প্রধান নির্বাচন কমিশনারের সঙ্গে বৈঠক শেষে বের হয়ে দলের আহ্বায়ক নাহিদ ইসলাম ও মুখ্য সমন্বয়ক নাসীরুদ্দীন পাটওয়ারী সাংবাদিকদের সঙ্গে কথা বলেন। ৩ ডিসেম্বর
প্রধান নির্বাচন কমিশনারের সঙ্গে বৈঠক শেষে বের হয়ে দলের আহ্বায়ক নাহিদ ইসলাম ও মুখ্য সমন্বয়ক নাসীরুদ্দীন পাটওয়ারী সাংবাদিকদের সঙ্গে কথা বলেন। ৩ ডিসেম্বর

রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা আসার পর তফসিল চায় এনসিপি

বিএনপির চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার অসুস্থতা নিয়ে রাজনৈতিক অঙ্গনে তৈরি সংকট উত্তরণের পরই ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের তফসিল ঘোষণার কথা নির্বাচন কমিশনকে বলেছে জাতীয় নাগরিক পার্টি (এনসিপি)।

আজ বুধবার বিকেলে রাজধানীর আগারগাঁওয়ে নির্বাচন ভবনে প্রধান নির্বাচন কমিশনারের সঙ্গে বৈঠক শেষে বের হয়ে দলের আহ্বায়ক নাহিদ ইসলাম ও মুখ্য সমন্বয়ক নাসীরুদ্দীন পাটওয়ারী সাংবাদিকদের এ কথা বলেন।

নাসীরুদ্দীন পাটওয়ারী বলেন, রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা আসার পর তফসিল ঘোষণা করলে তখন কাজটা অনেক সহজ হবে। গণতন্ত্রের আপসহীন নেত্রী খালেদা জিয়া অসুস্থ। ফলে দেশের রাজনৈতিক অঙ্গনে সংকটময় পরিস্থিতি বিরাজ করছে। সংকটগুলো উত্তরণ করে সুন্দরভাবে তফসিল দেওয়ার জন্য তাঁরা নির্বাচন কমিশনকে বলেছেন।

এ সময় এনসিপি তফসিল পেছাতে চায় কি না, জানতে চাইলে নাসীরুদ্দীন পাটওয়ারী বলেন, ‘না। আমরা কেন তফসিল পেছাতে চাইব? আমরা বলতেছি যে সংকটগুলো সমাধান করে তফসিলটা দেওয়ার জন্য।’

এ প্রশ্নের উত্তরে দলের আহ্বায়ক নাহিদ ইসলাম বলেন, ‘তফসিল দেওয়ার সময় যাতে রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা থাকে এবং প্রতিটা দলেরই যাতে নির্বাচনী যাত্রা শুরু করার একটা পরিবেশ থাকে, তাদের দলের ভেতরে এবং সার্বিক রাজনৈতিক সে পরিবেশটা যাতে থাকে। সেই সময়টায় যদি তফসিল দেওয়া হয়, তাহলে এটা নির্বাচন কমিশন ও সব রাজনৈতিক দলের জন্য উপকারী হয়।’

নাহিদ ইসলাম আরও বলেন, তফসিল দেওয়ার সময়টাতে রাজনৈতিক পরিবেশ বিবেচনায় রাখতে আহ্বান জানানো হয়েছে। সেটা রেখে তারা যেকোনো দিন দিতে পারে।

আগামী সপ্তাহেই নির্বাচন কমিশন তফসিল দিতে চাইছে, এ ক্ষেত্রে এনসিপি পরিবেশ স্থিতিশীল মনে করছে কি না, এমন প্রশ্নের জবাবে নাসীরুদ্দীন পাটওয়ারী বলেন, প্রবাসী ভোটারদের জন্য ব্যালট পাঠানো এবং নিয়ে আসা সময়সাপেক্ষ ব্যাপার বলে কমিশন দ্রুত তফসিলটা দিতে চাইছে। তবে এ ক্ষেত্রে এনসিপি রাজনৈতিক সংকটকে বিবেচনায় রাখার জন্য বলেছে। তিনি বলেন, ‘আমরা সব কটি পলিটিক্যাল পার্টি কিন্তু এ বিষয়ে অ্যাগ্রিড। এটা নিয়ে কোনো সংকট নেই। আমরা আশা করি যে ইনশা আল্লাহ ফেব্রুয়ারিতে সুষ্ঠু একটি ইলেকশনের দিকে দেশ এগোচ্ছে।’

