সনদের অনুমোদন অনুষ্ঠানে অংগ্রহণকারী ইসলামি পণ্ডিতদের একাংশ
সনদের অনুমোদন অনুষ্ঠানে অংগ্রহণকারী ইসলামি পণ্ডিতদের একাংশ

মক্কা আল-মুকাররমা সনদ ০১

ধর্মীয় সংহতির নৈতিক ভিত্তি

২০১৯ সালে রমজানে পবিত্র কাবা প্রাঙ্গণে ‘মক্কা আল-মুকাররমা সনদ’ সম্মেলন হয় মুসলিম ওয়ার্ল্ড লীগের উদ্যোগে। সেখানে ১৩৯টি দেশের প্রায় ১২০০ মুফতি ও ইসলামি পণ্ডিতগণ মক্কা আল-মুকাররমা সনদ স্বাক্ষর করেন। সনদের ধারা ২৯টি; যা ‘বর্তমান ও ভবিষ্যৎ প্রজন্মের শান্তি ও ঐক্যের সনদ’ স্বীকৃতি পেয়ে বাদশা ফয়সাল পুরস্কারে ভূষিত হয়েছে। মূল সনদটি আরবি থেকে অনুবাদ করেছেন মুহাম্মদ তাজাম্মুল হক। দুই পর্বের আজ প্রথম পর্ব।

পবিত্র কাবাঘর ঘিরে হারাম শরিফের প্রাঙ্গণে কাবার ছায়াতলে অনুষ্ঠিত ‘মক্কার সনদ সম্মেলনে’ ইসলামি উম্মাহর বিশিষ্ট আলেমরা উপস্থিত হয়েছেন, যাঁদের অগ্রভাগে রয়েছেন প্রধান মুফতিগণ। তাঁরা গভীরভাবে অনুধাবন করেন সেই মহান প্রতিধ্বনি ও সুদূরপ্রসারী প্রভাবের, যা বহন করে ‘মদিনা সনদ’।

মহানবী (সা.) চৌদ্দ শতাব্দী আগে এটি প্রণয়ন করেছিলেন বিভিন্ন ধর্ম, সংস্কৃতি ও বর্ণের অধিকারী উপাদানগুলোর সঙ্গে তাঁর আলোকিত নগরী মদিনায়। সেটা ছিল একটি সাংবিধানিক চুক্তি, যা মানবসমাজের উপাদানগুলোর মধ্যে সহাবস্থানের মূল্যবোধ ও শান্তি প্রতিষ্ঠার ক্ষেত্রে এক অনুকরণীয় দলিল হিসেবে বিবেচিত হয়।

আল-মক্কা আল-মুকাররমা সনদ হলো একটি ইসলামি দান, যার আলোকশিখা সেই অমর সনদ থেকে নেওয়া হয়েছে। এটি ইসলামি উম্মাহর বিশিষ্ট আলেমদের পক্ষ থেকে প্রকাশিত হয়েছে, যাঁরা তাঁদের কিবলাতল থেকে পুরো পৃথিবীকে পথপ্রদর্শন করছেন। এই সনদের ঐতিহ্য আজও চলমান—পঞ্চদশ হিজরি শতাব্দী ও একবিংশ খ্রিষ্টাব্দ পর্যন্ত।

এই সনদ প্রকাশিত হয়েছে প্রাচীন ঘরের প্রাঙ্গণ থেকে, যা মুসলিমদের হৃদয়ে কেন্দ্রবিন্দু হিসেবে বিবেচিত। এটি ইসলামি বিশ্বের আধ্যাত্মিক নেতৃত্বের গুরুত্ব পুনর্ব্যক্ত করে, যেখানে কিবলা এবং মুসলিমরা অবস্থিত।

এই সনদের প্রণয়ন এমন সময় ও স্থানে অনুষ্ঠিত হয় যা ইতিহাসের গৌরবময়। তাঁরা উপস্থিত ছিলেন পবিত্র ঘরের প্রাঙ্গণে, রমজানের শেষ দশকে এবং এ সময় তাঁরা জোর দিয়ে ঘোষণা করেন যে: তারা সভ্যতার সঙ্গে আন্তসম্পর্কযুক্ত এই বিশ্বের অংশ।

