হা-মীম গ্রুপের চেয়ারম্যান ও ব্যবস্থাপনা পরিচালক এ কে আজাদ বলেছেন, সংস্কার বাদে যদি নির্বাচন দেওয়া হয়, তাহলে আগের জায়গায় ফিরে যাওয়া হবে। রাজনৈতিক নেতারা তাঁদের মতামত দিয়েছেন, এখন সিদ্ধান্ত সরকার নেবে।
এই ব্যবসায়ী নেতা বলেন, ‘এখন কথা হলো যে সংস্কার আগে না নির্বাচন আগে? রাজনৈতিক দলের কাছে যদি সবকিছু ছেড়ে দেওয়া হয়, আমি মনে করি এটা সঠিক না। এটা সরকারকে সিদ্ধান্ত নিতে হবে। প্রত্যেকের রাজনৈতিক দর্শন আছে, বাস্তবায়নের দর্শন আছে। সরকারকে সিদ্ধান্ত নিতে হবে সে কোন ম্যান্ডেট নিয়ে এসেছে এবং কীভাবে তা বাস্তবায়ন করবে এবং নির্বাচনের জন্য নিজেকে তৈরি করবে।’
আজ শনিবার ‘নির্বাচনের জন্য রাজনৈতিক সমঝোতার পথ’ শীর্ষক গোলটেবিল আলোচনায় তিনি এসব কথা বলেন। বিকেলে রাজধানীর কারওয়ান বাজারে প্রথম আলোর কার্যালয়ে এ গোলটেবিলের আয়োজন করা হয়।
এ কে আজাদ বলেন, জাতীয় ঐকমত্য কমিশনে আসা প্রতিটি প্রস্তাবই গ্রহণযোগ্য এবং বাস্তবায়নযোগ্য। তবে অন্তর্বর্তী সরকারের উচিত ছিল অনেক আগে এগুলো বাস্তবায়ন করা। যত সময় যাবে সরকারের জন্য এগুলো বাস্তবায়ন করা কঠিন হয়ে যাবে। একটা নির্বাচিত সরকারের যতটা সক্ষমতা থাকে একটা অনির্বাচিত বা অন্তর্বর্তী সরকারের সেই সক্ষমতা থাকে না। কারণ, একটা নির্বাচিত সরকারের একটা দল থাকে এবং সে যেভাবে রাষ্ট্র পরিচালনা করতে পারে আরেকটা অনির্বাচিত সরকার সেভাবে পারে না। আইনশৃঙ্খলা, কর্মসংস্থান ও বিনিয়োগের ক্ষেত্রে দেখা যাচ্ছে, সমস্যা কিন্তু দিন দিন বাড়ছে। নির্বাচন এখন অবধারিত, এটা ফেব্রুয়ারির মধ্যে হতে হবে। এর কোনো বিকল্প নেই।
এ কে আজাদ বলেন, সরকার যদি এখন থেকে মাঠ প্রস্তুত করতে না পারে তাহলে সুষ্ঠু নির্বাচন অপ্রত্যাশিত। তাহলে আরও একটা হযবরল নির্বাচন হবে। আরেকটা রক্তক্ষয়ী সংগ্রাম হবে।
প্রভাবশালী রাজনৈতিক দলগুলোই প্রশাসনকে পরোক্ষভাবে পরিচালনা করছে উল্লেখ করে এই ব্যবসায়ী নেতা বলেন, ‘আগের মতো তারাই মামলা দিচ্ছে, আসামি ঢুকাচ্ছে, তারাই আবার আসামি বের করছে। আগের যেসব জায়গায় যেভাবে চাঁদাবাজি চলছিল এখন যেসব জায়গায় ব্যক্তির পরিবর্তন হয়েছে; কিন্তু সিস্টেম একই থাকছে। তাহলে আজকে সংস্কার বাদে যদি আমি একটা নির্বাচন দিই তাহলে তো আমি আগের জায়গায় চলে যাচ্ছি। রাজনৈতিক নেতারা তাঁদের মতামত দিয়েছেন, এখন সিদ্ধান্ত সরকার নেবে।’
ফেব্রুয়ারির মধ্যে নির্বাচন না হয়ে পিছিয়ে গেলে দেশের জাতীয় নিরাপত্তা বিঘ্নিত হতে পারে বলে তিনি আশঙ্কা প্রকাশ করেন।
বৈঠকে আরও বক্তব্য দেন জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের সহসভাপতি আলী রীয়াজ, বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য সালাহউদ্দিন আহমদ, সিপিডির সম্মাননীয় ফেলো দেবপ্রিয় ভট্টাচার্য, জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের সদস্য বদিউল আলম মজুমদার, সেন্টার ফর পিস স্টাডিজের লে. জে. (অব.) মো. মাহফুজুর, ডেইলি স্টারের সম্পাদক মাহ্ফুজ আনাম, জামায়াতে ইসলামীর কেন্দ্রীয় প্রচার ও মিডিয়া বিভাগের সম্পাদক মো. মতিউর রহমান আকন্দ, গণসংহতি আন্দোলনের প্রধান সমন্বয়কারী জোনায়েদ সাকি, জাতীয় নাগরিক পার্টির সদস্যসচিব আখতার হোসেন, বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টির (সিপিবি) সাধারণ সম্পাদক রুহিন হোসেন (প্রিন্স), ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সমাজবিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক সামিনা লুৎফা, প্রথম আলো সম্পাদক মতিউর রহমান। বৈঠকটি সঞ্চালনা করেন প্রথম আলোর নির্বাহী সম্পাদক সাজ্জাদ শরিফ।