Thank you for trying Sticky AMP!!

হাবিবুল আউয়ালের নেতৃত্বে ইসি

চার নির্বাচন কমিশনার হলেন বেগম রাশিদা সুলতানা, আহসান হাবীব খান, মো. আলমগীর ও আনিছুর রহমান। আজ বিকেলে শপথ।

কাজী হাবিবুল আউয়াল, বেগম রাশিদা সুলতানা, আহসান হাবীব খান, মো. আলমগীর ও আনিছুর রহমান

অবসরপ্রাপ্ত জ্যেষ্ঠ সচিব কাজী হাবিবুল আউয়ালকে দেশের নতুন প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) হিসেবে নিয়োগ দেওয়া হয়েছে। তাঁর সঙ্গে নির্বাচন কমিশনার হিসেবে নিয়োগ পেয়েছেন আরও চারজন। তাঁরা হলেন অবসরপ্রাপ্ত জেলা ও দায়রা জজ বেগম রাশিদা সুলতানা, অবসরপ্রাপ্ত ব্রিগেডিয়ার জেনারেল আহসান হাবীব খান এবং সাবেক দুই জ্যেষ্ঠ সচিব মো. আলমগীর ও আনিছুর রহমান। নতুন এই নির্বাচন কমিশনের (ইসি) অধীনে আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে।

সংবিধানের ১১৮(১) অনুচ্ছেদের ক্ষমতা অনুযায়ী, রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ সিইসি এবং অপর চার কমিশনার নিয়োগ দেন। এ বিষয়ে গতকাল শনিবার সন্ধ্যায় প্রজ্ঞাপন জারি করেছে মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ। স্বাধীনতার পর এবারই প্রথম আইন অনুযায়ী নির্বাচন কমিশন (ইসি) গঠিত হলো।

ইসি গঠনে যোগ্য ব্যক্তি বাছাইয়ে গঠিত অনুসন্ধান কমিটি গত বৃহস্পতিবার বঙ্গভবনে রাষ্ট্রপতির হাতে ১০ জনের নামের তালিকা তুলে দিয়েছিল। সেই তালিকা থেকেই রাষ্ট্রপতি নতুন নির্বাচন কমিশন গঠন করলেন। নির্বাচন কমিশন গঠনের এখতিয়ার রাষ্ট্রপতির হলেও সংবিধানে বলা আছে, কেবল প্রধানমন্ত্রী ও প্রধান বিচারপতি নিয়োগের ক্ষেত্র ছাড়া রাষ্ট্রপতি অন্য সব দায়িত্ব পালনে প্রধানমন্ত্রীর পরামর্শ অনুযায়ী কাজ করবেন।

এদিক নতুন নিয়োগ পাওয়া সিইসি এবং কমিশনারদের শপথ হবে আজ রোববার বিকেলে সুপ্রিম কোর্টের জাজেস লাউঞ্জে। তাঁদের শপথ পড়াবেন প্রধান বিচারপতি হাসান ফয়েজ সিদ্দিকী।

নিয়োগ পাওয়ার পর গতকাল সন্ধ্যায় তাৎক্ষণিক প্রতিক্রিয়ায় নতুন সিইসি কাজী হাবিবুল আউয়াল প্রথম আলোকে বলেছেন, ‘একটি দায়িত্ব আরোপিত হয়েছে। এই দায়িত্ব আন্তরিকতা ও নিষ্ঠার সঙ্গে পালন করার চেষ্টা করব। কমিশনের অপর সদস্যদের দায়িত্ব গ্রহণের পর তাঁদের নিয়ে বসে কর্মপদ্ধতি নির্ধারণ করব।’

নতুন সিইসি বলেন, ‘আওয়ামী লীগকে নিয়ে তো কোনো সমস্যা নাই। ওরা তো নির্বাচন করবেই। যাঁরা বলছেন, নির্বাচন করবেন না, সেসব দলের নেতাদের প্রতি আমাদের অবশ্যই একটা আবেদন থাকবে যে আপনারা আসেন, নির্বাচনে অংশগ্রহণ করেন।’

নির্বাচনে গণমাধ্যমের ভূমিকা গুরুত্বপূর্ণ উল্লেখ করে হাবিবুল আউয়াল বলেন, এ ক্ষেত্রে গণমাধ্যমের সহযোগিতা চাইবেন। সুন্দর ও গ্রহণযোগ্য নির্বাচনের সর্বোচ্চ চেষ্টা থাকবে। সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘রাজনৈতিক দল মানেই তো তারা নির্বাচন করবে। সেটা বিএনপি হোক, যাই বলি না কেন। অন্তত তাদের তো দাওয়াত করতেই হবে, আমন্ত্রণ জানাতে হবে।’

