বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর
বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর

একটি মহল দেশকে পরিকল্পিতভাবে নৈরাজ্যের পথে ঠেলে দিতে চায়: মির্জা ফখরুল

ইনকিলাব মঞ্চের আহ্বায়ক শরিফ ওসমান বিন হাদির মৃত্যুকে কেন্দ্র করে দেশজুড়ে সহিংসতা, ভাঙচুর ও অগ্নিসংযোগের ঘটনায় গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। তিনি বলেন, একটি চিহ্নিত মহল পরিকল্পিতভাবে দেশকে নৈরাজ্যের পথে ঠেলে দিতে চায়। এ গোষ্ঠী গণতান্ত্রিক উত্তরণের প্রক্রিয়াকে অনিশ্চিত করার ষড়যন্ত্র করছে।

আজ শুক্রবার রাতে রাজধানীর গুলশানে বিএনপির চেয়ারপারসনের রাজনৈতিক কার্যালয়ে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে এ কথা বলেন দলটির মহাসচিব। এর আগে সেখানে বিএনপির স্থায়ী কমিটির জরুরি বৈঠক হয়। বৈঠকটি রাত পৌনে ৯টায় শুরু হয়ে রাত ১০টার দিকে শেষ হয়।

বিএনপির মহাসচিব বলেন, ‘গতকাল বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় ইনকিলাব মঞ্চের আহ্বায়ক শরিফ ওসমান বিন হাদি সিঙ্গাপুরে চিকিৎসাধীন অবস্থায় শাহাদাতবরণ করেন। এই হত্যাকাণ্ডের তীব্র নিন্দা জানাচ্ছি এবং অবিলম্বে হত্যাকারীদের গ্রেপ্তার ও বিচারের দাবি জানাচ্ছি।’

এ সময় মির্জা ফখরুল বলেন, এই অনাকাঙ্ক্ষিত মৃত্যুকে কেন্দ্র করে গতকাল গভীর রাতে দৈনিক প্রথম আলো, ইংরেজি দৈনিক ডেইলি স্টারসহ আরও কয়েকটি প্রতিষ্ঠানে একদল উচ্ছৃঙ্খল ব্যক্তি অগ্নিসংযোগ করে। এতে কর্মরত সাংবাদিকদের জীবন মারাত্মক ঝুঁকির মধ্যে পড়ে। ফ্যাসিবাদবিরোধী জুলাই আন্দোলনসহ দেশের সব গণতান্ত্রিক আন্দোলনের অন্যতম সাহসী ব্যক্তিত্ব, দেশবরেণ্য সাংবাদিক নিউ এজ সম্পাদক নূরুল কবীরের ওপর হামলা চালানো হয়েছে। ছায়ানটসহ আরও কয়েকটি সাংস্কৃতিক প্রতিষ্ঠানে হামলা হয়েছে। আজ উদীচীতেও হামলা ও অগ্নিসংযোগ করা হয়েছে।

বিএনপির মহাসচিব আরও বলেন, গতকাল খুলনায় ভারতীয় সহকারী হাইকমিশনের ভবনে হামলা চালানো হয়েছে। ধানমন্ডির ৩২ নম্বরে আবার অগ্নিসংযোগ করা হয়েছে। ইন্দিরা গান্ধী কালচারাল সেন্টারে ভাঙচুর ও আগুন দেওয়া হয়েছে। উত্তরা এলাকায় ৩২টি দোকান ভাঙচুর করা হয়েছে এবং এক আওয়ামী লীগ নেতার বাড়িতে অগ্নিসংযোগ করা হয়েছে।

মির্জা ফখরুল বলেন, ‘সবচেয়ে ভয়াবহ ঘটনা হলো ধর্ম অবমাননার অভিযোগ এনে এক হিন্দু যুবককে গাছে ঝুলিয়ে পিটিয়ে হত্যা করা এবং আগুন দেওয়া। চট্টগ্রামে মহিউদ্দিন চৌধুরীর বাসায় অগ্নিসংযোগ করা হয়েছে। রাজশাহীতেও প্রথম আলো ও ডেইলি স্টারের কার্যালয়ে ভাঙচুর চালানো হয়েছে।’

এই ঘটনাগুলোকে ‘ঘৃণ্য ও ন্যক্কারজনক’ উল্লেখ করে বিএনপির মহাসচিব বলেন, ‘এসব ঘটনা প্রমাণ করে, পুরোনো একটি চিহ্নিত মহল পরিকল্পিতভাবে দেশকে অস্থিতিশীল করার চেষ্টা করছে। তারা অনেক রক্তের বিনিময়ে অর্জিত আমাদের ভোটাধিকার ও গণতান্ত্রিক অধিকার নস্যাৎ করে দেশে ফ্যাসিবাদের একটি নতুন সংস্করণ প্রতিষ্ঠা করতে চায়।’

এ সময় সরকারের ভূমিকা নিয়েও সংবাদ সম্মেলনে প্রশ্ন তোলেন মির্জা ফখরুল। তিনি বলেন, ‘সরকারের নাকের ডগাতেই এসব ঘটনা ঘটছে। জনগণ মনে করছে, সরকারের ভূমিকা সন্তোষজনক নয়। এর ফলে দেশ-বিদেশে সরকারের পাশাপাশি দেশের ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ন হচ্ছে।’

মির্জা ফখরুল বলেন, ‘এই হত্যাকাণ্ডের প্রতিবাদে ইতিমধ্যে দেশের সব রাজনৈতিক দল প্রতিবাদ জানিয়েছে এবং দোষীদের গ্রেপ্তার ও বিচারের দাবি তুলেছে। এরপরও এ ধরনের সহিংস হামলা জাতীয় সংসদ নির্বাচন এবং গণতান্ত্রিক উত্তরণের প্রক্রিয়াকে অনিশ্চিত করার গভীর ষড়যন্ত্র বলেই আমরা মনে করছি।’

দেশবাসীর প্রতি আহ্বান জানিয়ে বিএনপির মহাসচিব বলেন, ‘শান্তিকামী ও গণতান্ত্রিক দেশবাসীর পক্ষ থেকে আমরা এই ষড়যন্ত্রকারীদের হুঁশিয়ার করে দিতে চাই—এত রক্তের বিনিময়ে অর্জিত এই দেশকে ধ্বংস করতে দেওয়া যায় না। এই অপশক্তিকে ঐক্যবদ্ধভাবে রুখে দিতে হবে।’

সংবাদ সম্মেলনে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্যদের মধ্যে মির্জা আব্বাস, গয়েশ্বর চন্দ্র রায়, আবদুল মঈন খান, আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী, সালাহউদ্দিন আহমদ, সেলিমা রহমান, ইকবাল হাসান মাহমুদ (টুকু) ও মেজর (অব.) হাফিজ উদ্দিন আহমদ বীর বিক্রম উপস্থিত ছিলেন।