এটি পরিষ্কারভাবে প্রদর্শন করে যে এই সনদ ইসলামের এবং মুসলিমদের জন্য এক উজ্জ্বল আলোক উৎস, যা মক্কা শরিফের পবিত্র প্রাঙ্গণ থেকে সমগ্র বিশ্বের দিকে ছড়িয়ে পড়ে। পাশাপাশি এটি তাদের রাজনৈতিক নেতৃত্বের সম্মান এবং ইসলাম, মুসলিম ও মানবতার জন্য তাদের মহান সেবার স্বীকৃতি প্রদান করে।

যখন মুসলিমরা এই মক্কার সনদ প্রকাশ করেন, তাঁরা নিজেদের ধর্মীয় কর্তৃপক্ষের প্রতিনিধি হিসেবে উপস্থাপন করেন। এই সনদের প্রণয়ন এমন সময় ও স্থানে অনুষ্ঠিত হয় যা ইতিহাসের গৌরবময়। তাঁরা উপস্থিত ছিলেন পবিত্র ঘরের প্রাঙ্গণে, রমজানের শেষ দশকে এবং এ সময় তাঁরা জোর দিয়ে ঘোষণা করেন যে: তারা সভ্যতার সঙ্গে আন্তসম্পর্কযুক্ত এই বিশ্বের অংশ।

তাদের লক্ষ্য হলো: মানবজাতির কল্যাণ অর্জন করা, মানবিক ও নৈতিক মূল্যবোধকে উন্নীত করা, ভালোবাসা ও মানবিক সম্পর্কের সেতু নির্মাণ, অন্যায়, সভ্যতাগত সংঘাত এবং ঘৃণার যেকোনো কার্যকলাপ প্রতিরোধ করা।

এ ছাড়া সম্মেলনের অংশগ্রহণকারীরা জোর দিয়ে বলেন যে এই ঐতিহাসিক সনদ আগের শিক্ষা ও নিম্নলিখিত নীতিমালা অন্তর্ভুক্ত করে।

 ১. মানুষ তার গঠনগত ভিন্নতার পরও এক মূল থেকেই উদ্ভূত এবং তারা তাদের মানবীয় মর্যাদায় সমান। আল্লাহ তাআলা বলেছেন: ‘হে মানুষ! তোমরা তোমাদের প্রভুকে ভয় করো, যিনি তোমাদের এক প্রাণ থেকে সৃষ্টি করেছেন এবং তা থেকে তার সঙ্গিনী সৃষ্টি করেছেন এবং তাদের উভয়ের থেকে বহু পুরুষ ও নারী ছড়িয়ে দিয়েছেন। আর আল্লাহকে ভয় করো, যাঁর নামে তোমরা একে অপরের কাছে প্রার্থনা করো এবং আত্মীয়তার সম্পর্ককে অবহেলা করো না। নিশ্চয়ই আল্লাহ তোমাদের ওপর সদা তত্ত্বাবধানকারী।’ (সুরা নিসা, আয়াত: ১)

এবং আল্লাহর প্রদত্ত সম্মান তাদের সবাইকে অন্তর্ভুক্ত করেছে । আল্লাহ তাআলা বলেছেন, ‘আমি অবশ্যই আদম সন্তানদের মর্যাদা দান করেছি, তাদের স্থলে ও সমুদ্রে বহন করেছি, তাদের উত্তম জিনিস হতে রিজিক দিয়েছি এবং আমি তাদের আমার সৃষ্ট বহু কিছুর ওপর স্পষ্টভাবে শ্রেষ্ঠত্ব দিয়েছি।’ (সুরা ইসরা, আয়াত: ৭০)

২. জাতিগত কথাবার্তা ও স্লোগান পরিত্যাগ করা। সেই জঘন্য শ্রেষ্ঠত্ববাদী দাবির নিন্দা করা—যা কৃত্রিম শ্রেষ্ঠত্বের ভ্রান্ত ধারণাকে অলংকৃত করে। মানুষের মধ্যে সর্বাধিক সম্মানিত সেই ব্যক্তি, যে আল্লাহর নিকট সর্বাধিক পরহেজগার।

আল্লাহ তাআলা বলেন, ‘হে মানুষ! আমি তোমাদের পুরুষ ও নারী থেকে সৃষ্টি করেছি এবং তোমাদের বিভিন্ন জাতি ও গোত্রে বিভক্ত করেছি, যাতে তোমরা একে অপরকে চেনো। নিশ্চয়ই আল্লাহর নিকট তোমাদের মধ্যে সর্বাধিক সম্মানিত সেই ব্যক্তি, যে সর্বাধিক পরহেজগার। নিশ্চয়ই আল্লাহ সর্বজ্ঞ, সব বিষয়ে অবহিত।’ (সুরা হুজরাত, আয়াত: ১৩)

