‘সংস্কার ও নির্বাচন: প্রেক্ষিত জাতীয় ঐক্য’ শীর্ষক সেমিনারে বক্তারা। শনিবার দুপুরে রাজধানীর রমনায় বিআইআইএসএস মিলনায়তনে
‘সংস্কার ও নির্বাচন: প্রেক্ষিত জাতীয় ঐক্য’ শীর্ষক সেমিনারে বক্তারা। শনিবার দুপুরে রাজধানীর রমনায় বিআইআইএসএস মিলনায়তনে

অধ্যাপক ইউনূসের ধান্ধা নেই ক্ষমতায় থাকার, বললেন ‘সরাসরি ছাত্র’ মান্না

ছাত্রজীবনে বর্তমান অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূসের সরাসরি ছাত্র ছিলেন উল্লেখ করে নাগরিক ঐক্যের সভাপতি মাহমুদুর রহমান মান্না বলেন, ‘ভোটের সাড়ে চার মাস বাকি; এখনো মানুষ প্রশ্ন করে, ভোট হবে তো! আমি হোপফুল (আশাবাদী) যে দেশে নির্বাচন হবে। আরেকটা কারণ হলো, আমি মনে করি, অধ্যাপক ইউনূসের ধান্ধা নেই আরেকবার ক্ষমতায় থাকার। তিনি যে আবার ক্ষমতায় থাকতে চান, এ রকম আমি মনে করি না।’

আজ শনিবার দুপুরে রাজধানীর রমনায় বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট অব ইন্টারন্যাশনাল অ্যান্ড স্ট্র্যাটেজিক স্টাডিজ (বিআইআইএসএস) মিলনায়তনে এক সেমিনারে অংশ নিয়ে মাহমুদুর রহমান এ কথা বলেন। ‘সংস্কার ও নির্বাচন: প্রেক্ষিত জাতীয় ঐক্য’ শিরোনামে এ সেমিনারের আয়োজন করে ডেমোক্রেসি ডায়াস বাংলাদেশ নামের একটি প্ল্যাটফর্ম।

সেমিনারে আলোচনায় অংশ নিয়ে মাহমুদুর রহমান বলেন, ‘জুলাই গণ–অভ্যুত্থানের ১৪ মাসের মাথায় আমাদের সামনে এখন সবচেয়ে বড় এজেন্ডা জাতীয় নির্বাচন। শ্রীলঙ্কা ও নেপালে তো অভ্যুত্থানের পর কোনো সংস্কার হয়নি, ভোট হয়েছে। শ্রীলঙ্কা আমাদের কাছ থেকে চাল ধার নিয়েছিল। তারা সংকট মিটিয়ে দিয়েছে। আর আমরা, অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূসের মতো এত বড় “স্টার অব দ্য স্কাই” আমাদের দেশ চালালেও আমাদের অর্থনৈতিক সংকট কাটেনি, প্রশাসন ঠিক হয়নি, পুলিশ কথাই শোনে না। এ অবস্থায় ভালো ভোট কতখানি হবে, এই প্রশ্ন সবার মধ্যে। ভোটের সাড়ে চার মাস বাকি। এখনো মানুষ প্রশ্ন করে, ভোট হবে তো! এখনো যদি মানুষ ভোট নিয়ে সন্দেহের মধ্যে থাকে, তাহলে কীভাবে হবে?’

‘আমরা এমন এক জায়গায় এসেছি, এখন বিতর্ক নিষ্পত্তি করে একটা যৌথ সিদ্ধান্তের ভিত্তিতে আমরা নির্বাচনে যেতে পারি’—এমন মন্তব্য করে নাগরিক ঐক্যের সভাপতি বলেন, আগামী ১৫ অক্টোবর পর্যন্ত ঐকমত্য কমিশনের মেয়াদ আছে। অধ্যাপক ইউনূস দেশে ফিরবেন ২ অক্টোবর। এর মধ্যে ভেতরে–ভেতরে কথাবার্তা চলছে, কী করে একটা জায়গায় আসা যায়।

এ ক্ষেত্রে অবিশ্বাসকে ‘মূল সমস্যা’ হিসেবে উল্লেখ করেন মাহমুদুর রহমান। পিআর পদ্ধতিতে নির্বাচনসহ কিছু অভিন্ন দাবিতে জামায়াতে ইসলামীসহ সাতটি দলের আন্দোলন প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ‘আমি জামায়াতের দুজন নেতাকে জিজ্ঞাসা করলাম, আপনারা আলোচনার টেবিলে আছেন, আবার সরাসরি রাস্তায় নেমে বিক্ষোভ করছেন। এটা কোন ধরনের আন্দোলন? একপর্যায়ে তাঁরা আমাকে বললেন, “এটা আমরা করছি জনগণকে বোঝাবার জন্য।” আমি বললাম, একটা বছর জনগণকে বোঝালেন না কেন যে পিআর ছাড়া জনগণের মুক্তি নেই?’

সেমিনারের শুরুতে পিআর (সংখ্যানুপাতিক প্রতিনিধিত্ব) পদ্ধতির নির্বাচনের নেতিবাচক দিক ও হঠাৎ পিআরের দাবি সামনে আনার পেছনের রাজনৈতিক উদ্দেশ্য নিয়ে একটি ধারণাপত্র উপস্থাপন করেন ডেমোক্রেসি ডায়াস বাংলাদেশের চেয়ারম্যান আবদুল্লাহ–আল–মামুন।

অনুষ্ঠানে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী, গণসংহতি আন্দোলনের প্রধান সমন্বয়কারী জোনায়েদ সাকি, জমিয়তে উলামায়ে ইসলামের মহাসচিব গোলাম মহিউদ্দিন ইকরাম ও গণ অধিকার পরিষদের সাধারণ সম্পাদক মো. রাশেদ খান বক্তব্য দেন।

আরও বক্তব্য দেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক রাশেদ আল মাহমুদ তিতুমীর, আসিফ মোহাম্মদ শাহান, এস এম শামীম রেজা এবং বিএনপির মিডিয়া সেলের আহ্বায়ক অধ্যাপক মওদুদ হোসেন আলমগীর। এ ছাড়া সাংবাদিক সোহরাব হাসান, কাজী জেসিন, বিশ্লেষক রেজাউল করিম (রনি), কণ্ঠশিল্পী সাজ্জাদ হুসাইন (পলাশ), অভিনেতা শাহেদ শরীফ খানসহ আরও কয়েকজন সেমিনারে বক্তব্য দেন।