বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী
বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী

নির্বাচনী সমঝোতা

সঙ্গীদের জামায়াত ১১০ আসন ছাড়তে চায়, অসন্তুষ্ট ইসলামী আন্দোলন

নিজেদের জন্য ১৯০ আসন রেখে বাকি ১১০ আসন নির্বাচনী সমঝোতায় থাকা দলগুলোতে দিতে পারে জামায়াতে ইসলামী। জামায়াতের পর বেশি আসন পেতে পারে ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ। এরপর থাকতে পারে জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) অবস্থান।

অবশ্য আসন বণ্টনের ক্ষেত্রে সমঝোতা গতকাল পর্যন্ত চূড়ান্ত হয়নি। দলের সূত্রে জানা গেছে, ইসলামী আন্দোলন আরও বেশি আসন চায়। কম আসন দেওয়ার প্রস্তাব করায় ইসলামী আন্দোলনের নেতারা অসন্তুষ্ট। আজ মঙ্গলবার দলটি সাংবাদিক সম্মেলন ডেকেছে।

জামায়াতের সঙ্গে নির্বাচনী সমঝোতায় ছিল ১০টি দল। গতকাল সমঝোতায় যুক্ত হয়েছে আমার বাংলাদেশ পার্টি (এবি পার্টি)। ফলে দলসংখ্যা দাঁড়িয়েছে ১১ টিতে।

জামায়াত ও অন্যান্য দল সূত্রে জানা গেছে, ইসলামী আন্দোলনকে ৪০ টি, এনসিপিকে ৩০ টি, বাংলাদেশ খেলাফত মজলিসকে ১১ টি, খেলাফত মজলিসকে ৩টি, এবি পার্টিকে ৩ টি, লিবারেল ডেমোক্রেটিক পার্টিকে (এলডিপি) ২ টি, বাংলাদেশ ডেভেলপমেন্ট পার্টিকে (বিডিপি) ২টি আসনে ছাড় দিতে চায় জামায়াত। তবে বাংলাদেশ নেজামে ইসলাম পার্টি, বাংলাদেশ খেলাফত আন্দোলন এবং জাতীয় গণতান্ত্রিক পার্টির (জাগপা) সঙ্গে কয়টি আসনে সমঝোতা হচ্ছে, তা এখনো জানা যায়নি।

সূত্র বলছে, ইসলামী আন্দোলন শুরুতে ১৫০টি আসন চেয়েছিল। সেখান থেকে তারা ১২০ টিতে নামে। পরে দাবিকৃত আসনসংখ্যা আরও কমাতে রাজি হয় তারা। তবে ৪০টি আসন নিয়ে তারা সন্তুষ্ট নয়। অন্যদিকে এনসিপি প্রত্যাশা করছে, তাদের আরও বেশি আসন দেওয়া হোক।

সমঝোতা চূড়ান্ত না হওয়ায় ইসলামী আন্দোলনের প্রার্থীরা ২৭২টি আসনে মনোনয়নপত্র জমা দিয়েছেন। এনসিপির প্রার্থী ৪৭ জন। অন্যদিকে এবি পার্টি ৭০ টি, বাংলাদেশ খেলাফত আন্দোলন ১০ টি, জাগপা ৩টি এবং বিডিপি ২টি আসনে মনোনয়নপত্র জমা দিয়েছে। খেলাফত মজলিসের ৬৭ জন এবং বাংলাদেশ নেজামে ইসলাম পার্টির ১১ জন মনোনয়নপত্র জমা দিয়েছেন বলে জানা গেছে। মনোনয়নপত্র জমা দেওয়া বাংলাদেশ খেলাফত মজলিসের ২৮ জন প্রার্থীর তালিকা পাওয়া গেছে। এই সংখ্যা আরও বেশি হতে পারে বলে সূত্র জানিয়েছে।

সূত্র বলছে, ইসলামী আন্দোলনের মধ্যেই আসন বণ্টন নিয়ে অসন্তোষ বেশি। বাকি দলগুলোর ক্ষেত্রে বড় সমস্যা নেই। সমঝোতা হলে প্রার্থী প্রত্যাহার করা হবে।

কে কোথায় প্রার্থী

জামায়াতের কেন্দ্রীয় নেতাদের মধ্যে আমির শফিকুর রহমান ঢাকা-১৫, সেক্রেটারি জেনারেল মিয়া গোলাম পরওয়ার খুলনা-৫, জ্যেষ্ঠ নায়েবে আমির অধ্যাপক মুজিবুর রহমান রাজশাহী-১, নায়েবে আমির সৈয়দ আবদুল্লাহ মোহাম্মদ তাহের কুমিল্লা-১১ আসনে মনোনয়নপত্র জমা দিয়েছেন।