খালেদা জিয়ার অসুস্থতা নির্বাচনের শিডিউলে প্রভাব ফেলবে কি না, এমন প্রশ্নের জবাবে নাসীরুদ্দীন পাটওয়ারী বলেন, ‘না, এটা প্রভাব পড়বে না।...আমরা মনে করি যে বাংলাদেশে উনি (খালেদা জিয়া) দীর্ঘ সময় লড়াই করেছিলেন। তো গণতন্ত্রের এই জায়গাটায় সরকারও সম্মান প্রদর্শন করছে। আমরাও সম্মান প্রদর্শন করছি। বেগম জিয়ার প্রতি সবার আবেগ–অনুভূতি আছে। এটা বিএনপিকেন্দ্রিক নয়।’

নিজ দলের প্রতীকে নির্বাচনের প্রস্তাবনাটি বাতিলের চেষ্টা হচ্ছে

সংবাদ সম্মেলনের শুরুতে এনসিপির আহ্বায়ক নাহিদ ইসলাম বলেন, নির্বাচন কমিশন সংস্কার প্রস্তাবনা অনুযায়ী প্রতিটি দলকে তাদের নিজের দলের প্রতীকে নির্বাচনে অংশগ্রহণ করতে হবে। এ প্রস্তাবনাটি বাতিল করতে একটি দলের পক্ষ থেকে সরকার ও নির্বাচন কমিশনকে চাপ প্রয়োগ করা হয়েছে। সেই দলের জোটসঙ্গী আরেকটি দলের পক্ষ থেকে আদালতে এ নিয়ে রিটও হয়েছে। আদালতকে ব্যবহার করে এই সংস্কার প্রস্তাবনাটি বাতিলের চেষ্টা করা হচ্ছে।

একই সঙ্গে নির্বাচনী হলফনামায় প্রার্থীর দেওয়া তথ্য কমিশনকে যাচাই–বাছাই করতে বলেছে এনসিপি।

বৈঠক শেষে নির্বাচন কমিশনের জ্যেষ্ঠ সচিব আখতার আহমেদের কাছ থেকে এনসিপির দলীয় নিবন্ধন সনদ ও প্রতীকের ছবি নেন তাঁরা। ৩ ডিসেম্বর

ডিসি–এসপি বদলি, রাজনৈতিক প্রভাব আছে

নির্বাচনে লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড (সবার জন্য সমান সুযোগ) নিয়ে উদ্বেগ রয়েছে উল্লেখ করে নাহিদ ইসলাম বলেন, এখন যে ডিসি–এসপি বদলি হচ্ছে, সেখানে রাজনৈতিক প্রভাব আছে বলে মনে করছে এনসিপি। এ বিষয়ে নির্বাচন কমিশনকে ব্যবস্থা নিতে বলেছে তারা।

গণভোটে একটি প্রশ্নের চারটি ভাগ বিভিন্ন দলকে সন্তুষ্ট করার জন্য করা হয়েছে বলে অভিযোগ করেন নাহিদ ইসলাম। তিনি বলেন, এটা আরও সুস্পষ্টভাবে করা উচিত ছিল। যদি এই আদেশের ভিত্তিতেই গণভোট হয়, তাহলে এটি ব্যাপকভাবে প্রচার করা প্রয়োজন।

এ সময় আরও উপস্থিত ছিলেন এনসিপির যুগ্ম আহ্বায়ক খালেদ সাইফুল্লাহ ও যুগ্ম সদস্যসচিব জহিরুল ইসলাম মুসা। বৈঠক শেষে নির্বাচন কমিশনের জ্যেষ্ঠ সচিব আখতার আহমেদের কাছ থেকে এনসিপির দলীয় নিবন্ধন সনদ ও প্রতীকের ছবি নেন তাঁরা।