জুলাই গণ–অভ্যুত্থানে অংশগ্রহণকারী নারীদের সম্মাননা প্রদান ও সংবর্ধনা অনুষ্ঠানে নারীদের সঙ্গে অতিথিরা। আজ সকালে রাজধানীর বিজয়নগরে এবি পার্টির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে
জুলাই গণ–অভ্যুত্থানে অংশগ্রহণকারী নারীদের সম্মাননা প্রদান ও সংবর্ধনা অনুষ্ঠানে নারীদের সঙ্গে অতিথিরা। আজ সকালে রাজধানীর বিজয়নগরে এবি পার্টির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে

গণ–অভ্যুত্থানের নারীরা নীরবে হারিয়ে যাচ্ছে: এবি পার্টি

মহান মুক্তিযুদ্ধের পর যেভাবে নারী যোদ্ধারা উপেক্ষিত হয়েছিলেন, সেভাবেই আজ গণ–অভ্যুত্থানে অংশ নেওয়া নারীরাও হারিয়ে যেতে বসেছেন। জুলাই গণ–অভ্যুত্থানের পর অনেকেই অভ্যুত্থানের ক্রেডিট ও সরকারি সুবিধা নিতে ব্যস্ত হয়ে পড়েছেন। কিন্তু এই আন্দোলনের অগ্নিকন্যারা সবার মাঝ থেকে নীরবে হারিয়ে যাচ্ছেন।

আজ বৃহস্পতিবার সকালে রাজধানীর বিজয়নগরে এবি পার্টির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে আয়োজিত এক অনুষ্ঠানে দলটির নেতারা এ কথাগুলো বলেন। জুলাই আন্দোলনে অংশ নেওয়া নারীদের সম্মাননা দিতে এই সংবর্ধনা অনুষ্ঠানের আয়োজন করে এবি পার্টির নারী বিভাগ।

সংবর্ধনা অনুষ্ঠানে এবি পার্টির উপদেষ্টা ও বিশিষ্ট রাষ্ট্রবিজ্ঞানী দিলারা চৌধুরী বলেন, ‘এত হত্যা, গুম ও খুনের পর তথাকথিত বন্ধুরাষ্ট্র হাসিনা ও তার দোসরদের আশ্রয়–প্রশ্রয় দিয়েছে। শুধু আশ্রয় দিয়েই ক্ষান্ত হয়নি, এখন তারা বাংলাদেশের স্থিতিশীলতা নষ্টের জন্য সব প্রচেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে। যেই ফ্যাসিবাদীদের পতনে দেশের নারীরা জীবন দিল, প্রতিরোধ গড়ে তুলল, চিকিৎসা দিল; কিন্তু এখন আমার সেই নারী বোনদের আর চোখে পড়ে না।’

দিলারা চৌধুরী আরও বলেন, ‘মুক্তিযুদ্ধেও আমরা একই চিত্র দেখেছি, কিছু মানুষ যুদ্ধ না করেও সার্টিফিকেট নিয়েছে, সুযোগ–সুবিধা নিয়েছে। এখন এই গণ–অভ্যুত্থানের পরও অনেক মানুষ ক্রেডিট নিতে ব্যস্ত, সরকারি নানা সুবিধা আদায়ে সচেষ্ট। কিন্তু আন্দোলনের সেই অগ্নিকন্যারা আমাদের মাঝ থেকে নীরবে সরে যাচ্ছে। জুলাই গণ–অভ্যুত্থানে অংশ নেওয়া নারীরাও মুক্তিযুদ্ধে অংশগ্রহণকারী নারীদের মতো হারিয়ে যেতে বসেছে। এটা আমরা হতে দিতে পারি না।’

