‘মাওলানা ভাসানী ও গণ–অভ্যুত্থানের রাজনীতি: বাংলাদেশের গণতান্ত্রিক উত্তরণের পথ’ শীর্ষক আলোচনা সভায় বক্তারা। রোববার বিকেলে জাতীয় প্রেসক্লাবের তফাজ্জল হোসেন মানিক মিয়া হলে
‘মাওলানা ভাসানী ও গণ–অভ্যুত্থানের রাজনীতি: বাংলাদেশের গণতান্ত্রিক উত্তরণের পথ’ শীর্ষক আলোচনা সভায় বক্তারা। রোববার বিকেলে জাতীয় প্রেসক্লাবের তফাজ্জল হোসেন মানিক মিয়া হলে

সফল নির্বাচন হলে গণতান্ত্রিক উত্তরণের অর্ধেকপথ পার করা সম্ভব হবে: মান্না

দেশে একটি সফল নির্বাচন হলে বাংলাদেশের গণতান্ত্রিক উত্তরণের অর্ধেক পথ পার করা সম্ভব হবে বলে মন্তব্য করেছেন নাগরিক ঐক্যের সভাপতি মাহমুদুর রহমান মান্না। আসন্ন জাতীয় নির্বাচন ও চলমান রাজনৈতিক সংকট প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ‘এখন সময়টা উত্তরণের। যে কথা হচ্ছে সেটা হচ্ছে একটা নির্বাচন। একটা সাকসেসফুল ইলেকশনই (সফল নির্বাচন) আমাদেরকে গণতন্ত্রের উত্তরণের অর্ধেকটা পথ পার করে দেয়।’

মাওলানা আবদুল হামিদ খান ভাসানীর ৪৯তম মৃত্যুবার্ষিকী উপলক্ষে ‘মাওলানা ভাসানী ও গণ–অভ্যুত্থানের রাজনীতি: বাংলাদেশের গণতান্ত্রিক উত্তরণের পথ’ শীর্ষক আলোচনা সভায় মাহমুদুর রহমান এ কথাগুলো বলেন। রোববার বিকেলে জাতীয় প্রেসক্লাবের তফাজ্জল হোসেন মানিক মিয়া হলে এ আলোচনা সভার আয়োজন করে গণসংহতি আন্দোলন।

দেশের সামগ্রিক রাজনৈতিক পরিস্থিতি আগের যেকোনো পরিস্থিতির সঙ্গে তুলনীয় নয় বলে মনে করেন নাগরিক ঐক্যের সভাপতি। দীর্ঘ সময় ধরে রাজনৈতিক দলগুলোর ঐকমত্য কমিশনের আলোচনা ও জুলাই জাতীয় সনদের উদাহরণ তুলে ধরে তিনি বলেন, ‘১১ মাস ধরে বা ১০ মাস ধরে এতগুলো পার্টি (রাজনৈতিক দল) বসল, নিজেরা কথাবার্তা বলল। তারপরে যেভাবেই হোক একটা সনদ (জুলাই জাতীয় সনদ) নিয়ে আবার বাইরে চলে আসল...এ রকম তো অসম্ভব ছিল। টক শোর মধ্যে যে রকম একজন আরেকজন কলার ধরে ফেলত কিছুদিন আগেও। সেই তুলনায় এটা একটা বিরাট উত্তরণ।’

নাগরিকেরা ভোটাধিকার প্রয়োগে সচেতন বলে মনে করেন মাহমুদুর রহমান। দেশের প্রান্তিক, পিছিয়ে পড়া এবং নারীদের অবস্থার উন্নয়নের ওপর জোর দিয়ে তিনি বলেন, ‘এখন স্ট্রাগলটা ডাইরেক্টলি (সরাসরি লড়াই) জীবনের সাথে, অর্থনীতির সাথে যুক্ত হয়ে যাচ্ছে। ...মানুষের জীবন পরিবর্তন করাটাই তো আমার রাজনীতি।’ দেশের মূলধারার রাজনৈতিক দলগুলো জনগণের আকাঙ্ক্ষা পূরণ করতে না পারায় বিকল্প রাজনৈতিক শক্তি গড়ে তোলারও আহ্বান জানান তিনি।

আলোচনায় সভাপতির বক্তব্যে গণসংহতি আন্দোলনের প্রধান সমন্বয়কারী জোনায়েদ সাকি বলেন, গণ–অভ্যুত্থান যে আকাঙ্ক্ষা তৈরি করে, সে আকাঙ্ক্ষা বাস্তবায়নের জন্য যে রাজনৈতিক শক্তি লাগে, সেটা না থাকলে গণ–অভ্যুত্থানের বিপরীতে ফ্যাসিবাদীদেরই আরেকটা নতুন রূপ হাজির হতে পারে। সে জন্য বাংলাদেশে ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠায় একটি বিকল্প রাজনৈতিক বলয় গড়ে তোলার আহ্বানও জানান তিনি।

