ওমরাহ—ইসলামের একটি পবিত্র ইবাদত, যা মুসলিমদের জীবনে আধ্যাত্মিক শান্তি এবং আল্লাহর নৈকট্য লাভের সুযোগ করে দেয়। বাংলাদেশ থেকে প্রতি বছর লাখো মানুষ এই পবিত্র যাত্রায় অংশ নেন।
কিন্তু সফল ওমরাহর জন্য শুধু নিয়তই যথেষ্ট নয়, দরকার সঠিক প্রস্তুতি। অপর্যাপ্ত প্রস্তুতির কারণে অনেকে সফরে বিড়ম্বনায় পড়েন বা ইবাদতের পূর্ণতা পান না।
এই লেখায় আমরা ধাপে ধাপে ওমরাহ প্রস্তুতির গাইডলাইন তুলে ধরব, যাতে আপনার সফর হয় নির্বিঘ্ন এবং আধ্যাত্মিকভাবে সমৃদ্ধ। ২০২৫ সালের আপডেটেড তথ্য অনুসারে সৌদি আরবের ভিসা নিয়মাবলিতে কিছু পরিবর্তন এসেছে, যা বিবেচনায় রাখা জরুরি।
ওমরাহ সফরের জন্য সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ দলিল হলো পাসপোর্ট। আপনার পাসপোর্টের মেয়াদ কমপক্ষে ৬ মাস থাকতে হবে যাত্রার তারিখ থেকে। যদি মেয়াদ শেষ হয়ে যায়, তাহলে দ্রুত রিনিউ করুন। পাসপোর্ট না থাকলে ঘরে বসে অনলাইনে ই-পাসপোর্টের জন্য আবেদন করুন: www.epassport.gov.bd সাইটে গিয়ে।
ভিসার জন্য, বাংলাদেশি নাগরিকরা সৌদি আরবের টুরিস্ট ই-ভিসা দিয়ে ওমরাহ করতে পারেন, যা অনলাইনে অ্যাপ্লাই করা যায়। প্রয়োজনীয় ডকুমেন্টস: বৈধ পাসপোর্ট, দুই কপি পাসপোর্ট সাইজের ছবি (সাদা ব্যাকগ্রাউন্ড), নারীদের জন্য মাহরামের সঙ্গে সম্পর্কের প্রমাণপত্র (যেমন বিবাহ সার্টিফিকেট বা জন্ম সার্টিফিকেট) এবং বায়োমেট্রিক রেজিস্ট্রেশন।
বায়োমেট্রিকের জন্য অ্যান্ড্রয়েড ফোন দরকার হয়।
বর্তমান নিয়ম অনুসারে ৯০ দিনের জন্য ভিসা দেওয়া হয় এবং ভিসা হওয়ার ৩০ দিনের মধ্যে সৌদি আরবে এন্ট্রি করা বাধ্যতামূলক। নুসুক (Nusuk) অ্যাপের মাধ্যমেই ভিসা অ্যাপ্লাই করা যাবে। যদি এজেন্সির মাধ্যমে যান, তারা এসব করে দেবে।
যাওয়া-আসার ফ্লাইট নিশ্চিত করুন—যেমন ঢাকা থেকে জেদ্দা নাকি মদিনা। ফ্লাইট সরাসরি হলে ভালো, তরুণদের জন্য ট্রানজিট হলেও সমস্যা হয় না। কিন্তু বৃদ্ধ বা শিশু সঙ্গে থাকলে ট্রানজিট ফ্লাইট এড়ানো ভালো।
বাংলাদেশ থেকে অধিকাংশ যাত্রী এজেন্সির মাধ্যমে ওমরাহ করেন, কারণ এতে ভিসা, টিকিট, হোটেল বুকিং এবং খাবারের ব্যবস্থা সহজ হয়। নির্ভরযোগ্য এজেন্সি বেছে নিন। খোঁজ নিন তারা হজ্জ ও ওমরাহ মন্ত্রণালয়ের অনুমোদিত কি না। অভিজ্ঞ মোয়াল্লিম বা আগের যাত্রীদের সঙ্গে কথা বলে যাচাই করুন। চুক্তি সই করার সময় যাবতীয় তথ্য লিখিতভাবে নিন এবং অর্থ পরিশোদের রসিদ রাখুন।
যদি একা যান, তাহলে নুসুক (Nusuk) অ্যাপ দিয়ে হোটেল, ট্রান্সপোর্ট এবং পারমিট বুক করুন। কিন্তু নতুন যাত্রীদের জন্য এটা কষ্টসাধ্য হতে পারে, কারণ ভাষা, নিয়মাবলি এবং লোকাল ট্রান্সপোর্টের সমস্যায় পড়তে পারেন। দলবদ্ধভাবে গেলে খরচ কম হয় এবং সুবিধা বেশি পাওয়া যায়।
যাওয়া-আসার ফ্লাইট নিশ্চিত করুন—যেমন ঢাকা থেকে জেদ্দা নাকি মদিনা। ফ্লাইট সরাসরি হলে ভালো, তরুণদের জন্য ট্রানজিট হলেও সমস্যা হয় না। কিন্তু বৃদ্ধ বা শিশু সঙ্গে থাকলে ট্রানজিট ফ্লাইট এড়ানো ভালো, কেননা, তাতে দীর্ঘ যাত্রায় তারা বিরক্ত হয়ে পড়তে পারেন।
