আন্তর্জাতিক যুব দিবস উপলক্ষে এনসিপির যুব সংগঠন জাতীয় যুবশক্তি আয়োজিত ‘জাতীয় যুব সম্মেলন ২০২৫’ অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্য দেন এনসিপির আহ্বায়ক নাহিদ ইসলাম। মঙ্গলবার রাজধানীর কৃষিবিদ ইনস্টিটিউশনে
আন্তর্জাতিক যুব দিবস উপলক্ষে এনসিপির যুব সংগঠন জাতীয় যুবশক্তি আয়োজিত ‘জাতীয় যুব সম্মেলন ২০২৫’ অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্য দেন এনসিপির আহ্বায়ক নাহিদ ইসলাম। মঙ্গলবার রাজধানীর কৃষিবিদ ইনস্টিটিউশনে

যুব সম্মেলনে এনসিপির নেতারা

জুলাই সনদে ছাড় নয়

জুলাই সনদের ক্ষেত্রে সরকারকে এক বিন্দুও ছাড় দেবেন না বলে মন্তব্য করেছেন জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপির) আহ্বায়ক নাহিদ ইসলাম। তিনি বলেন, ‘গত এক বছর ছাড় দিয়েছি। জুলাই ঘোষণাপত্রে ছাড় দিয়েছি। জুলাই সনদে কোনো ছাড় হবে না। এক পার্সেন্ট ছাড়ও জুলাই সনদে দেওয়া হবে না।’

আন্তর্জাতিক যুব দিবস উপলক্ষে মঙ্গলবার এনসিপির যুব সংগঠন জাতীয় যুব শক্তি আয়োজিত ‘জাতীয় যুব সম্মেলন ২০২৫’ অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে নাহিদ ইসলাম এ কথা বলেন। রাজধানীর কৃষিবিদ ইনস্টিটিউশনে এ সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়।

নাহিদ ইসলাম বলেন, ‘যে মৌলিক সংস্কারের রূপরেখা জনগণের পক্ষ থেকে ঘোষণা করা হয়েছে, যে নতুন বন্দোবস্তের কথা আমরা বলেছি, সেটিতে গণতন্ত্র নিশ্চিত হবে, স্বৈরাচার আর ফিরে আসতে পারবে না। রাষ্ট্রকাঠামোকে গণতান্ত্রিক হিসেবে গড়ে তুলব। সে জুলাই সনদে আমরা এক বিন্দু পরিমাণ ছাড় দেব না।’

নাহিদ বলেন, বাংলাদেশের এই মুহূর্তে সবচেয়ে বড় সংকট হচ্ছে স্থিতিশীলতা এবং জাতীয় ঐক্য ধরে রাখা। যদি রাজনৈতিক দলগুলো নিজেদের মধ্যে জাতীয় ঐক্য ধরে রাখতে না পারে, দেশের স্থিতিশীলতা নিশ্চিতে নিজেদের মধ্যে ছাড় দেওয়ার মানসিকতা তৈরি না হয়, তাহলে আরেকটি এক–এগারো আসবে। কারণ, ইতিহাসে এটাই দেখা গেছে।

নাহিদ ইসলাম বলেন, ‘আমরা বলতে চাই, সমীকরণ এখনো শেষ হয়ে যায় নাই। ফলে যারা এখনই সমীকরণ মিলিয়ে ফেলছে, তারা ভুল পথে হাঁটছে। গণ-অভ্যুত্থানের শক্তি এখনো রাজপথে আছে।’

আন্তর্জাতিক যুব দিবস উপলক্ষে এনসিপির যুব সংগঠন জাতীয় যুবশক্তি আয়োজিত ‘জাতীয় যুব সম্মেলন ২০২৫’ অনুষ্ঠানে বক্তব্য দেন এনসিপির সদস্যসচিব আখতার হোসেন। মঙ্গলবার রাজধানীর কৃষিবিদ ইনস্টিটিউশনে

এনসিপির সদস্যসচিব আখতার হোসেন বলেন, জাতীয় ঐকমত্য কমিশন অনেকগুলো সিদ্ধান্ত গ্রহণ করেছে। কিন্তু সেই সিদ্ধান্তগুলো বাস্তবায়ন করা হবে কি না, সেটা নিয়ে সংশয় তৈরি হয়েছে। তিনি বলেন, সংস্কার প্রস্তাবগুলো বাস্তবায়িত না হলে শহীদদের ত্যাগ ও সবার চেষ্টা ব্যর্থ হয়ে যাবে।