৩২২ থেকে ৫ জন

গত ২৭ জানুয়ারি জাতীয় সংসদে আইন পাসের পর ইসি গঠনে যোগ্য ব্যক্তি বাছাইয়ে ৫ ফেব্রুয়ারি আপিল বিভাগের বিচারপতি ওবায়দুল হাসানের নেতৃত্বে অনুসন্ধান কমিটি গঠন করা হয়। কমিটি নির্বাচন কমিশনে নিবন্ধিত রাজনৈতিক দলগুলোর কাছে নাম দেওয়ার অনুরোধ করেছিল। ব্যক্তিপর্যায়েও নাম আহ্বান করা হয়। ১৪ ফেব্রুয়ারি ৩২২ জনের নামের তালিকা প্রকাশ করে কমিটি। তবে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের প্রধান রাজনৈতিক প্রতিপক্ষ বিএনপি, সিপিবি, বাসদ, বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পার্টি, এলডিপি, বাংলাদেশ কল্যাণ পার্টি, বাংলাদেশ মুসলিম লীগসহ নিবন্ধিত কয়েকটি দল অনুসন্ধান কমিটির কাছে ইসি গঠনে কোনো নামের প্রস্তাব পাঠায়নি।

অনুসন্ধান কমিটির প্রকাশ করা ৩২২ জনের তালিকা থেকেই নতুন নির্বাচন কমিশনের ৫ জনকে নিয়োগ দেওয়া হয়েছে। অবশ্য অনুসন্ধান কমিটি চূড়ান্তভাবে যে ১০ জনের নাম সুপারিশ করেছিল, তা প্রকাশ করা হয়নি। ১০ জনের মধ্যে নিয়োগ পাওয়া ৫ জনের নাম জানা গেলেও বাকি ৫ জন কারা, তা জানা যায়নি। নতুন সিইসি কাজী হাবিবুল আউয়ালের নামটি ছিল ৩২২ জনের তালিকার ৪৯ নম্বরে (তবে যোগ্যতার ক্রম অনুসারে তালিকাটি করা হয়নি)। তিনি সর্বশেষ প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়ের জ্যেষ্ঠ সচিব হিসেবে সরকারি চাকরি থেকে অবসরে যান। এর আগে তিনি ধর্মবিষয়ক মন্ত্রণালয়ের সচিব এবং আইন মন্ত্রণালয়ে সচিবের দায়িত্ব পালন করেন।

কাজী হাবিবুল আউয়াল বিসিএস ১৯৮১ ব্যাচের কর্মকর্তা। তাঁর চাকরিজীবন শুরু হয়েছিল মুনসেফ (সহকারী জজ) হিসেবে। ১৯৯৭ সালে জেলা ও দায়রা জজ হিসেবে পদোন্নতি পান। অবসরের পর তিনি ব্র্যাক ইউনিভার্সিটিতে শিক্ষকতা করেছেন। এ ছাড়া তিনি বিভিন্ন গণমাধ্যমে কলাম লেখেন।

বিচার বিভাগ থেকে আসা হাবিবুল আউয়াল আইনসচিব হিসেবে দায়িত্ব পাওয়ার পর তাঁর নিয়োগ অবৈধ ঘোষণা করে ২০১০ সালে রায় দেন আদালত। আইন মন্ত্রণালয়ের সচিব পদে তাঁর নিয়োগের সময় নীতিমালা মানা না হওয়ায় আদালত ওই নিয়োগ অবৈধ ঘোষণা করেছিলেন। এ ছাড়া আইনসচিব থাকা অবস্থায় বিধিবহির্ভূতভাবে দুই বিচারককে অবসরে পাঠানোর ঘটনায় সংসদীয় কমিটি তলব করেছিল তাঁকে। ওই সব ঘটনার পর ধর্মসচিব করা হয় হাবিবুল আউয়ালকে। পরে জাতীয় সংসদ সচিবালয় ও প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়ের সচিব হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়ে থাকার সময়ই জ্যেষ্ঠ সচিব হিসেবে পদোন্নতি পান তিনি। অবসরে যাওয়ার পাঁচ বছর পর এখন সিইসি হিসেবে নিয়োগ পেলেন তিনি। তাঁর নেতৃত্বাধীন কমিশনের অধীনেই আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে।

হাবিবুল আউয়ালের বাড়ি চট্টগ্রামের সন্দ্বীপে। তবে তাঁর জন্ম কুমিল্লায়। তাঁর বাবা সেখানে চাকরি করতেন।

