জুলাই সনদের বিষয়ে সাংবিধানিক ক্ষমতা জনগণের কাছ থেকেই আসবে বলে জানিয়েছেন বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য সালাহউদ্দিন আহমদ। তিনি বলেছেন, ‘জনগণের সেই ক্ষমতা প্রয়োগের মাধ্যম হবে গণভোট। গণভোটের মাধ্যমে জনগণ যদি সনদ অনুমোদন করে, তাহলে পরবর্তী সংসদের দায়িত্ব হবে সনদের ঘোষিত দফাগুলো বাস্তবায়ন করা।’
রাজধানীর বেইলি রোডের ফরেন সার্ভিস একাডেমিতে জুলাই জাতীয় সনদ বাস্তবায়নের উপায় নিয়ে রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের শেষ দিনের আলোচনা শেষে বুধবার রাতে এসব কথা বলেন সালাহউদ্দিন আহমদ।
সালাহউদ্দিন আহমদ বলেন, ‘গণভোটের মাধ্যমে জনগণ যেটা অনুমোদন দেবে, সেটা সংসদের ওপর বাধ্যতামূলক ম্যান্ডেট তৈরি করবে।’ তবে তিনি এটাও স্পষ্ট করেন, এর মানে এই নয় যে পরবর্তী সংসদ অন্য কোনো সংস্কার করতে পারবে না—তবে জুলাই সনদের ধারাগুলো অবশ্যই গ্রহণ করতে হবে।
সালাহউদ্দিন আহমদ আরও বলেন, সংসদের প্রথম অধিবেশনের মধ্যেই সনদ বাস্তবায়নের বাধ্যবাধকতা দিলে তা বাস্তবে জটিল হতে পারে। তিনি প্রস্তাব দেন, ‘যথাশিগগির সম্ভব’ বাক্যটি উল্লেখ করে সংসদকে প্রয়োজনীয় সময় দেওয়ার সুযোগ রাখতে হবে, যাতে নিয়ম পরিবর্তন ও আইনি প্রক্রিয়া সম্পন্ন করা যায়। তিনি জানান, দ্বিতীয় সংসদ গঠন বা সেকেন্ড হাউস প্রতিষ্ঠার বিষয়টি সনদ গৃহীত হওয়ার পরই বিবেচনা করা যেতে পারে।
গণভোটের সময়সূচি প্রসঙ্গে সালাহউদ্দিন আহমদ বলেন, আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনের (২০২৬ সালের ফেব্রুয়ারির প্রথমার্ধে) সঙ্গে একই দিনে গণভোট আয়োজন করা হবে সবচেয়ে যুক্তিসংগত সিদ্ধান্ত। তাঁর যুক্তি—আগে আলাদা করে গণভোট আয়োজন করা ব্যয়বহুল, সময়সাপেক্ষ ও প্রশাসনিকভাবে জটিল।
নির্বাচনের দিন গণভোটের বিষয়ে জামায়াতে ইসলামী, এনসিপিসহ কয়েকটি রাজনৈতিক দলের আপত্তি রয়েছে। তারা চায়, নির্বাচনের আগেই যাতে জুলাই সনদের আইনি ভিত্তির জন্য গণভোটের ব্যবস্থা করা হয়। এ প্রসঙ্গে সালাহউদ্দিন আহমদ বলেন, ‘একই দিনে নির্বাচন ও গণভোট হলে জনগণ একাধিক ব্যালটে ভোট দিতে পারবে—এটা আমাদের নির্বাচনী সংস্কৃতিতে নতুন কিছু নয়। এতে সময়, অর্থ ও প্রশাসনিক জটিলতা—সবই কমে যাবে।’
সালাহউদ্দিন আহমদ জানান, জুলাই সনদ বাস্তবায়নের জন্য একটি প্রজ্ঞাপন (গেজেট নোটিফিকেশন) জারি করা হবে। সেই প্রজ্ঞাপনের ভিত্তিতে গণভোট আয়োজন করা হবে। গণভোট আইন বা অধ্যাদেশে উল্লেখ থাকবে, জুলাই সনদ বাস্তবায়নের জন্য জনগণের সম্মতি নেওয়া আবশ্যক। প্রয়োজনে নির্বাচন কমিশন ও সরকারের মধ্যে আলোচনা করে গণভোটের বিধিবিধান নির্ধারণ করা হবে।
বক্তব্যের শেষে সালাহউদ্দিন আহমদ জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের সদস্যদের ধন্যবাদ জানিয়ে বলেন, ‘সবাই যে সমঝোতার পথে এগিয়ে এসেছে, তা জাতীয় স্বার্থে একটি ইতিবাচক পদক্ষেপ।’
শেষ দিনের আলোচনায় অংশ নেন বিএনপি, জামায়াতে ইসলামী, এনসিপি, ইসলামী আন্দোলন, বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টিসহ (সিপিবি) ৩০টি রাজনৈতিক দলের প্রতিনিধিরা।
জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের সহসভাপতি আলী রীয়াজের সভাপতিত্বে কমিশনের সদস্যদের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন বিচারপতি এমদাদুল হক, ইফতেখারুজ্জামান, বদিউল আলম মজুমদার, আইয়ুব মিয়া। অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টার বিশেষ সহকারী (জাতীয় ঐকমত্য কমিশন) মনির হায়দার সভা সঞ্চালনা করেন।