প্রান্তিক জনগোষ্ঠীর রাজনৈতিক কনভেনশনে বক্তব্য দিচ্ছেন লেখক-অধ্যাপক সিরাজুল ইসলাম চৌধুরী। আজ শুক্রবার রাজধানীর বিএমএ ভবনে
প্রান্তিক জনগোষ্ঠীর রাজনৈতিক কনভেনশনে বক্তব্য দিচ্ছেন লেখক-অধ্যাপক সিরাজুল ইসলাম চৌধুরী। আজ শুক্রবার রাজধানীর বিএমএ ভবনে

এ মুহূর্তে সিপিবির নেতৃত্বে বামপন্থীদের নতুন যুক্তফ্রন্ট দরকার: অধ্যাপক সিরাজুল ইসলাম চৌধুরী

রাজনীতিতে নতুন করে আশাবাদ তৈরি করতে হলে এ মুহূর্তে যারা সমাজবিপ্লবে বিশ্বাস করে, তাদের একটা যুক্তফ্রন্ট দরকার বলে মন্তব্য করেছেন লেখক–অধ্যাপক সিরাজুল ইসলাম চৌধুরী। বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টির (সিপিবি) নেতৃত্বে সব বামপন্থীকে নিয়ে এ কাজ করতে হবে বলে উল্লেখ করেছেন তিনি।

আজ শুক্রবার সিপিবির উদ্যোগে রাজধানীর বিএমএ ভবনে আয়োজিত প্রান্তিক জনগোষ্ঠীর রাজনৈতিক কনভেনশনে এ কথা বলেন অধ্যাপক সিরাজুল ইসলাম চৌধুরী।

অধ্যাপক সিরাজুল ইসলাম বলেন, ‘এ মুহূর্তে জরুরি, যারা বিপ্লবে বিশ্বাস করে, তাদের যুক্তফ্রন্ট গঠন করা। ১৯৫৪ সালে আমরা একটা যুক্তফ্রন্ট দেখেছি। কমিউনিস্ট পার্টি সেই যুক্তফ্রন্ট গঠনে সবচেয়ে বড় উদ্যোগ নিয়েছিল। কিন্তু সে যুক্তফ্রন্ট এমন একটি যুক্তফ্রন্ট ছিল যার মধ্য দিয়ে নেজামী ইসলামী পার্টির উদ্ভব হলো এবং তারা শর্ত দিল যে যুক্তফ্রন্টে কমিউনিস্ট পার্টিকে নেওয়া যাবে না।’

আজকের বিবেচনায় সে যুক্তফ্রন্ট গঠনকে ভুল আখ্যা দিয়ে প্রবীণ এ অধ্যাপক বলেন, ‘আজকে পেছনে ফিরে তাকালে বোঝা যায়, ওই যুক্তফ্রন্ট একটা ভুল যুক্তফ্রন্ট ছিল। এখন যে যুক্তফ্রন্ট হবে, সেটা হবে সমাজবিপ্লবীদের যুক্তফ্রন্ট। কোনো একটা দল একাকী এটা পারবে না। সব বামপন্থী দলকে, যারা সমাজবিপ্লবে বিশ্বাস করে, তাদের একসঙ্গে কাজটি করতে হবে।’

এ কাজে বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টিকে নেতৃত্ব দিতে হবে উল্লেখ করে অধ্যাপক সিরাজুল ইসলাম চৌধুরী বলেন, ‘কারণ, তারাই সবচেয়ে বড় সংগঠন। সবচেয়ে সুসংগঠিত সংগঠন। এ যুক্তফ্রন্ট নির্বাচনে অংশ নেবে। তারা নির্বাচনে জয়ী হয়ে ক্ষমতা দখল করতে পারবে না। কিন্তু জনগণ জানবে, তাদের অন্তত একটা দাঁড়াবার জায়গা আছে।’

সম্প্রতি কয়েকটি বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র সংসদ নির্বাচনের ফলাফল নিয়ে বিস্ময় প্রকাশ করে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ইংরেজি বিভাগের ইমেরিটাস অধ্যাপক সিরাজুল ইসলাম চৌধুরী। তিনি বলেন, অবিশ্বাস্য কাণ্ড ঘটেছে বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র সংসদ নির্বাচনে। সেখানে চরম দক্ষিণপন্থীরা নির্বাচিত হয়ে এসেছে। তার কারণ, ছাত্রদের সামনে কোনো বিকল্প তুলে ধরা হয়নি। যারা বুর্জোয়া রাজনীতি করে, ছাত্ররা তাদের ওপর আস্থা হারিয়েছে। শিক্ষার্থীদের বিরাজনীতিকরণ হয়েছে।

প্রান্তিক জনগোষ্ঠীর রাজনৈতিক কনভেনশনে বক্তব্য দিচ্ছেন বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টির (সিপিবি) সাবেক সভাপতি মুজাহিদুল ইসলাম সেলিম। আজ শুক্রবার রাজধানীর বিএমএ ভবনে

