নাম অগ্রযাত্রা সমাজ উন্নয়ন সংস্থা। নির্বাচন কমিশন নির্বাচনের পর্যবেক্ষক হিসেবে নিয়োগ দিতে যে ৭৩টি সংস্থার প্রাথমিক তালিকা প্রকাশ করেছে, তাতে ২৯ নম্বর নামটি এই সংস্থার। ঠিকানার জায়গায় লেখা শুধু সিন্দুরমতি, রাজারহাট, কুড়িগ্রাম।
সড়ক ও বাসার কোনো নম্বর না থাকায় সিন্দুরমতি গিয়ে স্থানীয় লোকজনের কাছে ওই প্রতিষ্ঠান সম্পর্কে জানতে চাওয়া হলো। অনেকেই চিনলেন। একজন নিয়ে গেলেন অগ্রযাত্রা সমাজ উন্নয়ন সংস্থার নির্বাহী পরিচালক হুমায়ুন কবিরের (সোহাগ) বাড়িতে।
হুমায়ুন কবির বলেন, তাঁর সংস্থার কোনো কার্যক্রম এখন নেই। একসময় প্রতিবন্ধী শিশুদের শিক্ষা ও নারীদের আর্থসামাজিক উন্নয়নে কাজ করত। সংস্থাটির পরিচালনা পর্ষদ সাত সদস্যের। তবে সদস্যরা এখন সক্রিয় নন।
কোনো ক্ষেত্রে নিজের বাসভবনকে, কোনো ক্ষেত্রে পরিত্যক্ত ঘরকে এবং কোনো ক্ষেত্রে নির্মাণাধীন ভবনকে অফিস দেখিয়ে পর্যবেক্ষক হতে আবেদন করা হয়েছে।
স্থানীয় বাসিন্দাদের সূত্রে জানা গেছে, ২০২০ সালে মহিলাবিষয়ক অধিদপ্তর থেকে ভিজিডি (দুস্থ নারীদের জন্য চাল সহায়তা) কার্যক্রমের দায়িত্ব পেয়েছিল অগ্রযাত্রা সমাজ উন্নয়ন সংস্থা। কিন্তু আর্থিক অনিয়মের অভিযোগে মহিলাবিষয়ক অধিদপ্তর সংস্থাটির নামে মামলা করে। মামলা এখনো চলমান।
মনে হচ্ছে, এসব প্রতিষ্ঠান নির্বাচন পর্যবেক্ষক হিসেবে তালিকাভুক্ত হয়ে নিজেদের মর্যাদা বাড়াতে চায়। কিন্তু হওয়া উচিত ছিল উল্টো।আবদুল আলীম, নির্বাচনবিশেষজ্ঞ
নির্বাচন কমিশন (ইসি) গত রোববার ৭৩টি সংস্থার তালিকা প্রকাশ করে। পত্রিকায় প্রকাশিত ইসির গণবিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়েছে, এসব সংস্থা নিয়ে কারও কোনো আপত্তি থাকলে ১৫ কার্যদিবসের মধ্যে (২০ অক্টোবর ২০২৫) লিখিতভাবে জানাতে হবে।
এরপর শুনানি করে কমিশন সিদ্ধান্ত নেবে যে এসব প্রতিষ্ঠানকে পর্যবেক্ষক হিসেবে তালিকাভুক্ত করা হবে কি না।
নির্বাচন কমিশনের গণবিজ্ঞপ্তিতে উল্লেখ করা ঠিকানা অনুযায়ী ৭৩টি প্রতিষ্ঠানের মধ্যে ৪৩টির কার্যালয়ে গিয়েছেন প্রথম আলোর ঢাকার তিনজন প্রতিবেদক এবং বিভিন্ন জেলার ১৯ জন প্রতিবেদক ও প্রতিনিধি। গত দুই দিনের এই সরেজমিনে উঠে এসেছে যে প্রাথমিকভাবে বাছাই করা প্রতিষ্ঠানগুলোর বেশির ভাগই ছোট ও সক্ষমতাহীন। কোনো ক্ষেত্রে নিজের বাসভবনকে, কোনো ক্ষেত্রে পরিত্যক্ত ঘরকে এবং কোনো ক্ষেত্রে নির্মাণাধীন ভবনকে অফিস দেখিয়ে পর্যবেক্ষক হতে আবেদন করা হয়েছে।