ঐকমত্যের ভিত্তিতে সংস্কার হতে হবে উল্লেখ করে জোনায়েদ সাকি বলেন, ‘স্পষ্ট করেই বলা দরকার, জামায়াতে ইসলামীসহ আটটি রাজনৈতিক দল তারা পরিষ্কার করে বলেছে যে তাদের দাবি না পূরণ হলে নির্বাচন তারা হতে দেবে না। এইটার অর্থ কী? এই হুমকি তারা কাকে দিচ্ছে? তাদের মত শুনতে হবে, এই জবরদস্তির রাজনীতি একমাত্র নয়। এটা যদি অপর পক্ষ বিএনপিও দেয়। তাহলে আমাদের ভাবতে হবে যে এখানে আসলে একই জবরদস্তির রাজনীতির পুনরাবৃত্তি হচ্ছে?’

মাওলানা ভাসানী কখনো ন্যায়ের পক্ষ ত্যাগ করেননি উল্লেখ করে তাঁর জীবনী থেকে শিক্ষা গ্রহণের আহ্বান জানান বাংলাদেশ রাষ্ট্র সংস্কার আন্দোলনের সভাপতি হাসনাত কাইয়ূম। তিনি বলেন, ‘এবারের যে নির্বাচন, এই নির্বাচনে যারা আসলে নির্বাচিত হয়ে আসবে, তাদের সংবিধান সংস্কার করার ক্ষমতা দেওয়া হবে। এইটুকু পার্থক্য, মানে একদিক থেকে তার কনস্টিটিয়েন্ট পাওয়ার (সাংবিধানিক ক্ষমতা) এবং একদিক থেকে এটা লিমিটেড। এই যে নির্বাচন ঘটতে যাচ্ছে, এইটা হচ্ছে ’৭০–এর পরে সবচাইতে গুরুত্বপূর্ণ নির্বাচন বাংলাদেশের ইতিহাসে।’ সে জন্য রাজনৈতিক দলগুলোর এ নির্বাচনে বাইরে যাওয়ার কোনো সুযোগ দেখছেন না তিনি। কোনো দল সেটি করলে তা আত্মঘাতী হবে বলেও মনে করেন তিনি।

আলোচনায় অংশ নিয়ে এবি পার্টির চেয়ারম্যান মজিবুর রহমান মঞ্জু মাওলানা ভাসানীর স্বপ্ন এবং আদর্শকে ধারণ করে আগামীর বাংলাদেশে নতুন রাজনীতি করার আহ্বান জানান। সে জন্য বড় রাজনৈতিক দলগুলোর বাইরে গিয়ে বিকল্প রাজনৈতিক শক্তি গড়ে তোলার ওপর জোর দেন তিনি।

রাজনৈতিক চরিত্র বদল না হলে ’২৪-এর অভ্যুত্থানের স্বপ্ন পূরণ হবে না উল্লেখ করে জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দল—জেএসডির জ্যেষ্ঠ সহসভাপতি তানিয়া রব বলেন, শক্তির মহড়া, প্রচুর টাকার খেলা ও দলীয় আনুগত্যের প্রদর্শন রাজনীতিকে দূষিত করে তুলছে। এতে ’২৪–এর অভ্যুত্থানের পর যে নতুন বাংলাদেশ গড়ার স্বপ্ন দেখা হয়েছিল, তা অধরাই রয়ে যাবে।

বিদ্যমান সংকট থেকে উত্তরণের জন্য রাজনৈতিক দলগুলোর ঐক্য গড়ে তোলার আহ্বান জানিয়ে গণ অধিকার পরিষদের সভাপতি নুরুল হক বলেন, ‘অবশ্যই নির্বাচন প্রয়োজন। নির্বাচন আমরা চাই। কিন্তু শুধুমাত্র নির্বাচন হয়ে গেলেই এই সংকট থেকে আমরা উত্তরণের পথের দিকে যেতে পারব না। তার জন্য আমাদের একটা রাজনৈতিক সমঝোতা, রাজনৈতিক প্রতিশ্রুতি, একটা রাজনৈতিক অঙ্গীকার প্রয়োজন।’

আলোচনা সভায় স্বাগত বক্তব্য দেন গণসংহতি আন্দোলনের নির্বাহী সমন্বয়কারী আবুল হাসান রুবেল। সভায় আরও বক্তব্য দেন ভাসানী জনশক্তি পার্টির চেয়ারম্যান শেখ রফিকুল ইসলাম বাবলু, বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পার্টির সাধারণ সম্পাদক সাইফুল হক।