
সামাজিক ফ্যাসিবাদের নানা আলামত দেখা যাচ্ছে বলে মন্তব্য করেছেন জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) আহ্বায়ক নাহিদ ইসলাম। তিনি বলেন, দেশে সামাজিক ফ্যাসিবাদের উত্থান ঘটলে বিদেশি বিনিয়োগকারী বা বিদেশি পুঁজি এখানে আসবে না এবং দেশে স্থিতিশীলতাও তৈরি হবে না।
আজ শনিবার দুপুরে রাজধানীর একটি হোটেলে ‘অভ্যুত্থানের অর্থনৈতিক আকাঙ্ক্ষা’ বিষয়ে এক আলোচনায় অংশ নিয়ে নাহিদ ইসলাম এ কথা বলেন। ‘চতুর্থ বাংলাদেশ অর্থনৈতিক সম্মেলন ২০২৫: অর্থনীতির ভবিষ্যৎ পথরেখা ও রাজনৈতিক অঙ্গীকার’ শীর্ষক এ অনুষ্ঠানের আয়োজন করে দৈনিক বণিক বার্তা।
সামাজিক মূল্যবোধের পরিবর্তন না ঘটলে সংস্কার টেকসই হবে না এবং সমাজও স্থিতিশীল হবে না বলে মন্তব্য করেন এনসিপির আহ্বায়ক নাহিদ ইসলাম। তিনি বলেন, ‘এখন আমরা সমাজের যে ফ্যাসিবাদ আছে, তার নানা ধরনের আলামত দেখতে পাচ্ছি। সামাজিক ফ্যাসিবাদের উত্থান ঘটলে বিদেশি বিনিয়োগকারী বা বিদেশি পুঁজিও এখানে আসবে না এবং দেশে স্থিতিশীলতাও তৈরি হবে না।’
নাহিদ ইসলাম বলেন, ‘আমাদের যেমন রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা ও সুশাসন লাগবে, একইভাবে সামাজিক স্থিতিশীলতাও লাগবে।’ সংস্কার, স্থিতিশীলতা ও উন্নয়ন—চীনের এই নীতি অনুসরণ করে বাংলাদেশের টেকসই অর্থনৈতিক পরিবর্তন সম্ভব বলেও মন্তব্য করেন তিনি।
দুর্নীতির পুরোটাই একটা চক্র বা নেক্সাসের মাধ্যমে পরিচালিত হয়, যেখানে দুর্নীতিগ্রস্ত আমলা, রাজনীতিবিদ এবং মাফিয়া ব্যবসায়ীরা থাকেন। তাঁদের কালো টাকাই আমলা ও রাজনীতিবিদদের পেছনে ইনভেস্ট (বিনিয়োগ) হয়। আগামী নির্বাচনেও এটি ব্যাপকভাবে ব্যবহৃত হবে।—নাহিদ ইসলাম, আহ্বায়ক, এনসিপি
বাংলাদেশ স্থিতিশীল হবে কি না, আগামী জাতীয় নির্বাচনের মাধ্যমে দেশের মানুষ ও পুরো বিশ্ব এই বার্তা পাবে বলে মনে করেন নাহিদ ইসলাম। তিনি বলেন, ‘আমাদের জন্য এখন সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ হবে নির্বাচনের মাধ্যমে ক্ষমতার শান্তিপূর্ণ হস্তান্তর। ক্ষমতার হস্তান্তর শান্তিপূর্ণ না হলে দেশে অস্থিতিশীলতা থেকে যাবে।’
এনসিপির আহ্বায়ক আরও বলেন, ‘বৈষম্য দূরীকরণে অর্থনৈতিক ব্যবস্থাকে সেভাবে সংস্কার করতে পারলে আমাদের গণ-অভ্যুত্থানের আকাঙ্ক্ষা পূরণ হবে। সেই আকাঙ্ক্ষা পূরণ না করে সেটাকে কোনো রকমে ধামাচাপা দেওয়ার চেষ্টা করা হলে অভ্যুত্থানের শক্তি বারবারই রাজপথে নামবে।’