তদ্রূপ, মানুষের মধ্যে উত্তম সেই ব্যক্তি, যে মানুষের জন্য সর্বাধিক উপকারী। রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, ‘সর্বোত্তম মানুষ সেই, যে মানুষের জন্য সর্বাধিক উপকারী।’ (আল-মুজাম আত-তাবারানি)

আর যদি আপনার প্রতিপালক ইচ্ছা করতেন, তবে অবশ্যই তিনি মানুষকে একটিমাত্র উম্মত করে দিতেন। কিন্তু তারা সর্বদা ভিন্নমতাবলম্বী হয়েই থাকবে।
সুরা হুদ, আয়াত: ১১৮

৩. জাতিগুলোর মধ্যে নিহিত বিশ্বাস, সংস্কৃতি, স্বভাব এবং চিন্তাধারার ভিন্নতা আল্লাহর উচ্চ হিকমতের প্রবিধান দ্বারা নির্ধারিত। পৃথিবীর এই অমোঘ নীতি স্বীকার করা এবং বুদ্ধি ও প্রজ্ঞার মাধ্যমে এমনভাবে আচরণ করা, যা ঐক্য মানবিক প্রশান্তি দিকে নিয়ে যায়—এটি এর বিরোধিতা বা সংঘাতের চেয়ে শ্রেয়।

আল্লাহ তাআলা বলেন, ‘আর যদি আপনার প্রতিপালক ইচ্ছা করতেন, তবে অবশ্যই তিনি মানুষকে একটিমাত্র উম্মত করে দিতেন। কিন্তু তারা সর্বদা ভিন্নমতাবলম্বী হয়েই থাকবে।’ (সুরা হুদ, আয়াত: ১১৮)

আর যে ব্যক্তি সত্যের দিকে পরিচালিত হয়, তার দায়িত্ব এটি মানুষের সামনে স্পষ্টভাবে তুলে ধরা।

৪. মানবসমাজে ধর্মীয় ও সাংস্কৃতিক বৈচিত্র্য কোনোভাবেই সংঘাত বা বিরোধের কারণ হতে পারে না; বরং এটি এক গঠনমূলক ও সভ্য ইতিবাচক অংশীদারত্ব গড়ে তোলার আহ্বান জানায়। এই বৈচিত্র্য হওয়া উচিত পারস্পরিক সংলাপ, বোঝাপড়া ও সহযোগিতার সেতু—যা সবার কল্যাণে নিবেদিত থাকে।

এটি মানুষকে মানবসেবায় ও মানবকল্যাণে প্রতিযোগিতা করতে, পারস্পরিক সম্প্রীতি ও অভিন্ন মূল্যবোধ অন্বেষণ করে তা কাজে লাগাতে একটি ন্যায়ভিত্তিক, মূল্যবোধসম্পন্ন, সর্বজনীন নাগরিক রাষ্ট্র নির্মাণে উৎসাহিত করে। এই রাষ্ট্র বৈধ স্বাধীনতা, ন্যায়, পারস্পরিক শ্রদ্ধা ও সর্বজনীন কল্যাণচেতনার ভিত্তির ওপর প্রতিষ্ঠিত হবে।

৫. আসমানি ধর্মের মূল উৎস এক ও অভিন্ন, আর তা হলো আল্লাহর প্রতি ইমান, যিনি একক ও অতুলনীয়, তাঁর কোনো অংশীদার নেই। তবে এসব ধর্মের আইনব্যবস্থা (শরিয়ত) ও পদ্ধতিগত অনুশীলনে (মানহাজ) বৈচিত্র্য রয়েছে। ফলে দ্বীন (ধর্ম) ও তার অনুশীলন—এই দুটিকে একসঙ্গে গুলিয়ে ফেলা কখনোই সমীচীন নয়।

