
গণ অধিকার পরিষদের সভাপতি ও ডাকসুর সাবেক ভিপি নুরুল হকসহ দলটির নেতা–কর্মীদের আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর লাঠিপেটার ঘটনায় নিন্দা ও প্রতিবাদ জানিয়েছে বিভিন্ন রাজনৈতিক দল ও সংগঠন। রাজনৈতিক দলগুলো নুরুল হকের দ্রুত সুস্থতা কামনা করেছে।
বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর আজ শনিবার এক বিবৃতিতে বলেন, ‘বিএনপি শান্তিপূর্ণ রাজনৈতিক কর্মসূচি পালনের অধিকারের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। গণতান্ত্রিক রাজনৈতিক সংস্কৃতির চর্চাকে ব্যাহত করে, এমন কোনো কর্মকাণ্ডকে বিএনপি সমর্থন করে না। সুস্থ ধারার রাজনৈতিক কর্মসূচিতে হামলাকে আমরা নিন্দা জানাই।’
নুরুল হক, রাশেদ খানসহ গণ অধিকার পরিষদের নেতা–কর্মীদের ওপর হামলার তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানিয়ে বিএনপি মহাসচিব নুরুল হকের সুচিকিৎসা নিশ্চিত করার দাবি জানিয়েছেন। নুরুল হকের দ্রুত আরোগ্য কামনা করেছেন মির্জা ফখরুল। খবর বাসসের।
গণ অধিকার পরিষদের সভাপতি নুরুল হকসহ দলটির নেতা–কর্মীদের আহত হওয়ার ঘটনায় গভীর উদ্বেগ এবং তীব্র নিন্দা জানিয়ে বিবৃতি দিয়েছেন বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর সেক্রেটারি জেনারেল ও সাবেক সংসদ সদস্য মিয়া গোলাম পরওয়ার।
বিবৃতিতে জামায়াতে ইসলামীর সেক্রেটারি জেনারেল বলেন, ‘ফ্যাসিবাদের পতনের পরও এমন হামলার ঘটনা অত্যন্ত ন্যক্কারজনক, অনাকাঙ্ক্ষিত ও অনভিপ্রেত। আমরা একটি গণতান্ত্রিক, শান্তিপূর্ণ ও সহনশীল রাজনৈতিক পরিবেশ প্রত্যাশা করি। জাতি যখন নতুন বাংলাদেশ বিনির্মাণের দিকে এগিয়ে যাচ্ছে, তখন এ ধরনের হামলা ফ্যাসিবাদের কথাই স্মরণ করিয়ে দেয়।’
অবিলম্বে হামলাকারীদের গ্রেপ্তার করে আইনানুগ ব্যবস্থা নিতে ও দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দিতে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন মিয়া গোলাম পরওয়ার। খবর বাসসের।
গতকাল শুক্রবার রাতে দেওয়া এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে ছাত্রদল জানিয়েছে, ‘ফ্যাসিবাদবিরোধী লড়াইয়ের সম্মুখসারির নেতারা ও অভ্যুত্থানের পক্ষশক্তির ওপর এ ধরনের নৃশংস হামলা অভাবিত। গণ–অভ্যুত্থানপরবর্তী সময়ে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর এ ধরনের অনিয়ন্ত্রিত আচরণ কোনোভাবেই গ্রহণযোগ্য হতে পারে না।’
ছাত্রদলের সভাপতি রাকিবুল ইসলাম ও সাধারণ সম্পাদক নাছির উদ্দীন এ ধরনের হামলার তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানিয়েছেন এবং অবিলম্বে দায়ী ব্যক্তিদের তদন্তপূর্বক দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি নিশ্চিত করার দাবি জানিয়েছেন। খবর বাসসের।
