জামায়াতে ইসলামীর আমির শফিকুর রহমান। আজ শুক্রবার দুপুরে রাজধানীর শেরেবাংলা নগরের বাংলাদেশ-চীন মৈত্রী সম্মেলন কেন্দ্রে
জামায়াতে ইসলামীর আমির শফিকুর রহমান। আজ শুক্রবার দুপুরে রাজধানীর শেরেবাংলা নগরের বাংলাদেশ-চীন মৈত্রী সম্মেলন কেন্দ্রে

কেউ বেকার থাকবে না—এমন শিক্ষাব্যবস্থা গড়তে চায় জামায়াত: শফিকুর রহমান

জামায়াতে ইসলামী এমন একটি শিক্ষাব্যবস্থা গড়ে তুলতে চায়, যে শিক্ষা নিয়ে কেউ বেকার থাকবে না বলে মন্তব্য করেছেন দলটির আমির শফিকুর রহমান। এ প্রসঙ্গে তিনি বলেছেন, অনেকে সংখ্যা গুনে বলছেন, তাঁরা এত কোটি, এত লাখ যুবককে কর্মসংস্থান দেবেন। অন্যদের কী হবে? বলছেন, অন্যদের ভাতা দেবেন। কিন্তু দেশের তরুণেরা কারও কাছ থেকে বেকার ভাতা গ্রহণ করুক, তা তাঁরা দেখতে চান না, শুনতেও চান না। তাঁরা প্রত্যেকের হাতকে দেশ গড়ার কারিগরের হাতে পরিণত করতে চান। প্রত্যেকের হাতে কাজ তুলে দিতে চান।

আজ শুক্রবার দুপুরে রাজধানীর শেরেবাংলা নগরের বাংলাদেশ-চীন মৈত্রী সম্মেলন কেন্দ্রে জামায়াতের ছাত্রসংগঠন ইসলামী ছাত্রশিবিরের কেন্দ্রীয় সদস্যসম্মেলনে প্রধান অতিথির বক্তব্যে শফিকুর রহমান এ কথা বলেন।

তিন শর্ত মানলে যেকোনো দল জামায়াতের সঙ্গে নির্বাচনী সমঝোতা করতে পারে বলে মন্তব্য করেন শফিকুর রহমান। তাঁর ভাষ্যে শর্তগুলো হলো—দুর্নীতি করবে না, দুর্নীতিবাজকে প্রশ্রয় দেওয়া হবে না। সমাজের সর্বস্তরে সবার জন্য সমান বিচার নিশ্চিত করা হবে, কোনো রাজনীতিবিদ বিচারে হস্তক্ষেপ করতে পারবেন না। সংস্কারের সব সুপারিশ বাস্তবায়নের প্রতিশ্রুতি দিতে হবে।

ছাত্রশিবির সম্পর্কে জামায়াতের আমির বলেন, এটি (শিবির) এখন শুধু একটি সাধারণ ছাত্রসংগঠন নয়, চব্বিশের বিপ্লব-পরবর্তী সময়ে বাংলাদেশের ছাত্রসমাজ ভালোবাসা দিয়ে এই সংগঠনকে গ্রহণ করেছে। তাদের ম্যান্ডেট দিয়েছে। আজ ছাত্রশিবিরকে ছাত্রসমাজের অভিভাবকের দায়িত্ব পালন করতে হবে।

গত ৫৪ বছর ছাত্রদের হাত থেকে কলম কেড়ে নেওয়া হয়েছিল বলে মন্তব্য করেন শফিকুর রহমান। এ প্রসঙ্গে তিনি বলেন, কোমলমতি ছাত্রদের বিভ্রান্ত করে তাঁদের হাতে অস্ত্র তুলে দেওয়া হয়েছিল। শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলো মিনি–ক্যান্টনমেন্টে পরিণত হয়েছিল। মেয়েদের ইজ্জত, ছাত্রদের জীবন ও ক্যারিয়ারের কোনো নিশ্চয়তা ছিল না। সেই কালো অধ্যায় বিদায় নিতে শুরু করেছে। কিন্তু কালো ছায়া এখনো জাতির ওপর থেকে যায়নি। এই কালো ছায়া খতম না করা পর্যন্ত ছাত্রশিবিরের লড়াই অব্যাহত রাখতে হবে।

