শাপলা স্মৃতি সংসদ আয়োজিত সম্মেলনে বক্তব্য দিচ্ছেন বাংলাদেশ খেলাফত মজলিসের আমির মাওলানা মামুনুল হক
শাপলা স্মৃতি সংসদ আয়োজিত সম্মেলনে বক্তব্য দিচ্ছেন বাংলাদেশ খেলাফত মজলিসের আমির মাওলানা মামুনুল হক

‘শাপলা গণহত্যা তদন্ত কমিশন’ গঠনসহ ৭ দাবি শাপলা স্মৃতি সংসদের

‘শাপলা গণহত্যা তদন্ত কমিশন’ গঠন এবং জুলাই ঘোষণাপত্রে এ গণহত্যার ঘটনাকে জাতীয় ট্র্যাজেডি হিসেবে স্বীকৃতি দেওয়াসহ সাতটি দাবি জানিয়েছে ‘শাপলা স্মৃতি সংসদ’ নামের একটি প্ল্যাটফর্ম। রাজধানীর শাপলা চত্বরে ২০১৩ সালের ৫ মে সংঘটিত ঘটনার বিচারের দাবিতে এই প্ল্যাটফর্ম গঠন করা হয়েছে।

গতকাল শনিবার সন্ধ্যায় এক সম্মেলনে শাপলা স্মৃতি সংসদের আহ্বায়ক ও বাংলাদেশ খেলাফত মজলিসের আমির মাওলানা মামুনুল হক এসব দাবি উত্থাপন করেন। রাজধানীর ডিপ্লোমা ইঞ্জিনিয়ার্স ইনস্টিটিউশন মিলনায়তনে ‘শাপলা চত্বর: শাহাদাতের রক্তে রাঙা অবিনাশী চেতনা’ শিরোনামে এই সম্মেলনের আয়োজন করা হয়। এতে শাপলা চত্বরের ঘটনার ওপর এক প্রামাণ্যচিত্র প্রদর্শন করা হয় এবং নিহত ব্যক্তিদের জীবনভিত্তিক স্মারকগ্রন্থ ‘শহীদনামা’র মোড়ক উন্মোচন করা হয়।

সম্মেলনে উত্থাপিত অন্য দাবিগুলো হলো শাপলা চত্বরের ঘটনায় নিহত ও আহত ব্যক্তিদের রাষ্ট্রীয় স্বীকৃতি ও তাঁদের পরিবারের পুনর্বাসন, এ ঘটনার ইতিহাস জাতীয় শিক্ষাক্রমে অন্তর্ভুক্ত করা; রাষ্ট্রীয় উদ্যোগে যাচাইকৃত শহীদ তালিকা প্রস্তুত করে তা জাতীয় নথিতে অন্তর্ভুক্ত করা; শাপলা চত্বরের ঘটনায় দায়ী ব্যক্তিদের দ্রুত বিচারের আওতায় এনে কঠোর শাস্তি নিশ্চিত করা এবং হেফাজতে ইসলাম ও সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে দায়ের করা সব হয়রানিমূলক মামলা অবিলম্বে প্রত্যাহার করা।

এ সময় মাওলানা মামুনুল হক জানান, শাপলা গণহত্যা নিয়ে যাঁরা সংবাদ প্রতিবেদন ও গবেষণা, সাহিত্য রচনা, চিকিৎসা সহায়তা, আইনি লড়াই কিংবা স্মৃতি সংরক্ষণমূলক উদ্যোগের মাধ্যমে বিভিন্নভাবে অবদান রেখেছেন, আগামী ৩০ আগস্ট তাঁদের সম্মাননা প্রদানের মাধ্যমে ‘শাপলাকেন্দ্রিক বিভিন্ন কাজে অংশীজনের সম্মাননা ও সম্মিলনী-২০২৫’ অনুষ্ঠিত হবে।

সম্মেলনে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য সালাহউদ্দিন আহমদ বলেন, ‘আমার জীবনে কিছু সময় কেটেছে আয়নাঘরে। কিছু সময় জেলখানায়। কিছু সময় কেটেছে প্রবাসে। এভাবেই কেটেছে আমার জীবনের দীর্ঘ দেড় যুগ সময়। আল্লাহর কাছে প্রার্থনা করি, যেন তিনি আরও কয়েক দিন বাঁচিয়ে রাখেন শাপলার (ঘটনার) বিচার দেখার জন্য।’

সালাহউদ্দিন আহমদ বলেন, এখন মানবতাবিরোধী অপরাধের জন্য আইসিটিতে (আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল) যেসব মামলা হচ্ছে, সেগুলোর বিচার দৃশ্যমান হচ্ছে না। অগ্রাধিকার বিবেচনায় কিছু গুরুত্বপূর্ণ মামলার বিচার শুরু হোক, যাতে দেশবাসী দ্রুত শেখ হাসিনার অন্তত একটি রায় দেখতে পারে।

প্রধান উপদেষ্টার পদত্যাগ নয়, বরং বিএনপির পক্ষ থেকে শুধু জাতীয় নির্বাচনের দাবিতে রোডম্যাপ (পথনকশা) চাওয়া হয়েছে বলেও জানান দলটির স্থায়ী কমিটির এই সদস্য।

সম্মেলনে আমার দেশ পত্রিকার সম্পাদক মাহমুদুর রহমান বলেন, শাপলা চত্বর ফ্যাসিবাদবিরোধী আন্দোলনের মূল অনুপ্রেরণা। ভারতীয় আধিপত্যবাদী চাপিয়ে দেওয়ার জন্য বিগত ফ্যাসিস্ট সরকার আলেমদের ওপর জুলুম–নির্যাতন করেছে এবং কারাবরণ করিয়েছে। ভারতীয় আধিপত্যবাদ মোকাবিলা করাই সবচেয়ে বড় দেশপ্রেম। আর এই কাজটি করেছে দেশের ওলামায়ে কেরাম।

জামায়াতে ইসলামীর সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল এ এইচ এম হামিদুর রহমান আযাদ বলেন, ‘এই শাপলার ইতিহাস যদি মুছে ফেলা হয়, তাহলে আমাদের জাতীয় জীবনের অনেক কিছুই মুছে ফেলা হবে। তাই এই চেতনা শুধু লালন করলেই হবে না, প্রজন্ম থেকে প্রজন্মান্তরে ছড়িয়ে দিতে হবে।’

গণ অধিকার পরিষদের সভাপতি নুরুল হক বলেন, এবার যদি ইসলামপন্থী দলগুলো ঐক্য গড়তে না পারে, তাহলে গণ-অভ্যুত্থান ব্যর্থ হবে। তাই আধিপত্যবাদের বিরুদ্ধে ইসলামপন্থীদের ঐক্যবদ্ধ থাকতে হবে।

মাওলানা মামুনুল হকের সভাপতিত্বে সম্মেলনে আরও বক্তব্য দেন হেফাজতে ইসলামের মহাসচিব মাওলানা সাজিদুর রহমান, যুগ্ম মহাসচিব মাওলানা আজিজুল হক ইসলামাবাদী, ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের মহাসচিব মাওলানা ইউনুস আহমদ, ইসলামী ঐক্যজোটের মহাসচিব মুফতি সাখাওয়াত হুসাইন রাজী, আমার বাংলাদেশ (এবি) পার্টির ভাইস চেয়ারম্যান লে. কর্নেল (অব.) দিদারুল আলম প্রমুখ। এতে শাপলা চত্বরের ঘটনায় আহত ও নিহত ব্যক্তিদের পরিবারের সদস্যরাও বক্তব্য দেন।