে একাধিক নেতা মাঠ চষে বেড়াচ্ছেন।
এ প্রসঙ্গে কাজী ফিরোজ রশীদ প্রথম আলোকে বলেন, ‘মনোনয়ন অনেকে চাইতেই পারে। এ ব্যাপারে জোট বা দলের সিদ্ধান্তই চূড়ান্ত। আমার সঙ্গে আওয়ামী লীগের নেতাদের কোনো বিরোধ নেই। টানা তিনবার জগন্নাথ কলেজের ভিপি ছিলাম, ছাত্রলীগ-যুবলীগ করেছি। তাই স্থানীয় সবার সঙ্গেই আমার সম্পর্ক ভালো।’
তবে দল থেকে মনোনয়ন নিশ্চিত করতে আটঘাট বেঁধে মাঠে নেমেছেন দুই প্রবীণ রাজনীতিবিদ আবু আহমেদ মন্নাফী ও সাইদুর রহমান প্যাটেল। ৩৮ নম্বর ওয়ার্ড কাউন্সিলর মন্নাফী মহানগর আওয়ামী লীগের জ্যেষ্ঠ সহসভাপতি। ৫৪ বছরের রাজনীতির বেশির ভাগ সময় বৃহত্তর সূত্রাপুরকে নেতৃত্ব দিয়েছেন সাধারণ সম্পাদক ও সভাপতি হিসেবে। তিনি প্রথম আলোকে বলেন, ‘দলের দুঃসময়ে রাজপথে ছিলাম। মুসলিম লীগের ঘাঁটি হিসেবে পরিচিত এই এলাকায় আওয়ামী লীগ প্রতিষ্ঠায় সামনে থেকে ভূমিকা রেখেছি। এবার দল থেকে মনোনয়ন প্রত্যাশা করছি। নেত্রী যা নির্দেশনা দেবেন, তা-ই মেনে নেব।’
স্বাধীন বাংলা ফুটবল দলের সংগঠক ও খেলোয়াড় সাইদুর রহমান প্যাটেল মাঝখানে ১২ বছর যুক্তরাষ্ট্রে কাটিয়েছেন। ২০১৩ সালে দেশে ফিরে নির্বাচনের জন্য মাঠ গোছাতে শুরু করেন। গেন্ডারিয়ায় বেড়ে ওঠা প্যাটেল বিভিন্ন অনুষ্ঠানে নিয়মিত যোগ দিচ্ছেন। তিনি প্রথম আলোর কাছে দাবি করেন, ‘গেন্ডারিয়ায় আওয়ামী লীগের রাজনীতি প্রতিষ্ঠায় সক্রিয় ভূমিকা রেখেছি। পরিচ্ছন্ন ও যোগ্য প্রার্থী হিসেবে নেত্রী এবার আমাকে মনোনয়ন দেবেন বলে প্রত্যাশা করছি।’
এই দুজন ছাড়া ঢাকা মহানগর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক শাহে আলম মুরাদ আলোচনায় আছেন। ওয়ারী থানা আওয়ামী লীগের সভাপতি চৌধুরী আশিকুর রহমান লাভলু এবং সূত্রাপুর থানা আওয়ামী লীগের সভাপতি হাজি মোহাম্মদ সাহিদও মনোনয়নের চেষ্টা করছেন বলে জানা গেছে।
স্থানীয় লোকজন জানান, সূত্রাপুর, গেন্ডারিয়া, ওয়ারী ও কোতোয়ালি থানার আংশিক নিয়ে ঢাকা-৬-এর সংসদীয় এলাকা। ঢাকার যাত্রা শুরু এখান থেকেই। কিন্তু ক্রমে ঢাকা বিস্তৃত হয়েছে, গড়ে উঠেছে নতুন ঢাকা। আর পিছিয়ে পড়েছে পুরান ঢাকা। বুড়িগঙ্গাকে কেন্দ্র করে এ শহরের জন্ম হলেও আজ বুড়িগঙ্গা মৃতপ্রায়। সাংসদ বা সরকার বদলে বুড়িগঙ্গার উন্নতি হয়নি, অবনতি হয়েছে নিয়ত। ৪০০ বছরের ঢাকার সাক্ষী হয়ে দাঁড়িয়ে আছে অনেক ভবন, যত্নের অভাব আছে সেখানেও। পাকিস্তান আমলে গড়ে ওঠা বস্তির মানুষগুলো এখনো পাচ্ছে না দরকারি নাগরিক সুবিধা। অধিকাংশ রাস্তা ঢাকার অলিগলি-ঘুপচি হিসেবেই রয়ে গেছে এখানে। পুরান ঢাকার এই অবস্থার পরিবর্তন চান এলাকার ভোটাররা।