প্রথম আলোর অনুসন্ধানে ৪৩টির মধ্যে ৭টি প্রতিষ্ঠানের উল্লিখিত ঠিকানায় গিয়ে কার্যালয় পাওয়া যায়নি। ৬টি প্রতিষ্ঠানের নির্বাহী নিজের বাসভবনকে অথবা একটি কক্ষকে ঠিকানা হিসেবে দেখিয়েছেন। ৫০ জন বা তার বেশি কর্মী পাওয়া গেছে মাত্র ৬টি প্রতিষ্ঠানে। অনেক ক্ষেত্রে এক কক্ষ, দুই কক্ষ নিয়ে ছোট কার্যালয় করে প্রতিষ্ঠান কোনো রকমে চলছে।
ক্রেডিবল ইনফরমেশন (বিশ্বাসযোগ্য তথ্য) পাওয়ার পরে আমরা এগুলো আবার রিভিউ করবনির্বাচন কমিশন সচিবালয়ের জ্যেষ্ঠ সচিব আখতার আহমেদ
প্রতিষ্ঠান হিসেবে নির্বাচন পর্যবেক্ষণের অভিজ্ঞতা আছে গুটিকয়ের। তবে অন্য প্রতিষ্ঠানের সহযোগী হিসেবে এবং ব্যক্তিগতভাবে নিজের অথবা প্রতিষ্ঠানের কর্মীদের কারও কারও নির্বাচন পর্যবেক্ষণের অভিজ্ঞতা আছে বলে জানিয়েছেন বেশ কিছু প্রতিষ্ঠানের কর্মীরা। এমন সংস্থার সংখ্যা ১৭।
গণবিজ্ঞপ্তি দেওয়ার আগে যাচাই–বাছাই করা হয়েছিল কি না, জানতে চাওয়া হলে নির্বাচন কমিশন সচিবালয়ের জ্যেষ্ঠ সচিব আখতার আহমেদ প্রথম আলোকে বলেন, তাঁরা মোটাদাগে রাজনৈতিক দলের সঙ্গে সংশ্লিষ্টতা, ঠিকানাসহ বেশ কয়েকটি বিষয় যাচাই–বাছাই করেছেন। তবে সেটি খুব পদ্ধতিগতভাবে করা হয়নি। সংস্থাগুলো সম্পর্কে প্রকৃত তথ্য পাওয়ার জন্য সংবাদপত্রে গণবিজ্ঞপ্তি দেওয়া হয়েছে। তিনি বলেন, ‘ক্রেডিবল ইনফরমেশন (বিশ্বাসযোগ্য তথ্য) পাওয়ার পরে আমরা এগুলো আবার রিভিউ করব।’
নির্বাচন কমিশনের নির্বাচন পর্যবেক্ষক নীতিমালায় বলা হয়েছে, গণতন্ত্র, সুশাসন ও মানবাধিকার প্রতিষ্ঠা করার লক্ষ্যে কাজ করছে এবং নিবন্ধিত গঠনতন্ত্রের মধ্যে এ বিষয়সহ সুষ্ঠু, অবাধ ও নিরপেক্ষ নির্বাচন অনুষ্ঠান বিষয়ে নাগরিকদের মধ্যে তথ্য প্রচার ও উদ্বুদ্ধকরণের অঙ্গীকার রয়েছে, কেবল সেসব বেসরকারি সংস্থা নির্বাচন পর্যবেক্ষক সংস্থা হিসেবে নিবন্ধনের জন্য আবেদন করতে পারবে।
নিবন্ধিত রাজনৈতিক দলের সঙ্গে সরাসরি জড়িত ছিলেন বা আছেন—এমন কেউ পর্যবেক্ষণের জন্য আবেদনকারী কোনো সংস্থার প্রধান নির্বাহী কিংবা পরিচালনা পর্ষদে থাকলে ওই সংস্থাকে পর্যবেক্ষক হিসেবে নিবন্ধন দেওয়া হবে না। প্রথম আলোর অনুসন্ধানে রাজনৈতিক সংশ্লিষ্টতা আছে বা অতীতে ছিল—এমন ব্যক্তি পরিচালনা পর্ষদে থাকা প্রতিষ্ঠান পাওয়া গেছে পাঁচটি।
