
জুলাই গণ–অভ্যুত্থানের মাধ্যমে ফ্যাসিবাদের চূড়ান্ত বিদায় হয়নি বলে মনে করেন জামায়াতে ইসলামীর আমির শফিকুর রহমান। তিনি বলেন, মানুষ ধারণা করেছিল, গণ–অভ্যুত্থানের মাধ্যমে ফ্যাসিবাদের চূড়ান্ত বিদায় হবে। কিন্তু ফ্যাসিবাদের একটি অংশ বিদায় নিলেও ফ্যাসিবাদ বাংলাদেশে রয়ে গেছে।
জামায়াতের আমিরের মতে, ফ্যাসিবাদীদের কিছু লক্ষণ আছে। ১ নম্বর লক্ষণ হচ্ছে দুর্নীতি। ২ নম্বর লক্ষণ হচ্ছে চাঁদাবাজি। ৩ নম্বর লক্ষণ হচ্ছে দখলদারি। চতুর্থ লক্ষণ হচ্ছে মা–বোনদের ইজ্জত নিয়ে টানাটানি। পঞ্চম লক্ষণ হচ্ছে দেশকে গায়ের জোরে অস্থির করা। তাঁর দাবি, সব লক্ষণই এখনো বিদ্যমান।
আজ শুক্রবার সকালে রাজধানীর ভাষানটেক এলাকায় ঢাকা–১৭ আসনের আওতাভুক্ত জামায়াতের বিভিন্ন কমিটি আয়োজিত এক যুব–ছাত্র ও নাগরিক গণসমাবেশে শফিকুর রহমান এ কথাগুলো বলেন।
সম্প্রতি অনুষ্ঠিত চার বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র সংসদ নির্বাচনে ইসলামী ছাত্রশিবির বিপুল বিজয় পায়। ছাত্রশিবির জামায়াতের ছাত্রসংগঠন হিসেবে পরিচিত। ছাত্র সংসদ নির্বাচনের প্রভাব জাতীয় নির্বাচনে পড়বে না বলে মনে করে বিএনপি। তবে জামায়াতের মতে, নির্বাচনে এর প্রভাব পড়বে।
এ প্রসঙ্গ টেনে জামায়াতের আমির শফিকুর রহমান বলেন, ‘ছাত্র সংসদ নির্বাচনের ইতিবাচক প্রভাব জনগণের হৃদয়ে পড়েছে। এই রাস্তায় অনেকে সফল হতে পারবে না বা জনগণের ম্যান্ডেট পাবে না, এমন চিন্তা করে এখন কোনো কোনো জায়গায় পুরাতন সন্ত্রাসীরা নতুন রূপে আত্মপ্রকাশ করতে যাচ্ছে। কোথাও জামায়াতের প্রচার মিছিলে গুলি চালানো হচ্ছে। কোথাও মা–বোনদের ওপর হামলা করা হচ্ছে। কোথাও জামায়াতের প্রচার উপকরণ সরিয়ে ফেলা হচ্ছে, ছিঁড়ে ফেলা হচ্ছে।’
দেশের মানুষ পুরোনো বস্তাপচা রাজনীতি আর দেখতে চায় না উল্লেখ করে শফিকুর রহমান বলেন, নতুন বাংলাদেশ আর পুরোনো ফর্মুলায় চলবে না। নতুন বাংলাদেশ চলবে নতুন ফর্মুলায়। সেই ফর্মুলা হলো, দেশের জনগণ আর কোনো দলের পক্ষপাতদুষ্ট সরকার দেখতে চায় না। জনগণ চায়, সরকারের প্রত্যেক নিয়োজিত ব্যক্তি নিজের জন্য চিন্তা করার আগে জনস্বার্থ নিয়ে ভাববেন। যে সরকার জনগণের ভাগ্যের পরিবর্তনের কথা বলে জনগণের সঙ্গে প্রতারণা করে নিজের ভাগ্যের পরিবর্তন করবে না, দুর্নীতিতে জড়াবে না, সরকারের মদদপুষ্ট হয়ে কেউ চাঁদাবাজি করার দুঃসাহস দেখাবে না।
জামায়াতে ইসলামী ক্ষমতায় যেতে না পারলেও পাঁচ বছরের জন্য ক্ষমতার ছোট অংশীদার ছিল উল্লেখ করে দলের আমির বলেন, ২০০১ থেকে ২০০৬ সাল পর্যন্ত যাঁরা ক্ষমতায় ছিলেন, তাঁরা দেশকে সুশাসন দিতে ব্যর্থ হয়েছেন। সে সময় দেশ চারবার দুর্নীতিতে বিশ্ব চ্যাম্পিয়ন হয়েছিল।
শফিকুর রহমান বলেন, ওই সময় জামায়াতের আমির ও সেক্রেটারি জেনারেল মন্ত্রী ছিলেন। কিন্তু তাঁদের দুর্নীতির একটি শর্ষেদানাও কেউ আবিষ্কার করতে পারেনি। তাঁদের এই সাফল্য দেখে দুর্নীতিবাজেরা শঙ্কিত হয়ে পড়েছিল। যেকোনো মূল্যে জামায়াতকে বাংলাদেশের রাজনীতিতে অস্তিত্বহীন করার চেষ্টা করা হয়েছিল।
জামায়াতের আমির আরও বলেন, ধর্মীয় কোনো বিশ্বাস ধারণ করা প্রত্যেক নাগরিকের নিজস্ব ব্যাপার। এখানে কোনো জোরজবরদস্তি চলবে না। আগামী নির্বাচনে জামায়াতের হয়েও ভিন্ন ধর্মাবলম্বী কেউ কেউ সংসদ সদস্য পদে লড়াই করবেন বলেও জানান তিনি।
জামায়াতে ইসলামীর ঢাকা মহানগর উত্তরের আমির মুহাম্মদ সেলিম উদ্দিনের সভাপতিত্বে সমাবেশে আরও বক্তব্য দেন ঢাকা–১৭ আসনে জামায়াত মনোনীত প্রার্থী এস এম খালিদুজ্জামান। তিনি বলেন, আগামী দিনে গুম, খুন ও বৈষম্যমুক্ত রাষ্ট্র গঠন করতে চাইলে দাঁড়িপাল্লার বিকল্প নেই। চব্বিশের গণ–অভ্যুত্থানে শহীদেরা দেশ গঠনের যে সুযোগ করে দিয়েছে, সেই সুযোগ কাজে লাগিয়ে এগিয়ে যেতে হবে।
সমাবেশে আরও বক্তব্য দেন ইসলামী ছাত্রশিবিরের কেন্দ্রীয় সভাপতি জাহিদুল ইসলাম। মূল সমাবেশস্থলের কিছুটা দূরে ছিল নারীদের বসার জায়গা। সেখানে জামায়াত আমিরসহ কেন্দ্রীয় নেতাদের বক্তব্য বড় পর্দায় দেখানো হয়।