দেশ নিয়ে একটি নতুন সম্ভাবনা দেখা দিয়েছে বলে অনুষ্ঠানে মন্তব্য করেন জামায়াতের সেক্রেটারি জেনারেল মিয়া গোলাম পরওয়ার। তিনি বলেন, সামনে জাতিকে ঐক্যবদ্ধ করে এগিয়ে নিয়ে যেতে হবে। তবে ঠিক এই সময়ে এ অগ্রযাত্রা রুখে দেওয়ার জন্য একটি চক্র, একটি ষড়যন্ত্র দেখা যাচ্ছে। শিবির তথা আধিপত্যবাদবিরোধী ইসলামি জনতার এই সংগ্রামকে সন্ত্রাস দিয়ে তারা ঠেকাতে না পেরে এখন মিথ্যাচার-অপপ্রচারের মাধ্যমে জাতিকে বিভ্রান্ত করে আবার পেছনে ঠেলে দিতে চায়। কিন্তু জাতি কোনো মিথ্যাচার কখনো বিশ্বাস করবে না।

প্রতিপক্ষ শক্ত যুক্তি ও আদর্শ দিয়ে শিবিরকে মোকাবিলা করতে ব্যর্থ হয়ে মিথ্যাচার আর অপপ্রচারের পথ বেছে নিয়েছে বলে মন্তব্য করেন মিয়া গোলাম পরওয়ার। তিনি বলেন, প্রতিপক্ষ শিবিরকে স্বাধীনতাবিরোধী বলেছে, রগকাটা বলেছে, গুপ্ত বলেছে। কিন্তু প্রমাণ করতে পারেনি। চারটি পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রসংসদ নির্বাচনে জনগণ তাদের (প্রতিপক্ষ) প্রত্যাখ্যান করেছে। জনগণ তাদের কথায় কখনো বিভ্রান্ত হয়নি।

অনুষ্ঠানে আরও বক্তব্য দেন জামায়াতের সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল রফিকুল ইসলাম খান, কেন্দ্রীয় কর্মপরিষদ সদস্য ও ঢাকা-১২ আসনে দলের প্রার্থী সাইফুল আলম খান মিলন, ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের প্রেসিডিয়াম সদস্য আশরাফ আলী আকন, বাংলাদেশ লেবার পার্টির চেয়ারম্যান মোস্তাফিজুর রহমান ইরান, জাতীয় গণতান্ত্রিক পার্টির (জাগপা) মুখপাত্র রাশেদ প্রধান প্রমুখ।

অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন খেলাফত মজলিসের মহাসচিব আহমদ আবদুল কাদের, জামায়াতের সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল আবদুল হালিম, হামিদুর রহমান আযাদ, ঢাকা মহানগর উত্তরের আমির সেলিম উদ্দিন, সেক্রেটারি রেজাউল করিম, মহানগর দক্ষিণের আমির নূরুল ইসলাম বুলবুল, সেক্রেটারি শফিকুল ইসলাম মাসুদসহ বিভিন্ন আসনের সংসদ সদস্য পদপ্রার্থীরা। এ ছাড়া ছিলেন জামায়াতের নানা স্তরের নেতা-কর্মী।

ইনকিলাব মঞ্চের প্রয়াত আহ্বায়ক শরিফ ওসমান বিন হাদির বড় ভাই ওমর বিন হাদিও অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন।

অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন শিবিরের কেন্দ্রীয় সভাপতি জাহিদুল ইসলাম। সঞ্চালনায় ছিলেন শিবিরের কেন্দ্রীয় সাধারণ সম্পাদক নুরুল ইসলাম সাদ্দাম। সম্মেলনে শিবিরের কয়েক হাজার সদস্য অংশগ্রহণ করেন।