জাতীয় যুব শক্তি আয়োজিত ‘জাতীয় যুব সম্মেলন ২০২৫’-এ বিশেষ অতিথির বক্তব্য দেন এনসিপির নেতা নাসীরুদ্দীন পাটওয়ারী। মঙ্গলবার রাজধানীর ফার্মগেটে অবস্থিত কৃষিবিদ ইনস্টিটিউশনে

অনুষ্ঠানে দেওয়া বক্তব্যে আগামী ফেব্রুয়ারি মাসে জাতীয় নির্বাচন অনুষ্ঠানের বিরোধিতা করেন এনসিপির মুখ্য সংগঠক নাসীরুদ্দীন পাটওয়ারী। তিনি বলেন, ‘বর্তমান সময়ে ইলেকশনের ডেট ঘোষণা হয়েছে, ফেব্রুয়ারিতে নির্বাচন হবে। কিন্তু ফেব্রুয়ারিতে নির্বাচন হবে না। যদি ফেব্রুয়ারিতে নির্বাচন হয়, আমার যে ভাইয়েরা শহীদ হয়েছিল, রক্ত দিয়েছিল সংস্কারের জন্য, একটি নতুন সংবিধানের জন্য, তাহলে কবরে গিয়ে তাদের লাশ ফেরত দিতে হবে এই সরকারকে।’

জুলাই গণ-অভ্যুত্থানে নেতৃত্বদানকারীদের চরিত্র হননের চেষ্টা চলছে বলে অভিযোগ করেন নাসীরুদ্দীন পাটওয়ারী। গোয়েন্দা সংস্থার সমালোচনা করে তিনি বলেন, ‘একটা গোয়েন্দা সংস্থা বাংলাদেশের ডিজিএফআই। আপনার–আমার পকেটের টাকায় চলাফেরা করে। তারা কত টাকা খরচ করে কিন্তু বাংলাদেশের মানুষ জানতে পারবে না। তাদের কোনো কোথাও দায়বদ্ধতা নাই, অ্যাকাউন্টিবিলিটি (জবাবদিহি) নাই, ট্রান্সপারেন্সি নাই, তাদের একটাই কাজ—মানুষকে ভীতি প্রদর্শন করে যে কিছু বলবি, আয়নাঘরে নিয়ে আসব। আরে আয়নাঘর তো আমরা ভেঙে দিয়েছি। সামনে যদি আয়নাঘর তৈরির চেষ্টা করা হয়, আমরা সে আয়নাঘর কেন, ডিজিএফআইয়ের হেডকোয়ার্টার ভেঙে দেব।’

আন্তর্জাতিক যুব দিবস উপলক্ষে এনসিপির যুব সংগঠন জাতীয় যুবশক্তি আয়োজিত ‘জাতীয় যুব সম্মেলন ২০২৫’ অনুষ্ঠানে বক্তব্য দেন এনসিপির নেতা সারজিস আলম। মঙ্গলবার রাজধানীর কৃষিবিদ ইনস্টিটিউশনে

এনসিপির মুখ্য সংগঠক (উত্তরাঞ্চল) সারজিস আলম বিএনপি নেতা হাবিবুর রহমান ও ফজলুর রহমানের নাম উল্লেখ করে বলেন, তাঁরা ফ্যাসিবাদের স্বরে কথা বলেন। বিএনপি ফ্যাসিবাদের স্বরকে জায়গা দেবে না বলে আশা করেন তিনি।

প্রতিরক্ষা গোয়েন্দা মহাপরিদপ্তরের (ডিজিআইএফ) বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার দাবি জানান এনসিপির মুখ্য সংগঠক (দক্ষিণ অঞ্চল) হাসনাত আবদুল্লাহও। পাশাপাশি গণমাধ্যমের বিষয়ে তিনি বলেন, গণমাধ্যমের চরিত্র আগের মতো হয়ে গেছে।গণমাধ্যম গণ–অভ্যুত্থানের সঙ্গে যুক্ত ব্যক্তিদের চরিত্রহানী ও নারীদের বিতর্কিত করার চেষ্টা করছে।