আগামী নির্বাচনের পরে অর্থনৈতিক সংস্কার এবং বিভিন্ন অর্থনৈতিক দাবিদাওয়ার আন্দোলন ক্রমেই আসতে থাকবে বলে মনে করেন এনসিপির আহ্বায়ক নাহিদ ইসলাম। তিনি বলেন, ‘আমরা যদি আবারও দেখি যে আগামী আমলে নানা ধরনের দরবেশ তৈরি হচ্ছে, নানা ধরনের মাফিয়া শ্রেণি তৈরি হচ্ছে, তাহলে অর্থনীতির কোনো পরিবর্তন হবে না।’
দুর্নীতির জন্য এককভাবে আমলা বা রাজনীতিবিদদের দায়ী করার পক্ষে নন এনসিপির আহ্বায়ক। তিনি বলেন, দুর্নীতির পুরোটাই একটা চক্র বা নেক্সাসের মাধ্যমে পরিচালিত হয়, যেখানে দুর্নীতিগ্রস্ত আমলা, রাজনীতিবিদ ও মাফিয়া ব্যবসায়ীরা থাকেন। তাঁদের কালো টাকাই আমলা ও রাজনীতিবিদদের পেছনে ইনভেস্ট (বিনিয়োগ) হয়। আগামী নির্বাচনেও এটি ব্যাপকভাবে ব্যবহৃত হবে।
নাহিদ ইসলাম বলেন, ‘নির্বাচনে যদি আমরা এই কালো টাকা বন্ধ করতে না পারি, তাহলে নির্বাচন–পরবর্তী সময়ে দুর্নীতি বন্ধ করা সম্ভব নয়। দুর্নীতির নেক্সাসকে (চক্র) আমাদের ভাঙতে হবে। তা না হলে আমরা আসলে সমাজ, রাষ্ট্র ও প্রশাসন থেকে দুর্নীতি দূর করতে পারব না, সুশাসনও প্রতিষ্ঠা করতে পারব না।’
এনসিপির আহ্বায়ক বলেন, ‘বিগত আমলের মাফিয়াদের বর্তমান সরকার বিচারের আওতায় আনতে পারেনি। কারণ, এই সরকারের সেই রাজনৈতিক ব্যাকআপ ছিল না। শুধু এস আলম, সালমান এফ রহমান—এ রকম দু-একজনকে ধরে আইওয়াশ দেওয়ার চেষ্টা করে লাভ নেই। আমরা পরবর্তী সরকারের আমলে সরকার বা সংসদের অংশ হই কিংবা বাইরে থাকি, এই পাচারকৃত অর্থ ফেরত আনার দাবি জোরালোভাবে তুলব। পাচারকারীদের বিচারের আন্দোলন আমরা করে যাব।’
সার্বভৌমত্বের প্রশ্নকে সামনে রেখে দেশীয় অর্থনীতি তৈরি করার কথা বলেন নাহিদ ইসলাম। তিনি বলেন, ‘আমাদের যেমন বিদেশি বিনিয়োগ ও পুঁজিকে আমাদের আকৃষ্ট করতে হবে, একই সঙ্গে আমাদের দেশীয় পুঁজি ও ব্যবসায়ী শ্রেণি তৈরি করতে হবে, জাতীয় অর্থনীতি গড়ে তুলতে হবে। বিনিয়োগ বা পুঁজি আনার ক্ষেত্রে আমাদের সার্বভৌমত্বের প্রশ্নটা সব সময় গুরুত্বপূর্ণ। আমরা যে দেশ থেকে পুঁজি আনব বা যে দেশকে অর্থনীতিতে বেশি সুযোগ করে দেব, তারা রাজনৈতিকভাবে প্রভাব বিস্তারের চেষ্টা করবে।’