
জাতীয় সংসদ নির্বাচনের মাত্র কুড়ি দিন আগে গতকাল সোমবার দুই মামলায় বিএনপি ও এর অঙ্গ এবং সহযোগী সংগঠনগুলোর আরও ১৪ জন নেতা–কর্মীর সাজা হয়েছে। মামলা দুটি হয়েছিল ২০১৮ সালের সেপ্টেম্বর মাসে। সাজাপ্রাপ্ত নেতা–কর্মীদের মধ্যে রাজধানীর কোতোয়ালি থানা বিএনপির সভাপতি হায়দার আলী ও কলাবাগান থানা কমিটির যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক বিল্লাল হোসেন রয়েছেন।
এ নিয়ে গত সাড়ে চার মাসে অন্তত ৮৩টি মামলায় বিএনপি ও এর অঙ্গ এবং সহযোগী সংগঠনগুলোর ১ হাজার ২৬৩ জনের সাজা হলো। এর মধ্যে কয়েকজনের একাধিক মামলায় সাজা হয়েছে।
গতকাল আরও একটি মামলার রায় হয়েছে। এ মামলাটিও ২০১৮ সালের সেপ্টেম্বর মাসে করা। রাজধানীর শাহজাহানপুর থানায় করা এই মামলায় ১৩ আসামির সবাইকে খালাস দিয়েছেন আদালত। রায়ে খালাস পাওয়া সবাই বিএনপির নেতা–কর্মী।
পুলিশের করা মামলার এজাহারের তথ্য অনুযায়ী, বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার মুক্তির দাবিতে ২০১৮ সালের ১৩ সেপ্টেম্বর বিকেলে রাজধানীর কলাবাগান এলাকায় দলটির নেতা–কর্মীরা সরকারবিরোধী মিছিল বের করেন। একপর্যায়ে তাঁরা সড়কে যানবহন চলাচল বন্ধ করে দিয়ে পুলিশকে লক্ষ্য করে ইটপাটকেল নিক্ষেপ করেন।
এ ঘটনার করা মামলায় ১০ জনের বিরুদ্ধে ২০১৯ সালের ৩০ জুন আদালতে অভিযোগপত্র জমা দেয় পুলিশ। আর গত বছরের ৫ এপ্রিল এই মামলায় অভিযোগ গঠন করেন আদালত। রাষ্ট্রপক্ষ থেকে সাতজন পুলিশ সাক্ষীকে আদালতে হাজির করা হয়। গতকাল রায়ে ১০ জনের চার বছর করে কারাদণ্ড দেন আদালত। ঢাকার সিএমএম আদালতের ম্যাজিস্ট্রেট রাজেশ চৌধুরী এ রায় দেন।
মামলার এজাহারের বিবরণ অনুযায়ী, ২০১৮ সালের ৫ সেপ্টেম্বর পুরান ঢাকার জনসন রোডে ঢাকা আইনজীবী সমিতির ভবনে প্রবেশের পথে বিএনপির চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার মুক্তির দাবিতে দলটির নেতা–কর্মীরা সমবেত হয়। তাঁদের প্রত্যেকের হাতে ছিল লাঠি ও রড। একপর্যায়ে তাঁরা সড়কে যানবহন চলাচল বন্ধ করে দেয় এবং পুলিশকে লক্ষ্য করে ইটপাটকেল নিক্ষেপ করেন। এতে পুলিশের তিনজন সদস্য আহত হন।
এ ঘটনায় মামলায় পুলিশ ছয়জনের বিরুদ্ধে ২০১৯ সালের ১৫ মে আদালতে অভিযোগপত্র জমা দেয়। গত ১৬ জানুয়ারি আদালত অভিযোগ গঠন করেন। রাষ্ট্রপক্ষ থেকে পাঁচজন পুলিশ সাক্ষীকে আদালতে হাজির করে। এ মামলায় গতকাল ঢাকার সিএমএম আদালতের ম্যাজিস্ট্রেট মো. মইনুল ইসলাম রায় দেন। রায়ে ঢাকা মহানগর দক্ষিণ ছাত্রদলের যুগ্ম আহব্বায়ক সাখাওয়াত হোসেনসহ চারজনকে দুই বছর করে কারাদণ্ড দেওয়া হয়েছে। খালাস পেয়েছেন দুজন।
জাতীয়তাবাদী আইনজীবী ফোরামের তথ্য অনুযায়ী, গত সাড়ে তিন মাসে (১৪ সপ্তাহে) ৭৯টি মামলায় বিএনপির ১ হাজার ২৪৯ নেতা–কর্মীকে বিভিন্ন মেয়াদে সাজা দেওয়া হয়েছে।
গতকাল সোমবার সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতির দক্ষিণ হলে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে এই তথ্য তুলে ধরেন জাতীয়তাবাদী আইনজীবী ফোরামের মহাসচিব কায়সার কামাল। তিনি বিএনপির আইনবিষয়ক সম্পাদকও।
সংবাদ সম্মেলনে ফোরামের সভাপতি এ জে মোহাম্মদ আলী, সহসভাপতি এম বদরুদ্দোজা, যুগ্ম মহাসচিব মো. রুহুল কুদ্দুস ও ফোরামের সুপ্রিম কোর্ট ইউনিটের সাধারণ সম্পাদক গাজী কামরুল ইসলাম প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।
সংবাদ সম্মেলনে কায়সার কামাল বলেন, ভোটাধিকার, গণতন্ত্র ও মানবাধিকার প্রতিষ্ঠার আন্দোলন স্তব্ধ করে দিতে সরকার গ্রেপ্তার অভিযান চালাচ্ছে। গত ২৮ অক্টোবরের পর থেকে এ পর্যন্ত বিএনপির ২১ হাজার ৮৩৫ নেতা–কর্মীকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে।