Thank you for trying Sticky AMP!!

অবাধ–নিরপেক্ষ নির্বাচন আমাকে শেখাতে হবে না

  • যুক্তরাষ্ট্রে তত্ত্বাবধায়ক সরকার নিয়ে আলোচনা হয়নি।

  • একদিকে আমার আইনশৃঙ্খলা সংস্থার ওপর স্যাংশন দেবে, আবার তাদের কাছ থেকে নিরাপত্তা চাইবে।

  • বেশি কথা বললে সব বন্ধ করে দিয়ে বসে থাকব।

সংবাদ সম্মেলনে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। গতকাল গণভবনে

অবাধ ও নিরপেক্ষ নির্বাচন তাঁকে শেখাতে হবে না বলে মন্তব্য করেছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। তিনি জানান, এ কথা তিনি যুক্তরাষ্ট্রেও বলে এসেছেন। বারবার সুষ্ঠু ভোটের কথা কেন আসছে—এই প্রশ্নও তোলেন প্রধানমন্ত্রী।

গতকাল এক সংবাদ সম্মেলনে সাংবাদিকের প্রশ্নের জবাবে এ কথা বলেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদের অধিবেশনে যোগদান উপলক্ষে যুক্তরাষ্ট্র এবং পরে যুক্তরাজ্য সফর সম্পর্কে জানাতে গতকাল শুক্রবার বিকেলে প্রধানমন্ত্রীর সরকারি বাসভবন গণভবনে এই সংবাদ সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়। সংবাদ সম্মেলনে শুরুতে সূচনা বক্তব্য দেন প্রধানমন্ত্রী। এরপর সাংবাদিকদের বিভিন্ন প্রশ্নের জবাব দেন তিনি।

একজন সাংবাদিক প্রশ্ন করেছিলেন, দিল্লিতে জি–২০ সম্মেলনে মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেনের সঙ্গে সেলফি তুলেছেন, পরে ওয়াশিংটনে বিভিন্ন বৈঠক হয়েছে। এই সফরে আসন্ন জাতীয় নির্বাচন সম্পর্কে যুক্তরাষ্ট্রের কথায় অন্য কোনো বার্তা পেয়েছেন কি না?

এই প্রশ্নের জবাবে শেখ হাসিনা বলেন, ‘আমাকে অবাধ ও নিরপেক্ষ নির্বাচন শেখাতে হবে না। কারণ, বাংলাদেশের মানুষের ভোটের অধিকার আদায়ের আন্দোলন সংগ্রাম—এটা আওয়ামী লীগের নেতৃত্বেই আমরা করেছি। এরপরে তা প্রতিষ্ঠিত হয়েছে। সেই নির্বাচন হয়েছে বলেই জনগণ আমাদের বারবার ভোট দিয়েছে। আর একটানা ক্ষমতায় আছি বলেই অর্থনৈতিক উন্নতিটা হয়েছে।’

বারবার সুষ্ঠু ভোটের কথা কেন আসছে—এই প্রশ্নও তোলেন আওয়ামী লীগের সভাপতি শেখ হাসিনা। তিনি বলেন, ‘আজকে যতটুকু বাংলাদেশের মানুষ পাচ্ছে, আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় আসার পর থেকেই তো এই উন্নতিটা হচ্ছে। তো এখন এত প্রশ্ন আসে কেন? তাহলে কি একটা দেশ এত উন্নতি করে ফেলছে—সেটাই সবার মাথাব্যথা হয়ে গেল কি না, যে এটাকে এখন কীভাবে নষ্ট করা যায়! ওই প্রচেষ্টা কি না, ওই সন্দেহটা আমারও আছে।’

এটা নির্বাচন বানচালের ষড়যন্ত্র কি না, এই সন্দেহ প্রকাশ করেন শেখ হাসিনা। তিনি বলেন, ‘দেশ যখন অর্থনৈতিকভাবে এগিয়ে যাচ্ছে, তখন অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচন নিয়ে সবার এত মাতামাতি কেন? “সন্দেহ হয় রে”—এটাই বলতে হয়। আসল কথা নির্বাচনটা বানচাল করে দেওয়া।’

‘হঠাৎ নির্বাচন নিয়ে প্রশ্ন তুলছে’

যুক্তরাষ্ট্রসহ বিদেশিরা বাস্তব অবস্থা বোঝে কি না, সেই প্রশ্নও করেন প্রধানমন্ত্রী। তিনি বলেন, ‘তাদের একই কথা, মানে ভাঙা রেকর্ড বাজিয়েই যাচ্ছে। সেটা আমি স্পষ্ট বলে আসছি। ভোটের জন্য তো আমরা সংগ্রাম করলাম, রক্ত দিলাম, আমার নিজের জীবনের ঝুঁকি নিয়ে এ দেশের মানুষের ভোটের অধিকার অর্জন করে দিয়েছি। আমাকে ভোট শেখাতে হবে না।’

