আচরণবিধি লঙ্ঘন করে রঙিন পোস্টার দেয়ালে লাগানো হয়েছে। গতকাল ঢাকার কামরাঙ্গীরচরে
আচরণবিধি লঙ্ঘন করে রঙিন পোস্টার দেয়ালে লাগানো হয়েছে। গতকাল ঢাকার কামরাঙ্গীরচরে

ঢাকা–২ আসনে দেয়ালে রঙিন পোস্টার, ব্যানারেও বিধি লঙ্ঘন 

নির্বাচনী আচরণবিধি ভঙ্গ করে নৌকার প্রার্থীর পক্ষে ভোট চেয়ে রঙিন পোস্টার–ব্যানার করা হয়েছে।

নির্বাচনী আচরণবিধি না মেনে ঢাকা-২ সংসদীয় আসনের বেশ কিছু এলাকায় নৌকার প্রার্থীর পক্ষে রঙিন পোস্টার করা হয়েছে। আবার এসব পোস্টার বিধি ভেঙে লাগানো হয়েছে দেয়ালে। একইভাবে ব্যানারে প্রার্থী এবং দলীয় প্রধানের ছবির বাইরে বিভিন্ন পর্যায়ের নেতাদের ছবি ব্যবহার করা হয়েছে। এর মধ্যে এমন ব্যানারও রয়েছে, যাতে প্রার্থী ও দলীয় প্রধানের বাইরে আরও নয়জনের ছবি রয়েছে। 

জাতীয় সংসদ নির্বাচন আচরণবিধিমালা অনুযায়ী, নিবন্ধিত রাজনৈতিক দলের মনোনীত প্রার্থীদের ক্ষেত্রে প্রার্থীর বাইরে কেবল দলীয় প্রধানের ছবি পোস্টারে ও ব্যানারে থাকার কথা। কিন্তু ঢাকা–২ সংসদীয় আসনে নৌকার প্রার্থীর পক্ষে ভোট চেয়ে বিভিন্ন এলাকায় যেসব ব্যানার ঝোলানো হয়েছে, তাতে কিছু ক্ষেত্রে আচরণবিধি মানা হয়নি। কোথাও কোথাও ব্যানারের মাপ নির্ধারিত আকারের চেয়ে বড় দেখা গেছে।

আচরণবিধিমালায় বলা আছে, সাদাকালো ব্যানারের আকার হবে দৈর্ঘ্যে সর্বোচ্চ ৩ মিটার ও প্রস্থে ১ মিটার। তবে কামরাঙ্গীরচরের বেড়িবাঁধ, ৩১ শয্যা হাসপাতালের ফটক ও সেকশন ঢাল এলাকায় যেসব ব্যানার লাগানো হয়েছে, তা আচরণবিধিতে বেঁধে দেওয়া আকারের চেয়ে কয়েক গুণ বড়। 

ঢাকার কেরানীগঞ্জ উপজেলার হযরতপুর, কলাতিয়া, তারানগর, শাক্তা, রোহিতপুর, বাস্তা, কালিন্দী এবং সাভার উপজেলার আমিনবাজার, তেঁতুলঝোড়া ও ভাকুর্তা ইউনিয়ন নিয়ে ঢাকা–২ আসন গঠিত। এই আসনের সঙ্গে ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের তিনটি ওয়ার্ডও রয়েছে। ওয়ার্ডগুলো হলো ৫৫, ৫৬ ও ৫৭। এই সংসদীয় আসনের ভোটার সাড়ে পাঁচ লাখের কিছু বেশি। 

এই আসনে আওয়ামী লীগের প্রার্থী কামরুল ইসলাম। তিনি দলটির সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য। কামরুলের সঙ্গে এই আসনে আরও তিনজন প্রার্থী প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন। তাঁরা হলেন জাতীয় পার্টির শাকিল আহম্মেদ (লাঙ্গল), ইসলামী ঐক্যজোটের আশ্রাফ আলী (মিনার) ও স্বতন্ত্র প্রার্থী হাবিবুর রহমান (ট্রাক)। তাঁদের মধ্যে একজনের গুটি কয়েক পোস্টার থাকলেও বাকিদের নেই। 

