
জাতীয় নির্বাচনের তফসিল ঘোষণার পরদিন ইনকিলাব মঞ্চের আহ্বায়ক শরিফ ওসমান বিন হাদিকে গুলি করে হত্যার ঘটনায় তিন শ আসনের প্রার্থীরাও তাঁদের জীবনের নিরাপত্তা নিয়ে উদ্বিগ্ন বলে মন্তব্য করেছেন জামায়াতে ইসলামীর সেক্রেটারি জেনারেল মিয়া গোলাম পরওয়ার।
আজ রোববার দুপুর পৌনে ১২টার দিকে রাজধানীর মগবাজারের আল-ফালাহ মিলনায়তনে জামায়াত আয়োজিত দোয়া মাহফিলে সভাপতির বক্তব্যে গোলাম পরওয়ার এ মন্তব্য করেন। ওসমান হাদির জন্য এই দোয়া মাহফিলের আয়োজন করা হয়।
ঢাকা-৮ আসনের সম্ভাব্য স্বতন্ত্র প্রার্থী ওসমান হাদিকে ১২ ডিসেম্বর দুপুরে রাজধানীর পুরানা পল্টনের বক্স কালভার্ট রোডে গুলি করে দুর্বৃত্তরা। সিঙ্গাপুরে চিকিৎসাধীন অবস্থায় গত বৃহস্পতিবার তিনি মারা যান। গতকাল শনিবার তাঁর জানাজা ও দাফন হয়।
দোয়া মাহফিলে জামায়াতের সেক্রেটারি জেনারেল বলেন, নির্বাচনের তফসিল ঘোষণার পরদিনই একজন প্রার্থীকে গুলিবিদ্ধ করার অর্থ হলো, এটা কোনো বিচ্ছিন্ন ঘটনা নয়। এটা একটা প্যাকেজ প্রোগ্রাম। আরও সিরিয়াল হয়তো করা হয়েছে।
ওসমান হাদির পর জুলাই যোদ্ধাদের কে কে টার্গেটে আছেন, তা নিয়ে জাতি উদ্বিগ্ন বলে মন্তব্য করেন গোলাম পরওয়ার। তিনি বলেন, টেলিভিশনের টক শোতে একশ্রেণির সাংবাদিক, কুশীলবেরা বলছেন। কবি-সাহিত্যিকেরা লিখছেন। তাঁদের ভাবখানা এমন, আওয়ামী লীগ নির্বাচনে না এলে যেন কোনো নির্বাচন হবে না। এই ন্যারেটিভ তৈরি করে আধিপত্যবাদবিরোধী শক্তিকে গানপয়েন্টে নিয়ে যাওয়া হচ্ছে। ওসমান হাদির পরে জুলাই যোদ্ধাদের কে কে টার্গেটে আছেন, তা নিয়ে জাতি উদ্বিগ্ন। তিন শ আসনের প্রার্থীরাও তাঁদের জীবনের নিরাপত্তা নিয়ে উদ্বিগ্ন। সরকার যেন এ বিষয়ে ত্বরিত পদক্ষেপ নেয়।
অনুষ্ঠানে জামায়াতের সেক্রেটারি জেনারেল বলেন, নির্বাচনের তফসিলের পরদিনই ওসমান হাদিকে গুলি করা হয়েছে। এরপর প্রধান নির্বাচন কমিশনার এটিকে বিচ্ছিন্ন ঘটনা বলেছেন। এটি লজ্জার। তফসিলের পরে একজন প্রার্থীর ওপর গুলি করা কোনো বিচ্ছিন্ন ঘটনা হতে পারে না। ল এনফোর্সিং এজেন্সি এখন প্রধান নির্বাচন কমিশনারের হাতে। প্রধান উপদেষ্টা ও প্রধান নির্বাচন কমিশনার দুজনেরই এখানে দায় আছে। এ দায় তাঁরা এড়াতে পারবেন না।
গোলাম পরওয়ার বলেন, ইনক্লুসিভ ইলেকশন, রিফাইন্ড আওয়ামী লীগের কথা বলে জাতির মধ্যে আবার ফ্যাসিস্টদের প্রবেশ করিয়ে এই জাতিসত্তাকে ধ্বংস করার সুযোগ দিতে চাইলে জনগণ তা মেনে নেবে না।
ওসমান হাদির জানাজায় তাঁর খুনিদের গ্রেপ্তার ও বিচারের বিষয়ে সরকারের পক্ষ থেকে সুনির্দিষ্ট বক্তব্য আসেনি বলে মন্তব্য করেন জামায়াতের সেক্রেটারি জেনারেল।
ওসমান হাদিকে গুলির পর গোয়েন্দা সংস্থাগুলোর প্রধানদের কী ভূমিকা ছিল, সরকারপ্রধানের সে খোঁজ নেওয়া উচিত বলে মন্তব্য করেন গোলাম পরওয়ার।
গতকাল ইনকিলাব মঞ্চের সদস্যসচিব আবদুল্লাহ আল জাবের সরকারকে ২৪ ঘণ্টার সময় দিয়েছেন। এই সময়ের মধ্যে ওসমান হাদি গুলিবিদ্ধ হওয়ার পর থেকে এখন পর্যন্ত খুনিদের গ্রেপ্তার ও বিচার নিশ্চিত করতে কী কী পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে, তা জাতির সামনে তুলে ধরতে বলেছেন তিনি। এ প্রসঙ্গে টেনে জামায়াতের সেক্রেটারি জেনারেল বলেন, ২৪ ঘণ্টা শেষ হতে আর মাত্র কয়েক ঘণ্টা বাকি। এর মধ্যে সরকার যেন ওসমান হাদির খুনিদের গ্রেপ্তারে কী পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে, কেন ব্যর্থ হয়েছে, কারা এ বিষয়ে অবহেলা করেছে, তা জাতির সামনে তুলে ধরে। নইলে জাতি বিশ্বাস করবে, যারা খুন করেছে, তাদের পালিয়ে যেতে, সহযোগীদের প্রশ্রয় দিতে প্রশাসনের মধ্যে ফ্যাসিস্টের যেসব সহযোগী লুকিয়ে আছে, তারা সবকিছু দেখেও না দেখার ভান করছে।
সরকারকে ওসমান হাদির খুনিদের খুঁজে বের করতে হবে বলে উল্লেখ করেন মিয়া গোলাম পরওয়ার। তিনি বলেন, এটি অসম্ভব নয়। খুনি বিদেশে চলে গেলে বিদেশি মিশন, এম্বাসি আছে, ভারতের সঙ্গে বন্দিবিনিময় চুক্তিসহ অনেক কিছুই আছে। সব কটি কাজে লাগাতে হবে। জাতিসংঘ ওসমান হাদির খুনের ঘটনা তদন্তে আগ্রহ প্রকাশ করেছে। প্রয়োজনে তাদের লজিস্টিক সাপোর্ট নিতে হবে।
বক্তব্য শেষে জামায়াতের সেক্রেটারি জেনারেল দোয়া ও মোনাজাত পরিচালনা করেন। জামায়াতের সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল আবদুল হালিম অনুষ্ঠান সঞ্চালনা করেন।