যেমন ময়মনসিংহের নান্দাইলের সেবা ফাউন্ডেশনের নির্বাহী প্রধান মো. আলী আমজাদ খান ২০০১ সালের সংসদ নির্বাচনে আওয়ামী লীগের মনোনয়নপ্রত্যাশী ছিলেন। তিনি প্রথম আলোকে বলেন, ‘আমি উপজেলা শাখা ছাত্র ইউনিয়নের সাধারণ সম্পাদক ছিলাম। আওয়ামী লীগের দলীয় মনোনয়নপত্র কিনলেও সদস্য পদও নেই।’
কুড়িগ্রামের সেন্টার ফর সোশ্যাল ডেভেলপমেন্ট নামে একটি সংস্থা রয়েছে নির্বাচন কমিশনের তালিকায়। প্রতিষ্ঠানের নির্বাহী পরিচালক আবু হানিফ মাস্টার বন্দবেড় ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক। তিনি প্রথম আলোর কাছে দাবি করেন, বয়স হয়েছে। এখন আর তিনি রাজনীতিতে সক্রিয় নন।
আমি উপজেলা শাখা ছাত্র ইউনিয়নের সাধারণ সম্পাদক ছিলাম। আওয়ামী লীগের দলীয় মনোনয়নপত্র কিনলেও সদস্য পদও নেই।ময়মনসিংহের নান্দাইলের সেবা ফাউন্ডেশনের নির্বাহী প্রধান মো. আলী আমজাদ খান
রাজধানীর দক্ষিণ পীরেরবাগের সংগতি সমাজকল্যাণ সংস্থার প্রতিষ্ঠাতা ও সাধারণ সম্পাদক বশীর আহাম্মেদ ছাত্রদলের সাবেক নেতা। তাঁর ভিজিটিং কার্ডেও লেখা আছে, ‘সভাপতি ৩ নম্বর ওয়ার্ড ছাত্রদল, জ্যেষ্ঠ যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক/যুগ্ম আহ্বায়ক কামরাঙ্গীরচর থানা ছাত্রদল, সহসাংগঠনিক সম্পাদক বৃহত্তর লালবাগ থানা ছাত্রদল, সদস্য বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী ছাত্রদল, ঢাকা মহানগর দক্ষিণ।’
বশীর আহাম্মেদ প্রথম আলোকে বলেন, তিনি ১৯৯৭-৯৮ সালের কমিটিতে ছিলেন। সংস্থা করেছেন ২০০১ সালে। এর পর থেকে আর রাজনীতিতে নেই। তাহলে ভিজিটিং কার্ডে কেন ছাত্রদলের পরিচয় দেওয়া হলো, জানতে চাইলে তিনি বলেন, ৫ আগস্টের (২০২৪) পরে একটা কার্ড করা হয়েছিল।
ঝালকাঠির হিলফুল ফুজুল সমাজকল্যাণ সংস্থার সহসভাপতি মোক্তার হোসেন ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের রাজনীতির সঙ্গে সম্পৃক্ত। তিনি প্রথম আলোকে বলেন, তাঁর কোনো পদ নেই। তবে তিনি দলের সভা–সমাবেশে যান।
