
চব্বিশের গণ-অভ্যুত্থান মূলত বৈষম্যের বিরুদ্ধে একটি গণ-আন্দোলন ছিল বলে মনে করেন বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টির (সিপিবি) সাধারণ সম্পাদক আবদুল্লাহ ক্বাফী রতন। তিনি বলেছেন, সে কারণে এই অভ্যুত্থানকে বিপ্লব, দ্বিতীয় স্বাধীনতা বলা এগুলো সবই ভুল।
এই বক্তব্যের পক্ষে যুক্তি দিয়ে আবদুল্লাহ ক্বাফী রতন বলেন, ‘আন্দোলনে যাঁরা শহীদ হয়েছেন এবং আহত হয়েছেন, তাঁদের যদি একটা শ্রেণি বিশ্লেষণ করেন, দেখবেন অন্যান্য শ্রেণি-পেশার মানুষের তুলনায় একেবারে প্রান্তিক জনগোষ্ঠীর মানুষ বেশি।’ তিনি বলেন, অভ্যুত্থানের সময় ২৪ জন শ্রমিকসহ প্রান্তিক জনগোষ্ঠীর ১৬৮ জন নিহত হয়েছেন। এই মানুষেরা সমাজ ও রাষ্ট্রের বিভিন্ন জায়গায় যেসব বৈষম্য রয়েছে, তার বিরুদ্ধে প্রতিবাদ জানিয়ে আন্দোলনে যোগ দিয়েছিলেন।
‘অন্তর্ভুক্তিমূলক ও সুষ্ঠু জাতীয় সংসদ নির্বাচন: রাজনৈতিক দলের কাছে নাগরিক সমাজের প্রত্যাশা’ শীর্ষক গোলটেবিল বৈঠকে এসব কথা বলেন আবদুল্লাহ ক্বাফী রতন। একশনএইড বাংলাদেশ ও প্রথম আলোর আয়োজনে আজ সোমবার বিকেলে রাজধানীর কারওয়ান বাজারে প্রথম আলো কার্যালয়ে এ গোলটেবিল হয়। এর আগে সুষ্ঠু ও অন্তর্ভুক্তিমূলক নির্বাচন নিয়ে দেশের ৯টি জেলায় আয়োজিত গোলটেবিল বৈঠক থেকে উঠে আসা সুপারিশগুলো এখানে তুলে ধরেন একশনএইড বাংলাদেশের উইমেন রাইটস লিড মরিয়ম নেছা। গোলটেবিল বৈঠকটি পরিচালনা করেন একশনএইড বাংলাদেশের কান্ট্রি ডিরেক্টর ফারাহ কবির।
জুলাই গণ-অভ্যুত্থান নিয়ে সিপিবির সাধারণ সম্পাদক আবদুল্লাহ ক্বাফী রতন আরও বলেন, ছাত্ররা যে বৈষম্যের বিরুদ্ধে আওয়াজ তুলেছিল, সেই বৈষম্যই ছিল তাদের প্রতিরোধের মূল উৎস। কিন্তু জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের আলোচনা এবং সংস্কার প্রস্তাবে তার প্রতিফলন ঘটেনি।
আবদুল্লাহ ক্বাফী রতন বলেন, ১৬৬ প্রস্তাব এসেছে কোথা থেকে? ছয়টি কমিশন থেকে। ছয়টি কমিশনের মধ্যে আবার কোন কমিশনটা নিয়ে বেশি আলোচনা হয়েছে? সংবিধান সংস্কার কমিশন। এর বাইরে মানুষের জীবনমান ও চাকরিতে যে বেতনবৈষম্য, তা নিয়ে আলোচনা না হওয়ায় হতাশা প্রকাশ করেন তিনি।
এ ছাড়া সিপিবির সাধারণ সম্পাদকের বক্তব্যে দেশের সামাজিক ও আর্থিক বৈষম্য, নির্বাচনে প্রার্থীর যোগ্যতা ও জামানত এবং দেশের প্রচলিত নির্বাচনী বাস্তবতা ও নারীর অংশগ্রহণে নানা প্রতিবন্ধকতার বিষয়গুলো উঠে আসে।
গোলটেবিল বৈঠকে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য সালাহউদ্দিন আহমদ, জামায়াতে ইসলামীর নায়েবে আমির সৈয়দ আবদুল্লাহ মোহাম্মদ তাহের, জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) সদস্যসচিব আখতার হোসেন, এবি পার্টির চেয়ারম্যান মজিবুর রহমান, সাবেক তত্ত্বাবধায়ক সরকারের উপদেষ্টা রাশেদা কে চৌধূরী, গার্মেন্টস শ্রমিক সংহতির সভাপ্রধান তাসলিমা আখতার, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উন্নয়ন অধ্যয়ন বিভাগের অধ্যাপক কাজী মারুফুল ইসলাম, বাংলাদেশ আদিবাসী ফোরামের সাধারণ সম্পাদক সঞ্জীব দ্রং, নারীর রাজনৈতিক অধিকার ফোরামের সংগঠক মাহরুখ মহিউদ্দিন, ইস্ট ওয়েস্ট বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী ও বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সাবেক সমন্বয়ক নাজিফা জান্নাত প্রমুখ অংশ নেন।