মানুষের জীবনে টিকে থাকার জন্য যা কিছু প্রয়োজন, তার অন্যতম মূল বিষয় হলো রিজিক। আমরা সাধারণত রিজিক বলতে শুধু খাবার বা টাকা-পয়সাকে বুঝি। কিন্তু ইসলামের দৃষ্টিতে রিজিক একটি বহুমাত্রিক ও গভীর ধারণা। রিজিক কেবল ভাত-কাপড় নয়; বরং জীবনের সবকিছু যা মানুষকে আল্লাহ দান করেন—তা-ই রিজিক।
রিজিক শব্দটি আরবি। মূল উচ্চারণ “রিযক”। এর অর্থ হলো:
দান, অনুগ্রহ
যা থেকে উপকৃত হওয়া যায়
টিকে থাকার উপকরণ
ইসলামি পরিভাষায়, রিজিক বলতে বোঝানো হয় আল্লাহর পক্ষ থেকে মানুষের জন্য নির্ধারিত সকল দান ও উপকরণ, যা তাকে দুনিয়া ও আখিরাতে কল্যাণে পৌঁছে দেয়।
কোরআনে বহু স্থানে রিজিকের কথা এসেছে। এর মধ্যে কয়েকটি হলো:
১. “পৃথিবীতে এমন কোনো প্রাণী নেই, যার রিজিক আল্লাহর ওপর নির্ভরশীল নয়।” (সুরা হুদ, আয়াত: ৬)
২. “আল্লাহ যাকে চান হিসাব ছাড়া রিজিক দান করেন।” (সুরা বাকারাহ, আয়াত: ২১২)
৩. “তোমরা আল্লাহর কাছে রিজিক চাও, তাঁরই ইবাদত কর এবং তাঁর প্রতিই কৃতজ্ঞ হও।” (সুরা আনকাবুত, আয়াত: ১৭)
এখান থেকে বোঝা যায়, রিজিকের মালিক একমাত্র আল্লাহ, আর মানুষ কেবল তাঁর দানভোগী।
আল্লাহর রাসুল (সা.) বলেছেন, “নিশ্চয়ই তোমাদের প্রত্যেকের রিজিক ও আয়ু মায়ের গর্ভে লেখা হয়ে যায়।” (সহিহ মুসলিম, হাদিস: ২৬৪৩)
অন্য এক হাদিসে তিনি বলেন, “হে মানুষ, তোমরা আল্লাহকে ভয় কর এবং রিজিক অর্জনে সুন্দর পথ অবলম্বন করো। কেননা কেউ তার কাছে নির্ধারিত রিজিকের বাইরে কিছু পেতে পারবে না।” (সুনান ইবনে মাজাহ, হাদিস: ২১৪৪)
ইসলামবেত্তাগণ রিজিককে কয়েকটি ভাগে ভাগ করেছেন:
১. ভৌত রিজিক: খাবার, পানীয়, পোশাক, অর্থ, বাসস্থান ইত্যাদি।
২. আধ্যাত্মিক রিজিক: ইমান, জ্ঞান, ইবাদতের তাওফিক, অন্তরের প্রশান্তি।
৩. সামাজিক রিজিক: সুস্থ পরিবার, ভালো বন্ধু, শান্তিপূর্ণ সমাজ।
৪. পরকালীন রিজিক: জান্নাত, আল্লাহর সান্নিধ্য, চিরস্থায়ী নেয়ামত।
অতএব, কেবল পেটের খাবার নয়, বরং জীবনের প্রতিটি কল্যাণকর দিকই রিজিক।
রিজিক নির্ধারিত: প্রত্যেক মানুষের রিজিক আল্লাহ আগে থেকেই লিখে দিয়েছেন।
কেউ রিজিক আটকাতে পারে না: যদি আল্লাহ দান করেন, কেউ তা আটকাতে পারে না।
রিজিক পরীক্ষা হতে পারে: কারও জন্য বেশি রিজিক পরীক্ষা, কারও জন্য কম রিজিক পরীক্ষা।
হালাল-হারাম পার্থক্য জরুরি: রিজিক নির্ধারিত হলেও তা অর্জনের পথ হতে হবে হালাল।
কিছু আমল রিজিক বৃদ্ধির কারণ হয়। যেমন—
আল্লাহকে ভয় করা (তাকওয়া): “যে আল্লাহকে ভয় করে, আল্লাহ তার জন্য মুক্তির পথ বের করে দেন এবং তাকে এমন জায়গা থেকে রিজিক দেন যা সে কল্পনাও করতে পারে না।” (সুরা তালাক, আয়াত: ২-৩)
সদকা করা: মহানবী (সা.) বলেছেন, “সদকা রিজিক বৃদ্ধি করে।” (মুসনাদ আহমদ, হাদিস: ২২৩৭৮)
কৃতজ্ঞতা প্রকাশ: “যদি তোমরা কৃতজ্ঞ হও, আমি অবশ্যই তোমাদের রিজিক বৃদ্ধি করব।” (সুরা ইবরাহিম, আয়াত: ৭)
রিজিকের উপলব্ধি
আজকের ভোগবাদী সমাজে রিজিককে আমরা কেবল অর্থ ও সম্পদের মধ্যে সীমাবদ্ধ করি। কিন্তু একজন সুস্থ দেহ, মনের প্রশান্তি, সময়মতো একটি পানির গ্লাস, কিংবা সন্তানের হাসি—সবই রিজিক। এজন্য রিজিককে শুধু ভোগের বিষয় মনে না করে কৃতজ্ঞতার দৃষ্টিতে দেখা জরুরি।