জনগণের ভোট চুরি করে, অবৈধভাবে ক্ষমতায় থেকে দেশ পরিচালনা যারা করেছে, সেই সময় সুষ্ঠু নির্বাচন নিয়ে বিদেশিদের উদ্বেগ ছিল না বলে মন্তব্য করেন শেখ হাসিনা। তিনি বলেন, ‘আমেরিকা এবং অন্যান্য দেশ হঠাৎ আমাদের দেশের নির্বাচন অবাধ ও নিরপেক্ষ কি না, প্রশ্ন তোলে। আমার প্রশ্নটা হচ্ছে, যখন মিলিটারি ডিক্টেটর ছিল, তখন আমরা সংগ্রাম করেছি, জনগণের ভোটের অধিকার জনগণের হাতে ফিরিয়ে দেওয়ার জন্য।’

শেখ হাসিনা এ বিষয়ে আরও বলেন, জাতির পিতাকে হত্যার পর গণতন্ত্র সেনানিবাসে বন্দী করে রাখা হয়েছিল। আওয়ামী লীগই জনগণের হাতে ক্ষমতা ফিরিয়ে দিয়েছে। এ জন্য বহু রক্ত দিতে হয়েছে। যুক্তরাষ্ট্রকে এ কথা বলেছেন বলেও জানান প্রধানমন্ত্রী।

‘যুক্তরাষ্ট্রে তত্ত্বাবধায়ক সরকার নিয়ে আলোচনা হয়নি’

মার্কিন জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা জ্যাক সুলিভানের সঙ্গে বৈঠকে তত্ত্বাবধায়ক সরকার বিষয়ে কোনো আলোচনা হয়েছে কি না, এই প্রশ্নও উঠেছিল সংবাদ সম্মেলনে। এর জবাবে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘জ্যাক সুলিভানের সঙ্গে বৈঠকে তত্ত্বাবধায়ক সরকার নিয়ে কথা হয়নি। এ বিষয় নিয়ে কারও সঙ্গে কথা হয়নি। এ ব্যাপারে কেউ জিজ্ঞাসাও করেনি।’

এ বিষয়ে প্রধানমন্ত্রী আরও বলেন, ‘তত্ত্বাবধায়ক সরকার নিয়ে কেউ কোনো কথা বলেননি। আর তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অভিজ্ঞতা ২০০৭-০৮–এ হয়ে গেছে। এরপর আবার কেউ চায়? চাইতে পারে? আর এই ব্যবস্থাটা নষ্ট তো বিএনপিই করেছে।’

বারবার সুষ্ঠু ভোটের কথা কেন আসছে—এই প্রশ্নও তোলেন আওয়ামী লীগের সভাপতি শেখ হাসিনা।

বিএনপির মিথ্যায় কান দেবেন না

প্রধানমন্ত্রী জি-২০ সম্মেলন ও যুক্তরাষ্ট্র থেকে খালি হাতে ফিরেছেন, বিএনপির এমন দাবির বিষয়ে প্রশ্ন করেন এক সাংবাদিক। জবাবে শেখ হাসিনা বলেন, ‘আমি শুধু দেশবাসীকে বলতে চাই, বিএনপির নেতারা মাইক একখান হাতে কীভাবে মিথ্যা কথা বলে—সেটা সবাই জেনে নেন। মিথ্যা বলাটা তাদের অভ্যাস। আর সবকিছুকে খাটো করে দেখার চেষ্টা এই বিষয়ে যেন দেশবাসী সচেতন থাকে। তারা যা বলে, তার সবই মিথ্যা। মিথ্যা কথায় কেউ কান দেবেন না।’

সংসদের বাইরের কোনো দলকে বিদেশে বিরোধী দল হিসেবে মনে করা হয় না বলেও উল্লেখ করেন শেখ হাসিনা। বিএনপির প্রতি ইঙ্গিত করে তিনি বলেন, যাদের নির্বাচন করার মতো সাহস নেই। যারা নির্বাচন করে সংসদে আসতে পারে না, তারা আবার বিরোধী দল কিসের? গণতান্ত্রিক পদ্ধতিতে সংসদ সদস্য হিসেবে বিরোধী দলে যাদের আসন, তারাই বিরোধী দল। আর রাস্তায় কে ঘেউ ঘেউ করে বেড়াল, সেটা বিদেশে কখনো বিরোধী দল হিসেবে ধরে না।

তবে বিরোধী দলের প্রয়োজনীয়তার কথা উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, অবশ্যই প্রতিদ্বন্দ্বী থাকতে হবে। বিরোধী দল থাকতে হবে। কিন্তু বিরোধী দল কে? যাদের সংসদে একটি আসন নেই, তাদের বিরোধী দল বলা যায় না।