আন্তর্জাতিক যুব দিবস উপলক্ষে এনসিপির যুব সংগঠন জাতীয় যুবশক্তি আয়োজিত ‘জাতীয় যুব সম্মেলন ২০২৫’ অনুষ্ঠানে বক্তব্য দেন এনসিপির নেতা হাসনাত আবদুল্লাহ। মঙ্গলবার রাজধানীর কৃষিবিদ ইনস্টিটিউশনে

অতিথিদের বক্তব্য

আন্তর্জাতিক যুব দিবস উপলক্ষে এনসিপির যুব সংগঠন জাতীয় যুবশক্তি আয়োজিত ‘জাতীয় যুব সম্মেলন ২০২৫’ অনুষ্ঠানে বক্তব্য দেন জামায়াতে ইসলামীর নায়েবে আমির সৈয়দ আবদুল্লাহ মুহাম্মদ তাহের। মঙ্গলবার রাজধানীর কৃষিবিদ ইনস্টিটিউশনে

অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি হিসেবে ছিলেন জামায়াতে ইসলামীর নায়েবে আমির সৈয়দ আবদুল্লাহ মুহাম্মদ তাহের। তিনি অনুষ্ঠানস্থলে দেওয়া ‘দিল্লি নয়, ঢাকা’, ‘পিন্ডি নয়, ঢাকা’ স্লোগান নিয়ে বলেন, স্বাধীনতার ৫৪ বছর পরও এ ধরনের স্লোগান দিতে হচ্ছে, এটা দুঃখজনক। হীনম্মন্যতা দূর করে জাতীয় গর্ব প্রতিষ্ঠা করতে হবে।

অনুষ্ঠানের আরেক বিশেষ অতিথি বিএনপির যুগ্ম মহাসচিব শহীদ উদ্দীন চৌধুরী (এ্যানি) বলেন, জাতীয় ঐক্যের বিকল্প নেই। ক্ষুদ্র মতপার্থক্য দূর করে বৃহত্তর স্বার্থে একসঙ্গে দাঁড়াতে হবে। তিনি অভিযোগ করেন, পার্শ্ববর্তী দেশের সহযোগিতায় কিছু শক্তি বাংলাদেশের রাজনীতিকে ধ্বংস করার ষড়যন্ত্র করছে।

আন্তর্জাতিক যুব দিবস উপলক্ষে এনসিপির যুব সংগঠন জাতীয় যুবশক্তি আয়োজিত ‘জাতীয় যুব সম্মেলন ২০২৫’ অনুষ্ঠানে বক্তব্য দেন বিএনপির যুগ্ম মহাসচিব শহীদ উদ্দীন চৌধুরী (এ্যানি)। মঙ্গলবার রাজধানীর কৃষিবিদ ইনস্টিটিউশনে

সম্মেলন সঞ্চালনা করেন জাতীয় যুবশক্তির সদস্যসচিব জাহেদুল ইসলাম। এতে আরও বক্তব্য দেন এবি পার্টির সাধারণ সম্পাদক আসাদুজ্জামান ফুয়াদ, বাংলাদেশ খেলাফত মজলিসের সিনিয়র নায়েবে আমির মাওলানা ইউসূফ আশরাফ, এনসিপির জ্যেষ্ঠ যুগ্ম আহ্বায়ক সামান্তা শারমিন, আরিফুল ইসলাম আদিব, জ্যেষ্ঠ যুগ্ম সদস্যসচিব তানসিম জারা, জ্যেষ্ঠ যুগ্ম মুখ্য সমন্বয়ক আবদুল হান্নান মাসুদ প্রমুখ।

সম্মেলনে যুবকদের জন্য সাত দফা ইশতেহার ঘোষণা করেন জাতীয় যুব শক্তির আহ্বায়ক তারিকুল ইসলাম। যা হলো যুব কর্মসংস্থান, চাকরির নিরাপত্তা ও সুবিধা, গণতন্ত্র, নেতৃত্ব ও রাষ্ট্রীয় অংশগ্রহণ, শারীরিক ও মানসিক বিকাশ এবং সামাজিক পুনর্বাসন, ক্রীড়া, সংস্কৃতি ও সৃজনশীল স্বাধীনতা, ব্যবসা, উদ্যোগ ও বহুমুখী বাণিজ্য এবং দক্ষ অভিবাসন ও রিভার্স ব্রেইন ড্রেইন (মেধাবীদের ফিরিয়ে আনা)।