বিএনপির সঙ্গে যুগপৎ আন্দোলনে থাকা মিত্র রাজনৈতিক দলগুলোর নির্ধারিত বৈঠক স্থগিত করা হয়েছে। আজ বৃহস্পতিবার সন্ধ্যা সাতটার দিকে বিএনপি চেয়ারপারসনের গুলশানের রাজনৈতিক কার্যালয়ে এ বৈঠক হওয়ার কথা ছিল। বৈঠকটি আগামী শনিবার বেলা ১১টায় অনুষ্ঠিত হবে বলে জানিয়েছেন গণ অধিকার পরিষদের সাধারণ সম্পাদক রাশেদ খান।
আজ রাত সাড়ে আটটার দিকে গুলশান কার্যালয়ের সামনে রাশেদ খান সাংবাদিকদের বলেন, বিএনপি নেতাদের ব্যস্ততা ও যানজটের কারণে যুগপৎ আন্দোলনের কয়েকজন গুরুত্বপূর্ণ নেতার অনুপস্থিতির কারণে শেষ পর্যন্ত বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়নি।
রাশেদ খান জানান, বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর, দলটির স্থায়ী কমিটির সদস্য আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী, নজরুল ইসলাম খান ও ইকবাল হাসান মাহমুদ (টুকু) উপস্থিত ছিলেন। তবে যুগপৎ আন্দোলনে যুক্ত নেতাদের মধ্যে মাহমুদুর রহমান মান্না (নাগরিক ঐক্যের সভাপতি), ভিপি নূর (গণ অধিকার পরিষদের সভাপতি নুরুল হক), জোনায়েদ সাকি (গণসংহতি আন্দোলনের প্রধান সমন্বয়কারী) উপস্থিত হতে পারেননি। বিএনপি নেতারা রাত আটটা পর্যন্ত অপেক্ষা করলেও শেষ পর্যন্ত সিদ্ধান্ত হয়, শনিবার বেলা ১১টা থেকে দীর্ঘ বৈঠকে সব বিষয় চূড়ান্তভাবে নিষ্পন্ন করা হবে।
গণ অধিকার পরিষদের সাধারণ সম্পাদক বলেন, ‘এটা নিয়ে যাতে ভুল–বোঝাবুঝি না হয় এবং অনেকেই আসতে না পারায় বিএনপি বৈঠকটি শনিবারে নেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে।’
রাশেদ খান বলেন, ‘বিএনপির সঙ্গে ৪০টির বেশি দল ২০২২ সাল থেকে যুগপৎ আন্দোলন করছে। আমরা নিপীড়ন, রিমান্ড, নির্যাতন—সবকিছু সহ্য করেছি। এখন নির্বাচন সামনে প্রতিটি দলেরই প্রত্যাশা আছে।’
গণ অধিকার পরিষদের সাধারণ সম্পাদক বলেন, বিএনপি ইতিমধ্যে তাদের প্রার্থিতা ঘোষণা করেছে। শরিকেরাও দলগতভাবে প্রার্থী ঘোষণা করেছে। এখন মূল আলোচনা হবে কতটি আসন শরিকদের জন্য ছাড়া হবে। এ বিষয়ে তারা ‘সঠিক ও ন্যায্য সিদ্ধান্ত’ আশা করেন।
শরিকদের কাঙ্ক্ষিত আসন না পাওয়া গেলে সম্পর্ক ভাঙতে পারে কি না— এমন প্রশ্নে রাশেদ খান বলেন, ‘আমরা কখনো বিএনপিকে শর্ত দিইনি যে আসন না দিলে (আন্দোলনে) লড়ব না। আমাদের লক্ষ্য ছিল শেখ হাসিনার পতন। ৩১ দফা ও জাতীয় সরকারের প্রতিশ্রুতির ভিত্তিতে আমরা একসঙ্গে লড়েছি। আলোচনার মাধ্যমেই সমাধান হবে।’
গণ অধিকার পরিষদের সাধারণ সম্পাদক আরও বলেন, ‘কয়টি আসন পাব এখনই বলতে পারছি না। তবে আমরা বিএনপির সঙ্গে আছি, থাকব।’
বিএনপিতে যোগদানের গুঞ্জন নিয়েও কথা বলেন রাশেদ খান। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়া এমন গুঞ্জন সম্পূর্ণ ভিত্তিহীন বলে দাবি করে তিনি বলেন, ‘আমি নিজেও এসব দেখে বিব্রত। কোনো ধরনের আলোচনা হয়নি। তবে সাবেক উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদের সঙ্গে আমাদের বৈঠক হয়েছে। তিনি গণ অধিকার পরিষদে যোগ দেওয়ার ব্যাপারে ইতিবাচক মনোভাব পোষণ করেছেন, যদিও চূড়ান্ত করেননি।’
তফসিল ঘোষণাকে স্বাগত
এ সময় রাশেদ খান বলেন, ‘আজকে নির্বাচন কমিশন তফসিল ঘোষণা করেছে ১২ ফেব্রুয়ারি ভোট। আমরা সরকার ও নির্বাচন কমিশনকে ধন্যবাদ জানাচ্ছি। সরকারের উপদেষ্টারাও আমাদের বারবার বলেছেন, ফেব্রুয়ারিতেই নির্বাচন হবে। এখন সেই অনিশ্চয়তা দূর হয়েছে।’ তাঁর দাবি, সরকার ও নির্বাচন কমিশনের ওপর রাজনৈতিক দলগুলোর ধারাবাহিক চাপের ফলেই তফসিল দ্রুত ঘোষিত হয়েছে।
গণ অধিকার পরিষদের সাধারণ সম্পাদক বলেন, ‘আমি ঝিনাইদহ-২ আসন থেকে নির্বাচন করার প্রস্তুতি নিচ্ছি। এলাকায় গিয়ে মানুষের সঙ্গে কথা বলছি। অনেকে প্রশ্ন করছিলেন, নির্বাচন হবে তো? আজ ঘোষণার মধ্য দিয়ে আওয়ামী লীগ ও ভারতের চক্রান্ত নস্যাৎ হয়েছে।’
এ সময় দুই উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদ সজীব ভুঁইয়া ও মাহফুজ আলমের পদত্যাগের বিষয়ে রাশেদ খান বলেন, ‘তাঁরা পদত্যাগ করায় সরকারের নিরপেক্ষতা নিশ্চিত হয়েছে। তাঁদের সাধুবাদ জানাই।’