ক্ষতির চেষ্টা করলে জনগণ ঠান্ডা করবে

বিএনপির আন্দোলনে বাধা দেওয়া হচ্ছে না উল্লেখ করে আওয়ামী লীগ সভাপতি বলেন, তারা আন্দোলন করে যাচ্ছে। লোকসমাগম করছে, ভালো কথা। এতকাল চুরিচামারি করে পয়সা বানিয়েছিল। মানি লন্ডারিং করেছিল, সেই টাকা ব্যবহৃত হচ্ছে। অন্তত সাধারণ মানুষের হাতে কিছু টাকা যাচ্ছে।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘আমি বলেছি, কোনো কিছু করার দরকার নেই। তারা আন্দোলন করতে থাকুক। যদি মানুষের কোনো ক্ষতি করার চেষ্টা করে, অগ্নিসন্ত্রাসের চেষ্টা করলে ছাড়ব না। কারণ, আমাদের সঙ্গে জনগণ আছে। তাদের ডাক দিলে তারাই ঠান্ডা করে দেবে।’ তিনি বিএনপির টাকার উৎস কোথায়, তা খুঁজে বের করার জন্য সাংবাদিকদের অনুরোধ জানান।

Also Read: বেশি কথা বললে সব বন্ধ করে দিয়ে বসে থাকব: প্রধানমন্ত্রী

সবকিছু বন্ধ করে বসে থাকব

দেশে বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ কমে যাওয়ার বিষয়ে প্রশ্ন করেন এক সাংবাদিক। জবাবে শেখ হাসিনা বলেন, ‘মানুষ যদি বলে রিজার্ভ রক্ষা করতে হবে, তাহলে বিদ্যুৎ বন্ধ করে দিই, সার বন্ধ করে দিই, সব বন্ধ করে বসে থাকি, রিজার্ভ ভালো থাকবে। রিজার্ভ বেশি রাখা প্রয়োজন, নাকি দেশে মানুষের ভালোভাবে রাখা প্রয়োজন—কোনটা?

‘বেশি কথা বললে সব বন্ধ করে দিয়ে বসে থাকব’—এমন মন্তব্য করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘ইলেকশনের পরে, যদি আসতে পারি, আবার করব। তারপর দেখি কে সাহস পায় নিতে…ক্ষমতায় আসতে। সব গুছিয়ে দেওয়ার পরে এখন ইলেকশনের কথা, ভোটের কথা, অর্থনীতির কথা। পাকা পাকা কথা শুনতে হয়। আমি তো শুনতে রাজি না।’

শেখ হাসিনা বলেন, করোনার সময় আমদানি, যাতায়াত বন্ধ ছিল। ফলে রিজার্ভ বেড়ে গিয়েছিল। যখন সবকিছু খুলে গেল, আমদানি করতে হলো। তখন রিজার্ভ কমবে—এটাই তো স্বাভাবিক ব্যাপার। তিনি বলেন, ‘আমার প্রশ্ন হচ্ছে—আমি যখন ২০০৯ সালে ক্ষমতা গ্রহণ করি, তখন রিজার্ভ কত ছিল? ১ বিলিয়নও ছিল না। দশমিক ৭৭ বিলিয়ন রিজার্ভ ছিল। আমি যখন ৯৬ সালে সরকারে আসি, রিজার্ভ কত ছিল? বিলিয়নের ধারেকাছেও ছিল না। যতটুকু বেড়েছে, আমাদের সরকারের আমলে আমরা করেছি।’

দেশে শতভাগ বিদ্যুতায়নের কথা উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘বিদ্যুৎ শতভাগ দিই। কমিয়ে ২৮ ভাগে নিয়ে আসব! সবাই একটু টের পাক যে (বিএনপি সরকারের সময় বিদ্যুতের অবস্থা) কী ছিল। আমরা তো ভুলে যাই। এখন তো আমরা করে দিচ্ছি, ভর্তুকি দিচ্ছি। কেন আমি ভর্তুকি দেব?

একদিকে স্যাংশন দেবে, আবার নিরাপত্তা চাইবে

ঢাকায় যুক্তরাষ্ট্রের রাষ্ট্রদূত পিটার হাসের নিরাপত্তা নিয়ে উদ্বেগ জানানোর বিষয়ে এক প্রশ্নের জবাবে প্রধানমন্ত্রী বলেন, তিনি যুক্তরাষ্ট্র সফরে সেখানে বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূতকে কী ধরনের নিরাপত্তা দেওয়া হয়, তা জানতে চেয়েছিলেন। সেভাবে নিরাপত্তা দেওয়া হয় না। আর বাংলাদেশে যুক্তরাষ্ট্রের দূতাবাসের নিরাপত্তায় ১৫৮ জন পুলিশ মোতায়েন করা আছে। রাষ্ট্রদূতের জন্য গানম্যান আছে। কাজেই নিরাপত্তার কোনো ঘাটতি নেই।

প্রধানমন্ত্রী এ–ও বলেন, ‘একদিকে আমার আইনশৃঙ্খলা সংস্থার ওপর স্যাংশন দেবে, আবার তাদের কাছ থেকে নিরাপত্তা চাইবে! এটা আবার কেমন কথা! আমি সেই প্রশ্নটাও করেছি।’

সংবাদ সম্মেলনে প্রধানমন্ত্রীর এক পাশে ছিলেন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের, সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য কাজী জাফর উল্যাহ ও পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী শাহরিয়ার আলম। অন্য পাশে বসেন সংসদ উপনেতা মতিয়া চৌধুরী ও দলের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য শেখ সেলিম।