শরিকদের সঙ্গে আসন সমঝোতা প্রায় চূড়ান্ত করেছে বিএনপি

ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন সামনে রেখে যুগপৎ আন্দোলনের শরিক ও সমমনা দলগুলোর সঙ্গে আসন সমঝোতা প্রায় চূড়ান্ত করেছে বিএনপি। এরই অংশ হিসেবে দলটি প্রথমবারের মতো আনুষ্ঠানিকভাবে শরিক দলের প্রার্থীদের নাম ঘোষণা করেছে। বাকি আসনগুলো নিয়েও শিগগির সিদ্ধান্তে পৌঁছানোর প্রস্তুতি নিচ্ছেন দলটির শীর্ষ নেতৃত্ব।

গতকাল মঙ্গলবার দুপুরে গুলশানে বিএনপির চেয়ারপারসনের রাজনৈতিক কার্যালয়ে সংবাদ সম্মেলনে দলের মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর জানান, সমমনা দল ও শরিকদের সঙ্গে তাঁদের সম্পর্ক আরও গভীর হয়েছে। তিনি বলেন, শরিকদের কতগুলো আসন দেওয়া হবে, তা যথাসময়ে ঘোষণা করা হবে।

আসন সমঝোতার ক্ষেত্রে বিএনপি গুরুত্ব দিয়ে আসছিল জমিয়তে উলামায়ে ইসলাম বাংলাদেশকে। গতকাল সংবাদ সম্মেলনে মির্জা ফখরুল জানান, দলটির জন্য চারটি আসন ছেড়ে দেওয়া হচ্ছে। সেখানে বিএনপির কোনো প্রার্থী থাকবে না। এসব আসনে দলের কেউ নির্বাচন করতে চাইলে তাঁদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে বলে জানান মির্জা ফখরুল।

শরিকদের সঙ্গে যেসব আসনে সমঝোতা হবে, সেখানে বিএনপি কোনো প্রার্থী দেবে না। যেসব শরিক দলকে সমঝোতার মাধ্যমে নির্দিষ্ট আসন দেওয়া হবে, তারা কেবল সেগুলোতেই প্রার্থী হবেন, অন্য কোথাও না। এই শর্তে বিএনপি আসন সমঝোতা করতে চাইছে বলে জানা গেছে।
সংবাদ সম্মেলনে বক্তব্য দিচ্ছেন বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। বিএনপির চেয়ারপারসনের গুলশানের রাজনৈতিক কার্যালয়ে, ২৩ ডিসেম্বর ২০২৫

জমিয়তে উলামায়ে ইসলাম বাংলাদেশের সঙ্গে সমঝোতা হওয়া চারটি আসনে দলটির প্রার্থীর নামও ঘোষণা করা হয় সংবাদ সম্মেলনে। তাঁরা হলেন সিলেট–৫ আসনে জমিয়তের সভাপতি মাওলানা মোহাম্মদ উবায়দুল্লাহ ফারুক, ব্রাহ্মণবাড়িয়া–২ আসনে দলটির সহসভাপতি মাওলানা জুনায়েদ আল হাবিব, নীলফামারী–১ আসনে মহাসচিব মাওলানা মঞ্জুরুল ইসলাম আফেন্দী এবং নারায়ণগঞ্জ–৪ আসনে কেন্দ্রীয় নেতা মুফতি মনির হোসেন কাসেমী।

জমিয়তে উলামায়ে ইসলামের প্রার্থীরা তাঁদের খেজুরগাছ প্রতীকে নির্বাচনে অংশ নেবেন। সংশ্লিষ্ট সূত্র বলছে, জোটগত ভোটে দলীয় প্রতীকে অংশ নেওয়ার বাধ্যবাধকতায় শরিকদের আসন ছাড় দেওয়ার ক্ষেত্রে বিএনপিকে রক্ষণশীল ভূমিকা নিতে হচ্ছে।

দলীয় প্রার্থীদের নাম ঘোষণার আগে জমিয়তে উলামায়ে ইসলাম বাংলাদেশের সভাপতি মাওলানা উবায়দুল্লাহ ফারুক সাংবাদিকদের বলেন, ইসলামী মূল্যবোধে বিশ্বাসী দল হওয়ায় দেশের রাজনৈতিক নেতৃত্বে স্থিতিশীলতা ও নৈতিকতার প্রশ্নে বিএনপির প্রতি আস্থা রাখতে পেরেছেন তাঁরা।

