
রাজনৈতিক দলগুলোকে তথ্য অধিকার আইনের আওতায় আনা দরকার বলে মন্তব্য করেছেন সুশাসনের জন্য নাগরিকের (সুজন) সম্পাদক বদিউল আলম মজুমদার।
আন্তর্জাতিক তথ্য জানার অধিকার দিবস উপলক্ষে ‘তথ্য অধিকার আইন: পরিপ্রেক্ষিত পর্যালোচনা’ শীর্ষক সেমিনারে ‘পরিশুদ্ধ নির্বাচনপ্রক্রিয়ায় তথ্য অধিকার’ বিষয়ে আলোচনায় এ কথা বলেন বদিউল আলম মজুমদার। আজ রোববার রাজধানীর গুলশানের একটি হোটেলে এই সেমিনারের আয়োজন করে তথ্য অধিকার ফোরাম। এমআরডিআইয়ের নির্বাহী পরিচালক হাসিবুর রহমানের সঞ্চালনায় সেমিনারে নাগরিক সমাজের প্রতিনিধিরা বক্তব্য দেন।
নির্বাচনব্যবস্থা সংস্কার কমিশনের প্রধান বদিউল আলম মজুমদার বলেন, রাজনৈতিক দলগুলোকে তথ্য অধিকার আইনের আওতায় আনা দরকার। রাজনৈতিক দলগুলো অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ সংবিধানস্বীকৃত প্রতিষ্ঠান। রাজনৈতিক দল যদি স্বচ্ছ না হয়, রাজনৈতিক দল যদি গণতান্ত্রিক না হয়, তাহলে কিন্তু দেশে গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠিত হওয়ার আশা দুরাশা।
নির্বাচনব্যবস্থা সংস্কার কমিশনের পক্ষ থেকে এমন প্রস্তাব দেওয়ার কথা উল্লেখ করেন বদিউল আলম মজুমদার। তিনি বলেন, কমিশনের প্রস্তাবে বলা হয়েছে, রাজনৈতিক দলগুলোকে তথ্য অধিকার আইনের আওতায় আনা যায়।
অন্তর্বর্তী সরকার দ্রুততম সময়ের মধ্যে উদ্যোগ নিয়ে তথ্য অধিকার কমিশন গঠন করবে বলে আশা প্রকাশ করেন বদিউল আলম মজুমদার। তিনি বলেন, পক্ষপাতদুষ্ট ব্যক্তিদের বাদ দিয়ে, যাঁরা নির্দলীয়, সে রকম সাহসী ব্যক্তি নিয়ে তথ্য অধিকার কমিশন গঠন করতে হবে। আর এ জন্য সবাইকে সোচ্চার থাকতে হবে।
বিগত নির্বাচন কমিশন পাতানো কমিশন ছিল বলে মন্তব্য করেন বদিউল আলম মজুমদার। এ প্রসঙ্গে তিনি বলেন, গত নির্বাচন কমিশন পাতানো কমিশন ছিল। এ জন্য তিনি তথ্য কমিশনে গিয়েছিলেন। কিন্তু তথ্য পাননি যে কার নাম কে প্রস্তাব করেছে।
তথ্য কমিশনে তথ্য না পেয়ে আইনি লড়াইয়ে গেছেন বলে উল্লেখ করেন বদিউল আলম মজুমদার। তিনি বলেন, আদালতে গিয়েছেন। কিন্তু এখন পর্যন্ত রায় পাননি। তিনি জানেন না যে রায় পাবেন কি না। কিন্তু তিনি লেগে আছেন, যাতে এই তথ্য অধিকার আইন প্রয়োগ করা হয়।
২০১৮ সালের জাতীয় নির্বাচনের নানা অনিয়মের বিষয় উঠে আসে বদিউল আলম মজুমদারের বক্তব্যে। তিনি বলেন, ২১৮টি কেন্দ্রে শতভাগ ভোট। ১ হাজার ২০০ কেন্দ্রে বিএনপির শূন্য ভোট। এমনকি আওয়ামী লীগ দুটো কেন্দ্রে শূন্য ভোট পেয়েছে। এসব অনিয়ম উদ্ঘাটন করতে পেরেছেন। ফলে স্বৈরাচার বিতাড়নের ক্ষেত্রে যে ন্যারেটিভ তৈরি হওয়া দরকার, তা হয়েছে। তারা একদিকে অবৈধ, আরেক দিকে মানুষের ভোটাধিকার হরণ করেছে, এসব ন্যারেটিভ গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছে।
