
বাংলাদেশের সংখ্যাগরিষ্ঠ ভোটারকে বাইরে রেখে নির্বাচন ভালোভাবে করা যাবে না বলে মনে করছেন কৃষক শ্রমিক জনতা লীগের সভাপতি বঙ্গবীর কাদের সিদ্দিকী।
নির্বাচন কমিশনের উদ্দেশে কাদের সিদ্দিকী বলেন,‘বাংলাদেশের সংখ্যাগরিষ্ঠ ভোটারকে বাইরে রেখে আপনারা নির্বাচন করতে গেলে সেই নির্বাচন ভালোভাবে করতে পারবেন না। ভোটার যাতে অংশগ্রহণ করতে পারে, সে জন্য আপনাদের আপ্রাণ চেষ্টা করতে হবে।’
ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন উপলক্ষে আজ রোববার নিবন্ধিত রাজনৈতিক দলের সঙ্গে নির্বাচন কমিশনের (ইসি) সংলাপের দ্বিতীয় পর্বের আলোচনায় অংশ নিয়ে কাদের সিদ্দিকী এ কথা বলেন। রাজধানীর আগারগাঁওয়ে নির্বাচন ভবনে ইসি আয়োজিত সংলাপে প্রধান নির্বাচন কমিশনার এ এম এম নাসির উদ্দীন ছাড়াও তিনজন নির্বাচন কমিশনার এবং পাঁচটি দলের প্রতিনিধিরা উপস্থিত ছিলেন।
আলোচনায় কাদের সিদ্দিকী বলেন, ‘প্রবীণ নাগরিক হিসেবে এবং একজন মুক্তিযোদ্ধা হিসেবে আমি আপনাদের পরামর্শ দিয়ে যেতে চাই, বাংলাদেশের সংখ্যাগরিষ্ঠ ভোটারকে বাইরে রেখে আপনারা নির্বাচন করতে গেলে সেই নির্বাচন ভালোভাবে করতে পারবেন না। ভোটার যাতে অংশগ্রহণ করতে পারে, সে জন্য আপনাদের আপ্রাণ চেষ্টা করতে হবে। আওয়ামী লীগ বাংলাদেশ প্রতিষ্ঠা করেছে। আজকে আওয়ামী লীগ ব্যান করলেই আওয়ামী লীগ ব্যানড হবে...। আওয়ামী লীগ নির্বাচন বন্ধ রাখার, বন্ধ করার চেষ্টা করবে, অবশ্যই করবে, অবশ্যই করবে। কেউ বোকার মতো করবেন, কেউ বুদ্ধিমানের মতো করবেন।’
জাতীয় নির্বাচনের দিনে গণভোটের দিকে কেউ ফিরেও তাকাবে না উল্লেখ করে কাদের সিদ্দিকী বলেন, ‘বিএনপি “না” বললে, আওয়ামী লীগ নির্বাচন করতে না পারলে বড় অংশের মানুষ এর দিকে ফিরেই তাকাবে না। এখন শোনা যাচ্ছে, জাতীয় পার্টিকে ব্যান (নিষিদ্ধ) করতে হবে।...অধ্যাপক ইউনূস ১৫ মাসেও একবারের জন্য আমাদের (কৃষক শ্রমিক জনতা লীগ) দলীয়ভাবে হিসাবের খাতায় ধরেননি। এভাবে হিসাবের খাতায় না ধরে সবাইকে যদি বাইরে রাখা হয়, তাহলে কোনোমতেই একটা গ্রহণযোগ্য নির্বাচন হবে না।’
গণভোট কিসের ওপর করা হবে, ‘সে প্রশ্ন রেখে কাদের সিদ্দিকী বলেন, দেশের মানুষ জানে না, কী বিষয়ের ওপর গণভোট। আবার চারটা বিষয় দেওয়া হয়েছে এই গণভোটে। সেখানে চারটা প্রশ্নই হ্যাঁ নাকি না। চারটা প্রশ্নের দুইটাতে যদি অমত থাকে, সেই দুইটা প্রশ্নে কি ভোটাররা মতামত দিতে পারবে?’
কাদের সিদ্দিকী বলেন, ‘শেখ হাসিনা বলছেন, আবার নাকি গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠা করবেন! দুর্ভাগ্যের সঙ্গে বলব, গত তিনটা বার মানুষ কোনো ভোট দিতে পারেনি।...আল্লাহ যতটা অসন্তুষ্ট হলে কাউকে, কোনো শাসককে গদি থেকে সরিয়ে দেন, তা পরিপূর্ণভাবে আমার বোন শেখ হাসিনা করেছেন। তার জন্য আল্লাহর তরফ থেকে গজবের কারণেই তিনি তাঁর ক্ষমতা হারিয়েছেন। জুলাই আন্দোলন যারা করেছে, তাদের আমি আগামী হাজার বছর ধন্যবাদ দেব। কিন্তু তাদের পরবর্তী কাজগুলো ভালো হয়নি।’
অন্তর্বর্তী সরকার দেশকে বিভক্ত করে ফেলেছে বলেও অভিযোগ করেন কাদের সিদ্দিকী। তিনি বলেন, ‘নিবন্ধিত দল এখন ৪০-৫০টা, তাঁরা দুইটা-তিনটা দলের সঙ্গে বসেই আলোচনা করেন। সেটা যেমন নিরপেক্ষ হচ্ছে না, সার্বিকও হচ্ছে না। শেখ হাসিনার পতন হয়েছে, স্বাধীনতা বিলুপ্ত হয়নি। শেখ হাসিনার পতন হয়েছে বলে বঙ্গবন্ধু মুছে যাননি, মুক্তিযুদ্ধ হারিয়ে যায়নি। জয় বাংলা বলে যে দেশকে আমরা স্বাধীন করেছি, আপনার জয় বাংলা পছন্দ না হতে পারে, কিন্তু সেই জয় বাংলা বলার জন্য আপনি জেলখানায় নেবেন—ভাবীকালের ইতিহাসের কাছে এর কী জবাব দেবেন? জবাব নেই।’
১৩ নভেম্বর কার্যক্রম নিষিদ্ধ আওয়ামী লীগের ডাকা ‘লকডাউন’ কর্মসূচির সমালোচনা করে কাদের সিদ্দিকী বলেন, লকডাউন কোনো রাজনৈতিক ভাষা নয়।