যারা জয়ী হচ্ছে, তারা নানা ধরনের দাতব্য কাজের মধ্য দিয়ে শিক্ষার্থীদের কাছে টানছে মন্তব্য করে অধ্যাপক সিরাজুল ইসলাম চৌধুরী বলেন, ছাত্ররা বিকল্প খুঁজছেন, কিন্তু বিকল্প পাচ্ছেন না। বিকল্পের অভাবে ছদ্মবেশী প্রতিক্রিয়াশীলেরা সেবার নাম করে মানুষের কাছে গেছে। রাজনৈতিক পরিচয়ে তারা মানুষের কাছে যায়নি। নানা রকম দাতব্য কাজ করে তারা জনপ্রিয় হয়েছে এবং জয়ী হয়েছে।

আলোচনায় বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টির (সিপিবি) সাবেক সভাপতি মুজাহিদুল ইসলাম সেলিম বলেন, ‘আমরা বাঙালি জাতি বারবার লড়াই করে বিজয় অর্জন করি। কিন্তু সে বিজয় ধরে রাখতে পারি না কেন, সেটা আমাদের অনুসন্ধান করতে হবে। ২০২৪ সালের গণ–অভ্যুত্থানকে বলা হয়েছিল বৈষম্যের বিরুদ্ধে অভ্যুত্থান। কিন্তু বৈষম্যবিরোধী গণ–অভ্যুত্থানে বরং বৈষম্য বৃদ্ধি পেয়েছে। শ্রেণিবৈষম্য থেকে সামাজিক বৈষম্য সব ধরনের বৈষম্য বৃদ্ধি পেয়েছে।’

জমি বর্গা দেওয়া গেলেও স্বার্থ বর্গা দেওয়া যায় না মন্তব্য করে মুজাহিদুল ইসলাম সেলিম বলেন, ‘সমস্ত প্রান্তিক জনগণের কাছে আমি একটা কথা বলতে চাই, খুব গভীরভাবে এটা আপনারা উপলব্ধি করবেন। আমি সব জায়গায় বলি, জমি বর্গা দেওয়া যায়, স্বার্থ বর্গা দেওয়া যায় না। হাসিনাকে বর্গা দিয়ে ঠকে গেছি। খালেদাকে বর্গা দিয়ে ঠকে গেছি। ইউনূসের কাছে বর্গা দিয়েও ঠকে যাচ্ছি। আমার কাছে বর্গা দিলেও ঠকে যাবেন।’

এ বঞ্চনা ঠেকাতে মেহনতি মানুষের জোটবদ্ধ হওয়ার বিকল্প নেই জানিয়ে তিনি বলেন, ‘যদি না এই প্রান্তিক জনগণ এবং এই দেশের মেহনতি মানুষ নিজেদের স্বার্থে একজোট হয়ে সংগ্রাম না করেন, তাহলে এ শোষণ অব্যাহত থাকবে। সংগ্রামটা খালি অর্থনৈতিক দামের জন্য নয়। আপনাদের রাজনৈতিক অধিকারও প্রতিষ্ঠা করার জন্য।’

প্রান্তিক জনগোষ্ঠীর রাজনৈতিক কনভেনশনে উপস্থিত আলোচকেরা। আজ শুক্রবার রাজধানীর বিএমএ ভবনে

প্রান্তিক জনগোষ্ঠীর মধ্যে উন্নয়ন উদ্বাস্তুদের বিবেচনা করা হচ্ছে কি না, এমন প্রশ্ন তুলে সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী ব্যারিস্টার জ্যোতির্ময় বড়ুয়া বলেন, শেখ হাসিনার আমলে দেশের উত্তরবঙ্গ থেকে শুরু করে সুন্দরবন, রংপুর, কক্সবাজার—সবখানে মেগাপ্রজেক্টে হাজার হাজার মানুষ ভূমি ও জীবিকা হারিয়ে উদ্বাস্তু হয়েছে।

নানা চেহারায় সমাজে বৈষম্য আছে উল্লেখ করে জ্যোতির্ময় বড়ুয়া বলেন, কিছু বৈষম্য সমাজে দৃশ্যমান থাকে। আর কিছু আছে পরোক্ষ। যেমন দেশে আইন আছে, যে ব্যক্তির স্থায়ী ঠিকানা নাই, তাকে চাকরি দেওয়া যাবে না। তাহলে বেদে জনগোষ্ঠীর সন্তানেরা শিক্ষিত হলে প্রজাতন্ত্রের চাকরি করতে পারবে না? তিনি বলেন, আইন মানে যে ভালো, মানুষকে সুরক্ষা দেয় সেটা ঠিক নয়।

সকাল এগারোটার দিকে গণসংগীতের মধ্য দিয়ে কনভেনশন শুরু হয়। দেশের নানা প্রান্তের ৫৫টি জাতিগোষ্ঠীর প্রতিনিধি এ কনভেনশনে অংশ নেন। কনভেনশনের প্রথম অধিবেশনে সভাপতিত্ব করেন আদিবাসী নেতা রেবেকা সরেন।