নতুন নির্বাচন কমিশনারদের মধ্যে বেগম রাশিদা সুলতানা ২০২০ সালে রংপুরের জেলা ও দায়রা জজ হিসেবে অবসরোত্তর ছুটিতে যান। গত বছর তাঁর অবসরজীবন শুরু হয়। তাঁর বাড়ি সিরাজগঞ্জের কাজীপুরে। তবে তিনি এখন খুলনায় থাকেন একমাত্র সন্তানের কাছে। তাঁর ছেলে খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন বিভাগের শিক্ষক।

রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাক্তন ছাত্রী রাশিদা সুলতানা তাৎক্ষণিক প্রতিক্রিয়ায় প্রথম আলোকে বলেন, ‘আল্লাহ আমাকে বড় একটি দায়িত্ব দিয়েছেন। আমি সুচারুভাবে পালন করার চেষ্টা করব।’

নির্বাচন কমিশনার হিসেবে নিয়োগ পাওয়া অবসরপ্রাপ্ত ব্রিগেডিয়ার জেনারেল আহসান হাবীব খান বাংলাদেশ টেলিযোগাযোগ নিয়ন্ত্রণ কমিশনের (বিটিআরসি) সাবেক ভাইস চেয়ারম্যান।

আরেক নির্বাচন কমিশনার মো. আলমগীর ২০২১ সালে নির্বাচন কমিশন সচিবালয়ের জ্যেষ্ঠ সচিব হিসেবে অবসরে যান। তিনি প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তরের মহাপরিচালকসহ সরকারের বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ পদে দায়িত্ব পালন করেছেন।

তাৎক্ষণিক প্রতিক্রিয়ায় মো. আলমগীর প্রথম আলোকে বলেন, ‘নির্বাচন কমিশনার হওয়া বড় কথা নয়, কাজটি সুন্দরভাবে করতে পারাই বড় কথা।’

অপর নির্বাচন কমিশনার আনিছুর রহমান জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ বিভাগের জ্যেষ্ঠ সচিব হিসেবে গত ডিসেম্বরে অবসরে গেছেন। এর আগে তিনি ধর্ম মন্ত্রণালয়ের সচিবসহ সরকারের বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্ব পালন করেন। তাঁর বাড়ি শরীয়তপুরে।

আওয়ামী লীগের অভিনন্দন, আগ্রহ নেই বিএনপির

নতুন নির্বাচন কমিশনকে অভিনন্দন জানিয়েছে আওয়ামী লীগ। তাঁরা দেশবাসীর প্রত্যাশা পূরণ করতে পারবেন বলে মনে করছেন আওয়ামী লীগের নেতারা। একই সঙ্গে অবাধ, সুষ্ঠু, নিরপেক্ষ ও সবার অংশগ্রহণে একটি নির্বাচন উপহার দিতে সর্বাত্মক সহযোগিতা করারও আশ্বাস দিয়েছেন দলটির নেতারা।

নতুন নির্বাচন কমিশন নিয়ে আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য কাজী জাফর উল্যাহ বাসসকে বলেন, অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচন করা নতুন কমিশনের দায়িত্ব। এ ব্যাপারে কমিশনকে সর্বাত্মক সহযোগিতা করবে আওয়ামী লীগ। আর দলের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক আ ফ ম বাহাউদ্দিন নাছিম প্রথম আলোকে বলেন, আওয়ামী লীগ স্বাগত ও অভিনন্দন জানায় নতুন ইসিকে। তবে কাজকর্ম দিয়েই ইসিকে মূল্যায়ন করা যাবে।

এদিকে নতুন নির্বাচন কমিশন নিয়ে কোনো আগ্রহ না থাকার কথা জানিয়েছেন বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। তিনি প্রথম আলোকে বলেন, সরকারে আওয়ামী লীগ থাকলে নির্বাচন কোনোভাবেই নিরপেক্ষ হবে না—এটাই ‘ইউনিভার্সেল ট্রুথ’ (চিরন্তন সত্য)। আর দলটির স্থায়ী কমিটির সদস্য আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী বলেছেন, নির্বাচন কমিশন নয়, জাতির দৃষ্টি এখন নির্বাচনকালীন নির্দলীয় সরকারের দিকে। একটা নির্দলীয় নিরপেক্ষ সরকার ব্যতীত এ জাতীয় নির্বাচন কমিশন নিয়ে আলোচনা করে কোনো লাভ নেই। তিনি বলেন, নির্বাচন করে সরকার। নির্বাচন কমিশনের হাতে কিছুই নেই।