বিএনপি এ পর্যন্ত দুই দফায় ২৭২টি আসনে দলীয় সম্ভাব্য প্রার্থীর নাম ঘোষণা করেছে। বাকি ২৮টি থেকে সমঝোতার মাধ্যমে শরিকদের আসন ঠিক করা হবে। এর মধ্যে গতকাল জমিয়তকে চারটি আসন দেওয়া হলো। এ ছাড়া প্রায় ১০টি আসন শরিকদের দেওয়া প্রায় চূড়ান্ত করেছে বিএনপি।

শরিকদের সঙ্গে আরও আসন সমঝোতা

২০১৪ এবং ২০২৪ সালে নির্বাচন বর্জন করে বিএনপি। আর ২০১৮ সালে নির্বাচনে অংশ নিলেও পুরোপুরি মাঠে থাকতে পারেনি দলটি। সংশ্লিষ্ট সূত্র বলছে, এই পরিস্থিতিতে দলটিতে মনোনয়নপ্রত্যাশীর সংখ্যা অনেক বেশি। পাশাপাশি ফ্যাসিবাদী শাসনের ১৫ বছরে নির্যাতন–নিপীড়নের শিকার নেতাদের মধ্যে নির্বাচনে প্রার্থী হওয়ার আগ্রহও বেড়েছে। এসব কারণে এবার যুগপৎ আন্দোলনের শরিকদের আসন ছাড় দেওয়ার বিষয়ে বিএনপির শীর্ষ নেতৃত্বকে সতর্কভাবে সিদ্ধান্ত নিতে হচ্ছে।

শরিকদের সঙ্গে যেসব আসনে সমঝোতা হবে, সেখানে বিএনপি কোনো প্রার্থী দেবে না। যেসব শরিক দলকে সমঝোতার মাধ্যমে নির্দিষ্ট আসন দেওয়া হবে, তারা কেবল সেগুলোতেই প্রার্থী হবেন, অন্য কোথাও না। এই শর্তে বিএনপি আসন সমঝোতা করতে চাইছে বলে জানা গেছে। এ ছাড়া বিএনপিতে যোগ দিয়ে ধানের শীষ প্রতীকে ভোট করাকে বিএনপি বেশি প্রাধান্য দিচ্ছে বলেও জানা গেছে।

এরই অংশ হিসেবে বাংলাদেশ লিবারেল ডেমোক্রেটিক পার্টির (এলডিপি) চেয়ারম্যান শাদাহাৎ হোসেন সেলিম নিজের দল বিলুপ্ত করে বিএনপিতে যোগ দিয়েছেন। পরে তাঁকে লক্ষ্মীপুর–১ (রামগঞ্জ) আসনে বিএনপির প্রার্থী হিসেবে ঘোষণা করা হয়।

বাংলাদেশ জাতীয় দলের চেয়ারম্যান সৈয়দ এহসানুল হুদাকে ফুল দিয়ে বরণ করে নেন বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর ও দলের স্থায়ী কমিটির সদস্য নজরুল ইসলাম খান। ২২ ডিসেম্বর ২০২৫

বাংলাদেশ জাতীয় দলের চেয়ারম্যান সৈয়দ এহসানুল হুদাও নিজের দল বিলুপ্ত করে বিএনপিতে যোগ দিয়েছেন। তিনি কিশোরগঞ্জ–৫ আসনে নির্বাচনে অংশ নিতে চান। এখনো আনুষ্ঠানিক ঘোষণা না দিলেও তাঁর প্রার্থিতার বিষয়ে বিএনপি ইতিবাচক।

বিএনপি এ পর্যন্ত দুই দফায় ২৭২টি আসনে দলীয় সম্ভাব্য প্রার্থীর নাম ঘোষণা করেছে। বাকি ২৮টি থেকে সমঝোতার মাধ্যমে শরিকদের আসন ঠিক করা হবে। এর মধ্যে গতকাল জমিয়তকে চারটি আসন দেওয়া হলো। এ ছাড়া প্রায় ১০টি আসন শরিকদের দেওয়া প্রায় চূড়ান্ত করেছে বিএনপি।