হোটেল বুকিংয়ে মসজিদুল হারাম বা মসজিদে নববীর কাছাকাছি লোকেশন বেছে নেওয়া ভালো। একটু দূরে হলেও যোগাযোগের সুবিধার দিকে লক্ষ রাখতে হবে।
তবে যদি সৌদি প্রবাসী কাউকে দিয়ে হোটেল বুক করে থাকেন, তাহলে হোটেলটি সৌদি সরকার কর্তৃক ওমরাহ যাত্রীদের জন্য অনুমোদিত কি না, সেটা যাচাই করে নিন। কারণ ইদানীং সরকার পুরো মক্কা জুড়ে পুনর্নির্মাণের কাজ করছে বলে অনেক হোটেল উঠিয়ে দেওয়া হচ্ছে।
রুম শেয়ারিং (২ নাকি ৪ জন), খাবার (দিনে ২ বেলা নাকি ৩ বেলা) এবং জিয়ারতের তালিকা (যেমন উহুদ, তায়েফ) জেনে নিন।
ইহরামের জন্য রুট দেখুন। ঢাকা থেকে জেদ্দা হয়ে মক্কা গেলে ঢাকা বিমানবন্দরেই ইহরাম বাঁধুন, যদি সরাসরি ফ্লাইট হয়। ট্রানজিট হলে প্রথম যে বিমানবন্দরে নামবেন, সেখানেও ইহরাম পরা যেতে পারে। মদিনায় আগে যাওয়া হলে মদিনা থেকে মক্কা যাওয়ার পথে ‘মিকাত’ পাবেন, জুল-হুলায়ফা’ সেখান থেকেই ইহরাম বাঁধতে পারবেন।
ইহরামের জন্য রুট দেখুন। ঢাকা থেকে জেদ্দা হয়ে মক্কা গেলে ঢাকা বিমানবন্দরেই ইহরাম বাঁধুন, যদি সরাসরি ফ্লাইট হয়। ট্রানজিট হলে প্রথম যে বিমানবন্দরে নামবেন, সেখানেও ইহরাম পরা যেতে পারে।
যোগ্য সফরসঙ্গী নির্বাচন করুন। পরহেজগার আলেম যিনি একাধিকবার ওমরাহ করেছেন, এমন সঙ্গী হলে ভালো হয়। প্রথম ওমরাহ তার সঙ্গে করবেন। ওমরাহর বিধান (তাওয়াফ, সাঈ, ইহরামের নিষেধাজ্ঞা) শিখতে সরাসরি প্রশিক্ষণ নিন, শুধু বই পড়ে নয়।
তবে প্রয়োজনীয় পড়াশোনার জন্য ওমরাহর গুরুত্ব, নিয়মকানুন এবং সৌদির লোকাল রুলস এসব জানা যাবে এমন বই-পুস্তক খুঁজে পাঠ করতে পারেন। প্রথম আলোর ওমরাহ গাইড আপনি ফ্রি ডাউনলোড করতে পারবেন।
ওমরাহ সফরে দীর্ঘ সময় হাঁটতে হবে এবং এখন ভিড়ও পাবেন অনেক বেশি। তাই স্বাস্থ্যের যত্ন নিন। চিকিৎসকের সঙ্গে পরামর্শ করে প্রয়োজনীয় ওষুধ (যেমন পেইনকিলার, অ্যান্টিবায়োটিক) নিয়ে নিন। সৌদিতে প্রেসক্রিপশন ছাড়া ওষুধ পাওয়া কঠিন। অতিরিক্ত কয়েক দিনের ওষুধ নিয়ে যান।
দিনে ৩-৪ লিটার পানি পান করে হাইড্রেটেড থাকুন, হালকা খাবার খান, আরামদায়ক জুতা পরুন এবং ফার্স্ট-এইড কিট রাখুন। কোভিড বা অন্যান্য ভ্যাকসিনেশন চেক করুন—সৌদিতে আপনার সফরের সময় মেনিনজাইটিস বা অন্য কোনো ভ্যাকসিন বাধ্যতামূলক আছে কি না খবর রাখুন।
প্যাকিং: ইহরামের কাপড়, প্রয়োজনীয় টয়লেট্রিজ, পাওয়ার ব্যাঙ্ক নিন।
ভাষা: পারলে প্রয়োজনীয় কিছু আরবি ফ্রেজ শিখুন, বিপদে কাজে লাগবে।
বেস্ট টাইম: ইশার পর পর বা সকালের নাস্তার পর তুলনামূলক ভিড় একটু কম থাকে, তখন তাওয়াফ করুন।
সঠিক প্রস্তুতি নিয়ে ওমরাহ সফর শুধু ইবাদত নয়, জীবনের একটি অমূল্য অভিজ্ঞতা হয়ে উঠবে। আল্লাহর কাছে দোয়া করুন যেন আপনার সফর হয় মকবুল। যদি আরও বিস্তারিত জানতে চান, অফিসিয়াল সাইটস চেক করুন বা অভিজ্ঞদের সঙ্গে কথা বলুন।