মসজিদে গামামা, মদিনা
মসজিদে গামামা, মদিনা

মসজিদে গামামা:

নবী (সা.) যুগের ঐতিহাসিক ইবাদতগাহ

নবীযুগের ঐতিহাসিক ও ধর্মীয় নিদর্শনগুলোর মধ্যে মসজিদে গামামা অন্যতম। এই মসজিদের নামকরণের পেছনে রয়েছে এক ঐতিহাসিক ঘটনা।

আরবি শব্দ ‘গামামাহ’ অর্থ মেঘমালা। মদিনায় একবার দীর্ঘ সময় ধরে বৃষ্টি হচ্ছিল না। তখন মহানবী মুহাম্মদ (সা.) এই স্থানে খোলা চত্বরে বৃষ্টি প্রার্থনা করে নামাজ আদায় করেন, যাকে ইসলামে বলে ‘ইসতিসকা নামাজ’। নামাজের পর প্রচুর বৃষ্টিপাত হয়। এই অলৌকিক ঘটনার স্মরণে এই স্থানে একটি মসজিদ নির্মাণ করা হয়, যার নামকরণ হয় মসজিদে গামামা।

মসজিদে গামামা মদিনার প্রথম ঈদের জামাত অনুষ্ঠিত হওয়ার স্থান হিসেবে পরিচিত। মহানবী (সা.) জীবনের শেষ দিকেও এই মসজিদের জায়গায় ঈদের নামাজ আদায় করতেন। এই মসজিদ প্রাঙ্গণে তিনি হাবশার বাদশাহ নাজ্জাশির জানাজা নামাজ পড়েন। বাদশাহ নাজ্জাশিকে মহানবী (সা.) ইসলামের দাওয়াত দিয়ে চিঠি পাঠিয়েছিলেন। চিঠি পেয়ে নাজ্জাশি ইসলাম গ্রহণ করেন।

মসজিদে গামামা, মদিনা

মসজিদে গামামা মদিনার একটি স্থাপত্য সৌন্দর্যের নিদর্শন বটে। মসজিদটি পূর্ব-পশ্চিমে দৈর্ঘ্যে সাড়ে ৩২ মিটার এবং প্রস্থে সাড়ে ২৩ মিটার। মসজিদের মোট আয়তন ৭৬৩.৭ বর্গমিটার। মসজিদের উচ্চতা ১২ মিটার এবং প্রাচীরের পুরুত্ব ১.৫ মিটার। মসজিদের ছাদে একটি বড় গম্বুজ, উত্তর দিকে ছোট ছোট পাঁচটি গম্বুজ রয়েছে। এ ছাড়া প্রবেশদ্বারে রয়েছে দুটি লোহার গম্বুজ। মসজিদের ভেতরে পূর্ব দিকে পাথর দিয়ে সাজানো একটি ছোট মিনার রয়েছে, যা মসজিদের সৌন্দর্য আরও বৃদ্ধি করেছে।

বর্তমানে মসজিদে গামামার অবস্থান মসজিদে নববির দক্ষিণ-পশ্চিম কোণে। মসজিদে নববির ৬ নম্বর গেট থেকে বের হলেই সামনে পড়বে মসজিদে গামামা। সৌদি সরকার ওসমানি ইমারতের স্থাপত্য শৈলী বহাল রেখে মসজিদটির সংস্কার করেছেন। মসজিদটি মদিনা আওকাফ মন্ত্রণালয়ের তত্ত্বাবধানে পরিচালিত হয়।

মসজিদে গামামা শুধু একটি ইবাদতের স্থানই নয়, বরং এটি ইসলামি ইতিহাসের এক অলৌকিক ঘটনার সাক্ষী। এই মসজিদের সঙ্গে জড়িয়ে আছে মহানবী হজরত মুহাম্মদ (সা.)-এর স্মৃতি এবং তাঁর অসিয়তের সাক্ষ্য। এই মসজিদে নামাজ আদায় করার মাধ্যমে মুসলমানরা শুধু ইবাদতই করে না, বরং তারা মহানবী (সা.)-এর সান্নিধ্য ও আশীর্বাদ লাভ করে।