জোহরের নামাজের শেষ সময় কখন

ইসলামে পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ হলো মুমিনের জীবনের প্রধান স্তম্ভ। প্রতিটি নামাজের নির্দিষ্ট সময় আছে, যা আল্লাহ ও তাঁর রাসুল (সা.) দ্বারা নির্ধারিত। আল্লাহ বলেন: “নামাজ মুমিনদের ওপর নির্দিষ্ট সময়ে ফরজ করা হয়েছে।” (সুরা নিসা, আয়াত: ১০৩)

সময়সীমার মধ্যে নামাজ আদায় করলে তা কবুল হয়, আর ইচ্ছাকৃতভাবে ছেড়ে দিলে তা হয় গুরুতর গুনাহ। তাই জোহরের নামাজের সময় বোঝা প্রতিটি মুসলমানের জন্য জরুরি।

জোহরের নামাজের সময়

শুরুর সময়: জোহরের সময় শুরু হয় সূর্য যখন মাথার ওপর থেকে পশ্চিম দিকে হেলে পড়ে (যাওয়ালের পর)।

শেষ সময়: জোহরের সময় শেষ হয় যখন কোনো বস্তুর ছায়া তার নিজের দৈর্ঘ্যের সমান বা দ্বিগুণ হয় (হানাফি মাজহাব অনুযায়ী দ্বিগুণ)। এটি সাধারণত আসরের সময় শুরুর আগপর্যন্ত। (সুনানে তিরমিজি, হাদিস: ১৪৯)

মৌলিক বিধান

আল্লাহ তাআলা বলেন, “সূর্যের ঢলে পড়া থেকে রাতের অন্ধকার পর্যন্ত নামাজ কায়েম করো এবং ফজরের কোরআন পাঠ করো।” (সুরা আল-ইসরা, আয়াত: ৭৮)

এই আয়াত স্পষ্টভাবে প্রমাণ করে যে, সূর্যের মধ্যগগন অতিক্রম করার পর নামাজ শুরু হয়। এটিই জোহরের সময়ের সূচনা।

আল্লাহর রাসুল (সা.) বলেছেন, “জোহরের সময় সূর্য হেলে পড়া থেকে শুরু হয় এবং একজন মানুষের ছায়া তার উচ্চতার সমান না হওয়া পর্যন্ত তা অব্যাহত থাকে।” (সহিহ মুসলিম, হাদিস: ৬১৩)

অন্য এক বর্ণনায় আছে, “জোহরের  সময় হলো, সূর্যের ঢলে পড়া থেকে আসরের সময় পর্যন্ত।” (সহিহ মুসলিম, হাদিস: ৬১২)

মাজহাবভিত্তিক পার্থক্য

জোহরের নামাজের শেষ সময় নিয়ে আলেমদের মধ্যে মতভেদ আছে।

১. হানাফি মাজহাব:  “জোহরের  নামাজের সময় শেষ হয় যখন ছায়া দ্বিগুণ হয়ে যায়।” (আল-হিদায়া, খণ্ড ১, পৃ. ৬৭, দারুল কুতুব আল-ইলমিয়্যা, বৈরুত, ২০০০)
অর্থাৎ, হানাফি মতে আসরের সময় একটু দেরিতে শুরু হয়, তাই জোহরের শেষ সময়ও দীর্ঘ হয়।

২. শাফেয়ি মাজহাব: ইমাম নাওয়াবি লিখেছেন, “জোহরের সময় শেষ হয় যখন ছায়া বস্তুর সমান হয়ে যায়।” (আল-মাজমু, খণ্ড ৩, পৃ. ২৭, দারুল ফিকর, বৈরুত)

এ ছাড়া মালিকি মাজহাব ও হাম্বলি মাজহাব মতেও “জোহরের শেষ সময় হলো, যখন বস্তুর ছায়া তার সমান হয়।” (আল-মুদাওয়ানা, খণ্ড ১, পৃ. ৭২, দারুল কুতুব আল-ইলমিয়্যা, বৈরুত; আল-মুগনি, খণ্ড ১, পৃ. ২৩২, মাকতাবাতুল কাহিরা, কায়রো)

সহজভাবে বোঝার উপায়

  • সূর্য মধ্যগগন থেকে পশ্চিমে হেলে পড়লে জোহর শুরু হয়।

  • যখন ছায়া বস্তুর সমান (শাফেয়ি, মালিকি, হাম্বলি মতে) বা দ্বিগুণ (হানাফি মতে) হয়, তখন জোহরের সময় শেষ হয়।

  • এরপরই শুরু হয় আসরের নামাজ।

জোহর দেরি করার বিধান

রাসুল (সা.) সাধারণত শুরুতেই নামাজ পড়তেন। তবে খুব গরমের দিনে তিনি জোহরের নামাজ কিছুটা দেরি করতেন। তিনি বলেন, “তীব্র গরম হলে জোহরের নামাজ ঠান্ডা হওয়ার পর আদায় করো, কেননা গরম হলো জাহান্নামের নিশ্বাস।” (সহিহ বুখারি, হাদিস: ৫৩৬; সহিহ মুসলিম, হাদিস: ৬১৬)

তবে আসরের সময় শুরু হওয়ার আগে জোহর আদায় করে নেওয়াই ফরজ। কেননা, জোহরের নামাজের শেষ সময় আসরের নামাজ শুরুর আগে পর্যন্ত। অতএব, মুসলিম নর–নারীর কর্তব্য হলো—সময়মতো জোহরের নামাজ আদায় করা এবং আল্লাহর সন্তুষ্টি অর্জন করা।