গণসংহতি আন্দোলনের প্রধান সমন্বয়কারী জোনায়েদ সাকি ও নির্বাহী সমন্বয়কারী আবুল হাসান রুবেল যৌথ বিবৃতিতে গণ অধিকার পরিষদের সভাপতি নুরুল হক, সাধারণ সম্পাদক রাশেদ খানসহ নেতা–কর্মীদের ওপর হামলার ঘটনায় তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানিয়েছেন। তাঁরা বলেন, নুরুল হকের ওপর যেভাবে নৃশংস কায়দায় হামলা করা হয়েছে, তা কোনোভাবেই গ্রহণযোগ্য নয়। তাঁকে যেভাবে আক্রমণ করা হয়েছে, তা অপরাধের পর্যায়ে পড়ে। তাঁরা নুরুল হকের সুস্থতা কামনা করেন। এ ঘটনার সঙ্গে জড়িত ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার দাবি জানান।
বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সভাপতি রিফাত রশীদ গতকাল সংবাদমাধ্যমে পাঠানো এক বিবৃতিতে বলেন, নুরুল হকের ওপর হামলার ঘটনা অন্তর্বর্তী সরকারের নানা ব্যর্থতার বহিঃপ্রকাশ। এ হামলা জুলাই শহীদদের রক্তের সঙ্গে বিশ্বাসঘাতকতার শামিল। বিভিন্ন মহল নানা মোড়কে আওয়ামী লীগ পুনর্বাসনের ‘ষড়যন্ত্রে লিপ্ত’ উল্লেখ করে বিবৃতিতে রিফাত রশীদ বলেন, এর অন্যতম অংশ জাতীয় পার্টি।
ইসলামী আন্দোলন বলেছে, ফ্যাসিবাদবিরোধী একজন নেতাকে রাস্তায় লাঠিপেটা করার ঘটনা জুলাই গণ-অভ্যুত্থানের বিরুদ্ধে অবস্থান। দলের যুগ্ম মহাসচিব গাজী আতাউর রহমান এক বিবৃতিতে এ ঘটনায় অন্তর্বর্তী সরকারকে দ্রুত ও কার্যকর পদক্ষেপ নেওয়ার আহ্বান জানিয়েছেন।
রাজধানীর কাকরাইলে গতকাল সন্ধ্যায় জাতীয় পার্টি (জাপা) ও গণ অধিকার পরিষদের নেতা-কর্মীদের মধ্যে সংঘর্ষ হয়। জাপার কার্যালয়ের সামনে দিয়ে গণ অধিকার পরিষদের একটি মিছিল যাওয়ার সময় এ ঘটনা ঘটে। পরে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর লাঠিপেটায় গণ অধিকার পরিষদের সভাপতি নুরুল হকসহ কয়েকজন আহত হন।
এ ঘটনায় আন্তঃবাহিনী জনসংযোগ পরিদপ্তর (আইএসপিআর) গতকাল সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে জানায়, বারবার অনুরোধ সত্ত্বেও কিছু নেতা-কর্মী মব ভায়োলেন্সের মাধ্যমে পরিস্থিতি অশান্ত করার চেষ্টা করেন। তাঁরা আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর ওপর আক্রমণ চালান এবং আনুমানিক রাত নয়টার দিকে মশালমিছিলের মাধ্যমে সহিংসতা আরও বাড়ান। তাঁরা ইটপাটকেল নিক্ষেপ করেন এবং বিভিন্ন স্থাপনায় আগুন দেওয়ার চেষ্টা চালান। জননিরাপত্তার রক্ষার্থে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী বলপ্রয়োগে বাধ্য হয়। এ ঘটনায় সেনাবাহিনীর পাঁচ সদস্য আহত হন বলে জানিয়েছে আইএসপিআর।
নুরুল হকের চিকিৎসায় উচ্চপর্যায়ের মেডিকেল বোর্ড গঠন করেছে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল।
আজ সকালে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের পরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মো. আসাদুজ্জামান জানান, নুরুল হকের মাথায় আঘাত রয়েছে। তাঁর নাকের হাড় ভেঙে গেছে। যে কারণে গতকাল অতিরিক্ত রক্তক্ষরণ হয়েছিল। আগেই রক্তক্ষরণ বন্ধ হয়েছে ও জ্ঞান ফিরেছে। তবে ৪৮ ঘণ্টার আগে নুরুল হক আশঙ্কামুক্ত, সেটি বলা সম্ভব নয়।