যারা ’৭১–কে ’২৪ দিয়ে বিভিন্নভাবে প্রশ্নবিদ্ধ করতে চায়, যারা ’৭১–এর শহীদদের অসম্মান করতে চায়, তাদের প্রতিহত করতে হবে। আবার যারা জুলাইয়ে গণহত্যার সঙ্গে জড়িত, তাদেরও পরাজিত করতে হবে। আজ শুক্রবার বিকেলে রাজধানীর শাহবাগে জাতীয় জাদুঘরের সামনে আয়োজিত এক ছাত্র সমাবেশে বক্তারা এ কথাগুলো বলেন। বাংলাদেশ ছাত্র ফেডারেশনের ৪০তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উপলক্ষে এই ছাত্র সমাবেশের আয়োজন করা হয়।
সমাবেশে গণসংহতি আন্দোলনের প্রধান সমন্বয়ক জোনায়েদ সাকি বলেন, সব ফ্যাসিস্ট নিজেদের মতো বাস্তবতা তৈরি করতে চায়। তারা মনে করে, মানুষের মগজ ধোলাই করে তাদের ওপর দমন–পীড়ন চালিয়ে তাদের দাবিয়ে রাখবে। অনেকেই সেই বাস্তবতা মেনে নেয়, কিন্তু কিছু মানুষ বাস্তবতা বদলে দেয়। যেমনটা ’৭১ ও ’২৪–এ মানুষ বাস্তবতা বদলে দিয়েছে।
ক্ষমতায় থেকে দল গঠন মানুষ ভালোভাবে নেয় না উল্লেখ করে জোনায়েদ সাকি বলেন, ‘ছাত্ররা নতুন দল করতে চাইছে। আমরা স্বাগত জানাই। অভ্যুত্থানের চৈতন্য নিয়ে, আকাঙ্ক্ষা নিয়ে যদি নতুন দল হয়, ছাত্রদের একাংশ যদি দল গঠন করে তাহলে আমরা তাদের স্বাগত জানাব। কিন্তু ক্ষমতায় থেকে দল গঠন বাংলাদেশের মানুষ ভালোভাবে নেয় না।’
অন্তর্বর্তী সরকারের সমালোচনা করে জোনায়েদ সাকি বলেন, ‘গণ–অভ্যুত্থানের ওপর দাঁড়িয়ে থাকা সরকার এখনো শহীদদের তালিকা তৈরি করতে পারেনি। ৫ আগস্টের পর আমরা বলেছিলাম, শহীদদের তালিকা এবং আহতদের চিকিৎসা নিশ্চিত করতে। কিন্তু এখন পর্যন্ত সেটি করতে পারেনি এই সরকার। আমরা এখনো আহতদের আর্তনাদ শুনতে পাচ্ছি। শহীদদের পূর্ণাঙ্গ তালিকা হয়নি। সরকারকে বলি, দ্রুততম সময়ে এসব বিষয়ে কার্যকর ব্যবস্থা নেন। অভ্যুত্থানের পরের সরকার ব্যর্থ হোক, সেটা আমাদের কাম্য নয়। আমরা আপনাদের সহযোগিতা করতে চাই। জাতীয় রাজনৈতিক কাউন্সিল গঠন করেন, ছাত্রদের জন্য ছাত্র কাউন্সিল গঠন করেন এবং সবাইকে নিয়ে বাংলাদেশ পরিচালনা করে গণতান্ত্রিক বাংলাদেশ তৈরি করেন।’
বাংলাদেশের মানুষ দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতি এবং তাদের জানমালের অনিরাপত্তায় ভুগছে উল্লেখ করে জোনায়েদ সাকি বলেন, ‘তাদের এই সংকট দূর করা আপনাদের (অন্তর্বর্তী সরকারের) কাজ।’ তিনি আরও বলেন, ‘আপনারা প্রয়োজনে রাজনৈতিক দলগুলোর সহযোগিতা নেন, সহযোগিতা না নিয়ে যদি নিজেদের মতো করে দেশ চালাতে চান, তাহলে আপনারা ব্যর্থ হবেন। কিন্তু আমরা আপনাদের ব্যর্থ হতে দিতে পারি না।’
সরকারের উদ্দেশে জোনায়েদ সাকি বলেন, ‘জাতীয় রাজনৈতিক কাউন্সিল গঠন করুন, ছাত্র কাউন্সিল গঠন করে সবাইকে সঙ্গে নিয়ে গণতান্ত্রিক বাংলাদেশ তৈরি করুন।’
সমাবেশে বাংলাদেশ ছাত্র ফেডারেশনের সভাপতি মশিউর রহমান খান রিচার্ড বলেন, যারা ’৭১–কে ’২৪ দিয়ে বিভিন্নভাবে প্রশ্নবিদ্ধ করতে চায়, যারা ’৭১–এর শহীদদের অসম্মান করতে চায়, তাদের প্রতিহত করতে হবে। আবার যারা জুলাইয়ে গণহত্যার সঙ্গে জড়িত তাদেরও পরাজিত করতে হবে।
রিচার্ড বলেন, ‘আজকে ’৭১ ও ’২৪–এর মুক্তিকামী মানুষের বিরোধী শক্তি সবাই এক কাতারে দাঁড়িয়ে আছে, এর বিপরীতে ছাত্র–জনতা যারা ’৭১ থেকে ’২৪–এ আবু সাঈদের মতো বুক চিতিয়ে রাজপথে দাঁড়িয়ে গিয়েছিল, স্বপ্ন দেখেছিল যে এ দেশের প্রতিটি মানুষের শিক্ষার অধিকার নিশ্চিত হবে, চিকিৎসার অধিকার নিশ্চিত হবে, এই রাষ্ট্রের প্রতিটি তরুণের শিক্ষাজীবন শেষে তার কর্মসংস্থান নিশ্চিত হবে এবং এমন একটি রাষ্ট্র, যেখানে প্রত্যেক নাগরিকের অধিকার নিশ্চিত হবে। অথচ সেই রাষ্ট্র নির্মাণের কাজের বিরুদ্ধে আজ দেশে–বিদেশে নানা গোষ্ঠী ষড়যন্ত্র করছে। আমরা তার বিরুদ্ধে ঐক্যবদ্ধ থাকতে চাই।’
সমাবেশে যাত্রাবাড়ীতে আহত মো. জামাল হোসেন বলেন, ‘আজ ৫ মাস পেরিয়ে গেছে। আমার হাত-পায়ে গুলি লেগেছে অথচ ঠিকমতো চিকিৎসা পাইনি। কোনো কাজ করতে পারি না।’
বাংলাদেশ ছাত্র ফেডারেশনের সভাপতি মশিউর রহমান খান রিচার্ড সমাবেশে সভাপতিত্ব করেন ও সাধারণ সম্পাদক সৈকত আরিফ সঞ্চালনা করেন। সমাবেশে আরও বক্তব্য দেন বাংলাদেশ ছাত্র ফেডারেশনের সহসাধারণ সম্পাদক ফাতেমা রহমান বিথী, সাংগঠনিক সম্পাদক আল-আমিন শেখ, কেন্দ্রীয় সদস্য শ্রীধাম শীলসহ আরও অনেকে।
সমাবেশ শুরুর আগে ঢাকার ইঞ্জিনিয়ার্স ইনস্টিটিউশনের সামনে থেকে একটি শোভাযাত্রা শাহবাগ দিয়ে টিএসসি হয়ে আবার শাহবাগে সমাবেশে এসে যোগ দেয়।