জনগণের কার্যকর অংশগ্রহণ সুশাসনের পূর্বশর্ত বলে উল্লেখ করেন বদিউল আলম মজুমদার। তিনি বলেন, শাসনপ্রক্রিয়ায় জনগণের সক্রিয় অংশগ্রহণের জন্য তথ্য দরকার। তথ্য অধিকার আইন হতে পারে এই প্রক্রিয়ার মাধ্যম। তাই সুশাসন প্রতিষ্ঠার জন্য তথ্য অধিকার আইন অর্থাৎ তথ্য অধিকার নিশ্চিত করার কোনো বিকল্প নেই। পাশাপাশি জনগণের কাছে জবাবদিহি নিশ্চিত করারও দাবি জানান তিনি।
নির্বাচনের জন্য প্রার্থী সম্পর্কে নাগরিকের তথ্য পাওয়ার বিষয়টিকে গুরুত্বপূর্ণ বলে উল্লেখ করেন সুজন সম্পাদক। তিনি বলেন, ভারতের আদালত সুস্পষ্টভাবে বলেছেন, প্রার্থীদের সম্পর্কে ভোটারদের তথ্যপ্রাপ্তির অধিকার বাক্স্বাধীনতার অংশ। তাঁরা নির্বাচনের ক্ষেত্রে প্রার্থীদের সম্পর্কে ভোটারদের তথ্যপ্রাপ্তির অধিকারকে মৌলিক অধিকার হিসেবে স্বীকৃতি দিয়েছেন। সে জন্য ভোটারদের প্রার্থী সম্পর্কে তথ্য জানার অধিকার প্রতিষ্ঠার কোনো বিকল্প নেই।
তথ্য অধিকার প্রতিষ্ঠায় সুজন শুরু থেকেই কাজ করছে বলে উল্লেখ করেন বদিউল আলম মজুমদার। তিনি বলেন, তাঁরা সুজনের উদ্যোগে এই কাজ শুরু করেন ২০০৩ সালে। তখন যাঁরা ইউনিয়ন পরিষদের প্রার্থী হয়েছিলেন, চেয়ারম্যান প্রার্থী হয়েছিলেন, তাঁদের বিরুদ্ধে দুর্নীতির কোনো অভিযোগ আছে কি না, কোনো দখলদারির অভিযোগ আছে কি না, কোনো নারী নির্যাতনের অভিযোগ আছে কি না, এসব তথ্য নিয়ে প্রার্থীদের প্রোফাইল তৈরি করেছেন তাঁরা। ৫০টি ইউনিয়নে কাজটা হয়েছিল। পরবর্তীকালে এটি ভোটারদের সিদ্ধান্ত গ্রহণে সাহায্য করেছিল।
নির্বাচনব্যবস্থা সংস্কার কমিশনের প্রধান হিসেবে নিজের কাজের পরিধি তুলে ধরেন বদিউল আলম মজুমদার। তিনি বলেন, যেসব তথ্য প্রার্থীরা দেবেন, সেগুলো যাতে নির্বাচন কমিশন যাচাই-বাছাই করে। এই বিধান আগেই আইনে আছে যে যাঁরা তথ্য গোপন করেন কিংবা ভুল তথ্য দেন, তাঁদের প্রার্থিতা যেন বাতিল হয়। ভুল তথ্য দিয়ে, মিথ্যা তথ্য দিয়ে যদি নির্বাচিত হন, তাঁদের নির্বাচন যেন বাতিল হয়, এই সুপারিশ তাঁরা করেছেন। তিনি আশা করেন যে নির্বাচন কমিশন এই সুপারিশ রাখবে।
সেমিনারে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন প্রধান উপদেষ্টার কার্যালয়ের সচিব (সংযুক্ত) মো. মাহমুদুল হোসাইন খান। বিশেষ অতিথি এনজিওবিষয়ক ব্যুরোর মহাপরিচালক মো. দাউদ মিয়া, বাংলাদেশে নিযুক্ত ইউনেসকোর কান্ট্রি রিপ্রেজেন্টেটিভ সুজান ভাইজ।
সেমিনারে সভাপতিত্ব করেন তথ্য অধিকার ফোরামের আহ্বায়ক ও মানুষের জন্য ফাউন্ডেশনের নির্বাহী পরিচালক শাহীন আনাম। মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন রিসার্চ ইনিশিয়েটিভ বাংলাদেশের উপপরিচালক রুহী নাজ। সেমিনারে প্যানেল আলোচক ছিলেন টিআইবির নির্বাহী পরিচালক ইফতেখারুজ্জামান, বিলসের নির্বাহী পরিচালক সৈয়দ সুলতান উদ্দিন আহমেদ, নাগরিক উদ্যোগের প্রধান নির্বাহী জাকির হোসেন ও আইসোশ্যালের চেয়ারপারসন অনন্য রায়হান।