ফরজে কিফায়া এমন দায়িত্ব, যা সম্প্রদায়ের কেউ পালন করলে সবাই মুক্ত হয়, কিন্তু কেউ না করলে সবাই দায়বদ্ধ।
ইমাম তাজউদ্দিন সুবকি এটিকে এমন একটি অপরিহার্য কাজ বলেছেন, যা আইনপ্রণেতা নির্দিষ্ট কাউকে নির্ধারণ না করে সম্প্রদায়ের জন্য বাধ্যতামূলক করেছেন। (আল-আশবাহ ওয়ান-নাযায়ির, বৈরুত: দারুল কুতুবিল ইলমিয়্যাহ, ১৯৯১, ২/৮৯)
কোরআন বলে, ‘তোমাদের মধ্যে এমন একটি দল থাকা উচিত, যারা কল্যাণের দিকে আহ্বান করবে, সৎ কাজের আদেশ দেবে এবং অসৎ কাজে বাধা দেবে।’ (সুরা আলে ইমরান, আয়াত: ১০৪)
ইমাম ইবনে দাকিক আল-ঈদ বলেন, এটি কল্যাণ অর্জন বা ক্ষতি প্রতিরোধের জন্য, নির্দিষ্ট কাউকে লক্ষ্য করে নয়। (শরহুল ইলমাম বিআহাদিসিল আহকাম, দামেস্ক: দারুন নাওয়াদির, ২০০৯, ২/৪৫-৪৬)
মজলুমের সাহায্য একটি সর্বজনীন ফরজে কিফায়া।ইমাম ইবনে হাজার আসকালানি (রহ.), ফাতহুল বারী ফি শরহি সহিহিল বুখারি
আনুষ্ঠানিক কাজ: জানাজার ব্যবস্থা, পাঁচ ওয়াক্ত নামাজের জামাত, জুমার নামাজ, তারাবিহ, সূর্যগ্রহণের নামাজ—যেগুলো আমাদের ধর্মীয় ঐক্যের অংশ। মসজিদ নির্মাণ, কিবলার দিক নির্ধারণ, হজের ব্যবস্থা আমাদের ভালোবাসার প্রকাশ। ইমাম বায়জাভি বলেন, মসজিদ রক্ষণাবেক্ষণ জ্ঞানী ও ধার্মিকদের দায়িত্ব। (আনওয়ারুত তানযিল ওয়া আসরারুত তাওয়িল, বৈরুত: দারু ইহইয়াইত তুরাসিল আরাবি, ২০০৩, ৩/৭৫)
সামাজিক সেবা ও কল্যাণ: অনাথদের লালন-পালন, দরিদ্রদের খাদ্য ও বস্ত্র প্রদান, অসুস্থদের সেবা, বিবাহের ব্যবস্থা ইত্যাদি। মজলুমের পাশে দাঁড়ানো, সামাজিক নিরাপত্তা নিশ্চিত করা আমাদের সম্প্রদায়কে পরিবারের মতো কাছে নিয়ে আসে। ইমাম ইবনে হাজার (রহ.) বলেন, ‘মজলুমের সাহায্য একটি সর্বজনীন ফরজ কিফায়া।’ (ফাতহুল বারী ফি শরহি সহিহিল বুখারি, দামেস্ক: আর-রিসালাতুল আলামিয়্যাহ, ১৮৮৪, ৮/১২)
সৎ কাজের আদেশ ও অসৎ কাজে বাধা: সৎ কাজের আদেশ ও অসৎ কাজে বাধা আমাদের সমাজের আত্মা সমতুল্য। কোরআন বলে, ‘হে মুমিনগণ, ন্যায়ের জন্য অবিচল থাকো, আল্লাহর সাক্ষী হিসেবে।’ (সুরা নিসা ১৩৫)
ফরজে কিফায়া এমন দায়িত্ব, যা সম্প্রদায়ের কেউ পালন করলে সবাই মুক্ত হয়, কিন্তু কেউ না করলে সবাই দায়বদ্ধ।
ইমাম আল-জুয়াইনি বলেন, ‘ইসলামের শুরু থেকে শেষ পুরোটা সৎ কাজের আদেশ ও অসৎ কাজে বাধার ওপর নির্ভরশীল।’ (আল-গিয়াসী, জেদ্দা: দারুল মিনহাজ, ২০১১, ৩৬৫)
শিক্ষা ও দাওয়া: কোরআন ও হাদিস সংরক্ষণ, তাজবিদ, ফিকহ অধ্যয়ন, ধর্মীয় জ্ঞান ছড়ানো আমাদের ইমানি দায়িত্ব। রাসুল (সা.) বলেছেন, ‘আমার কাছ থেকে একটি আয়াত হলেও পৌঁছে দাও।’ (সহিহ বুখারি, হাদিস: ১২৮)
জীবন, সম্পদ, বুদ্ধি ও ধর্ম রক্ষার জন্য প্রয়োজনীয় সব জ্ঞান ফরজে কিফায়ার অংশ। (আল-গাজালি, ইহইয়াউ উলুমিদ্দিন, জেদ্দা: দারুল মিনহাজ, ২০১১, ৪:৬২-১০৯)
নাগরিক দায়িত্ব: জিহাদের কিছু রূপ, সীমান্ত রক্ষা, বন্দী মুক্তি, বিচারক নিয়োগ, সাক্ষ্য দেওয়া সমাজের শৃঙ্খলার প্রতীক। ইমাম ইবনে আবিদিন বলেন, ‘অমুসলিম শাসনের অধীনে মুসলিমরা জামাতে নামাজ ও বিচারক নিয়োগ করতে পারে।’ (রদ্দুল মুহতার আলাদ দুররিল মুখতার, বৈরুত: দারুল কুতুবিল ইলমিয়্যাহ, ২০১১, ৮/৪৩)
ফরজে কেফায়া হলো, যা আইনপ্রণেতা নির্দিষ্ট কাউকে নির্ধারণ না করে সম্প্রদায়ের জন্য বাধ্যতামূলক করেছেন।ইমাম তাজউদ্দিন সুবকি, আল-আশবাহ ওয়ান-নাযায়ির
ইমাম আল-শিরাজি বলেন, ফেরেশতা বা জিনরা ফরজ কিফায়া পালন করলেও মানুষের দায়িত্ব মুক্ত হতে পারে। (আল-বাহরুল মুহিত, কুয়েত: মিনিস্ট্রি অব এন্ডোমেন্টস অ্যান্ড ইসলামিক অ্যাফেয়ার্স, ১৯৯২, ১/২৪৯-৫০)
ইমাম আল-জুয়াইনি মনে করেন, ফরজ কিফায়া ফরজ আইনের চেয়ে উচ্চতর, কারণ এর ফলাফল পুরো সম্প্রদায়ের ওপর প্রভাব ফেলে। (আল-গিয়াসী, জেদ্দা: দারুল মিনহাজ, ২০১১, ১৩৭-৩৮)
ফরজ কিফায়া ব্যক্তিগত দায়িত্বে রূপান্তরিত হতে পারে, যদি উপযুক্ত আর কেউ না থাকে। (আল-আশবাহ ওয়াল-নাযায়ির, কায়রো: দারুস সালাম, ২০১৮, পৃষ্ঠা ৩৭৪-৭৫)
সূত্র: ইয়াকিন ইনস্টিটিউট