
সেলফি তুলে নিজেদের কর্মী–সমর্থকদের মনোবল ঠিক রাখার রাজনীতি বিএনপি করে না বলে জানিয়েছেন দলটির স্থায়ী কমিটির সদস্য আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী। তিনি বলেন, খালেদা জিয়াও প্রধানমন্ত্রী ছিলেন। ‘সেলফি–টেলফি’ তোলার কাজে তিনি ছিলেন না। বিএনপি ওইসবের মধ্যে নেই।
আজ বৃহস্পতিবার দুপুরে রাজধানীর উপকণ্ঠে আমিনবাজার এলাকায় আয়োজিত সমাবেশে প্রধান অতিথির বক্তব্যে এসব কথা বলেন আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী।
বিএনপির চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার মুক্তি ও সরকার পতনের এক দফা দাবিতে আমিনবাজারের মিরপুর মফিদ–ই–আম স্কুল অ্যান্ড কলেজ মাঠে এ সমাবেশের আয়োজন করে ঢাকা জেলা বিএনপি। এখানে গত সোমবার সমাবেশ করতে চেয়েছিল বিএনপি। কিন্তু ওই সমাবেশের আগের রাতে পুলিশের বাধায় মঞ্চ করা যায়নি বলে অভিযোগ করেছে দলটি। সেদিন সমাবেশ করতে না পেরে আজ বিকেলে একই এলাকায় সমাবেশ করছে ঢাকা জেলা বিএনপি।
বেলা আড়াইটার দিকে সমাবেশ শুরুর কথা থাকলেও এর দেড় ঘণ্টা আগেই বিএনপির নেতা–কর্মীরা খণ্ড খণ্ড মিছিল নিয়ে সমাবেশস্থলে আসতে শুরু করেন। সমাবেশ শুরুর পর প্রচণ্ড গরমের কারণে নেতা–কর্মীদের অনেকে সমাবেশস্থলের আশপাশের নির্মাণাধীন ভবন, গাছের ছায়ায় গিয়ে আশ্রয় নেন। প্রচণ্ড গরমের কারণে সমাবেশের শুরু আধা ঘণ্টা পর নেতা–কর্মীদের ভিড় কমতে থাকে। দীর্ঘ সময় প্রখর রোদে অবস্থান করার কারণে কেউ কেউ অসুস্থ হয়ে পড়েন। তাঁদের হাসপাতালে পাঠাতে পুলিশকে সহায়তা করতে দেখা গেছে।
সমাবেশ মঞ্চের সামনের মাঠ বেলা তিনটার পর ফাঁকা হতে শুরু করে। বিকেল চারটার দিকে ঢাকা জেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক নিপুণ রায় চৌধুরী নেতা–কর্মীদের উদ্দেশে মাইকে ঘোষণা দেন, ‘রোদের তাপ কমে গেছে। এখন আপনারা মাঠে এসে অবস্থান নেন।’ অবশ্য ততক্ষণে অনেক নেতা–কর্মী সমাবেশস্থল ছেড়ে চলে গেছেন।
বিকেল সাড়ে চারটার পর সমাবেশে প্রধান অতিথির বক্তব্য দেন আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী। তিনি দাবি করেন, ‘সেলফি তুলে তার সমর্থকদের মনোবল ঠিক রাখার জন্য, ওই রাজনীতি বিএনপি করে না। ...তাদের রাজনীতির ভিত্তি ওই সেলফি। আর কিছু সরকারি কর্মকর্তা, কিছু আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর কর্মকর্তা আর কিছু লুটেরা। এদের নিয়ে টিকে থাকতে পারবেন না।’
ক্ষমতাসীনেরা বিদেশে যে টাকা পাঠিয়েছেন, তা আর ফেরত পাবেন না বলেও মনে করেন আমীর খসরু। তিনি বলেন, ‘সবাই টাকা পাঠায় আমেরিকা, কানাডা আর যুক্তরাজ্যে। উত্তর কোরিয়াতে কেউ টাকা পাঠায় না। এই টাকার মুখ আগামীতে আর দেখবেন না।’
অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচন হবে—আওয়ামী লীগের এই কথা বিদেশিরা বিশ্বাস করলে ভিসা নীতি দেওয়া হতো না বলেও উল্লেখ করেন বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য আমীর খসরু। তিনি বলেন, দেশের মানুষও তাদের (ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ) নিষেধাজ্ঞা দিয়েছে। তাদের দেশের বাইরে নিষেধাজ্ঞা, দেশেও নিষেধাজ্ঞা। যাওয়ার জায়গা থাকবে না।
আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী বলেন, ভিসা নিষেধাজ্ঞার আওতায় কোনো দেশের বিচারপতিদের রাখা হয়নি। বাংলাদেশে রাখা হয়েছে। গণমাধ্যমও আছে। অনেকে এ নিয়ে আবার প্রশ্ন তুলেছেন যে গণমাধ্যম কেন? সাংবাদিকদের মধ্যে কেউ ভোট চুরিতে সহায়তা করবেন আর নিষেধাজ্ঞা আসবে না? আওয়ামী লীগপন্থী সাংবাদিকদের ওপর নিষেধাজ্ঞা আসবে, এটা বলা হয়নি।
যুক্তরাষ্ট্রে থেকে কোনো কিছু করা যায় কি না, সেই চেষ্টা প্রধানমন্ত্রী চালিয়ে যাচ্ছেন, এমন দাবি করে আমীর খসরু বলেন, তিনি (প্রধানমন্ত্রী) যুক্তরাষ্ট্রে থেকে এখনো চেষ্টা চালাচ্ছেন কোনো কিছু করা যায় কি না। কিন্তু লাভ হবে না।
আমিনবাজার এলাকায় গত সোমবার সমাবেশের অনুমতি দিয়ে ভোরে পুলিশ মঞ্চ ভেঙে দিয়েছে, এমনটি উল্লেখ করে বিএনপির এই নেতা বলেন, ‘ওই দিন তো মঞ্চ ভেঙেছেন। আগামী দিনে কী করবেন।’ দলের নেতা–কর্মীদের উদ্দেশে তিনি বলেন, ‘কোনো অনুমতি নেওয়ার দরকার নেই। কারও অনুমতির দরকার হবে না। রাজপথে ফয়সালা করব। পরিষ্কারভাবে বলছি, আগামী যে কর্মসূচি আসবে, কারও কোনো অনুমতি নেওয়ার চেষ্টা করবেন না, প্রয়োজন হবে না। রাস্তায় নেমে রাস্তা দখল করে এই সরকারকে বিদায় করব।’
কারাগারে থাকা অবস্থায় খালেদা জিয়াকে ‘স্লো পয়জন’ করা হয়েছে কি না, এ নিয়েও সন্দেহ প্রকাশ করেন আমীর খসরু। তিনি বলেন, খালেদা জিয়াকে জেলে নিয়ে কী করেছে, তা জানার বিষয় আছে। বিদেশে পাঠাতে কেন অনুমতি দিচ্ছে না, তাই এই প্রশ্ন দেখা দিয়েছে।
সমাবেশে বিএনপির স্থায়ী কমিটির আরেক সদস্য সেলিমা রহমান বলেন, জনগণ যা বলে তা এই সরকারকে মানতে হবে। সরকারকে আর সময় দেবে না জনগণ। তিনি বলেন, মা–বোনেরা শান্তিতে নেই। সরকার নারীদের সম্মান করে না বলেও অভিযোগ করেন তিনি।
ঢাকা জেলা বিএনপির সভাপতি খন্দকার আবু আশফাকের সভাপতিত্বে সমাবেশ সঞ্চালনা করেন ঢাকা জেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক নিপুণ রায় চৌধুরী। এতে ঢাকা বিভাগীয় বিএনপির সাংগঠনিক সম্পাদক আবদুস সালাম আজাদসহ জেলা বিএনপির বিভিন্ন পর্যায়ের নেতারা বক্তৃতা করেন।