
যারা গত ৫৩ বছরে এ দেশ শাসন করেছে, তারা নতুন করে কোনো আশা দেখাতে পারবে না বলে মন্তব্য করেছেন ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের আমির (চরমোনাই পীর) মুফতি সৈয়দ মুহাম্মাদ রেজাউল করীম। তিনি বলেছেন, এখন শাসকগোষ্ঠীকে পরিবর্তন করতে হবে। ইসলামকে ক্ষমতায় আনতে হবে।
আজ শুক্রবার রাজধানীর সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে আয়োজিত এক সম্মেলনে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেছেন। সেখানে আজ ইসলামী যুব আন্দোলনের ‘৫ম জাতীয় যুব কনভেনশন’ অনুষ্ঠিত হয়।
মুফতি সৈয়দ মুহাম্মাদ রেজাউল করীম বলেন, আগামী নির্বাচনে ইসলামী নীতি আদর্শ বাস্তবায়নে কাজ করতে হবে। এ জন্য ইসলামের পক্ষে যুবকদের নিয়ে আসতে মাসে কমপক্ষে চারজনকে দাওয়াত দিতে হবে। বাতিলকে পরাজিত করতে হবে। মায়ের কোল খালি করা আর বিদেশে টাকা পাচার করে বেগম পাড়া তৈরির রাজনীতি এ দেশের মানুষ চায় না।
সম্মেলনে অন্তর্বর্তী সরকারকে নিয়ে চরমোনাই পীর বলেন, এ সরকার জনগণের ভোটে নির্বাচিত সরকার নয়। তারা গণ-অভ্যুত্থানের মাধ্যমে ক্ষমতায় এসেছে। পিআর পদ্ধতিতে (আনুপাতিক প্রতিনিধিত্ব) নির্বাচন দিতে বাধা কোথায়? উচ্চকক্ষ আর নিম্নকক্ষ, সব নির্বাচন পিআর পদ্ধতিতেই দিতে হবে।
চরমোনাই পীর আরও বলেন, যারা অসংখ্য মায়ের বুক খালি করেছে, তাদের যারা নির্বাচনে আহ্বান করে, তারা জনগণের সঙ্গে ধোঁকাবাজি করছে। তাদের ধোঁকাবাজি জনগণ বুঝতে পারছে। তাই অন্য রাজনৈতিক দলগুলোকে তাদের অবস্থান স্পষ্ট করতে হবে।
ইসলামী আন্দোলনের জ্যেষ্ঠ সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য অধ্যক্ষ মাওলানা সৈয়দ মোসাদ্দেক বিল্লাহ আল মাদানী বলেন, ৫৩ বছরের লুটপাটে দেশ বসবাসের অযোগ্য হয়েছে। ইসলাম ও দেশপ্রেমিকদের ঐক্যবদ্ধভাবে কাজ করতে হবে। সাম্রাজ্যবাদ ও আধিপত্যবাদীরা ঐক্যের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র করছে।
‘সংরক্ষিত মহিলা আসন চাই না’
ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের সিনিয়র নায়েবে আমির মুফতি সৈয়দ মুহাম্মদ ফয়জুল করিম বলেন, ‘সংবিধান সংস্কার প্রস্তাবে ৫০৫টি আসন রাখা হয়েছে। আমি মহিলাদের জন্য ১০০ সংরক্ষিত আসন চাই না। মহিলাদের জন্য কোনো নির্দিষ্ট আসন চাই না।’ তিনিও সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচনের জন্য পিআর পদ্ধতির নির্বাচনের দাবি করেন।
ইসলামি হুকুম কায়েম করে কল্যাণ রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠা করতে হবে উল্লেখ করে সৈয়দ মুহাম্মদ ফয়জুল করিম বলেন, অতীতের সরকার সবকিছু ধ্বংস করে দিয়ে গেছে। তাই ধ্বংসস্তূপের ওপরে কিছু হতে পারে না। যে কারণে সংস্কার করে নির্বাচন দিতে হবে। বিচার বিভাগ কারও ইঙ্গিতে নয়, এটাকে স্বাধীনভাবে চালানোর দাবি করেন তিনি।
বিএনপিকে নিয়ে সৈয়দ মুহাম্মদ ফয়জুল করিম বলেন, বিএনপি নির্বাচনের পরে সংস্কারের কথা বলে ছাত্র–জনতার অর্জনকে ধ্বংস করতে চাইছে। বাংলাদেশের মানুষ চাঁদাবাজি ও দুর্নীতি দেখতে চায় না। যারা দুর্নীতিতে চ্যাম্পিয়ন হয়েছে, তাদেরকে ক্ষমতায় দেখতে চায় না। তাদের ক্ষমতায় আসতে দেবে না।
সম্মেলনে আতিকুর রহমানকে সভাপতি, মারুফ শেখকে সহসভাপতি ও মানছুর আহমদকে সেক্রেটারি জেনারেল করে ইসলামী যুব আন্দোলনের নতুন কমিটি ঘোষণা করা হয়। সম্মেলনে সভাপতিত্ব করেন ইসলামী যুব আন্দোলন বাংলাদেশের কেন্দ্রীয় সভাপতি মাওলানা মুহাম্মদ নেছার উদ্দিন। সেক্রেটারি জেনারেল মুফতি মানসুর আহমাদ সাকী, মারুফ শেখ ও মাওলানা রহমাতুল্লাহ বিন যৌথভাবে অনুষ্ঠান সঞ্চালনা করেন। সম্মেলনে ঘোষণাপত্র পাঠ করেন যুব আন্দোলনের সহসভাপতি আতিকুর রহমান।
সম্মেলনে অন্যদের মধ্যে ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের মহাসচিব অধ্যক্ষ মাওলানা ইউনুছ আহমাদ, প্রেসিডিয়াম সদস্য অধ্যাপক আশরাফ আলী, প্রেসিডিয়াম সদস্য অধ্যাপক মাহবুবুর রহমান, মোকামিয়ার পীর মাওলানা মাহমুদুল হাসান, সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব মাওলানা গাজী আতাউর রহমান, যুগ্ম মহাসচিব মুহাম্মদ ইমতিয়াজ আলম, জাতীয়তাবাদী যুবদলের সাধারণ সম্পাদক নুরুল ইসলাম প্রমুখ বক্তব্য দেন।