আলোকিত সমাজকল্যাণ সংস্থার ঠিকানা দেওয়া হয়েছে বিষয়খালী বাজার, খড়িখালী, ঝিনাইদহ সদর। সেখানে তাদের কোনো কার্যালয় পাওয়া যায়নি। পরে প্রতিষ্ঠানটির নির্বাহী পরিচালক রোখসানা খাতুনের সঙ্গে মুঠোফোনে যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন, তাঁর কার্যালয় ঝিনাইদহ শহরের চাকলাপাড়ায়। তিনি পুরোনো হাসপাতালের সামনে বধূয়া সাজ সিটি গোল্ড অ্যান্ড কসমেটিকস নামে একটি দোকান পরিচালনা করেন।
ইসির প্রাথমিক তালিকায় থাকা একটি প্রতিষ্ঠানের নাম গরীব উন্নয়ন সংস্থা। ঠিকানা কোদালকাঠি, কুড়িগ্রাম। রোববার গিয়ে দেখা যায়, ঠিকানাটি আসলে সংস্থাটির নির্বাহী পরিচালক আবদুল লতিফের বাড়ির। সাইনবোর্ডও রয়েছে। এক কক্ষের অফিসে কর্মী বাবা–ছেলে।
আবদুল লতিফ প্রথম আলোকে বলেন, সংস্থাটির মূল কাজ সচেতনতা বৃদ্ধি। তাঁরা ঈদের সময় বিদেশি দাতা সংস্থা থেকে কোরবানির গরু নিয়ে গরিব মানুষের মধ্যে মাংস বিতরণ করেন। গরিব মানুষের মধ্যে ছাগল বিতরণ কার্যক্রম ছিল, যা বর্তমানে নেই।
আলোকিত সমাজকল্যাণ সংস্থার ঠিকানা দেওয়া হয়েছে বিষয়খালী বাজার, খড়িখালী, ঝিনাইদহ সদর। সেখানে তাদের কোনো কার্যালয় পাওয়া যায়নি। পরে প্রতিষ্ঠানটির নির্বাহী পরিচালক রোখসানা খাতুনের সঙ্গে মুঠোফোনে যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন, তাঁর কার্যালয় ঝিনাইদহ শহরের চাকলাপাড়ায়। তিনি পুরোনো হাসপাতালের সামনে বধূয়া সাজ সিটি গোল্ড অ্যান্ড কসমেটিকস নামে একটি দোকান পরিচালনা করেন।
রোখসানা আরও বলেন, তাঁদের বর্তমানে কোনো প্রকল্প নেই। তাই সক্রিয় কর্মী নেই। কাজের প্রয়োজন হলে তাঁরা চলে আসেন।
আবদুল লতিফ প্রথম আলোকে বলেন, সংস্থাটির মূল কাজ সচেতনতা বৃদ্ধি। তাঁরা ঈদের সময় বিদেশি দাতা সংস্থা থেকে কোরবানির গরু নিয়ে গরিব মানুষের মধ্যে মাংস বিতরণ করেন। গরিব মানুষের মধ্যে ছাগল বিতরণ কার্যক্রম ছিল, যা বর্তমানে নেই।
নির্বাচন কমিশনের গণবিজ্ঞপ্তিতে বাসাবো জনকল্যাণ সংস্থার (বিজেএস) নাম রয়েছে। ঠিকানা রাজধানীর পশ্চিম আগারগাঁওয়ের ‘একুশে টাওয়ার’। সেখানে গিয়ে রোববার দেখা যায়, ভবনের নির্মাণকাজ চলছে। সেখানে মো. হানিফ নামের এক ব্যক্তি তিনি নিজেকে নির্মাণকারী প্রতিষ্ঠানের কর্মকর্তা পরিচয় দিয়ে বলেন, বিজেএসের নির্বাহী প্রধান মিঠু হোসেন শিকদার একটি ফ্ল্যাট কিনেছেন। অনুমতি ছাড়া নম্বর দেওয়া যাবে না।
যশোরের মনিরামপুরের সার্ভিসেস ফর ইকুয়িটি অ্যান্ড ইকোনমিক ডেভেলপমেন্টের (সিড) ঠিকানা খুঁজতে গিয়ে রোববার দেখা যায়, তাদের কার্যালয় মূলত দুই কক্ষের একটি পরিত্যক্ত ঘর। একটি কক্ষের চালায় ভিমরুল বড় একটি বাসা বেঁধেছে।
সিডের নির্বাহী পরিচালক রেবেকা সুলতানা জানান, সংস্থাটির সভাপতি জন এস বিশ্বাস। তিনি সাধারণ সম্পাদক। তাঁর ছেলে সহসভাপতি। তিনি আরও বলেন, সংস্থাটি ছিল তাঁর স্বামীর। তিনি সড়ক দুর্ঘটনায় আহত হয়ে মারা যান। তখন তিনি দায়িত্ব নেন। ১৯৯০ সালে মনিরামপুরে সংস্থার নামে পাঁচ শতক জমি কেনা হয়েছিল। তা নিয়ে মামলা চলছে। এ কারণে ওই জমিতে ভবন করা যায়নি। অফিস মনিরামপুর থেকে ঢাকায় সরিয়ে আনা হয়েছে। এখন কোনো রকমে সংস্থার কার্যক্রম চলছে।
আবাস নামের আরেকটি সংস্থার ঠিকানা দেওয়া হয়েছে নাটোরের বড়াইগ্রাম উপজেলার রামাগাড়ি গ্রাম। সেখানে গতকাল সোমবার গিয়ে দেখা যায়, সেটি একটি বাড়ি। সামনে আবাসের সাইনবোর্ড রয়েছে। বাড়ির মালিক হাবিবুর রহমান। তিনি আবাসের সাধারণ সম্পাদক আবদুল লতিফের ভাই। আবাসের প্রতিষ্ঠাতা ও সভাপতি আফজাল হোসেন। তাঁরা তিনজন মিলে সংস্থাটি পরিচালনা করেন।
আফজাল প্রথম আলোকে বলেন, তাঁদের সংস্থাটি ক্ষুদ্র স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন। সীমিত পরিসরে বৃক্ষরোপণ, শীতবস্ত্র বিতরণ ইত্যাদি কার্যক্রম করে থাকেন। তাঁদের কোনো জনবলকাঠামো ও বেতনভুক্ত কর্মী নেই।
নির্বাচন কমিশনের তালিকায় জাতীয় ও আঞ্চলিকভাবে পরিচিত সংস্থার নামও আছে। যেমন আবদুল মোমেন খান মেমোরিয়াল ফাউন্ডেশনের কার্যালয় রাজধানীর মোমেনবাগের মিলেনিয়াম ইউনিভার্সিটি ভবনে। ফাউন্ডেশনের জনসংযোগ কর্মকর্তা বাহাউদ্দিন মিল্টন প্রথম আলোকে বলেন, সংস্থাটি পরিচালনা করছেন বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য মঈন খানের স্ত্রী আইনজীবী রোকসানা খন্দকার। ২০০৮ সালের জাতীয় সংসদ নির্বাচনসহ বিভিন্ন নির্বাচন তারা পর্যবেক্ষণ করেছে।
ডেমোক্রেসি ওয়াচ নির্বাচন পর্যবেক্ষণের ক্ষেত্রে পুরোনো সংস্থা। ডেমোক্রেসি ওয়াচের নির্বাহী পরিচালক তালেয়া রহমান। তাঁর স্বামী সাংবাদিক শফিক রেহমান।