বিএনপির দায়িত্বশীল একটি সূত্র বলছে, নাগরিক ঐক্যের সভাপতি মাহমুদুর রহমান মান্না, বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পার্টির সাধারণ সম্পাদক সাইফুল হক, গণসংহতি আন্দোলনের প্রধান সমন্বয়কারী জোনায়েদ সাকি ও জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দলকে (জেএসডি) একটি করে আসন দেওয়ার বিষয়টি প্রায় চূড়ান্ত করে রাখা হয়েছে। এ বিষয়ে জানতে চাইলে জোনায়েদ সাকি গত রাতে প্রথম আলোকে বলেন, আসন সমঝোতা নিয়ে এখনো বিএনপির সঙ্গে আলোচনা চলছে।

মাহমুদুর রহমান মান্না, সাইফুল হক ও জোনায়েদ সাকি

লিবারেল ডেমোক্রেটিক পার্টির (এলডিপি) সভাপতি কর্নেল (অব.) অলি আহমদ ও দলের মহাসচিব রেদোয়ান আহমেদকে আসন দেওয়ার বিষয়টি প্রায় চূড়ান্ত করে রেখেছে বিএনপি। এ ছাড়া জাতীয় পার্টি (কাজী জাফর) চেয়ারম্যান মোস্তফা জামাল হায়দার ও ন্যাশনাল পিপলস পার্টির (এনপিপি) চেয়ারম্যান ফরিদুজ্জামান ফরহাদকে আসন ছেড়ে দেওয়ার বিষয়টি বিএনপির বিবেচনায় রয়েছে বলে দলীয় সূত্র থেকে জানা গেছে।

এর বাইরে ঢাকা-১৭ আসনে বাংলাদেশ জাতীয় পার্টির (বিজেপি) চেয়ারম্যান আন্দালিভ রহমান পার্থ আরও আগে থেকেই সক্রিয় রয়েছেন। তাঁর বিষয়ে বিএনপি ইতিবাচক। এনডিএমের চেয়ারম্যান ববি হাজ্জাজ সক্রিয় ঢাকা-১৩ আসনে। তাঁর দল নিবন্ধিত নয়। তাই তিনি বিএনপিতে যোগ দেবেন নাকি অন্য কোনো উপায়ে নির্বাচনে অংশ নেবেন, সে বিষয়টি এখনো পরিষ্কার হয়নি।

বিএনপির একটি সূত্র বলছে, বিএনপি যেহেতু নির্বাচনী কোনো জোট করছে না, তাই সমমনা ও শরিক দলগুলোকে নিজস্ব প্রতীকেই নির্বাচনে অংশ নিতে হচ্ছে। এলডিপি ও জাতীয় দলের মতো আরও কয়েকটি দলের নেতারা বিএনপিতে যোগ দিতে পারেন।

এদিকে যুগপৎ আন্দোলনের অন্যতম শরিক গণ অধিকার পরিষদ শুরু থেকে নির্বাচনে উল্লেখযোগ্য সংখ্যক আসনে সমঝোতার দাবি জানিয়ে আসছিল। দলটির নেতারা বলছিলেন, দীর্ঘদিন ধরে আন্দোলনে মাঠে থাকার পরও তাঁদের জন্য নির্দিষ্ট কোনো আসন নিশ্চিত করা হয়নি। একপর্যায়ে দুটি আসন নিয়ে আলোচনার কথা শোনা গেলেও পরে সেই সমঝোতা বাস্তব রূপ পায়নি; বরং গণ অধিকার পরিষদ শেষ পর্যন্ত নিজস্ব প্রতীকে সব আসনে নির্বাচনের প্রস্তুতির কথা জানিয়েছে।

বিএনপির একটি সূত্র বলছে, বিএনপি যেহেতু নির্বাচনী কোনো জোট করছে না, তাই সমমনা ও শরিক দলগুলোকে নিজস্ব প্রতীকেই নির্বাচনে অংশ নিতে হচ্ছে। এলডিপি ও জাতীয় দলের মতো আরও কয়েকটি দলের নেতারা বিএনপিতে যোগ দিতে পারেন।