ইসলামে তাহাজ্জুদ নামাজ এমন এক ইবাদত, যা আল্লাহর নিকটত্ব লাভের বিশেষ মাধ্যম। তাহাজ্জুদ নামাজ ফরজ নয়, তবে আল্লাহর প্রিয় বান্দারা নিয়মিত এই নামাজ আদায় করতেন।
তাহাজ্জুদ এমন এক সময়ের নামাজ, যখন দুনিয়া থাকে নিস্তব্ধ, আর মুমিন আল্লাহর সঙ্গে একান্তে কথা বলেন। এই নামাজের সময়, ফজিলত ও আদব কোরআন ও হাদিসে বিস্তারিতভাবে বর্ণিত হয়েছে।
“তাহাজ্জুদ” শব্দটি এসেছে আরবি “হুজুদ” মূল থেকে, যার অর্থ ঘুম থেকে জেগে ওঠা। অর্থাৎ, তাহাজ্জুদ নামাজ হলো সেই নামাজ, যা মানুষ ঘুমানোর পর আল্লাহর ইবাদতের জন্য জেগে উঠে পড়ে।
তাদের পার্শ্ব বিছানা থেকে বিচ্ছিন্ন থাকে, তারা তাদের প্রতিপালককে ভয় ও আশা নিয়ে ডাকে।সুরা সাজদা, আয়াত: ১৬
আল্লাহ তাআলা বলেন, “রাতের একাংশে জেগে তোমার জন্য বিশেষ ইবাদত করো; এতে তোমার প্রভু তোমাকে প্রশংসিত এক স্থানে (মাকাম মাহমুদ) প্রতিষ্ঠিত করবেন।” (সুরা ইসরা, আয়াত: ৭৯)
আরেক স্থানে বলেন, “তাদের পার্শ্ব বিছানা থেকে বিচ্ছিন্ন থাকে, তারা তাদের প্রতিপালককে ভয় ও আশা নিয়ে ডাকে।” (সুরা সাজদা, আয়াত: ১৬)
ইবনে কাসির এ আয়াতের তাফসিরে বলেন, এখানে “বিছানা থেকে বিচ্ছিন্ন থাকা” দ্বারা বোঝানো হয়েছে—রাতের গভীরে ঘুম ত্যাগ করে নামাজ পড়া। (তাফসিরুল কুরআনিল আজিম, ৩/৪৭৮, দারুস সালাম, ১৯৯৯)
তাহাজ্জুদের সময় ইশার নামাজের পর থেকে ফজরের আজান পর্যন্ত। তবে সবচেয়ে ফজিলতপূর্ণ সময় হলো রাতের শেষ তৃতীয় অংশ।
রাসুল (সা.) বলেছেন, “আমাদের প্রতিপালক প্রতি রাতে যখন রাতের শেষ তৃতীয়াংশ বাকি থাকে, তখন পৃথিবীর নিকটবর্তী আকাশে অবতরণ করেন এবং বলেন: কে আছে আমাকে ডাকবে, আমি তার ডাকে সাড়া দেব? কে আমার কাছে ক্ষমা চাইবে, আমি তাকে ক্ষমা করব?” (সহিহ বুখারি, হাদিস: ১১৪৫; সহিহ মুসলিম, হাদিস: ৭৫৮)
রাতের শেষ তৃতীয়াংশে দোয়া কবুল হওয়ার বিষয়টি হাদিসে একাধিকবার উল্লেখ আছে।
ইমাম নববী বলেন, “এই সময়ে আল্লাহর রহমত সবচেয়ে বেশি বর্ষিত হয়, কারণ এ সময় দুনিয়ার ব্যস্ততা কম এবং হৃদয় সবচেয়ে বেশি একাগ্র থাকে।” (নববী, শারহ সহিহ মুসলিম, ৬/৩৬, দারুল ফিকর, বৈরুত, ১৯৯৫)
আমাদের প্রতিপালক প্রতি রাতে যখন রাতের শেষ তৃতীয়াংশ বাকি থাকে, তখন পৃথিবীর নিকটবর্তী আকাশে অবতরণ করেন এবং বলেন: কে আছে আমাকে ডাকবে, আমি তার ডাকে সাড়া দেব?সহিহ বুখারি, হাদিস: ১১৪৫
ধরা যাক, মাগরিবের পর ইশা শেষ হলো রাত ৯টায়, আর ফজরের আজান হয় ভোর ৫টায়।
মোট রাত = ৮ ঘণ্টা।
শেষ তৃতীয়াংশ হবে = শেষ ৮ ÷ ৩ = প্রায় ২ ঘণ্টা ৪০ মিনিট।
অর্থাৎ, তাহাজ্জুদের সর্বোত্তম সময় হবে রাত ২:২০ থেকে ফজরের আজান পর্যন্ত।
সঠিক সময়ে তাহাজ্জুদ আদায় করতে হলে রাতে আগেভাগে ঘুমানো উচিত যেন শেষ রাতে জাগা যায়। রাসুল (সা.) ইশার নামাজের পর কথাবার্তা বলাও পছন্দ করতেন না।
তাহাজ্জুদ এমন এক ইবাদত যা মানুষকে আল্লাহর সবচেয়ে কাছে নিয়ে যায়। এটি ইমানকে শক্ত করে, আত্মাকে পরিশুদ্ধ করে এবং দুনিয়া ও আখিরাত উভয়ের কল্যাণ বয়ে আনে।
এই নামাজ শুধু আল্লাহর বিশেষ বান্দাদের বৈশিষ্ট্য নয়, বরং যে কেউ নিয়মিতভাবে তাহাজ্জুদ আদায় শুরু করতে পারে—যদি সে আল্লাহর নৈকট্য চায়, মনের শান্তি চায়, আর চায় নিজের জীবনের সত্যিকারের উদ্দেশ্য খুঁজে পেতে।