গণ–অভ্যুত্থানে নারীদের উজ্জ্বল ভূমিকার কথা উল্লেখ করে এবি পার্টির চেয়ারম্যান মজিবুর রহমান বলেন, ‘ফ্যাসিবাদ পতনের আন্দোলনে বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রীরা, আমাদের মায়েরা, বোনেরা কারফিউ ভঙ্গ করে মিছিল করেছে। আমি দীর্ঘ সময় ধরে শহীদদের পরিবারের অনুভূতি শুনছিলাম, ডাক্তার বোনদের বক্তব্য শুনছিলাম। এগুলো আমাদের শুনতে হবে, বুঝতে হবে, কীভাবে একটি স্বৈরাচারী ফ্যাসিবাদের পতন হয়েছিল, দেশের মানুষ মুক্তির নেশায় কতটা ত্যাগ করেছিল।’

জুলাই গণ–অভ্যুত্থানে অংশগ্রহণকারী নারীদের সম্মাননা প্রদান ও সংবর্ধনা অনুষ্ঠানে নারীদের সঙ্গে অতিথিরা। আজ সকালে রাজধানীর বিজয়নগরে এবি পার্টির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে

অনুষ্ঠানে এবি পার্টির আন্তর্জাতিক বিভাগের প্রধান ও কেন্দ্রীয় যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক নাসরীন সুলতানা বলেন, ‘জুলাই আন্দোলনের এক বছর যেতে না যেতেই আমরা আন্দোলনে অংশ নেওয়া নারীদের ভুলে যাচ্ছি। সেই সময়ের অগ্নিকন্যারা এখন হারিয়ে যেতে বসেছে। তাহলে আমরা কি বুঝব, প্রয়োজনেই শুধু নারীদের গুরুত্ব?’

অনুষ্ঠানে সোহরাওয়ার্দী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের চিকিৎসক সানজিদা আক্তার বলেন, ‘জুলাই গণ–অভ্যুত্থানে হাজারো শহীদ রক্ত দিল, আমরা রাত–দিন এক করে আহত ও নিহত ব্যক্তিদের চিকিৎসা করার চেষ্টা করলাম, হাসপাতালের জরুরি বিভাগ কিংবা ক্যাজুয়ালিটি ইউনিট রক্তে ভেসে গেল—সব মিলিয়ে একটি স্বৈরাচার, ফ্যাসিবাদের হাত থেকে মানুষ মুক্তি পেল। কিন্তু আজ এক বছর পর আমরা কি পেলাম? এত কিছুর পর দেশের মানুষ কিংবা আমরা কি পেলাম? যত পরিবর্তন বা সংস্কারের বক্তব্য আমরা শোনলাম, তা আজ কত দূর?’

একই হাসপাতালের আরেক চিকিৎসক পারশা রহমান গণ–অভ্যুত্থানের সময় ভয়াবহ পরিস্থিতির স্মৃতিচারণা করে বলেন, ‘এত নারী আন্দোলনে অংশ নিল, দেশ গড়ার এই সময়ে এসে তারা আজ কেন নিভৃতে আছে?’ নারীদের সম্মান ব্যতীত একটি দেশ কল্যাণকর রাষ্ট্র আকারে গড়ে উঠতে পারে না বলে মন্তব্য করেন তিনি।

অনুষ্ঠানে জুলাই আন্দোলনে অংশ নেওয়া নারীদের হাতে সম্মাননা তুলে দেওয়া হয়। অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন এবি পার্টির সিনিয়র ভাইস চেয়ারম্যান মেজর (অব.) আব্দুল ওহাব মিনার। সঞ্চালনায় ছিলেন এবি পার্টির নারীবিষয়ক সম্পাদক ফারাহ নাজ সাত্তার। এতে বক্তব্য দেন ইনডিপেনডেন্ট বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক নুর নিরভানা, গণ–অভ্যুত্থানে শহীদ নাঈমার মা আইনুন নাহার, শহীদ সুমাইয়া আক্তারের মা আসমা বেগম, শহীদ শাহীনুর বেগমের মেয়ে খাদিজা বেগম, শহীদ নাসিমা আক্তারের বোন কোহিনূর বেগম প্রমুখ।