৬. সভ্যতার সংলাপই পারস্পরিক বোঝাপড়া, অভিন্ন মূল্যবোধ উপলব্ধি, সহাবস্থানের প্রতিবন্ধকতা দূরীকরণ এবং এ-সংক্রান্ত নানা সংকট উত্তরণের সর্বোত্তম পথ। এ ধরনের সংলাপ অন্যের অস্তিত্ব ও তার বৈধ অধিকারের প্রতি সক্রিয় স্বীকৃতি প্রদান করে; ন্যায়বিচার ও পারস্পরিক বোঝাপড়া প্রতিষ্ঠা করে, যা পরস্পরের বৈশিষ্ট্য ও বিশেষত্বকে সম্মানিত করে।

এর মাধ্যমে ইতিহাসের শত্রুতা, ঘৃণার অন্ধ তত্ত্ব, ষড়যন্ত্রমূলক ধারণা এবং কিছু ব্যক্তির বিচ্যুত আচরণের কারণে সমগ্র সম্প্রদায়কে দোষারোপ করার ভুল মানসিকতা থেকে মুক্ত হওয়া যায়।

এটিও স্পষ্ট করা জরুরি যে ইতিহাস তার নিজস্ব ব্যক্তিদের দায়িত্ব, কেউ অন্যের অপরাধের ভার বহন করবে না; যেমন আল্লাহ তাআলা বলেছেন: ‘ওরা এক জাতি, যারা অতীত হয়েছে; তাদের যা অর্জন, তা তাদের জন্য; আর তোমাদের যা অর্জন, তা তোমাদের জন্য; এবং তোমরা তাদের কাজের জন্য জবাবদিহি করবে না।’ (সুরা আল-বাকারা, আয়াত ১৩৪)

আর আল্লাহ আরও বলেন: ‘(ফিরআউন বলল:) অতীত জাতিগুলোর কী হাল হয়েছে?’ তিনি (মুসা আ.) বললেন, ‘তাদের জ্ঞান আমার প্রভুর নিকটে এক গ্রন্থে সংরক্ষিত; আমার প্রভু কখনো ভুল করেন না, কখনো ভুলে যান না।’ (সুরা ত্বা-হা, আয়াত: ৫১-৫২)

মক্কা আল-মুকাররমা সনদের ইংরেজি সংস্করণের প্রচ্ছদ

৭. ধর্ম ও দর্শন তাদের অনুসারীদের ভুল কর্মের দায়মুক্ত। তা কখনোই তাদের অনুসারীদের অন্যায় বা বিপজ্জনক কর্মকাণ্ডের জন্য দায়ী নয়। এসব কাজ শুধু সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিদেরই প্রতিনিধিত্ব করে, ধর্মের নয়।

সব আসমানি শরিয়ত ও নৈতিক দর্শনের মূল আহ্বান একটিই—একমাত্র সৃষ্টিকর্তার উপাসনা, তাঁর সন্তুষ্টির জন্য তাঁর সৃষ্টির উপকার করা, মানব মর্যাদা রক্ষা করা, মানবিক মূল্যবোধকে শক্তিশালী করা এবং পারিবারিক ও সামাজিক সম্পর্কের ইতিবাচক বন্ধন সংরক্ষণ করা। মহানবী মুহাম্মদ (সা.) বলেছেন, ‘আমাকে উত্তম চরিত্রের পূর্ণতা সাধনের জন্য প্রেরণ করা হয়েছে।’ (মুসনাদে আহমদ)

৮. মানব ও সভ্যতার ধ্বংস রোধে পারস্পরিক সহযোগিতা। মানবসভ্যতার ধ্বংসযজ্ঞ থামানো ও মানবকল্যাণে কাজ করার জন্য কার্যকর আন্তর্জাতিক সহযোগিতা ও মানবিক জোট গড়ে তোলা অপরিহার্য। এই সহযোগিতা শুধু তাত্ত্বিক বা স্লোগানভিত্তিক নয়; বরং এটি বাস্তব কর্মে রূপান্তরিত হওয়া উচিত, যাতে সভ্যতার বিকৃতি ও ভারসাম্যহীনতা দূর করা যায়। কারণ, সন্ত্রাসবাদ আসলে এই সভ্যতাগত বিপর্যয়েরই একটি শাখা—এটি মানবতার শত্রু ও সভ্যতার অবক্ষয়ের ফলাফল।

৯. ঘৃণা ছড়ানো, সহিংসতা ও সন্ত্রাস উসকে দেওয়া এবং সভ্যতাগত সংঘাত প্ররোচিতকারীদের বিরুদ্ধে কার্যকর ও কঠোর আইন প্রণয়ন করা। এমন আইন ধর্মীয় ও জাতিগত দ্বন্দ্বের বিস্তার কমাতে সক্ষম।

