
জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) আহ্বায়ক নাহিদ ইসলাম বলেছেন, গত ১৬ বছরে দেশে যে ফ্যাসিস্ট শাসন প্রতিষ্ঠা পেয়েছে, তার প্রভাব থেকে গণমাধ্যমও রেহাই পায়নি। তিনি মনে করেন, দলীয়করণ ও আদর্শিক আধিপত্যের শৃঙ্খল থেকে গণমাধ্যমকে বের করে আনতে একটি সুস্পষ্ট সংস্কার রূপরেখা প্রয়োজন।
বিশ্ব মুক্ত গণমাধ্যম দিবস ২০২৫ উপলক্ষে সংবাদপত্রের সম্পাদকদের সংগঠন সম্পাদক পরিষদ আয়োজিত এক আলোচনা সভায় সাবেক তথ্য উপদেষ্টা নাহিদ ইসলাম এ কথা বলেন। আজ রোববার জাতীয় প্রেসক্লাবে এ আলোচনা সভা হয়।
ফ্যাসিজমের প্রভাবে অন্যান্য রাষ্ট্রীয় প্রতিষ্ঠানের মতো গণমাধ্যমেও দলীয়করণ হয়েছে উল্লেখ করে নাহিদ ইসলাম বলেন, গণমাধ্যমের ওপর হস্তক্ষেপ শুধু আইনি নয়, সাংস্কৃতিকভাবেও হয়েছে। মিডিয়ার ভেতরে একধরনের ফ্যাসিবাদ ঢুকে গেছে, যা থেকে মুক্ত না হলে জনগণের আস্থা ফিরে আসবে না। তিনি বলেন, জুলাই গণ–অভ্যুত্থানের পর একটি মুক্ত গণমাধ্যমের প্রত্যাশা সবার। কিন্তু তার আগে গণমাধ্যম সংস্কারের রূপরেখা তৈরি ও বাস্তবায়ন জরুরি। এই সংস্কার দৃশ্যমান না হলে গণমাধ্যমের ভূমিকা নিয়ে প্রশ্ন থেকেই যাবে।
গণমাধ্যমের মালিকানা প্রসঙ্গে নাহিদ ইসলাম বলেন, গণমাধ্যমের মালিকানা–কাঠামো স্বচ্ছ হওয়া উচিত। করপোরেট মালিকানা অনেক সময় গোষ্ঠীগত বা কায়েমি স্বার্থে গণমাধ্যমকে ব্যবহার করে, এতে জনগণের স্বর হারিয়ে যায়। তিনি বলেন, ‘জাতীয় নাগরিক পার্টি মুক্ত গণমাধ্যমে বিশ্বাস করে। আমরা বিশ্বাস করি, গণতন্ত্রচর্চার জন্য মতপ্রকাশের স্বাধীনতা অপরিহার্য আর তার জন্য একটি স্বাধীন গণমাধ্যম সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ মানদণ্ড।’
এনসিপির আহ্বায়ক নাহিদ ইসলাম আরও বলেন, অন্তর্বর্তী সরকারের সময় সরকারি হস্তক্ষেপ কম ছিল, কিন্তু সামাজিক চাপ ছিল তীব্র। বিশেষ করে কিছু মিডিয়ার বিরুদ্ধে জন–অসন্তোষ তৈরি হয়েছিল, যা বিশ্লেষণ করা দরকার। আমরা কখনো কোনো গণমাধ্যম বন্ধের পক্ষে নই; বরং গণমাধ্যম যেন স্বাধীনভাবে জনগণের কথা বলতে পারে, সেই পরিবেশ তৈরিই আমাদের লক্ষ্য।
রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে গণমাধ্যমের সম্পর্ক আরও ইতিবাচক করার ওপর গুরুত্ব দেন এই নেতা। তিনি অভিযোগ করেন, বিভিন্ন সময় তাঁরা মিস ইনফরমেশনের (ভুল তথ্য) শিকার হয়েছেন। পেশাদারত্বের ঘাটতির কারণে অনেক সময় তাঁদের বক্তব্য ভুলভাবে উপস্থাপিত হয়েছে। সেই জায়গা থেকে গণমাধ্যমের সঙ্গে খোলামেলা আলোচনার প্রয়োজন।
অন্তর্বর্তী সরকারের সময় গণমাধ্যমের ওপর সরকারি হস্তক্ষেপের জায়গা অনেক কমেছে বলে মনে করেন নাহিদ ইসলাম। তিনি বলেন, ‘অন্তত আমার সময়ে গণমাধ্যমের যে হস্তক্ষেপের জায়গা, সেটি একেবারেই কম ছিল। কিন্তু সামাজিক নানা ধরনের চাপ তৈরি হয়েছিল গণমাধ্যমের ওপর। সেই সামাজিক চাপগুলো, ক্ষোভগুলো কেন বিশেষ বিশেষ গণমাধ্যমের বিরুদ্ধে হয়েছিল, সেটিও বিশ্লেষণ করা প্রয়োজন।’
সম্পাদক পরিষদের সাধারণ সম্পাদক দৈনিক বণিক বার্তার সম্পাদক দেওয়ান হানিফ মাহমুদের সঞ্চালনায় আলোচনা সভায় সভাপতিত্ব করেন দ্য ডেইলি স্টারের সম্পাদক ও সম্পাদক পরিষদের সভাপতি মাহফুজ আনাম। আলোচনা সভায় রাজনৈতিক দলের নেতাদের মধ্যে বক্তব্য দেন বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর, নাগরিক ঐক্যের সভাপতি মাহমুদুর রহমান মান্না, গণসংহতি আন্দোলনের প্রধান সমন্বয়কারী জোনায়েদ সাকি।
সম্পাদকদের মধ্যে বক্তব্য দেন দ্য নিউ এজের সম্পাদক নূরুল কবীর, মানবজমিনের প্রধান সম্পাদক মতিউর রহমান চৌধুরী, জাতীয় প্রেসক্লাবের সভাপতি ও কালের কণ্ঠের সম্পাদক হাসান হাফিজ। আলোচনা সভায় আরও উপস্থিত ছিলেন দৈনিক প্রথম আলোর সম্পাদক মতিউর রহমান, সমকালের সম্পাদক শাহেদ মুহাম্মদ আলী, দৈনিক ইনকিলাবের সম্পাদক এ এম এম বাহাউদ্দীন প্রমুখ।