গতকাল বুধবার দুপুর থেকে বিকেল পর্যন্ত ঢাকা–২ সংসদীয় আসনের আওতাধীন দক্ষিণ সিটির ৫৫, ৫৬ ও ৫৭ নম্বর ওয়ার্ড ঘুরে দেখেছেন প্রথম আলোর একজন প্রতিবেদক ও একজন আলোকচিত্রী। এর মধ্যে কামরাঙ্গীরচরের কয়লাঘাট এলাকায় নৌকার প্রার্থীর পক্ষে ভোট চেয়ে রঙিন ব্যানার দেখা গেছে। স্থানীয় ৫৭ নম্বর ওয়ার্ড যুবলীগ সভাপতি গোলাম মোরশেদের সৌজন্যে ওই ব্যানার টাঙানো হয়েছে। এতে নৌকার প্রার্থী কামরুল ইসলামের পাশাপাশি যুবলীগের কেন্দ্রীয় সভাপতি, সাধারণ সম্পাদকসহ মোট ১১ জনের ছবি রয়েছে।

রঙিন ব্যানার দেখা গেছে কামরাঙ্গীরচরের রসুলপুর এলাকাতেও। সেখানে একটি রঙিন ব্যানারে নৌকার প্রার্থী, ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের মেয়র, ঢাকা মহানগর দক্ষিণ আওয়ামী লীগের সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদকসহ ছয়জনের ছবি ব্যবহার করা হয়েছে। এই ব্যানারে ঢাকা দক্ষিণ সিটির ৫৬ নম্বর ওয়ার্ড কাউন্সিলর মোহাম্মদ হোসেনের নাম ও ছবি রয়েছে। 

ভোটের প্রচারে পোস্টার–ব্যানারে আচরণবিধি না মানার বিষয়ে বিষয়ে নৌকার প্রার্থী কামরুল ইসলামের নির্বাচনী সমন্বয়ক সমর চন্দ্র ভৌমিক গতকাল রাতে মুঠোফোনে প্রথম আলোকে বলেন, বিধি ভেঙে যাতে কেউ প্রচার না চালায়, সে বিষয়ে দলের নেতা-কর্মীদের কঠোর নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। ব্যক্তিগতভাবে কেউ রঙিন পোস্টার–ব্যানার করে বা অন্য কোনোভাবে আচরণবিধি ভেঙেছেন কি না, সে বিষয়টি তাঁরা খোঁজ নিয়ে দেখবেন। 

দেয়ালে রঙিন পোস্টার

বিধি ভেঙে ঝোলানো হয়েছে প্রার্থীর রঙিন পোস্টার। গতকাল কামরাঙ্গীরচরে। ছবি: প্রথম আলো

নির্বাচন আচরণবিধি অনুযায়ী, সিটি করপোরেশন এলাকায় দালান, দেয়াল, গাছ, বেড়া, বিদ্যুৎ ও টেলিফোনের খুঁটি বা অন্য কোনো দণ্ডায়মান বস্তুতে পোস্টার লাগানো যায় না। কিন্তু ঢাকা–২ আসনের কামরাঙ্গীরচরে বিভিন্ন স্থাপনায় নৌকার প্রার্থীর পক্ষে ভোট চেয়ে রঙিন পোস্টার দেয়ালে লাগানো হয়েছে। 

রঙিন পোস্টারের পাশাপাশি সাদাকালো ব্যানারেও একাধিক ব্যক্তির ছবি ব্যবহার করে নৌকা প্রতীকের পক্ষে ভোট চাওয়া হয়েছে। কামরাঙ্গীরচরের মাদবর বাজার ট্রলার ঘাট ও আশ্রাফাবাদ এলাকাতেও এমন ব্যানার ঝোলাতে দেখা গেছে। 

 নির্বাচনের প্রচারে ব্যানার–পোস্টারের আকার কেমন হবে, তা স্পষ্ট করে আচরণবিধিতে উল্লেখ করা হলেও ঢাকা–২ আসনে এমন বিধি না মানার প্রবণতা দেখা গেছে।

ঢাকা দক্ষিণ সিটির ৫৭ নম্বর ওয়ার্ডে নৌকার প্রার্থীর পক্ষে দুটি নির্বাচনী ক্যাম্প (কার্যালয়) করা হয়েছে। যদিও আচরণবিধিতে বলা আছে, সিটি করপোরেশন এলাকায় প্রত্যেক ওয়ার্ডে একটির বেশি নির্বাচনী ক্যাম্প করা যাবে না। 

নির্বাচনী আচরণবিধি ভঙ্গের ক্ষেত্রে কী ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে, তা জানতে ঢাকা-২ সংসদীয় আসনের সহকারী রিটার্নিং কর্মকর্তা আশরাফুন নাহারের মুঠোফোনে কল করা হলে তিনি ধরেননি।