১০. মুসলিমরা মানবসভ্যতাকে একটি অনন্য ও ন্যায়নিষ্ঠ অভিজ্ঞতার মাধ্যমে সমৃদ্ধ করেছে। আজও তারা নৈতিক, সামাজিক ও আন্তসম্পর্কগত সংকটে জর্জরিত মানবজাতিকে বহু ইতিবাচক অবদান দিতে সক্ষম—বিশেষত সেই মূল্যবোধহীনতার যুগে, যা বিশ্বায়নের নেতিবাচক প্রভাবের ফলে সৃষ্টি হয়েছে।

ধর্মের আইনব্যবস্থা (শরিয়ত) ও পদ্ধতিগত অনুশীলনে (মানহাজ) বৈচিত্র্য রয়েছে। ফলে দ্বীন (ধর্ম) ও তার অনুশীলন—এই দুটিকে একসঙ্গে গুলিয়ে ফেলা কখনোই সমীচীন নয়।

১১. সন্ত্রাস, অন্যায় ও নিপীড়নের বিরুদ্ধে সংগ্রাম করা, জনগণের সম্পদ শোষণ ও মানবাধিকারের লঙ্ঘন প্রত্যাখ্যান করা সবার দায়িত্ব। এতে কোনো পক্ষপাত বা ছাড় দেওয়া বৈধ নয়; কারণ ন্যায় ও নৈতিক মূল্যবোধ ভাগে ভাগ করা যায় না। অন্যায় দূর করা, ন্যায়সংগত দাবিগুলোকে সমর্থন করা এবং সেগুলোর পক্ষে বৈশ্বিক জনমত গঠন করে ন্যায় প্রতিষ্ঠা করা—এটি একটি নৈতিক দায়িত্ব, যা উপেক্ষা করা বা বিস্মৃত হওয়া উচিত নয়।

১২. যে প্রকৃতিতে আমরা বাস করছি, তা মহান স্রষ্টার পক্ষ থেকে মানবজাতির জন্য এক অনন্য দান। আল্লাহ মানুষকে আকাশ ও পৃথিবীর সবকিছু তার কল্যাণে নিয়োজিত করেছেন। তাই প্রকৃতির সম্পদ ধ্বংস করা, অপচয় করা কিংবা দূষণ ঘটানো—এসব ভবিষ্যৎ প্রজন্মের অধিকারের ওপর আঘাত ও অন্যায় লঙ্ঘনের শামিল।

১৩. সভ্যতার সংঘাতের তত্ত্ব, পরস্পরের মুখোমুখি সংঘর্ষের আহ্বান, কিংবা অন্যদের প্রতি ভয় ও সন্দেহ ছড়ানো—এসবই বর্ণবাদী প্রবণতা, সাংস্কৃতিক আধিপত্য এবং আত্মকেন্দ্রিক বিচ্ছিন্নতার প্রকাশ। এগুলো প্রকৃতপক্ষে একধরনের মানসিক বিপর্যয়, চিন্তার দারিদ্র্য অথবা সভ্যতা গঠনের সক্ষমতা-সংকটের প্রতিফলন। ফলে এ ধরনের প্রবণতা মানুষকে সংঘাত ও বিরোধের দিকে ঠেলে দেয়, যা মানবতার ঐক্য ও পারস্পরিক সহাবস্থানকে ব্যাহত করে।

১৪. সংঘাত ও মুখোমুখি অবস্থান ঘৃণার শিকড় গেড়ে দেয় এবং জাতি ও জনগোষ্ঠীর মধ্যে বৈরিতার বীজ বপন করে। এটি যৌথ সহাবস্থান ও ইতিবাচক জাতীয় ঐক্য প্রতিষ্ঠার পথে বড় বাধা হয়ে দাঁড়ায়—বিশেষত সেসব দেশে, যেখানে ধর্মীয় ও জাতিগত বৈচিত্র্য বিদ্যমান। তদুপরি, এমন সংঘাত ও বিরোধই সহিংসতা ও সন্ত্রাসের জন্মদানের অন্যতম মূল উপাদান হিসেবে কাজ করে।

ড. মুহাম্মদ তাজাম্মুল হক: অধ্যাপক, ইসলামিক স্টাডিজ বিভাগ, জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়