সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে মহাসমাবেশস্থল পূর্ণ হয়ে যায়। ইঞ্জিনিয়ার্স ইনস্টিটিউশন, মৎস্য ভবন এলাকার সড়কেও ছড়িয়ে ছিটিয়ে ছিলেন দলটির নেতা–কর্মীরা
সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে মহাসমাবেশস্থল পূর্ণ হয়ে যায়। ইঞ্জিনিয়ার্স ইনস্টিটিউশন, মৎস্য ভবন এলাকার সড়কেও ছড়িয়ে ছিটিয়ে ছিলেন দলটির নেতা–কর্মীরা

ইসলামী আন্দোলনের মহাসমাবেশ

আগে স্থানীয় নির্বাচন ও পিআর পদ্ধতির দাবি

মহাসমাবেশে যোগ দিয়ে জামায়াতে ইসলামী, এনসিপি, এবি পার্টি, গণ অধিকার পরিষদের নেতারাও একই দাবি জানান।

জাতীয় নির্বাচনের আগে স্থানীয় সরকার নির্বাচন এবং সংখ্যানুপাতিক প্রতিনিধিত্ব (পিআর) পদ্ধতিতে জাতীয় সংসদ নির্বাচনের দাবি জানিয়েছে ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ। গতকাল শনিবার রাজধানীর সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে দলটির মহাসমাবেশ থেকে এ দাবি জানানো হয়। এ মহাসমাবেশে যোগ দিয়ে জামায়াতে ইসলামী, জাতীয় নাগরিক পার্টি (এনসিপি), এবি পার্টি, গণ অধিকার পরিষদের নেতারাও একই দাবি জানান।

সংস্কার, বিচার এবং পিআর পদ্ধতিতে নির্বাচনের দাবিতে এবং দেশ ও ইসলামবিরোধী সব ষড়যন্ত্র ও চক্রান্তের প্রতিবাদে এ মহাসমাবেশের আয়োজন করে ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ। মহাসমাবেশে দলটি ১৬ দফা দাবি তুলে ধরে। আগামী জাতীয় নির্বাচনে জোটবদ্ধভাবে অংশ নেওয়ার সম্ভাবনার কথা উঠে আসে ইসলাম ধর্মভিত্তিক কয়েকটি দলের নেতাদের বক্তব্যে।

দেশের বিভিন্ন স্থান থেকে আসা নেতা–কর্মীরা খণ্ড খণ্ড মিছিল নিয়ে সকাল থেকে সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে জমায়েত হতে শুরু করেন। একপর্যায়ে মহাসমাবেশস্থল পূর্ণ হয়ে যায়। ইঞ্জিনিয়ার্স ইনস্টিটিউশন, মৎস্য ভবন এলাকার সড়কেও ছড়িয়ে ছিটিয়ে ছিলেন দলটির নেতা–কর্মীরা।

দুপুর ১২টায় শুরু হয় মহাসমাবেশের প্রথম অধিবেশন। এতে বক্তব্য দেন ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের জেলা ও মহানগরের নেতারা। বেলা দুইটার দিকে শুরু হয় মূল অধিবেশন। এতে দলটির কেন্দ্রীয় নেতাদের পাশাপাশি আমন্ত্রিত অন্যান্য রাজনৈতিক দল ও বিভিন্ন ধর্মীয় সম্প্রদায়ের নেতারা বক্তব্য দেন। অবশ্য এ সমাবেশে বিএনপিকে আমন্ত্রণ জানানো হয়নি।

ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ, জামায়াতে ইসলামীসহ কয়েকটি দল আগে থেকেই সংখ্যানুপাতিক প্রতিনিধিত্ব পদ্ধতিতে সংসদ নির্বাচনের দাবি জানিয়ে আসছে। এ পদ্ধতিতে একটি দল সারা দেশে যত ভোট পায়, তার অনুপাতে সংসদে আসন পায়। তবে বিএনপি এ পদ্ধতির বিপক্ষে।

সংখ্যানুপাতিক পদ্ধতিতে নির্বাচনকে জনগণের দাবি উল্লেখ করে ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের আমির ও চরমোনাই পীর সৈয়দ মুহাম্মাদ রেজাউল করীম বলেন, আসন্ন জাতীয় সংসদ নির্বাচন সংখ্যানুপাতিক পদ্ধতিতে হওয়া ছাড়া বিকল্প নেই। সংসদের প্রস্তাবিত উভয় কক্ষেই এ পদ্ধতিতে নির্বাচন হতে হবে। এটি হলে কোনো দল ‘জালেম’ হওয়ার সুযোগ পাবে না।

রাজনৈতিক চাঁদাবাজি এখনো চলছে মন্তব্য করে সৈয়দ মুহাম্মাদ রেজাউল করীম বলেন, ‘একটি দলের বিরুদ্ধে অভিযোগ উঠেছে। কারও নাম ধরে সমালোচনা করতে চাই না। তবে পুরোনো রাজনৈতিক অপসংস্কৃতি জিইয়ে রাখার চেষ্টা সহ্য করা হবে না।’

ইসলামপন্থী দলগুলোকে এক হওয়ার আহ্বান জানিয়ে সৈয়দ মুহাম্মাদ রেজাউল করীম বলেন, ‘আমরা ৫৪ বছরে অনেক দলকে দেশ শাসন করতে দেখেছি; কিন্তু ইসলামকে ক্ষমতায় নিতেই পারিনি। এবার ইসলামপন্থীদের ঐক্যের ব্যাপারে গণপ্রত্যাশা তৈরি হয়েছে।’

