জুলাই শহীদ পরিবার ও আহত ব্যক্তিদের সঙ্গে মতবিনিময় সভায় জামায়াতে ইসলামীর নেতারা। আজ মঙ্গলবার রাজধানীর ডিআরইউ শফিকুল কবির মিলনায়তনে
জুলাই শহীদ পরিবার ও আহত ব্যক্তিদের সঙ্গে মতবিনিময় সভায় জামায়াতে ইসলামীর নেতারা। আজ মঙ্গলবার রাজধানীর ডিআরইউ শফিকুল কবির মিলনায়তনে

জামায়াতের মতবিনিময় সভা

সংস্কার ছাড়া নির্বাচন হলে দেশ আবার ভিন্ন দিকে যাবে

সংস্কার ছাড়া নির্বাচন হলে দেশ আবার ফ্যাসিস্ট কায়দায় ভিন্ন দিকে যাবে। চাঁদাবাজি ও দুর্নীতি ঠেকাতে রাষ্ট্রীয় কাঠামোর সংস্কার আবশ্যক। চব্বিশের গণ–অভ্যুত্থানপরবর্তী পরিস্থিতিতে সংস্কার ছাড়া দেশের মানুষ কোনো নির্বাচন দেখতে চান না।

আজ মঙ্গলবার রাজধানীর ডিআরইউ শফিকুল কবির মিলনায়তনে জুলাই শহীদ পরিবার ও আহত ব্যক্তিদের সঙ্গে এক মতবিনিময় সভায় এ কথা বলেন জামায়াতে ইসলামীর কেন্দ্রীয় নির্বাহী পরিষদের সদস্য ও ঢাকা মহানগর দক্ষিণের আমির মো. নুরুল ইসলাম।

জুলাই গণ–অভ্যুত্থানের বর্ষপূর্তি উপলক্ষে মতবিনিময় সভাটির আয়োজন করে জামায়াতে ইসলামী ঢাকা মহানগরী দক্ষিণ শাখার পল্টন–মতিঝিল জোন।

জাতীয় নির্বাচনের আগে নির্বাচনব্যবস্থা ও রাষ্ট্রকাঠামো সংস্কারের দাবি তুলে নুরুল ইসলাম বুলবুল বলেন, ‘নির্বাচন হবে আর আবারও ক্ষমতায় গিয়ে দেশকে একটা ফ্যাসিস্ট কায়দায় ভিন্ন দিকে নিয়ে যাবে, বসবাসের অযোগ্য একটি রাষ্ট্রে পরিণত করবে, এমন কোনো নির্বাচন এ দেশের জনগণ চান না, জামায়াতে ইসলামী চায় না, আহত ব্যক্তিরাও এ ধরনের বাংলাদেশ চান না।’

সত্য ও সুন্দর দেশ প্রতিষ্ঠা করতে চায়, এমন কোনো মানবিক রাজনৈতিক দল ভবিষ্যতে ক্ষমতায় গেলে সবার আগে জুলাই শহীদ ও আহত ব্যক্তিদের মর্যাদা দেবে বলে উল্লেখ করেন নুরুল ইসলাম।

নুরুল ইসলাম বলেন, জুলাই গণ–অভ্যুত্থানকে কারা ধারণ করছেন আর কারা করছেন না, তা দেশের জনগণের কাছে পরিষ্কার। কারা দুর্নীতি, টেন্ডার ও চাঁদাবাজমুক্ত বাংলাদেশ চান আর কারা চান না, বাংলাদেশের জনগণের কাছে সেটাও দিনের আলোর মতো পরিষ্কার।

আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনের আগে জুলাই গণহত্যার বিচার, সংস্কার ও জুলাই সনদ ঘোষণার দাবি জানান মতবিনিময় সভায় অংশ নেওয়া জুলাই আহত ও শহীদ পরিবারের সদস্যরা। এসব দাবির সঙ্গে বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর পূর্ণ সমর্থন রয়েছে বলে জানান নুরুল ইসলাম।

নুরুল ইসলাম বলেন, ‘আমরা পরিষ্কার করে বলছি, নির্বাচনের আগে শহীদ পরিবার ও আহত ব্যক্তিদের পুনর্বাসন করতে হবে। জুলাই আন্দোলনের নৈতিক ভিত্তি দিতে জুলাই সনদ স্বাক্ষর করতে হবে। যারা জুলাই সনদকে গুরুত্ব দেয় না, তারা জুলাই গণ–অভ্যুত্থানকে গুরুত্ব দেয় না। জুলাই গণ–অভ্যুত্থানে যাঁরা আহত হয়েছেন, তাঁদের সম্মান দেয় না। উল্টো জুলাই আহতদের মর্যাদার হানি হয়, প্রতিনিয়ত এমন বক্তব্য দিয়ে যাচ্ছে।’

মতবিনিময় সভায় অংশ নেন পাঁচ আগস্ট যাত্রাবাড়ীতে শহীদ হওয়া লিটনের ছোট বোন মিশু আক্তার। ইডেন মহিলা কলেজের চতুর্থ বর্ষের এই শিক্ষার্থী বলেন, ‘ফ্যাসিস্টের পতন হলেও সঙ্গে আমার ভাইয়ের লাশ উপহার পেয়েছি। সবাই আমাদের গর্বিত বলে, কিন্তু আপনারা আমাদের জন্য কী করেছেন? ভাইয়ের মৃত্যুর পর একমাত্র উপার্জনক্ষম ব্যক্তিকে হারিয়ে আমার পরিবার অসহায় অবস্থায় আছে। এ সময়ে জামায়াতে ইসলামী ছাড়া আর কোনো রাজনৈতিক দল আমাদের খোঁজ নেয়নি।’

রাজনীতিবিদদের উদ্দেশে মিশু আক্তার বলেন, ‘যাঁরা এখন নির্বাচনের কথা বলছেন, এত শহীদ না হলে নির্বাচনের সুযোগ কোথায় পেতেন? এখন পর্যন্ত শহীদের স্বীকৃতিও হয়নি। পাঁচ আগস্টের পর রাজনীতিবিদেরা বিভিন্ন দেশ থেকে ফিরেছেন। কিন্তু আমরা কী পেলাম? আমাদের একটাই দাবি, নির্বাচনের আগে হত্যার বিচার, শহীদ পরিবার ও আহত ব্যক্তিদের পুনর্বাসন করতে হবে।’

মতবিনিময় সভায় বক্তব্য দেন জুলাই আহত হেলাল মিয়া, মো. হারুন, আবু বকর সিদ্দিক, শহীদ কামালের মেয়ে সুরাইয়া আক্তার প্রমুখ।

জামায়াতে ইসলামীর পক্ষ থেকে আরও বক্তব্য দেন জামায়াতে ইসলামী ঢাকা মহানগর দক্ষিণের নায়েবে আমির হেলাল উদ্দিন, জামায়াত নেতা শামসুর রহমান, নুর উদ্দিন, মাহফুজুল হক, শাহীন আহমেদ প্রমুখ।