
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র-শিক্ষক কেন্দ্রে (টিএসসি) ইসলামী ছাত্রশিবিরের জুলাই গণ-অভ্যুত্থানের প্রদর্শনীতে একাত্তরে যুদ্ধাপরাধের দায়ে দণ্ডিত ব্যক্তিদের ছবি রাখার ঘটনায় ঘৃণা মিছিল করেছে বামপন্থী সংগঠনগুলো। মঙ্গলবার রাত সাড়ে নয়টার দিকে এ মিছিল হয়। একই সময়ে এ নিয়ে সংবাদ সম্মেলন করেছে ছাত্রশিবির।
জুলাই অভ্যুত্থানের বর্ষপূর্তিতে টিএসসিতে ছাত্রশিবিরের বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ‘৩৬ জুলাই: আমরা থামব না’ শীর্ষক তিন দিনব্যাপী প্রদর্শনী, আলোচনা সভা ও সাংস্কৃতিক কর্মসূচির আয়োজন করে। প্রদর্শনীতে দণ্ডিত যুদ্ধাপরাধীদের রাখা ছবি সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়লে ব্যাপক প্রতিক্রিয়ার সৃষ্টি হয়। পরে সন্ধ্যায় প্রদর্শনী থেকে দণ্ডিত যুদ্ধাপরাধীদের ছবি সরিয়ে নেয় বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন।
এদিকে প্রদর্শনীতে দণ্ডিত যুদ্ধাপরাধীদের ছবি রাখার প্রতিবাদে টিএসসির মূল ফটকে জড়ো হয়ে স্লোগান দিতে থাকেন ছাত্র ইউনিয়নসহ বিভিন্ন বাম ছাত্রসংগঠনের নেতা-কর্মীরা। তাঁরা ‘২৪-এর বাংলায়, রাজাকারের ঠাঁই নাই’, ‘৭১ হারে নাই, হেরে গেছে স্বৈরাচার’, ‘তোরা যারা রাজাকার, এই মুহূর্তে বাংলা ছাড়’ প্রভৃতি স্লোগান দিতে থাকেন।
এ সময় টিএসসির মূল ফটকের অন্য পাশে অবস্থান নেওয়া ছাত্রশিবিরের নেতা-কর্মীরা ‘নারায়ে তাকবির, আল্লাহু আকবার’, ‘শাহবাগীদের আস্তানা, ভেঙে দাও গুঁড়িয়ে দাও’, ‘স্বৈরাচারের দালালেরা, হুঁশিয়ার সাবধান’ প্রভৃতি স্লোগান দেন।
পরে রাত নয়টার দিকে বাম সংগঠনগুলোর নেতা-কর্মীরা টিএসসি থেকে ‘রাজাকার-স্বৈরাচারের প্রতি ঘৃণা মিছিল’ বের করেন। মিছিলটি বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিসি চত্বরে গিয়ে শেষ হয়।
এর আগে ক্রিয়াশীল সংগঠনগুলোর পক্ষ থেকে প্রক্টরের কাছে চার দাবি তুলে ধরা হয়। দাবিগুলো হলো তাৎক্ষণিক যুদ্ধাপরাধীদের ছবি সরিয়ে নিয়ে আয়োজনটি বন্ধ করতে হবে; এমন কর্মকাণ্ডের জন্য ছাত্রশিবিরকে জনসমক্ষে ক্ষমা চাইতে হবে; পরবর্তী সময়ে এমন কর্মকাণ্ড যেন না ঘটে, তার নিশ্চয়তা প্রদান করতে হবে এবং বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের উপস্থিতিতে এমন ন্যক্কারজনক ঘটনা কীভাবে ঘটেছে তার ব্যাখ্যা দিতে হবে এবং ক্ষমা চাইতে হবে।
এদিকে এ ঘটনায় টিএসসি অডিটরিয়ামে সংবাদ সম্মেলনে ছাত্রশিবিরের ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শাখার সভাপতি এস এম ফরহাদ বলেন, শিবিরের ‘৩৬ জুলাই: আমরা থামব না’ শীর্ষক কর্মসূচির বিরোধিতা করে যাঁরা বিক্ষোভ করেছেন, তাঁরা প্রত্যেকে বিভিন্ন সংগঠনের পদধারী নেতা—কেউ সভাপতি, কেউ সেক্রেটারি, কেউ ভিন্ন ভিন্ন পদের।
এস এম ফরহাদ বলেন, স্পষ্টত তাঁরা রাজনৈতিক দলের প্রতিনিধিত্বশীল এবং শাহবাগ যারা কায়েম করেছিল, তাদের উত্তরসূরি। তাঁরা কোন সংগঠনের প্রতিনিধিত্ব করে তাঁদের পদবিসহ সবাই জানে।
মুক্তিযুদ্ধের বিষয়ে ছাত্রশিবিরের অবস্থান প্রসঙ্গে সংগঠনটির ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শাখার সভাপতি বলেন, ‘বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধকেন্দ্রিক যত হত্যাকাণ্ড হয়েছে, প্রত্যেকটার বিচার হওয়াটা আমরাও চাই, ইসলামী ছাত্রশিবির চায়। মুক্তিযুদ্ধের এবং মুক্তিযুদ্ধের পরবর্তী যে লিগ্যাসি, সে লিগ্যাসি বহন করেই আমরা বলেছিলাম, মুক্তিযুদ্ধের এক্সটেনডেড (বর্ধিত) রূপ হলো চব্বিশের অভ্যুত্থান।’
এস এম ফরহাদ বলেন, ‘বিচারিক হত্যাকাণ্ডের মাধ্যমে দেলাওয়ার হোসাইন সাঈদীর ফাঁসির রায় দেওয়া হলে মানুষ রাস্তায় নেমে আসে। তখন গুলি করে প্রায় ২০০ মানুষ হত্যা করা হয়। সেদিনে গুলি করে হত্যা করাটাকে যাঁরা বৈধতা দিয়েছিলেন, সেই বৈধতা দেওয়ার কারণে আওয়ামী লীগ অভ্যস্ত হয়েছে গুলি করে হত্যা করায়।’
ছাত্রশিবিরের ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শাখার সভাপতি বলেন, ‘যাঁরা প্রকাশ্যে দুই শতাধিক মানুষকে হত্যা করার বৈধতা উৎপাদন করেছেন, তাঁরা এই দায় কখনো এড়াতে পারেন না। তাঁদের কারণে আওয়ামী লীগ পরবর্তী সময়ে জুলাই-আগস্টের গণ-অভ্যুত্থানে হাজার হাজার মানুষকে গুলি করে হত্যা করেছে।’