সোহরাওয়ার্দী উদ্যানের এই মহাসমাবেশে বিভিন্ন রাজনৈতিক দল ও সংগঠনের পাশাপাশি ধর্মীয় সংগঠনের নেতাদেরও আমন্ত্রণ জানিয়েছিল ইসলামী আন্দোলন

নিরপেক্ষতা নিয়ে প্রশ্ন

জামায়াতে ইসলামীর সেক্রেটারি জেনারেল মিয়া গোলাম পরওয়ার প্রধান উপদেষ্টার নিরপেক্ষতা নিয়ে প্রশ্ন তোলেন। তিনি বলেন, ‘আপনি জাতির উদ্দেশে এক কথা বলবেন, সরকারপ্রধান হিসেবে এক কথা বলবেন, রাষ্ট্রীয় টেলিভিশনে এক কথা বলবেন, কিন্তু কোনো দলের সঙ্গে আলোচনায় গিয়ে সে কথা ভুলে যাবেন। এটা নিরপেক্ষতা ভঙ্গ হয়েছে।’

জামায়াতের সেক্রেটারি জেনারেল আরও বলেন, ‘আপনাকে জাতির সামনে আসতে হবে। সব দলের সঙ্গে বসে বলতে হবে যে আমাদের এই অসুবিধা; আসুন, আমরা সবাই মিলে এটাই করি, আমরা রাজি আছি। কিন্তু আপনার এ ভূমিকায় প্রশ্ন তৈরি হয়েছে, আগামী ৮-১০ মাস পর যদি নির্বাচন হয়, আপনি সোজা থাকবেন কি না, আপনাকে এই আট মাসে নিরপেক্ষতার প্রমাণ দিতে হবে।’ সংখ্যানুপাতিক পদ্ধতি ছাড়া বাংলার মানুষ কোনো নির্বাচন গ্রহণ করবে না বলেও তিনি উল্লেখ করেন।

সংবিধান পরিবর্তন করে নির্বাচনের দাবি জানান এবি পার্টির সভাপতি মজিবুর রহমান মঞ্জু। তিনি বলেন, ‘নির্বাচন চান; কিন্তু পিআর মানেন না কেন? নির্বাচন চান; কিন্তু স্থানীয় সরকার নির্বাচন আগে হলে আপনাদের অসুবিধা কী? সুতরাং আমরা এই টালবাহানা চলতে দিতে চাই না।’

এনসিপির সদস্যসচিব আখতার হোসেন বলেন, মুজিববাদী সংবিধান বাংলাদেশে আর চলতে পারে না। নতুন সংবিধান প্রণয়নের জন্য অবশ্যই বাংলাদেশে গণপরিষদ নির্বাচন আয়োজন করতে হবে। তিনি বলেন, উচ্চকক্ষে সংখ্যানুপাতিক পদ্ধতিতে প্রতিনিধিত্ব নির্বাচনের প্রস্তাবে ইতিমধ্যে প্রায় সব দল একমত হয়েছে; কিন্তু দু-একটি দলের কারণে এটি করা সম্ভব হচ্ছে না। তিনি মনে করেন, বাংলাদেশকে নতুন কাঠামোতে পরিচালিত করতে হলে অবশ্যই পিআর পদ্ধতি নিয়ে গভীরভাবে ভাবতে হবে।

বাংলাদেশ জাতীয় হিন্দু মহাজোটের মহাসচিব গোবিন্দ চন্দ্র প্রামাণিক বলেন, পিআর পদ্ধতিতে যদি ভোট হয় হিন্দু সম্প্রদায় ভোট দিতে যাবে, না হলে যাবে না। তিনি একই সঙ্গে পৃথক নির্বাচন পদ্ধতিরও দাবি জানান। তিনি বলেন, ‘মাইনোরিটিদের প্রতিনিধিত্বের সিদ্ধান্ত তারা নেবে, তারা নিজেদের ভোট দিয়ে প্রতিনিধি নির্বাচন করবে।’

মহাসমাবেশে নানা দল-সংগঠন

মহাসমাবেশে অন্যদের মধ্যে জামায়াতের জ্যেষ্ঠ নায়েবে আমির মুজিবুর রহমান ও সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল রফিকুল ইসলাম খান, খেলাফত মজলিসের মহাসচিব আহমদ আবদুল কাদের, ইসলামী ঐক্যজোটের মহাসচিব মাওলানা সাখাওয়াত হোসেন রাজি, বাংলাদেশ খেলাফত মজলিসের মহাসচিব মাওলানা জালালুদ্দীন আহমদ, খেলাফত আন্দোলন বাংলাদেশের মহাসচিব মাওলানা ইউসুফ সাদিক হক্কানী, গণ অধিকার পরিষদের সভাপতি নুরুল হক, এনসিপির উত্তরাঞ্চলের মুখ্য সংগঠক সারজিস আলম, নেজামে ইসলাম পার্টির মহাসচিব মাওলানা মূসা বিন ইজহার প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।

এ ছাড়া মহাসমাবেশে বোধিজ্ঞান ভাবনাকেন্দ্রের সভাপতি দয়াল কুমার বড়ুয়া ও বাংলাদেশ খ্রিস্টান অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি নির্মল রোজারিও বক্তব্য দেন।