মানবাধিকার সংস্থা অধিকার রয়েছে নির্বাচন কমিশনের তালিকায়। এই সংস্থার সম্পাদক ছিলেন অন্তর্বর্তী সরকারের উপদেষ্টা আদিলুর রহমান খান। এখনকার প্রেসিডেন্ট তাসনিম এ সিদ্দিকী। তাঁর স্বামী শিক্ষা উপদেষ্টা সি আর আবরার।
আঞ্চলিকভাবে পরিচিত সংস্থার মধ্যে রয়েছে দিনাজপুরের পল্লীশ্রী। ১৯৮৭ সালে প্রতিষ্ঠিত পল্লীশ্রীতে ২৭৫ জন কর্মী রয়েছে। অতীতে তারা পর্যবেক্ষক হিসেবে কাজ করেছে। পরিচালনা পর্ষদে থাকা সাতজনের কেউ রাজনীতির সঙ্গে যুক্ত নন। এটির প্রতিষ্ঠাতা সাবেক প্রধানমন্ত্রী বেগম খালেদা জিয়ার মা তৈয়বা মজুমদার।
ইসির গণবিজ্ঞপ্তি থেকে জানা যায়, গত ২৭ জুলাই তারা পর্যবেক্ষক নিবন্ধনের জন্য আবেদন চেয়েছিল। সেখানে তিন শতাধিক প্রতিষ্ঠান আবেদন করেছিল। যাচাই–বাছাই করে ৭৩টি প্রতিষ্ঠানের তালিকা করেছে ইসি। প্রশ্ন হলো ইসির বাছাইয়ে নামসর্বস্ব প্রতিষ্ঠান বাদ পড়ল না কেন?
নির্বাচনবিশেষজ্ঞ ও সাবেক নির্বাচনব্যবস্থা সংস্কার কমিশনের সদস্য হিসেবে দায়িত্ব পালন করা আবদুল আলীম প্রথম আলোকে বলেন, নির্বাচন কমিশনের এই তালিকা প্রাথমিক। হয়তো শুনানিতে কেউ কেউ বাদ পড়বে। নতুন করে আবেদনের পর কেউ কেউ যুক্তও হতে পারে।
আবদুল আলীম আরও বলেন, নির্বাচন পর্যবেক্ষক হিসেবে সংস্থার অভিজ্ঞতা না–ও থাকতে পারে, দেখতে হবে তাদের সক্ষমতা আছে কি না। তিনি বলেন, মনে হচ্ছে এসব প্রতিষ্ঠান নির্বাচন পর্যবেক্ষক হিসেবে তালিকাভুক্ত হয়ে নিজেদের মর্যাদা বাড়াতে চায়। কিন্তু হওয়া উচিত ছিল উল্টো। সেটি হলো মানুষের কাছে গ্রহণযোগ্য প্রতিষ্ঠান ভালোভাবে পর্যবেক্ষণ করে নির্বাচন সম্পর্কে নিজেদের মূল্যায়ন তুলে ধরবে। এতে মানুষ ধারণা পাবে যে নির্বাচন ভালো হলো না খারাপ হলো।
‘ডামি নির্বাচন’ হিসেবে পরিচিত ২০২৪ সালের দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের আগে দুই দফায় ৯৬টি নির্বাচন পর্যবেক্ষক সংস্থাকে তালিকাভুক্ত করে কাজী হাবিবুল আউয়াল কমিশন। ২০২৩ সালের ৬ ডিসেম্বর ২৯টি সংস্থার নাম প্রকাশ করা হয়। এর মধ্যে বিতর্কিত দুই সংস্থা ইলেকশন মনিটরিং ফোরাম ও সার্ক মানবাধিকার ফাউন্ডেশনও ছিল। প্রথম দফায় শর্ত পূরণ না করায় তাদের আবেদন বাতিল করে ইসি। তালিকায় আরও কিছু নাম ছিল, যেগুলো নামসর্বস্ব।
উল্লেখ্য, কাজী হাবিবুল আউয়াল এখন কারাগারে।