জামায়াতের সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল রফিকুল ইসলাম খান সিরাজগঞ্জ-৪, সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল এএইচএম হামিদুর রহমান আযাদ কক্সবাজার-২, সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল মুয়াযযম হোসাইন হেলাল বরিশাল-৫, নির্বাহী পরিষদ সদস্য সাইফুল আলম খান মিলন ঢাকা-১২, কেন্দ্রীয় প্রচার বিভাগের সেক্রেটারি মতিউর রহমান আকন্দ ময়মনসিংহ-৫, নির্বাহী পরিষদ সদস্য মো. ইজ্জত উল্লাহ সাতক্ষীরা-১, ঢাকা মহানগর দক্ষিণের আমির নূরুল ইসলাম বুলবুল চাঁপাইনবাবগঞ্জ-৩, সেক্রেটারি শফিকুল ইসলাম মাসুদ পটুয়াখালী-২, ঢাকা মহানগর উত্তরের আমির মুহাম্মদ সেলিম উদ্দিন সিলেট-৬, সেক্রেটারি রেজাউল করিম লক্ষ্মীপুর-৩, সুনামগঞ্জ-২ আসনে জামায়াত মনোনীত প্রার্থী আইনজীবী শিশির মুনির মনোনয়নপত্র জমা দিয়েছেন।

ইসলামী আন্দোলনের প্রার্থীদের মধ্যে মহাসচিব মাওলানা ইউনুছ আহমাদ খুলনা-৪, জ্যেষ্ঠ নায়েবে আমির সৈয়দ মুহাম্মদ ফয়জুল করিম বরিশাল-৫ ও ৬, নায়েবে আমির মাওলানা আব্দুল আউয়াল খুলনা-৩, যুগ্ম মহাসচিব গাজী আতাউর রহমান গাজীপুর-৫, প্রেসিডিয়াম সদস্য মাওলানা সৈয়দ মোসাদ্দেক বিল্লাহ আল মাদানী ঢাকা-৪, সহকারী মহাসচিব সৈয়দ ইসাহাক মুহাম্মদ আবুল খায়ের বরিশাল-৪ আসনে মনোনয়নপত্র জমা দিয়েছেন।

বাংলাদেশ খেলাফত মজলিসের আমির মাওলানা মামুনুল হক ঢাকা-১৩ ও বাগেরহাট-১, মহাসচিব মাওলানা জালালুদ্দীন আহমদ শরীয়তপুর-১, যুগ্ম মহাসচিব মাওলানা আতাউল্লাহ আমীন কিশোরগঞ্জ-৬ আসনে মনোনয়নপত্র জমা দিয়েছেন।

খেলাফত মজলিসের আমির মাওলানা আব্দুল বাছিত আজাদ হবিগঞ্জ-২, মহাসচিব আহমদ আবদুল কাদের হবিগঞ্জ-৪, জ্যেষ্ঠ নায়েবে আমির মাওলানা সাখাওয়াত হোসাইন খুলনা-৪, নায়েবে আমির মাওলানা আহমদ আলী কাসেমী ঢাকা-১০ ও কিশোরগঞ্জ-১ আসনে মনোনয়নপত্র জমা দিয়েছেন।

ফেনী-২ আসনে মনোনয়নপত্র জমা দেন এবি পার্টির চেয়ারম্যান মজিবুর রহমান মঞ্জু। এছাড়া সাধারণ সম্পাদক আসাদুজ্জামান ফুয়াদ বরিশাল-৩ এবং জ্যেষ্ঠ ভাইস চেয়ারম্যান মেজর (অব.) আব্দুল ওহাব মিনার পটুয়াখালী-১ আসনে মনোনয়নপত্র জমা দিয়েছেন। এই তিন আসনে জামায়াতের সঙ্গে দলটির সমঝোতা হতে পারে বলে রাজনৈতিক সূত্রগুলো জানিয়েছে।

জানতে চাইলে এবি পার্টির চেয়ারম্যান মজিবুর রহমান মঞ্জু প্রথম আলোকে বলেন, জামায়াতের সঙ্গে নির্বাচনী সমঝোতায় তাঁরা যুক্ত আছেন এবং আলোচনা চলমান রয়েছে।

বাংলাদেশ খেলাফত আন্দোলনের আমির মাওলানা হাবিবুল্লাহ মিয়াজি ঢাকা-৭, বাংলাদেশ নেজামে ইসলাম পার্টির মহাসচিব মুসা বিন ইযহার চট্টগ্রাম-১৬, জাগপার মুখপাত্র রাশেদ প্রধান পঞ্চগড়-১ ও পঞ্চগড়-২ এবং বিডিপির চেয়ারম্যান একেএম আনোয়ারুল ইসলাম ময়মনসিংহ-৯ আসনে মনোনয়নপত্র জমা দিয়েছেন।

জামায়াতের প্রার্থী বদল

হবিগঞ্জ-৪ আসনে জামায়াতের আগের প্রার্থী পরিবর্তন করে সাংবাদিক অলিউল্লাহ নোমানকে মনোনয়ন দেওয়া হয়েছিল। তবে এই আসনে জামায়াত খেলাফত মজলিসের মহাসচিব আহমদ আবদুল কাদেরকে ছাড় দিচ্ছে। কুমিল্লা-৪ আসনে জামায়াতের প্রার্থী সাইফুল ইসলাম (শহিদ) নির্বাচন থেকে সরে দাঁড়ানোর ঘোষণা দিয়েছেন। এই আসনে জামায়াত এনসিপির দক্ষিণাঞ্চলের মুখ্য সংগঠক হাসনাত আবদুল্লাহকে ছাড় দিয়েছে।

পঞ্চগড়-১ আসনে জামায়াতের প্রার্থী ইকবাল হোসাইন সরে দাঁড়িয়েছেন। এই আসনে এনসিপি নেতা সারজিস আলমকে ছাড় দেওয়া হয়েছে। আরও কিছু আসনে ছাড় দিচ্ছে জামায়াত।